মৃত্যুঞ্জয় রায়
সরকার ১৫ মে ২০২৫ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছকে আগ্রাসী গাছ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সেই প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এ দুটি গাছের চারা উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার মানে, কেউ আর এখন এ দুটি গাছের চারা লাগাতে পারবেন না। বেচাকেনাও করতে পারবেন না। হঠাৎ এরূপ সিদ্ধান্তে যেসব ব্যক্তি বা নার্সারি ইতিপূর্বে এ দুটি গাছের চারা উৎপাদন করে মজুত রেখেছিলেন, তাঁদেরও এখন সেসব চারা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
ত্রিশের দশকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউক্যালিপটাসের বীজ এনে চারা উৎপাদন করে প্রথম পূর্বাঞ্চলের চা-বাগানে ছায়াতরু হিসেবে লাগানো হয়। এরপর গত শতকের ষাটের দশকে ইউক্যালিপটাসগাছের বিস্তৃতি হতে শুরু করে। বিভিন্ন বনায়ন ও সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাসগাছ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার প্রসার ঘটে। এ দুটি গাছ দ্রুত বাড়ে, কাঠ ও জ্বালানি পাওয়া যায়, তেমন কোনো পরিচর্যা লাগে না। বেশি ও ঘন ডালপালা বা ছায়া হয় না বলে ইউক্যালিপটাস ধানখেতের আলে ও ফলবাগানের মধ্যে লাগিয়ে কৃষি বনায়ন করার এক ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিল কিছু বেসরকারি সংস্থা ও মানুষ, বন বিভাগও থেমে ছিল না। অনেক দেশজ বনের ভেতরেও বন উজাড় করে সেসব খালি জায়গা ভরে দেওয়া হয়েছিল ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছে। এমনকি বাহারি গাছ হিসেবে নগর উদ্যান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ দুটি গাছ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নগদ ও দ্রুত লাভের আশায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ে এ দুটি গাছ লাগানোয়।
কয়েক বছর আগে বগুড়ায় গিয়ে ইউক্যালিপটাসের আগ্রাসন এবং বান্দরবানে গিয়ে আকাশমণির আগ্রাসন দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। শেরপুর উপজেলার পানিসারা গ্রামের রাস্তার দুই পাশে সারি বাঁধা ইউক্যালিপটাসগাছ, ধানখেতের আলের ওপর সারি বাঁধা ইউক্যালিপটাসগাছ। এ গাছ লাগানোর আগে সেখানে রাস্তার পাশে দেখা যেত তালগাছ, ধানখেতের মধ্যেও ছিল বিক্ষিপ্তভাবে কিছু তালগাছ। সেখানে এখন ইউক্যালিপটাসগাছের সারি। সে জন্য মনে হতে পারে ইউক্যালিপটাস বোধ হয় বাংলাদেশের প্রধান গাছ। বগুড়ার কৃষকেরা বলেছিলেন, এ গাছ লাগানোর আগে তো বুঝতে পারেননি, এখন তারা দেখছেন যেসব ধানখেতের আলে ইউক্যালিপটাসগাছ লাগানো হয়েছে, সেসব খেতে ধানের ফলন কমে গেছে, সেচপাম্পে আগের মতো পানি উঠছে না, অনেক স্থানে পাম্প মেশিন ডিপসেট করতে হয়েছে। যদিও শুধু ইউক্যালিপটাসগাছের দোষেই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে না, তবু এ কথা বিভিন্ন গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে যে ইউক্যালিপটাস মাটি থেকে প্রচুর পানি শোষণ করায় সেখানে খরা অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৯২ শতাংশ মানুষই ইউক্যালিপটাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানেন না। ব্রাজিলের গবেষকেরাও ইউক্যালিপটাসগাছ লাগানোকে পরিবেশের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, ইউক্যালিপটাসগাছের বাষ্পীভবনের হার অত্যন্ত বেশি। এ জন্য সেসব গাছ মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পানি শুষে নেয়। অধিক হারে ও বন আকারে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগালে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে সেই স্থানের জলবায়ু বদলে যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।
তা ছাড়া, এই গাছের বাকল ও পাতায় একধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে, যা অন্যান্য গাছপালা ও প্রাণীর বৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। এমনকি এ গাছে কোনো পাখিও বসতে চায় না, এই গাছে পাখির খাওয়ার মতো কোনো ফলও নেই। এই গাছের পাতা যে জমিতে পড়ে, সেই জমিতে সহজে তা পচে না, এতে জমির উর্বরতাশক্তি নষ্ট হয়। খেতের আলে লাগানো ইউক্যালিপটাসগাছের প্রভাবে পাকিস্তানের গবেষকেরা দেখছেন যে, সেসব জমিতে গমের বীজ ফেললেও তার গজানোর হার থাকে অনেক কম। এ গাছের বীজ ক্ষুদ্র ও হালকা হওয়ায় খুব সহজে দ্রুত তার আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে ও চারা হয়ে সেসব জায়গা ছেয়ে ফেলে। আগ্রাসী স্বভাবের কারণে এবং দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য এই গাছকে একবার আমন্ত্রণ করে কোথাও লাগালে সেই জায়গার মাটি ও পরিবেশ, অন্যান্য গাছের জন্মানো ও বেড়ে ওঠার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর পাতায় একধরনের তেল থাকায় তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। একটি বড় ইউক্যালিপটাসগাছ মাটির ৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত তার শিকড় ছড়িয়ে সেখান থেকে ৪ একর ১০ ফুট পর্যন্ত এলাকার পানি টেনে নিতে পারে বলে গবেষকেরা দাবি করেছেন। এতে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দেখা দেয়। পানির সঙ্গে টেনে নেয় মাটি থেকে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য বা পুষ্টি উপাদান। এতে আশপাশে থাকা অন্যান্য গাছ জলকষ্ট ও পুষ্টির ঘাটতিতে ভোগে, মাটি তার প্রাকৃতিক উর্বরতাশক্তি হারায়। মাটিতে আর্দ্রতার অভাব হলে অনেক অণুজীবেরও জীবনচক্র থেমে যায়। পশুপাখির সঙ্গে অনেক পোকামাকড়েরও স্বাভাবিক জৈবিক কার্যাবলি ব্যাহত হয়। ইউক্যালিপটাসগাছে কোনো পাখিকে বাসা বাঁধতে দেখা যায় না। ফলে গোটা বাস্তুতন্ত্রেই তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ দুটি গাছ লাগানোর ফলে দেশি গাছপালা হুমকির মুখে পড়েছে, এটাই এখন সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।
মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন নার্সারিতে উৎপাদিত আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসের যেসব চারা মজুত রয়েছে, তা ধ্বংসের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রণোদনামূলক এক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখন চারাপ্রতি ৪ টাকা করে ক্ষতিপূরণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সেসব চারা ধ্বংস করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আম, কাঁঠাল, নারিকেল, নিম ইত্যাদি দেশীয় গাছের চারা। কৃষি মন্ত্রণালয় পরিবেশবান্ধব দেশি বনজ গাছের চারারও একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব বিদেশি গাছ না লাগিয়ে দেশি গাছ লাগাতে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ৩ লাখ চারা ধ্বংস করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং জানিয়েছে, সারা দেশে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৭৭টি আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসগাছের চারা রয়েছে। এর মধ্যে ইউক্যালিপটাসের চারা রয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৩টি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ পরিবেশ সংরক্ষণে নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যেকোনো মূল্যে এ দেশে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে, বিদেশি গাছের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হবে দেশীয় গাছপালাকে। আগ্রাসী গাছ শুধু ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিই নয়, এর বাইরেও রয়েছে পার্থেনিয়াম, আসামলতা, স্বর্ণলতা, শিয়ালকাঁটা, উচুন্টি, হেলেঞ্চা, কচুরিপানা, কেশরাজা বা সিঙ্গাপুর ডেইজি ইত্যাদি আগাছাও। এগুলো নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংসের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত ও প্রয়াস নিতে হবে। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ইউক্যালিপটাসগাছ ইতিমধ্যে বড় বৃক্ষ হয়ে উঠেছে, সেগুলোও নির্মূল করতে হবে। মোদ্দা কথা হলো, শুধু প্রজ্ঞাপন জারি নয়, বাস্তবায়ন করতে হবে কঠোর হাতে এ দুটি গাছের বিনাশযজ্ঞ। ২০০৮ সালেও সরকার ইউক্যালিপটাসগাছের চারা উৎপাদন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কাজটা সেই নিষেধাজ্ঞা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। দেশের মানুষ আশা করে, প্রজ্ঞাপনটি যেন কোনোভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
সরকার ১৫ মে ২০২৫ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছকে আগ্রাসী গাছ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সেই প্রজ্ঞাপনে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিপর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে এ দুটি গাছের চারা উৎপাদন, রোপণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার মানে, কেউ আর এখন এ দুটি গাছের চারা লাগাতে পারবেন না। বেচাকেনাও করতে পারবেন না। হঠাৎ এরূপ সিদ্ধান্তে যেসব ব্যক্তি বা নার্সারি ইতিপূর্বে এ দুটি গাছের চারা উৎপাদন করে মজুত রেখেছিলেন, তাঁদেরও এখন সেসব চারা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
