রাজিউল হাসান

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার ঘটনা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। তবে বিক্ষোভ-পরবর্তী তিন বছরে শ্রীলঙ্কায় কী ঘটে গেছে, তা নিয়ে আলোচনা কমই হয়।
ব্যাপক দুর্নীতি আর সরকারের বিলাসী ব্যয়ের কারণে অর্থনীতি ধসে পড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠাই ছিল শ্রীলঙ্কার সেই বিক্ষোভের মূল কারণ। পাশাপাশি বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক কারণ ছিল এই ক্ষোভের পেছনে। যে সময় শ্রীলঙ্কার মানুষ ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিল, তখন দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল রেকর্ড ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ। দরিদ্র মানুষের জন্য যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দিন পার করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখন ধনীদের জীবন ছিল বিলাসিতায় ভরপুর। বিশেষ করে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের আশপাশের মানুষের জীবন যেন অর্থনীতির ভঙ্গুর দশার উল্টো সাক্ষ্য দিচ্ছিল। অথচ সাধারণ মানুষকে তখন জ্বালানি তেল কিনতেও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছিল। এমনকি কড়া রোদে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রাণহানির ঘটনাও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
একদিকে সাধারণের জীবন ওষ্ঠাগত, অন্যদিকে দেশজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছিল একের পর এক সুউচ্চ অট্টালিকা আর ভাস্কর্য। এর সবই হচ্ছিল ঋণের টাকায়। অর্থনীতি বোঝেন না—এমন সাধারণ মানুষও জানেন, সরকার যে ঋণ নেয় তার সুদসমেত পুরোটা চোকাতে হয় জনগণকেই, তার ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে দিন দিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নেমে এসেছিল শ্রীলঙ্কার জনগণ। বিক্ষোভে গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের পতনের পর শ্রীলঙ্কানরা আবার ঘরেও ফিরে যায়। রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির পার্লামেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। তারপর যেন ভিন্ন গল্প রচিত হতে শুরু করে দেশটিতে।
সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা এক মধুর সংকটে পড়েছে। অবশ্য সংকটটাকে ‘মধুর’ বলা হলেও তা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকরই। এই সংকটও দ্রব্যমূল্য নিয়ে। দেশটিতে ২০২২ সালের নভেম্বরেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এরপর ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্য কমে যেতে শুরু করে। দিন দিন এভাবে দ্রব্যমূল্য কমে যাওয়া, অর্থাৎ মূল্যসংকোচনও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। আর তাই তো শ্রীলঙ্কার সরকার উঠেপড়ে লেগেছে, কীভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়। পরপর দুই বছর এভাবে মূল্যসংকোচন অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছিল সরকারকে। অবশেষে দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বরে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড করেছে দেশটি। এ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। তার আগের মাসে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ এক বছর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে মূল্যসংকোচন ঘটেছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
আমি অর্থনীতি ততটা বুঝি না। তবে সামান্য পড়ালেখার সুবাদে এটুকু বুঝেছি, একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ বা তার খুব কাছাকাছি থাকা আবশ্যক। শ্রীলঙ্কার সরকার এখন সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আভাস দিয়েছে, দ্রব্যমূল্য এই বছর আরও বাড়বে এবং বছরের শেষ নাগাদ গিয়ে হয়তো মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করবে।
এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি ভূমিকা আছে। সংস্থাটি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দেশটিকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। সে অর্থের উপযুক্ত ব্যবহারের কারণে এভাবে এত অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো গেছে।
শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ হতে পারে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যারা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় যখন দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করে, সাধারণ মানুষ আবারও তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে। এদিকে ব্যবসা ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে পর্যটন। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা চলে পর্যটনকে। বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে সারা দুনিয়া থেকে পর্যটকেরা দেশটিতে ভ্রমণ করছেন। ফলে অর্থনীতির চাকা জোরেশোরে ঘুরতে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ।
