গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
দূর পাল্লার গাড়িগুলোর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা–চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কে উঁচু ডিভাইডার দিয়ে দুটি লেন আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক যানবাহনের জন্য দুই পাশে রাখা হয়েছে দুটি লেন। ডিভাইডার বসানোর আগে দূরপাল্লার লেন থেকে আঞ্চলিক লেনে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য সওজ কার্যালয়ের সামনে একটি গেট খোলা রাখা হতো। কিন্তু দুই মাস ধরে সেটি বন্ধ। দূরপাল্লার বাসগুলো আগের স্থানেই যাত্রী নামায়। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় উঁচু ডিভাইডার ডিঙিয়ে আঞ্চলিক লেনে যেতে হয় তাঁদের।
এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা মহাসড়কের এক লেন থেকে আরেক লেনে পারাপার করেন। প্রতিদিন শত শত যাত্রী জীবন হাতে নিয়ে এভাবে রাস্তা পার হন।
যাত্রীদের এই দুর্ভোগ দেখে এগিয়ে এসেছিলেন রবিউল ইসলাম। চট্টগ্রাম থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে এসে থাকতেন বোনের বাসায়। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিভাইডার ডিঙিয়ে যাত্রীদের পারাপারের দৃশ্য কয়েক দিন দেখার পর একটা বুদ্ধি খেলে যায় তাঁর মাথায়। দুটি মই কিনে ডিভাইডার পারাপারের স্থানে বসিয়ে দেন। মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে যাত্রীসেবা দিতে শুরু করেন। এতে উপকৃত হচ্ছিলেন বাসের যাত্রীরা, সেই সঙ্গে দুটো পয়সাও পকেটে আসছিল রবিউলের।
এমন সেবামূলক একটি ব্যবসার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে কেউ একজন ছড়িয়ে দেয়! এরপর শুরু হয় আলোচনা–সমালোচনা। কেউ কেউ রবিউলকে ‘সফল ব্যবসায়ী’, কেউ তাকে ‘ভিন্ন ধারার উদ্যোক্তা’ বলে রবিউলের পিঠ চাপড়ে দেন। তবে বিপত্তি বাঁধে ভিডিওটি যখন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার বেরসিক পুলিশের নজরে পড়ে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই উদ্যমী যুবককে আটক করে। একটি চমৎকার উদ্যোগ শুরুতেই শেষ হয়ে গেল!
রবিউলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে সোমবার (১৮ মার্চ) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এখানে চাঁদাবাজিটা কোথায়? রবিউল তো নিরুপায় বাসযাত্রীদের উপকার করে দুপয়সা কামাচ্ছিলেন। যাত্রীরা সেবার বিনিময়ে পাঁচটি করে টাকা দিতেন। রবিউল কারও সঙ্গে কি জবরদস্তি করেছেন? রমজান উপলক্ষে রবিউল যাত্রীপ্রতি ২০ টাকা করে চাইলেও সম্ভবত কেউ আপত্তি করতেন না!
সচেতন মানুষ ও সচেতনতার জ্ঞান বিতরকেরা বলছেন, রবিউল অন্যায় কাজ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরালজীবীদের কল্যাণে রবিউল দ্রুত ধরাও পড়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন আরও বড় অন্যায়ের খবর তো ভাইরাল হচ্ছে। তার বেলায় করিতকর্মা রাষ্ট্রের কর্মচারীরা কোথায় থাকেন!
