মাসুদ কামাল
অনেক আগের একটা ঘটনা। সম্ভবত ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে হবে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। গরিব পিতামাতার অনেক সন্তানের একজন আমি। আব্বা সংসার চালাতেই হিমশিম খেতেন, ছেলেকে নিয়মিত টাকা পাঠাবেন কী করে? তাই আমাকে টিউশনি করতে হতো। থাকতাম ফজলুল হক হলে। আর টিউশনি করতে হেঁটে হেঁটে যেতাম পুরান ঢাকায়। সেখানে যেতে-আসতে একটা মসজিদে ঢোকার পথেই ছোট্ট একটা নোটিশ আমার খুব দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেখানে লেখা ছিল—‘জুতা চুরি ঠেকাতে দুই জুতা দুই জায়গায় রাখুন!’
এই দেশে মসজিদে জুতা চুরি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ঢোকার পথে জুতা বা স্যান্ডেল রেখে আপনি নামাজ পড়তে মসজিদে ঢুকবেন, আর বের হয়ে এসে সেই জুতা যেভাবে রেখে গেছেন সেভাবেই পাবেন—এমন গ্যারান্টি আপনাকে কেউ দিতে পারবে না। এই চোরদের হাত থেকে বাঁচতে অনেক মসজিদেই এখন নামাজের জায়গার আশপাশে জুতার বক্সের মতো করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও ফুলপ্রুফ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। যখন সবাই সিজদায় যায়, তখনই সামনে থাকা বক্স থেকে চোর এসে জুতা সরিয়ে ফেলে। আমার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে ওই ‘দুই জুতা দুই জায়গায় রাখা!’ চোর তো আর জানবে না—আপনি কোন পাটি কোন জায়গায় রেখেছেন। সেটা কেবল আপনিই জানবেন।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, হঠাৎ করে এই ‘জুতার নিরাপত্তা’বিষয়ক তথ্য ও তত্ত্ব নিয়ে কেন আলোচনা করছি? দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে বাটার দোকান লুটপাটের যেসব দৃশ্য দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে—তারা যদি প্রতিটা বক্সে এক পাটি করে জুতা রাখত, তাহলে এভাবে লুটপাট হতো? রসিকতা নয়, সত্যি সত্যিই আমি এ রকম ভাবছি। বাটা দুনিয়াজুড়ে ব্যবসা করে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন নিয়ম কেন করবে? এমন প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে—পৃথিবীর আর কোনো দেশের মসজিদে কি ‘দুই জুতা দুই জায়গায়’ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়? আমাদের ‘তৌহিদি জনতা’ অন্য জিনিস, এদের জন্য প্রচলিত নিয়ম খাটবে না।
গাজায় ইসরায়েলিদের বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ তো পুরো পৃথিবীতেই হচ্ছে। কিন্তু এই বিক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে আমাদের এখানে যে লুটপাট হলো, তার দ্বিতীয় নমুনা কিন্তু আর কোথাও কেউ দেখাতে পারবে না। আর দেখুন, এই বাটা, কেএফসি, পিৎজা হাট, ডোমিনোসের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা হলো এমন একটা সময়ে, যখন সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের দেখানো হচ্ছে, বোঝানো হচ্ছে—আমাদের দেশ বিনিয়োগের জন্য কত ভালো! বাংলাদেশে এসে তাঁরা কি কেবল আয়োজকদের মিষ্টি মিষ্টি কথাই শুনবেন, নাকি স্থানীয় পত্রপত্রিকার খবরটবরগুলোও দেখবেন? আর তা ছাড়া তাঁরাও তো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। সেখানেও নিশ্চয়ই দেখা যাবে অনেক কিছু। সব মিলিয়ে কি ভালো হলো?