অবশ্য অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা এখনই শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের কথা হলো, শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৮ মাস ধরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেসব চ্যালেঞ্জের অনেকগুলো এখনো রয়ে গেছে। এখন হয়তো মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ সাময়িক। দেশটির মূল চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো দুর্নীতি মোকাবিলা। কারণ, দুর্নীতি আর অর্থনীতির সরাসরি নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে এক শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি কথা প্রসঙ্গে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ধরো, ময়লা-আবর্জনা এসে একটি নালার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ময়লা পানি উপচে পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী?’ আমি জবাবে বলেছিলাম, ‘নালা পরিষ্কার করতে হবে।’ তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘এটা তো সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্থায়ী সমাধান হলো নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা এসে যেন নালাটি বন্ধ করে না দেয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনার উৎস বন্ধ করা।’ সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের এমন বক্তব্য সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে মনে করি। দুর্নীতি হলো সেই ময়লা-আবর্জনার উৎস, যা অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরে, জনসাধারণের জীবন বিপন্ন করে, রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। একটি রাষ্ট্র তখনই জনসাধারণের রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে, যখন সেই রাষ্ট্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথিত নয়, প্রকৃত অর্থেই যুদ্ধ শুরু করে।
আমরা সবাই জানি, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই কোনো দিন দুর্নীতিশূন্য হতে পারবে না। কিন্তু দুর্নীতিকে শূন্যের কোঠায় আনার লড়াইটা সব রাষ্ট্রই করতে পারে। শ্রীলঙ্কার সামনে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে দুর্নীতির কারণে দেশটিতে তিন বছর আগে জনসাধারণের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল, সেই দুর্নীতি যেন আর কোনো দিন ফের মাথাচাড়া না দেয়, সেটাই দেশটিকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার ঘটনা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। তবে বিক্ষোভ-পরবর্তী তিন বছরে শ্রীলঙ্কায় কী ঘটে গেছে, তা নিয়ে আলোচনা কমই হয়।
ব্যাপক দুর্নীতি আর সরকারের বিলাসী ব্যয়ের কারণে অর্থনীতি ধসে পড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠাই ছিল শ্রীলঙ্কার সেই বিক্ষোভের মূল কারণ। পাশাপাশি বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক কারণ ছিল এই ক্ষোভের পেছনে। যে সময় শ্রীলঙ্কার মানুষ ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিল, তখন দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল রেকর্ড ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ। দরিদ্র মানুষের জন্য যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দিন পার করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখন ধনীদের জীবন ছিল বিলাসিতায় ভরপুর। বিশেষ করে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের আশপাশের মানুষের জীবন যেন অর্থনীতির ভঙ্গুর দশার উল্টো সাক্ষ্য দিচ্ছিল। অথচ সাধারণ মানুষকে তখন জ্বালানি তেল কিনতেও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছিল। এমনকি কড়া রোদে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রাণহানির ঘটনাও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
একদিকে সাধারণের জীবন ওষ্ঠাগত, অন্যদিকে দেশজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছিল একের পর এক সুউচ্চ অট্টালিকা আর ভাস্কর্য। এর সবই হচ্ছিল ঋণের টাকায়। অর্থনীতি বোঝেন না—এমন সাধারণ মানুষও জানেন, সরকার যে ঋণ নেয় তার সুদসমেত পুরোটা চোকাতে হয় জনগণকেই, তার ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে দিন দিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নেমে এসেছিল শ্রীলঙ্কার জনগণ। বিক্ষোভে গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের পতনের পর শ্রীলঙ্কানরা আবার ঘরেও ফিরে যায়। রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির পার্লামেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। তারপর যেন ভিন্ন গল্প রচিত হতে শুরু করে দেশটিতে।
সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা এক মধুর সংকটে পড়েছে। অবশ্য সংকটটাকে ‘মধুর’ বলা হলেও তা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকরই। এই সংকটও দ্রব্যমূল্য নিয়ে। দেশটিতে ২০২২ সালের নভেম্বরেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এরপর ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্য কমে যেতে শুরু করে। দিন দিন এভাবে দ্রব্যমূল্য কমে যাওয়া, অর্থাৎ মূল্যসংকোচনও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। আর তাই তো শ্রীলঙ্কার সরকার উঠেপড়ে লেগেছে, কীভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়। পরপর দুই বছর এভাবে মূল্যসংকোচন অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছিল সরকারকে। অবশেষে দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বরে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড করেছে দেশটি। এ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। তার আগের মাসে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ এক বছর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে মূল্যসংকোচন ঘটেছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