ত্রিশের দশকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউক্যালিপটাসের বীজ এনে চারা উৎপাদন করে প্রথম পূর্বাঞ্চলের চা-বাগানে ছায়াতরু হিসেবে লাগানো হয়। এরপর গত শতকের ষাটের দশকে ইউক্যালিপটাসগাছের বিস্তৃতি হতে শুরু করে। বিভিন্ন বনায়ন ও সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে ইউক্যালিপটাসগাছ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তার প্রসার ঘটে। এ দুটি গাছ দ্রুত বাড়ে, কাঠ ও জ্বালানি পাওয়া যায়, তেমন কোনো পরিচর্যা লাগে না। বেশি ও ঘন ডালপালা বা ছায়া হয় না বলে ইউক্যালিপটাস ধানখেতের আলে ও ফলবাগানের মধ্যে লাগিয়ে কৃষি বনায়ন করার এক ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছিল কিছু বেসরকারি সংস্থা ও মানুষ, বন বিভাগও থেমে ছিল না। অনেক দেশজ বনের ভেতরেও বন উজাড় করে সেসব খালি জায়গা ভরে দেওয়া হয়েছিল ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছে। এমনকি বাহারি গাছ হিসেবে নগর উদ্যান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ দুটি গাছ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। নগদ ও দ্রুত লাভের আশায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ে এ দুটি গাছ লাগানোয়।
কয়েক বছর আগে বগুড়ায় গিয়ে ইউক্যালিপটাসের আগ্রাসন এবং বান্দরবানে গিয়ে আকাশমণির আগ্রাসন দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। শেরপুর উপজেলার পানিসারা গ্রামের রাস্তার দুই পাশে সারি বাঁধা ইউক্যালিপটাসগাছ, ধানখেতের আলের ওপর সারি বাঁধা ইউক্যালিপটাসগাছ। এ গাছ লাগানোর আগে সেখানে রাস্তার পাশে দেখা যেত তালগাছ, ধানখেতের মধ্যেও ছিল বিক্ষিপ্তভাবে কিছু তালগাছ। সেখানে এখন ইউক্যালিপটাসগাছের সারি। সে জন্য মনে হতে পারে ইউক্যালিপটাস বোধ হয় বাংলাদেশের প্রধান গাছ। বগুড়ার কৃষকেরা বলেছিলেন, এ গাছ লাগানোর আগে তো বুঝতে পারেননি, এখন তারা দেখছেন যেসব ধানখেতের আলে ইউক্যালিপটাসগাছ লাগানো হয়েছে, সেসব খেতে ধানের ফলন কমে গেছে, সেচপাম্পে আগের মতো পানি উঠছে না, অনেক স্থানে পাম্প মেশিন ডিপসেট করতে হয়েছে। যদিও শুধু ইউক্যালিপটাসগাছের দোষেই পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে না, তবু এ কথা বিভিন্ন গবেষকের গবেষণায় উঠে এসেছে যে ইউক্যালিপটাস মাটি থেকে প্রচুর পানি শোষণ করায় সেখানে খরা অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক গবেষকের গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৯২ শতাংশ মানুষই ইউক্যালিপটাসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানেন না। ব্রাজিলের গবেষকেরাও ইউক্যালিপটাসগাছ লাগানোকে পরিবেশের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, ইউক্যালিপটাসগাছের বাষ্পীভবনের হার অত্যন্ত বেশি। এ জন্য সেসব গাছ মাটি থেকে বেশি পরিমাণে পানি শুষে নেয়। অধিক হারে ও বন আকারে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগালে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে সেই স্থানের জলবায়ু বদলে যেতে পারে বলে তারা মনে করেন।
তা ছাড়া, এই গাছের বাকল ও পাতায় একধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য রয়েছে, যা অন্যান্য গাছপালা ও প্রাণীর বৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। এমনকি এ গাছে কোনো পাখিও বসতে চায় না, এই গাছে পাখির খাওয়ার মতো কোনো ফলও নেই। এই গাছের পাতা যে জমিতে পড়ে, সেই জমিতে সহজে তা পচে না, এতে জমির উর্বরতাশক্তি নষ্ট হয়। খেতের আলে লাগানো ইউক্যালিপটাসগাছের প্রভাবে পাকিস্তানের গবেষকেরা দেখছেন যে, সেসব জমিতে গমের বীজ ফেললেও তার গজানোর হার থাকে অনেক কম। এ গাছের বীজ ক্ষুদ্র ও হালকা হওয়ায় খুব সহজে দ্রুত তার আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে ও চারা হয়ে সেসব জায়গা ছেয়ে ফেলে। আগ্রাসী স্বভাবের কারণে এবং দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য এই গাছকে একবার আমন্ত্রণ করে কোথাও লাগালে সেই জায়গার মাটি ও পরিবেশ, অন্যান্য গাছের জন্মানো ও বেড়ে ওঠার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এর পাতায় একধরনের তেল থাকায় তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। একটি বড় ইউক্যালিপটাসগাছ মাটির ৫০ ফুট গভীর পর্যন্ত তার শিকড় ছড়িয়ে সেখান থেকে ৪ একর ১০ ফুট পর্যন্ত এলাকার পানি টেনে নিতে পারে বলে গবেষকেরা দাবি করেছেন। এতে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট দেখা দেয়। পানির সঙ্গে টেনে নেয় মাটি থেকে বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য বা পুষ্টি উপাদান। এতে আশপাশে থাকা অন্যান্য গাছ জলকষ্ট ও পুষ্টির ঘাটতিতে ভোগে, মাটি তার প্রাকৃতিক উর্বরতাশক্তি হারায়। মাটিতে আর্দ্রতার অভাব হলে অনেক অণুজীবেরও জীবনচক্র থেমে যায়। পশুপাখির সঙ্গে অনেক পোকামাকড়েরও স্বাভাবিক জৈবিক কার্যাবলি ব্যাহত হয়। ইউক্যালিপটাসগাছে কোনো পাখিকে বাসা বাঁধতে দেখা যায় না। ফলে গোটা বাস্তুতন্ত্রেই তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ দুটি গাছ লাগানোর ফলে দেশি গাছপালা হুমকির মুখে পড়েছে, এটাই এখন সবচেয়ে চিন্তার বিষয়।
মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন নার্সারিতে উৎপাদিত আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসের যেসব চারা মজুত রয়েছে, তা ধ্বংসের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রণোদনামূলক এক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখন চারাপ্রতি ৪ টাকা করে ক্ষতিপূরণ সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সেসব চারা ধ্বংস করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে আম, কাঁঠাল, নারিকেল, নিম ইত্যাদি দেশীয় গাছের চারা। কৃষি মন্ত্রণালয় পরিবেশবান্ধব দেশি বনজ গাছের চারারও একটি তালিকা তৈরি করেছে। এসব বিদেশি গাছ না লাগিয়ে দেশি গাছ লাগাতে সবাইকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ৩ লাখ চারা ধ্বংস করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং জানিয়েছে, সারা দেশে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার ৭৭টি আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসগাছের চারা রয়েছে। এর মধ্যে ইউক্যালিপটাসের চারা রয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৩টি।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ পরিবেশ সংরক্ষণে নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যেকোনো মূল্যে এ দেশে পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে, বিদেশি গাছের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে হবে দেশীয় গাছপালাকে। আগ্রাসী গাছ শুধু ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিই নয়, এর বাইরেও রয়েছে পার্থেনিয়াম, আসামলতা, স্বর্ণলতা, শিয়ালকাঁটা, উচুন্টি, হেলেঞ্চা, কচুরিপানা, কেশরাজা বা সিঙ্গাপুর ডেইজি ইত্যাদি আগাছাও। এগুলো নিয়ন্ত্রণ বা ধ্বংসের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত ও প্রয়াস নিতে হবে। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে যেসব ইউক্যালিপটাসগাছ ইতিমধ্যে বড় বৃক্ষ হয়ে উঠেছে, সেগুলোও নির্মূল করতে হবে। মোদ্দা কথা হলো, শুধু প্রজ্ঞাপন জারি নয়, বাস্তবায়ন করতে হবে কঠোর হাতে এ দুটি গাছের বিনাশযজ্ঞ। ২০০৮ সালেও সরকার ইউক্যালিপটাসগাছের চারা উৎপাদন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। কাজটা সেই নিষেধাজ্ঞা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। দেশের মানুষ আশা করে, প্রজ্ঞাপনটি যেন কোনোভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
মনজিল মোরসেদ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী। তিনি হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) প্রেসিডেন্ট। জনস্বার্থে এ পর্যন্ত তিনি ২২৫টির বেশি মামলা করে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
৪ ঘণ্টা আগেখারাপ খবরের ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠা সমাজে যখন ইতিবাচক বা ভালো কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, তখন রংপুরের কাউনিয়ার একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানের খবর পড়ে মন ভালো না হয়ে পারে না।
৪ ঘণ্টা আগে১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে, তা কি খুব অপ্রত্যাশিত ছিল? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জের ঘটনার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু ঘটনা এত বড় হবে, সে তথ্য ছিল না।’ অর্থাৎ ছোটখাটো ঘটনা ঘটবে, সেটা সরকারের জানা ছিল।
১ দিন আগেসম্প্রতি ফেনীসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। গত বছরও ফেনী, নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বন্যার পানি যত না ভয়ংকর, তার চেয়েও বেশি বিপদ হয় নিরাপদ আশ্রয় আর খাদ্যসংকট নিয়ে।
১ দিন আগে