এই জুতা লুটপাটের পরদিন কুয়েত থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একজন আমাকে একটা মেসেজ পাঠালেন। তিনি সেখানে কুয়েত সরকারের একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি লিখেছেন, গাজা নিয়ে বিক্ষোভ করতে গিয়ে আমাদের এখানে যে ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে, সেটা নিয়ে তাঁরা সেখানে খুবই বিব্রত। জানিয়েছেন কুয়েতে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে! এমনকি কুয়েতে যে ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠী আছে, তারাও নাকি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া লুটপাটের খবর দেখে বিস্মিত হয়েছে। তারা আমাদের এমন ধারার ‘প্রতিবাদ’কে মোটেই সমর্থন করছে না। তিনি আমাকে এমন কথাও লিখেছেন, সেখানকার কেএফসি বা পিৎজা হাটে অনেক বাংলাদেশিই কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশের বিভিন্ন ঘটনায় তাঁরাও খুবই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল সরকার যে হামলা করেছে, অমানবিক অত্যাচার করছে, তার প্রতিবাদ অবশ্যই হওয়া দরকার। সারা দুনিয়াই এর প্রতিবাদ করছে। আমরাও করছি। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষাটা কী হবে? প্রতিবাদের যে ভাষা ও আচরণ, তা দিয়েই কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমাদের বিচার করবে। এই বিষয়টা কি আমাদের কেউ বোঝেন না? না বোঝার কোনোই কারণ নেই। তাহলে আমরা এ রকম করছি কেন? আসলে এই ধরনের লুটপাট যারা করছে, তারা আসলে পেশাদার চোর। মসজিদের জুতা চোররা যেমন মুসল্লি নয়, মুসল্লির লেবাসে খাঁটি চোর, এরাও তেমনি। এরা সব সময়ই কোনো না কোনো উপলক্ষ খোঁজে। আর দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে—এ সরকারের আমলে সে ধরনের উপলক্ষ প্রায়ই তৈরি হচ্ছে। কিছুদিন আগেও আমরা দেখলাম দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর হতে। সেই মব লুণ্ঠনের পেছনে অজুহাত হিসেবে বাড়ির মালিকের রাজনৈতিক পরিচয়কে বড় করে দেখানো হলো। যেন বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগ করলেই তাঁর বাড়ি ভাঙা জায়েজ হয়ে যায়! আসলে হয়েও যায়, কারণ দেখা গেছে সেই সময়ে লাগাতার যে ভাঙচুর ও লুণ্ঠন হয়েছে, তার কোনোটিরই কোনো আইনগত প্রতিকার হয়নি। প্রতিকারের চেষ্টাও হয়নি। তখন যদি সরকার প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করত, এবার এমন সংবেদনশীল সময়ে জুতা চুরির এই মহোৎসব হয়তো দেখতে হতো না। তবে আশার কথা হলো, দেখছি এবার সরকার কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহ নেই এগুলো ভালো উদ্যোগ।
আসলে সেইসব ভাঙচুরের পেছনে মূল কারণ কিন্তু মতাদর্শের বিরোধ ছিল না। মূলত ছিল লুণ্ঠনের উদগ্র বাসনা। একটা উদাহরণ দিই। ভাঙচুরের জন্য এইসব মব লেলিয়ে দেওয়ার মহানায়ক হচ্ছেন ফ্রান্সে অবস্থান করা একজন ‘ব্রাহ্মণ পীর’। এই ভদ্রলোকই এর আগে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙার জন্য দেশে থাকা তাঁর অর্ধশিক্ষিত মুরিদদের উসকে দিয়েছেন। সেই হিসেবে সবাই গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লুটপাট করেছে। কিন্তু দেখুন, একটি ক্ষেত্রে পীর সাহেবের নির্দেশনা সম্পূর্ণই ব্যর্থ হয়েছে। সেটা হচ্ছে—সিপিবি অফিস দখলের ঘোষণা। তিনি সময় নির্দেশ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মুরিদদের কেউই সেখানে যায়নি! অনেকের কাছেই বিষয়টি বিস্ময়কর ঠেকেছে। কিন্তু একটু ভিন্ন লাইনে চিন্তা করলেই দেখবেন, ওটাই স্বাভাবিক ছিল। এই ভাঙচুর কোম্পানির মূল উদ্যমের পেছনে তো আদর্শিক কোনো বিষয় নেই, রয়েছে লুটপাটের মাধ্যমে বৈষয়িক লাভের প্রত্যাশা। ৩২ নম্বর বা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ভাঙতে গেলে একটা তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সিপিবি অফিসে কতগুলো পুরোনো চেয়ার-টেবিল ছাড়া আর কী পাওয়া যাবে? সে কারণেই পীর সাহেবের হুংকার বা মুরিদদের প্রতি অনুনয় কোনোই কাজে লাগেনি। পেশাদার চোরদের পীর হলে, ঘোষণায় তাদের স্বার্থচিন্তাটা থাকা লাগে। নয়তো হয় না।
অনেক আগের একটা ঘটনা। সম্ভবত ১৯৮৪-৮৫ সালের দিকে হবে। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। গরিব পিতামাতার অনেক সন্তানের একজন আমি। আব্বা সংসার চালাতেই হিমশিম খেতেন, ছেলেকে নিয়মিত টাকা পাঠাবেন কী করে? তাই আমাকে টিউশনি করতে হতো। থাকতাম ফজলুল হক হলে। আর টিউশনি করতে হেঁটে হেঁটে যেতাম পুরান ঢাকায়। সেখানে যেতে-আসতে একটা মসজিদে ঢোকার পথেই ছোট্ট একটা নোটিশ আমার খুব দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সেখানে লেখা ছিল—‘জুতা চুরি ঠেকাতে দুই জুতা দুই জায়গায় রাখুন!’