আমি অর্থনীতি ততটা বুঝি না। তবে সামান্য পড়ালেখার সুবাদে এটুকু বুঝেছি, একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ বা তার খুব কাছাকাছি থাকা আবশ্যক। শ্রীলঙ্কার সরকার এখন সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আভাস দিয়েছে, দ্রব্যমূল্য এই বছর আরও বাড়বে এবং বছরের শেষ নাগাদ গিয়ে হয়তো মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করবে।
এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি ভূমিকা আছে। সংস্থাটি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দেশটিকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। সে অর্থের উপযুক্ত ব্যবহারের কারণে এভাবে এত অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো গেছে।
শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ হতে পারে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যারা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় যখন দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করে, সাধারণ মানুষ আবারও তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে। এদিকে ব্যবসা ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে পর্যটন। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা চলে পর্যটনকে। বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে সারা দুনিয়া থেকে পর্যটকেরা দেশটিতে ভ্রমণ করছেন। ফলে অর্থনীতির চাকা জোরেশোরে ঘুরতে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ।
অবশ্য অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা এখনই শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের কথা হলো, শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৮ মাস ধরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেসব চ্যালেঞ্জের অনেকগুলো এখনো রয়ে গেছে। এখন হয়তো মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ সাময়িক। দেশটির মূল চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো দুর্নীতি মোকাবিলা। কারণ, দুর্নীতি আর অর্থনীতির সরাসরি নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে এক শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি কথা প্রসঙ্গে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ধরো, ময়লা-আবর্জনা এসে একটি নালার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ময়লা পানি উপচে পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী?’ আমি জবাবে বলেছিলাম, ‘নালা পরিষ্কার করতে হবে।’ তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘এটা তো সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্থায়ী সমাধান হলো নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা এসে যেন নালাটি বন্ধ করে না দেয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনার উৎস বন্ধ করা।’ সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের এমন বক্তব্য সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে মনে করি। দুর্নীতি হলো সেই ময়লা-আবর্জনার উৎস, যা অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরে, জনসাধারণের জীবন বিপন্ন করে, রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। একটি রাষ্ট্র তখনই জনসাধারণের রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে, যখন সেই রাষ্ট্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথিত নয়, প্রকৃত অর্থেই যুদ্ধ শুরু করে।
আমরা সবাই জানি, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই কোনো দিন দুর্নীতিশূন্য হতে পারবে না। কিন্তু দুর্নীতিকে শূন্যের কোঠায় আনার লড়াইটা সব রাষ্ট্রই করতে পারে। শ্রীলঙ্কার সামনে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে দুর্নীতির কারণে দেশটিতে তিন বছর আগে জনসাধারণের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল, সেই দুর্নীতি যেন আর কোনো দিন ফের মাথাচাড়া না দেয়, সেটাই দেশটিকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক
রাজিউল হাসান

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার ঘটনা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। তবে বিক্ষোভ-পরবর্তী তিন বছরে শ্রীলঙ্কায় কী ঘটে গেছে, তা নিয়ে আলোচনা কমই হয়।
ব্যাপক দুর্নীতি আর সরকারের বিলাসী ব্যয়ের কারণে অর্থনীতি ধসে পড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠাই ছিল শ্রীলঙ্কার সেই বিক্ষোভের মূল কারণ। পাশাপাশি বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক কারণ ছিল এই ক্ষোভের পেছনে। যে সময় শ্রীলঙ্কার মানুষ ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিল, তখন দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল রেকর্ড ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ। দরিদ্র মানুষের জন্য যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দিন পার করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখন ধনীদের জীবন ছিল বিলাসিতায় ভরপুর। বিশেষ করে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের আশপাশের মানুষের জীবন যেন অর্থনীতির ভঙ্গুর দশার উল্টো সাক্ষ্য দিচ্ছিল। অথচ সাধারণ মানুষকে তখন জ্বালানি তেল কিনতেও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছিল। এমনকি কড়া রোদে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রাণহানির ঘটনাও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