রবিউলকে জেলহাজতে পাঠানোর পরদিনই সকাল থেকেই দেখা গেছে যাত্রীরা বহু কষ্টে ডিভাইডার ডিঙিয়ে রাস্তা পর হচ্ছে। অবশ্য সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় হয় হাইওয়ে পুলিশও। মহাসড়কের মাঝখানে যাত্রী নামানোর দায়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫৯টি দূরপাল্লার বাসের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
কিন্তু দুপুরের পর হাইওয়ে পুলিশে চলে গেলে দূরপাল্লার বাসগুলো আবার সেই আগের মতোই সড়কের মাঝে যাত্রী নামানো শুরু করে। যাত্রীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই আগের মতো করে ডিভাইডারের ওপর দিয়ে সড়ক পারাপার হন।
এ নিয়ে কয়েকজন বাসযাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি। ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছিলেন শাহানাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘বাস ড্রাইভারে আমারে রাস্তার মাঝখানে নামায় দিছে, এখন আমি এইটার ওপর দিয়া ছাড়া পার হমু কেমনে। আমার তো পার হওয়া লাগব। তাই এই ঝুঁকি নিয়ে এখন রাস্তা পার হইতাছি।’
আব্দুল রশিদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘আজকে অনেক দিন ধরে আমাকে এইভাবে সড়ক পারাপার করতে হয়, বাস ড্রাইভাররা পাশের লেনে যেতেই চায় না। তারা জোরপূর্বক আমাদের এখানে নামায় দেয়। তাই অসহায় হয়ে এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এখন মহাসড়ক পার হই। আমাদের এই দুঃখ দেখার মতো কেউ নাই।’
রবিউল কী করেছেন? তিনি সরকারি সংস্থার একটি অন্যায়, উদাসীন এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার সুযোগে আলু পোড়া খেয়েছেন। এই দুর্মূল্যের বাজারে দু–পয়সা কামানোর এমন সুযোগ গরিব মানুষ কেন ছাড়বে? রাস্তার শৃঙ্খলা, আইন, নীতি অতোকিছু তো রবিউলের মতো পরিবহন শ্রমিকদের বোঝার কথা নয়!
এরপরও রবিউল ঠিকই জেলহাজতে গেছেন। জামিন নিতেও হয়তো অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হবে। কিন্তু ডিভাইডার ডিঙিয়ে রাস্তা পারাপার তো বন্ধ হয়নি। রবিউল তো তাও পাঁচ টাকার বিনিময়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যে এতোবড় মৃত্যু ফাঁদ বানিয়ে রেখেছেন সেই দায় কে নেবে?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
দূর পাল্লার গাড়িগুলোর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা–চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কে উঁচু ডিভাইডার দিয়ে দুটি লেন আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। আঞ্চলিক যানবাহনের জন্য দুই পাশে রাখা হয়েছে দুটি লেন। ডিভাইডার বসানোর আগে দূরপাল্লার লেন থেকে আঞ্চলিক লেনে যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য সওজ কার্যালয়ের সামনে একটি গেট খোলা রাখা হতো। কিন্তু দুই মাস ধরে সেটি বন্ধ। দূরপাল্লার বাসগুলো আগের স্থানেই যাত্রী নামায়। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় উঁচু ডিভাইডার ডিঙিয়ে আঞ্চলিক লেনে যেতে হয় তাঁদের।
এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা মহাসড়কের এক লেন থেকে আরেক লেনে পারাপার করেন। প্রতিদিন শত শত যাত্রী জীবন হাতে নিয়ে এভাবে রাস্তা পার হন।
যাত্রীদের এই দুর্ভোগ দেখে এগিয়ে এসেছিলেন রবিউল ইসলাম। চট্টগ্রাম থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে এসে থাকতেন বোনের বাসায়। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডিভাইডার ডিঙিয়ে যাত্রীদের পারাপারের দৃশ্য কয়েক দিন দেখার পর একটা বুদ্ধি খেলে যায় তাঁর মাথায়। দুটি মই কিনে ডিভাইডার পারাপারের স্থানে বসিয়ে দেন। মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে যাত্রীসেবা দিতে শুরু করেন। এতে উপকৃত হচ্ছিলেন বাসের যাত্রীরা, সেই সঙ্গে দুটো পয়সাও পকেটে আসছিল রবিউলের।
এমন সেবামূলক একটি ব্যবসার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে কেউ একজন ছড়িয়ে দেয়! এরপর শুরু হয় আলোচনা–সমালোচনা। কেউ কেউ রবিউলকে ‘সফল ব্যবসায়ী’, কেউ তাকে ‘ভিন্ন ধারার উদ্যোক্তা’ বলে রবিউলের পিঠ চাপড়ে দেন। তবে বিপত্তি বাঁধে ভিডিওটি যখন কাঁচপুর হাইওয়ে থানার বেরসিক পুলিশের নজরে পড়ে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এই উদ্যমী যুবককে আটক করে। একটি চমৎকার উদ্যোগ শুরুতেই শেষ হয়ে গেল!
রবিউলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে পুলিশ। আদালতের মাধ্যমে সোমবার (১৮ মার্চ) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এখানে চাঁদাবাজিটা কোথায়? রবিউল তো নিরুপায় বাসযাত্রীদের উপকার করে দুপয়সা কামাচ্ছিলেন। যাত্রীরা সেবার বিনিময়ে পাঁচটি করে টাকা দিতেন। রবিউল কারও সঙ্গে কি জবরদস্তি করেছেন? রমজান উপলক্ষে রবিউল যাত্রীপ্রতি ২০ টাকা করে চাইলেও সম্ভবত কেউ আপত্তি করতেন না!