এই দেশে মসজিদে জুতা চুরি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ঢোকার পথে জুতা বা স্যান্ডেল রেখে আপনি নামাজ পড়তে মসজিদে ঢুকবেন, আর বের হয়ে এসে সেই জুতা যেভাবে রেখে গেছেন সেভাবেই পাবেন—এমন গ্যারান্টি আপনাকে কেউ দিতে পারবে না। এই চোরদের হাত থেকে বাঁচতে অনেক মসজিদেই এখন নামাজের জায়গার আশপাশে জুতার বক্সের মতো করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও ফুলপ্রুফ পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। যখন সবাই সিজদায় যায়, তখনই সামনে থাকা বক্স থেকে চোর এসে জুতা সরিয়ে ফেলে। আমার বিবেচনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর হচ্ছে ওই ‘দুই জুতা দুই জায়গায় রাখা!’ চোর তো আর জানবে না—আপনি কোন পাটি কোন জায়গায় রেখেছেন। সেটা কেবল আপনিই জানবেন।
অনেকেই হয়তো ভাবছেন, হঠাৎ করে এই ‘জুতার নিরাপত্তা’বিষয়ক তথ্য ও তত্ত্ব নিয়ে কেন আলোচনা করছি? দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে বাটার দোকান লুটপাটের যেসব দৃশ্য দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে—তারা যদি প্রতিটা বক্সে এক পাটি করে জুতা রাখত, তাহলে এভাবে লুটপাট হতো? রসিকতা নয়, সত্যি সত্যিই আমি এ রকম ভাবছি। বাটা দুনিয়াজুড়ে ব্যবসা করে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন নিয়ম কেন করবে? এমন প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে—পৃথিবীর আর কোনো দেশের মসজিদে কি ‘দুই জুতা দুই জায়গায়’ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়? আমাদের ‘তৌহিদি জনতা’ অন্য জিনিস, এদের জন্য প্রচলিত নিয়ম খাটবে না।
গাজায় ইসরায়েলিদের বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ তো পুরো পৃথিবীতেই হচ্ছে। কিন্তু এই বিক্ষোভের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে আমাদের এখানে যে লুটপাট হলো, তার দ্বিতীয় নমুনা কিন্তু আর কোথাও কেউ দেখাতে পারবে না। আর দেখুন, এই বাটা, কেএফসি, পিৎজা হাট, ডোমিনোসের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা হলো এমন একটা সময়ে, যখন সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁদের দেখানো হচ্ছে, বোঝানো হচ্ছে—আমাদের দেশ বিনিয়োগের জন্য কত ভালো! বাংলাদেশে এসে তাঁরা কি কেবল আয়োজকদের মিষ্টি মিষ্টি কথাই শুনবেন, নাকি স্থানীয় পত্রপত্রিকার খবরটবরগুলোও দেখবেন? আর তা ছাড়া তাঁরাও তো সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। সেখানেও নিশ্চয়ই দেখা যাবে অনেক কিছু। সব মিলিয়ে কি ভালো হলো?
এই জুতা লুটপাটের পরদিন কুয়েত থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একজন আমাকে একটা মেসেজ পাঠালেন। তিনি সেখানে কুয়েত সরকারের একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি লিখেছেন, গাজা নিয়ে বিক্ষোভ করতে গিয়ে আমাদের এখানে যে ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে, সেটা নিয়ে তাঁরা সেখানে খুবই বিব্রত। জানিয়েছেন কুয়েতে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে! এমনকি কুয়েতে যে ফিলিস্তিন জনগোষ্ঠী আছে, তারাও নাকি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া লুটপাটের খবর দেখে বিস্মিত হয়েছে। তারা আমাদের এমন ধারার ‘প্রতিবাদ’কে মোটেই সমর্থন করছে না। তিনি আমাকে এমন কথাও লিখেছেন, সেখানকার কেএফসি বা পিৎজা হাটে অনেক বাংলাদেশিই কাজ করে থাকেন। আমাদের দেশের বিভিন্ন ঘটনায় তাঁরাও খুবই বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল সরকার যে হামলা করেছে, অমানবিক অত্যাচার করছে, তার প্রতিবাদ অবশ্যই হওয়া দরকার। সারা দুনিয়াই এর প্রতিবাদ করছে। আমরাও করছি। কিন্তু প্রতিবাদের ভাষাটা কী হবে? প্রতিবাদের যে ভাষা ও আচরণ, তা দিয়েই কিন্তু আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমাদের বিচার করবে। এই বিষয়টা কি আমাদের কেউ বোঝেন না? না বোঝার কোনোই কারণ নেই। তাহলে আমরা এ রকম করছি কেন? আসলে এই ধরনের লুটপাট যারা করছে, তারা আসলে পেশাদার চোর। মসজিদের জুতা চোররা যেমন মুসল্লি নয়, মুসল্লির লেবাসে খাঁটি চোর, এরাও তেমনি। এরা সব সময়ই কোনো না কোনো উপলক্ষ খোঁজে। আর দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে—এ সরকারের আমলে সে ধরনের উপলক্ষ প্রায়ই তৈরি হচ্ছে। কিছুদিন আগেও আমরা দেখলাম দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ভাঙচুর হতে। সেই মব লুণ্ঠনের পেছনে অজুহাত হিসেবে বাড়ির মালিকের রাজনৈতিক পরিচয়কে বড় করে দেখানো হলো। যেন বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগ করলেই তাঁর বাড়ি ভাঙা জায়েজ হয়ে যায়! আসলে হয়েও যায়, কারণ দেখা গেছে সেই সময়ে লাগাতার যে ভাঙচুর ও লুণ্ঠন হয়েছে, তার কোনোটিরই কোনো আইনগত প্রতিকার হয়নি। প্রতিকারের চেষ্টাও হয়নি। তখন যদি সরকার প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করত, এবার এমন সংবেদনশীল সময়ে জুতা চুরির এই মহোৎসব হয়তো দেখতে হতো না। তবে আশার কথা হলো, দেখছি এবার সরকার কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সন্দেহ নেই এগুলো ভালো উদ্যোগ।
আসলে সেইসব ভাঙচুরের পেছনে মূল কারণ কিন্তু মতাদর্শের বিরোধ ছিল না। মূলত ছিল লুণ্ঠনের উদগ্র বাসনা। একটা উদাহরণ দিই। ভাঙচুরের জন্য এইসব মব লেলিয়ে দেওয়ার মহানায়ক হচ্ছেন ফ্রান্সে অবস্থান করা একজন ‘ব্রাহ্মণ পীর’। এই ভদ্রলোকই এর আগে বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙার জন্য দেশে থাকা তাঁর অর্ধশিক্ষিত মুরিদদের উসকে দিয়েছেন। সেই হিসেবে সবাই গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লুটপাট করেছে। কিন্তু দেখুন, একটি ক্ষেত্রে পীর সাহেবের নির্দেশনা সম্পূর্ণই ব্যর্থ হয়েছে। সেটা হচ্ছে—সিপিবি অফিস দখলের ঘোষণা। তিনি সময় নির্দেশ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মুরিদদের কেউই সেখানে যায়নি! অনেকের কাছেই বিষয়টি বিস্ময়কর ঠেকেছে। কিন্তু একটু ভিন্ন লাইনে চিন্তা করলেই দেখবেন, ওটাই স্বাভাবিক ছিল। এই ভাঙচুর কোম্পানির মূল উদ্যমের পেছনে তো আদর্শিক কোনো বিষয় নেই, রয়েছে লুটপাটের মাধ্যমে বৈষয়িক লাভের প্রত্যাশা। ৩২ নম্বর বা আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ভাঙতে গেলে একটা তাৎক্ষণিক প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সিপিবি অফিসে কতগুলো পুরোনো চেয়ার-টেবিল ছাড়া আর কী পাওয়া যাবে? সে কারণেই পীর সাহেবের হুংকার বা মুরিদদের প্রতি অনুনয় কোনোই কাজে লাগেনি। পেশাদার চোরদের পীর হলে, ঘোষণায় তাদের স্বার্থচিন্তাটা থাকা লাগে। নয়তো হয় না।
আশেকা ইরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারপারসন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র জেন্ডার, ভূ-কৌশলগত ও আঞ্চলিক সম্পর্ক নিয়ে। ফিলিস্তিন পরিস্থিতিতে আরব বিশ্বের ভূমিকা...
১৯ ঘণ্টা আগেরাজনীতি যদি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক হয়, তবে তা শুধু ঢাকার পিচঢালা রাস্তায় নয়, প্রতিটি ইউনিয়নের মাটির পথে প্রতিফলিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি যেন একটি দূরবর্তী বিষয়—শুধু খবরের কাগজে থাকে, জীবনের ভেতরে তা প্রবেশ করে না।
২০ ঘণ্টা আগেবেছে বেছে এ বিষয়টি নিয়ে সম্পাদকীয় লেখার একটা বিশেষ কারণ আছে। ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি কী করে আমাদের হয়েছিল, সে কথা প্রত্যেকে বুঝতে পারলে ভালো হতো। দুঃখের বিষয় হলো, সেটা সবাই বুঝতে পারে না।
২০ ঘণ্টা আগেগত সপ্তাহে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাজাগানিয়া একটি খবর প্রচারিত হওয়ার পর দেশব্যাপী বেশ আলোচনা চলছে। ৫ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ইউ থান শিউ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা...
২ দিন আগে