একদিকে সাধারণের জীবন ওষ্ঠাগত, অন্যদিকে দেশজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছিল একের পর এক সুউচ্চ অট্টালিকা আর ভাস্কর্য। এর সবই হচ্ছিল ঋণের টাকায়। অর্থনীতি বোঝেন না—এমন সাধারণ মানুষও জানেন, সরকার যে ঋণ নেয় তার সুদসমেত পুরোটা চোকাতে হয় জনগণকেই, তার ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে দিন দিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নেমে এসেছিল শ্রীলঙ্কার জনগণ। বিক্ষোভে গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের পতনের পর শ্রীলঙ্কানরা আবার ঘরেও ফিরে যায়। রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির পার্লামেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। তারপর যেন ভিন্ন গল্প রচিত হতে শুরু করে দেশটিতে।
সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা এক মধুর সংকটে পড়েছে। অবশ্য সংকটটাকে ‘মধুর’ বলা হলেও তা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকরই। এই সংকটও দ্রব্যমূল্য নিয়ে। দেশটিতে ২০২২ সালের নভেম্বরেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এরপর ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্য কমে যেতে শুরু করে। দিন দিন এভাবে দ্রব্যমূল্য কমে যাওয়া, অর্থাৎ মূল্যসংকোচনও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। আর তাই তো শ্রীলঙ্কার সরকার উঠেপড়ে লেগেছে, কীভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়। পরপর দুই বছর এভাবে মূল্যসংকোচন অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছিল সরকারকে। অবশেষে দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বরে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড করেছে দেশটি। এ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। তার আগের মাসে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ এক বছর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে মূল্যসংকোচন ঘটেছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
আমি অর্থনীতি ততটা বুঝি না। তবে সামান্য পড়ালেখার সুবাদে এটুকু বুঝেছি, একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ বা তার খুব কাছাকাছি থাকা আবশ্যক। শ্রীলঙ্কার সরকার এখন সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আভাস দিয়েছে, দ্রব্যমূল্য এই বছর আরও বাড়বে এবং বছরের শেষ নাগাদ গিয়ে হয়তো মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করবে।
এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি ভূমিকা আছে। সংস্থাটি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দেশটিকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। সে অর্থের উপযুক্ত ব্যবহারের কারণে এভাবে এত অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো গেছে।
শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ হতে পারে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যারা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় যখন দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করে, সাধারণ মানুষ আবারও তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে। এদিকে ব্যবসা ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে পর্যটন। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা চলে পর্যটনকে। বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে সারা দুনিয়া থেকে পর্যটকেরা দেশটিতে ভ্রমণ করছেন। ফলে অর্থনীতির চাকা জোরেশোরে ঘুরতে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ।
অবশ্য অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা এখনই শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের কথা হলো, শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৮ মাস ধরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেসব চ্যালেঞ্জের অনেকগুলো এখনো রয়ে গেছে। এখন হয়তো মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ সাময়িক। দেশটির মূল চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো দুর্নীতি মোকাবিলা। কারণ, দুর্নীতি আর অর্থনীতির সরাসরি নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে এক শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি কথা প্রসঙ্গে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ধরো, ময়লা-আবর্জনা এসে একটি নালার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ময়লা পানি উপচে পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী?’ আমি জবাবে বলেছিলাম, ‘নালা পরিষ্কার করতে হবে।’ তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘এটা তো সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্থায়ী সমাধান হলো নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা এসে যেন নালাটি বন্ধ করে না দেয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনার উৎস বন্ধ করা।’ সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের এমন বক্তব্য সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে মনে করি। দুর্নীতি হলো সেই ময়লা-আবর্জনার উৎস, যা অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরে, জনসাধারণের জীবন বিপন্ন করে, রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। একটি রাষ্ট্র তখনই জনসাধারণের রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে, যখন সেই রাষ্ট্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথিত নয়, প্রকৃত অর্থেই যুদ্ধ শুরু করে।