সচেতন মানুষ ও সচেতনতার জ্ঞান বিতরকেরা বলছেন, রবিউল অন্যায় কাজ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরালজীবীদের কল্যাণে রবিউল দ্রুত ধরাও পড়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন আরও বড় অন্যায়ের খবর তো ভাইরাল হচ্ছে। তার বেলায় করিতকর্মা রাষ্ট্রের কর্মচারীরা কোথায় থাকেন!
রবিউলকে জেলহাজতে পাঠানোর পরদিনই সকাল থেকেই দেখা গেছে যাত্রীরা বহু কষ্টে ডিভাইডার ডিঙিয়ে রাস্তা পর হচ্ছে। অবশ্য সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে সক্রিয় হয় হাইওয়ে পুলিশও। মহাসড়কের মাঝখানে যাত্রী নামানোর দায়ে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫৯টি দূরপাল্লার বাসের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।
কিন্তু দুপুরের পর হাইওয়ে পুলিশে চলে গেলে দূরপাল্লার বাসগুলো আবার সেই আগের মতোই সড়কের মাঝে যাত্রী নামানো শুরু করে। যাত্রীরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই আগের মতো করে ডিভাইডারের ওপর দিয়ে সড়ক পারাপার হন।
এ নিয়ে কয়েকজন বাসযাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি। ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছিলেন শাহানাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘বাস ড্রাইভারে আমারে রাস্তার মাঝখানে নামায় দিছে, এখন আমি এইটার ওপর দিয়া ছাড়া পার হমু কেমনে। আমার তো পার হওয়া লাগব। তাই এই ঝুঁকি নিয়ে এখন রাস্তা পার হইতাছি।’
আব্দুল রশিদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘আজকে অনেক দিন ধরে আমাকে এইভাবে সড়ক পারাপার করতে হয়, বাস ড্রাইভাররা পাশের লেনে যেতেই চায় না। তারা জোরপূর্বক আমাদের এখানে নামায় দেয়। তাই অসহায় হয়ে এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এখন মহাসড়ক পার হই। আমাদের এই দুঃখ দেখার মতো কেউ নাই।’
রবিউল কী করেছেন? তিনি সরকারি সংস্থার একটি অন্যায়, উদাসীন এবং অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার সুযোগে আলু পোড়া খেয়েছেন। এই দুর্মূল্যের বাজারে দু–পয়সা কামানোর এমন সুযোগ গরিব মানুষ কেন ছাড়বে? রাস্তার শৃঙ্খলা, আইন, নীতি অতোকিছু তো রবিউলের মতো পরিবহন শ্রমিকদের বোঝার কথা নয়!
এরপরও রবিউল ঠিকই জেলহাজতে গেছেন। জামিন নিতেও হয়তো অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হবে। কিন্তু ডিভাইডার ডিঙিয়ে রাস্তা পারাপার তো বন্ধ হয়নি। রবিউল তো তাও পাঁচ টাকার বিনিময়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যে এতোবড় মৃত্যু ফাঁদ বানিয়ে রেখেছেন সেই দায় কে নেবে?
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
রুমিন ফারহানা বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি সংরক্ষিত নারী আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯ ঘণ্টা আগেদেশে প্রতিবছর বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবায়নের সময় মাঝে মাঝে সংবাদ চোখে পড়ে যে প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে গাছ কাটা পড়ছে, বনভূমি উজাড় হচ্ছে, খাল ও জলাভূমি ভরাট হচ্ছে, নির্মাণস্থলে নির্মাণকাজের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, এমনকি কোনো কোনো প্রকল্প গ্রহণের ফলে পরিবেশের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব...
১৯ ঘণ্টা আগেপাহাড় রক্ষা করা যখন খুবই জরুরি, তখন সে পাহাড় কেটে গোটা অঞ্চলের জন্য বিপদ ডেকে আনছে একদল দুর্বৃত্ত। খাগড়াছড়ির পানছড়ি এলাকায় অবাধে পাহাড় কাটা হচ্ছে, অথচ সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দায়সারা বক্তব্য দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতাকে ঢাকার চেষ্টা করছেন।
১৯ ঘণ্টা আগে১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২ দিন আগে