আমরা সবাই জানি, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই কোনো দিন দুর্নীতিশূন্য হতে পারবে না। কিন্তু দুর্নীতিকে শূন্যের কোঠায় আনার লড়াইটা সব রাষ্ট্রই করতে পারে। শ্রীলঙ্কার সামনে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে দুর্নীতির কারণে দেশটিতে তিন বছর আগে জনসাধারণের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল, সেই দুর্নীতি যেন আর কোনো দিন ফের মাথাচাড়া না দেয়, সেটাই দেশটিকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা, সুইমিংপুলে সাঁতার কাটার ঘটনা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। তবে বিক্ষোভ-পরবর্তী তিন বছরে শ্রীলঙ্কায় কী ঘটে গেছে, তা নিয়ে আলোচনা কমই হয়।
ব্যাপক দুর্নীতি আর সরকারের বিলাসী ব্যয়ের কারণে অর্থনীতি ধসে পড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠাই ছিল শ্রীলঙ্কার সেই বিক্ষোভের মূল কারণ। পাশাপাশি বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি, রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুরবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ আরও অনেক কারণ ছিল এই ক্ষোভের পেছনে। যে সময় শ্রীলঙ্কার মানুষ ঘর ছেড়ে পথে নেমেছিল, তখন দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল রেকর্ড ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ। দরিদ্র মানুষের জন্য যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের কারণে দিন পার করা কঠিন হয়ে পড়েছিল, তখন ধনীদের জীবন ছিল বিলাসিতায় ভরপুর। বিশেষ করে ক্ষমতার ভরকেন্দ্রের আশপাশের মানুষের জীবন যেন অর্থনীতির ভঙ্গুর দশার উল্টো সাক্ষ্য দিচ্ছিল। অথচ সাধারণ মানুষকে তখন জ্বালানি তেল কিনতেও লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছিল। এমনকি কড়া রোদে দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে প্রাণহানির ঘটনাও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
একদিকে সাধারণের জীবন ওষ্ঠাগত, অন্যদিকে দেশজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছিল একের পর এক সুউচ্চ অট্টালিকা আর ভাস্কর্য। এর সবই হচ্ছিল ঋণের টাকায়। অর্থনীতি বোঝেন না—এমন সাধারণ মানুষও জানেন, সরকার যে ঋণ নেয় তার সুদসমেত পুরোটা চোকাতে হয় জনগণকেই, তার ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে দিন দিন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজপথে নেমে এসেছিল শ্রীলঙ্কার জনগণ। বিক্ষোভে গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকারের পতনের পর শ্রীলঙ্কানরা আবার ঘরেও ফিরে যায়। রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পালানোর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির পার্লামেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। তারপর যেন ভিন্ন গল্প রচিত হতে শুরু করে দেশটিতে।
সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, শ্রীলঙ্কা এক মধুর সংকটে পড়েছে। অবশ্য সংকটটাকে ‘মধুর’ বলা হলেও তা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকরই। এই সংকটও দ্রব্যমূল্য নিয়ে। দেশটিতে ২০২২ সালের নভেম্বরেই অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। এরপর ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্য কমে যেতে শুরু করে। দিন দিন এভাবে দ্রব্যমূল্য কমে যাওয়া, অর্থাৎ মূল্যসংকোচনও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। আর তাই তো শ্রীলঙ্কার সরকার উঠেপড়ে লেগেছে, কীভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো যায়। পরপর দুই বছর এভাবে মূল্যসংকোচন অনেকটা ভাবিয়ে তুলেছিল সরকারকে। অবশেষে দেশটিতে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বরে ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড করেছে দেশটি। এ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। তার আগের মাসে গত আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ এক বছর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে মূল্যসংকোচন ঘটেছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
আমি অর্থনীতি ততটা বুঝি না। তবে সামান্য পড়ালেখার সুবাদে এটুকু বুঝেছি, একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ বা তার খুব কাছাকাছি থাকা আবশ্যক। শ্রীলঙ্কার সরকার এখন সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক আভাস দিয়েছে, দ্রব্যমূল্য এই বছর আরও বাড়বে এবং বছরের শেষ নাগাদ গিয়ে হয়তো মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করবে।
এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি ভূমিকা আছে। সংস্থাটি ২০২৩ সালের শুরুর দিকে দেশটিকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। সে অর্থের উপযুক্ত ব্যবহারের কারণে এভাবে এত অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ানো গেছে।
শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই উদাহরণ হতে পারে। বিশ্বে এমন অনেক দেশ আছে, যারা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে লড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে শ্রীলঙ্কায় যখন দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করে, সাধারণ মানুষ আবারও তাদের ব্যয় বাড়িয়েছে। এদিকে ব্যবসা ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগ বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে পর্যটন। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলা চলে পর্যটনকে। বিক্ষোভ-পরবর্তী সময়ে সারা দুনিয়া থেকে পর্যটকেরা দেশটিতে ভ্রমণ করছেন। ফলে অর্থনীতির চাকা জোরেশোরে ঘুরতে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে শ্রীলঙ্কায় মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ।
অবশ্য অর্থনীতির বিশ্লেষকেরা এখনই শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে মানতে নারাজ। তাঁদের কথা হলো, শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৮ মাস ধরে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখছে। এর আগে ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সেসব চ্যালেঞ্জের অনেকগুলো এখনো রয়ে গেছে। এখন হয়তো মূল্যস্ফীতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে এই চ্যালেঞ্জ সাময়িক। দেশটির মূল চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো দুর্নীতি মোকাবিলা। কারণ, দুর্নীতি আর অর্থনীতির সরাসরি নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।
বেশ কয়েক বছর আগে এক শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি কথা প্রসঙ্গে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ধরো, ময়লা-আবর্জনা এসে একটি নালার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। ময়লা পানি উপচে পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ক্ষেত্রে সমাধান কী?’ আমি জবাবে বলেছিলাম, ‘নালা পরিষ্কার করতে হবে।’ তিনি হেসে বলেছিলেন, ‘এটা তো সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি কিংবা স্থায়ী সমাধান হলো নালা পরিষ্কারের পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা এসে যেন নালাটি বন্ধ করে না দেয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনার উৎস বন্ধ করা।’ সেই শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণের এমন বক্তব্য সবক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে মনে করি। দুর্নীতি হলো সেই ময়লা-আবর্জনার উৎস, যা অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরে, জনসাধারণের জীবন বিপন্ন করে, রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়। একটি রাষ্ট্র তখনই জনসাধারণের রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পারে, যখন সেই রাষ্ট্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথিত নয়, প্রকৃত অর্থেই যুদ্ধ শুরু করে।
আমরা সবাই জানি, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রই কোনো দিন দুর্নীতিশূন্য হতে পারবে না। কিন্তু দুর্নীতিকে শূন্যের কোঠায় আনার লড়াইটা সব রাষ্ট্রই করতে পারে। শ্রীলঙ্কার সামনে এটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে দুর্নীতির কারণে দেশটিতে তিন বছর আগে জনসাধারণের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছিল, সেই দুর্নীতি যেন আর কোনো দিন ফের মাথাচাড়া না দেয়, সেটাই দেশটিকে নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের
১৩ মিনিট আগে
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি ঠিক সেই মুহূর্তের মতো, যখন কেউ ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে পথ খোঁজে। পথ আছে, আলোও আছে কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেটা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ভাবে, ‘আমার জীবনে সমস্যা আছে’। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা কোনো সমস্যা নয়, বরং বড় হওয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।
২১ মিনিট আগে
বিষ্ণু দে কাব্যসাধনার একেবারে শুরুতে ‘মহাভারত’ পাঠের অভিজ্ঞতার সূত্রে খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনন্য ‘শান্ত কর্মৈষণা’, যা কিনা নানা ধরনের পরিবর্তনের, দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চেতনায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে। সে-সঙ্গে এটিও দেখতে পাই যে দ্বন্দ্বের
২৬ মিনিট আগে
ট্রেনের ছাদে ওঠা যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার সময়ে আমাদের দেশের বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো যানবাহনের ছাদে উঠে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসার দৃশ্য খুব সাধারণ বিষয়। এভাবে ভ্রমণ করলে ঝুঁকিও থাকে। লঞ্চডুবি, বাস উল্টে খাদে পড়া কিংবা ট্রেনের ছাদ থেকে
৩৩ মিনিট আগেআল শাহারিয়া

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো মেগা সিটিগুলো ভয়াবহ বিপদের মুখে আছে। ভূমিকম্পের সময় মাটির তরলীকরণ বা লিকুইফেকশনের ঝুঁকি এ ক্ষেত্রে বহুগুণ বেশি। রিখটার স্কেলে বড় মাত্রার কোনো কম্পন হলে এই শহরগুলোর পরিণতি কল্পনা করাও কঠিন।
যেহেতু ভূমিকম্পের সেই অর্থে কোনো আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়, তাই এর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে টেকসই নগর নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষার প্রসার ঘটানো এখন সময়ের দাবি। একটি শহর তখন টেকসই হয়, যখন তা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। আর এই সক্ষমতা অর্জন করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষায়িত জ্ঞান অপরিহার্য। এটি কেবল তাত্ত্বিক বিষয় নয়, বরং বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার এক সমন্বয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা জানেন, কীভাবে মাটির গঠন পরীক্ষা করতে হয় এবং হ্যাজার্ড ম্যাপ তৈরি করে এলাকার বিপদাপন্ন অবস্থা যাচাই করতে হয়।
নগর-পরিকল্পনায় এবং ভবন নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে এই জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-১১ অর্জনেও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বা ডিআরআরের কোনো বিকল্প নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাস করা একজন গ্র্যাজুয়েট জানেন, কীভাবে প্রি-ডিজাস্টার এবং পোস্ট-ডিজাস্টার পরিকল্পনা সাজাতে হয়। ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ কীভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং কীভাবে দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করা যাবে, সে বিষয়ে তাঁদের স্বচ্ছ ধারণা থাকে। তাই কেবল উদ্ধারকর্মী হিসেবে নয়, বরং পলিসিমেকার কিংবা নীতিনির্ধারক হিসেবেও এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা কাজে আসতে পারেন।
তবে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। জাপানের মতো আমাদের দেশেও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। ভূমিকম্পের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার বাহিনী পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। তাই সাধারণ মানুষকে বেসিক লাইফ সাপোর্ট এবং সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
প্রকৃতি বারবার আমাদের সতর্ক করছে। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ না করি, তবে ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দিতে হবে। একটি দুর্যোগ-সহনশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতি ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো মেগা সিটিগুলো ভয়াবহ বিপদের মুখে আছে। ভূমিকম্পের সময় মাটির তরলীকরণ বা লিকুইফেকশনের ঝুঁকি এ ক্ষেত্রে বহুগুণ বেশি। রিখটার স্কেলে বড় মাত্রার কোনো কম্পন হলে এই শহরগুলোর পরিণতি কল্পনা করাও কঠিন।
যেহেতু ভূমিকম্পের সেই অর্থে কোনো আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়, তাই এর ক্ষয়ক্ষতি কমাতে টেকসই নগর নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষার প্রসার ঘটানো এখন সময়ের দাবি। একটি শহর তখন টেকসই হয়, যখন তা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। আর এই সক্ষমতা অর্জন করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক বিশেষায়িত জ্ঞান অপরিহার্য। এটি কেবল তাত্ত্বিক বিষয় নয়, বরং বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার এক সমন্বয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা জানেন, কীভাবে মাটির গঠন পরীক্ষা করতে হয় এবং হ্যাজার্ড ম্যাপ তৈরি করে এলাকার বিপদাপন্ন অবস্থা যাচাই করতে হয়।
নগর-পরিকল্পনায় এবং ভবন নির্মাণে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি না, তা তদারক করতে এই জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-১১ অর্জনেও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস বা ডিআরআরের কোনো বিকল্প নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাস করা একজন গ্র্যাজুয়েট জানেন, কীভাবে প্রি-ডিজাস্টার এবং পোস্ট-ডিজাস্টার পরিকল্পনা সাজাতে হয়। ভূমিকম্পের পর উদ্ধারকাজ কীভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং কীভাবে দ্রুততম সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করা যাবে, সে বিষয়ে তাঁদের স্বচ্ছ ধারণা থাকে। তাই কেবল উদ্ধারকর্মী হিসেবে নয়, বরং পলিসিমেকার কিংবা নীতিনির্ধারক হিসেবেও এ বিষয়ের শিক্ষার্থীরা কাজে আসতে পারেন।
তবে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। জাপানের মতো আমাদের দেশেও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। ভূমিকম্পের পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেশাদার বাহিনী পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। তাই সাধারণ মানুষকে বেসিক লাইফ সাপোর্ট এবং সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এ ক্ষেত্রে মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
প্রকৃতি বারবার আমাদের সতর্ক করছে। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ না করি, তবে ভবিষ্যতে চড়া মূল্য দিতে হবে। একটি দুর্যোগ-সহনশীল ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জ্ঞানভিত্তিক প্রস্তুতি ও জনসচেতনতার বিকল্প নেই।

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা...
০৯ অক্টোবর ২০২৫
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি ঠিক সেই মুহূর্তের মতো, যখন কেউ ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে পথ খোঁজে। পথ আছে, আলোও আছে কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেটা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ভাবে, ‘আমার জীবনে সমস্যা আছে’। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা কোনো সমস্যা নয়, বরং বড় হওয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।
২১ মিনিট আগে
বিষ্ণু দে কাব্যসাধনার একেবারে শুরুতে ‘মহাভারত’ পাঠের অভিজ্ঞতার সূত্রে খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনন্য ‘শান্ত কর্মৈষণা’, যা কিনা নানা ধরনের পরিবর্তনের, দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চেতনায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে। সে-সঙ্গে এটিও দেখতে পাই যে দ্বন্দ্বের
২৬ মিনিট আগে
ট্রেনের ছাদে ওঠা যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার সময়ে আমাদের দেশের বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো যানবাহনের ছাদে উঠে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসার দৃশ্য খুব সাধারণ বিষয়। এভাবে ভ্রমণ করলে ঝুঁকিও থাকে। লঞ্চডুবি, বাস উল্টে খাদে পড়া কিংবা ট্রেনের ছাদ থেকে
৩৩ মিনিট আগেমিতু আক্তার তানজিলা

আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি ঠিক সেই মুহূর্তের মতো, যখন কেউ ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে পথ খোঁজে। পথ আছে, আলোও আছে কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেটা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ভাবে, ‘আমার জীবনে সমস্যা আছে’। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা কোনো সমস্যা নয়, বরং বড় হওয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।
কারণ, বিভ্রান্তি প্রমাণ করে তুমি ভাবছ, খুঁজছ, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিরিয়াস হয়ে উঠেছ। যারা কখনো চিন্তা করে না, তাদের বিভ্রান্তিও হয় না। বিভ্রান্তি আসলে সেই প্রথম দরজাটা, যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি, ‘আমি সত্যিই কী চাই’।
অনেকে মনে করে, ক্যারিয়ার মানেই একটা ঠিকঠাক, স্পষ্ট পথ; যার মানচিত্র সবাই নাকি আগেই জানে। বাস্তবে বিষয়টা একদমই এমন নয়। সবাই চেষ্টা করে, ভুল করে, আবার উঠে দাঁড়ায়—তারপর ধীরে ধীরে বুঝে যায়, কোনটা নিজের সঙ্গে মানায়, আর কোনটা মানায় না। চেষ্টা না করলে দিনের শেষে জানা যায় না, কোন পথটা সত্যি তোমার জন্য।
ছোট একটি কাজ, একটি কোর্স কিংবা মাত্র একটুখানি অভিজ্ঞতাও তোমার ভেতরের কুয়াশা সরাতে বড় ভূমিকা রাখে। বাস্তবের স্পর্শ যত বাড়ে, সিদ্ধান্তও ততটাই পরিষ্কার হয়।
ক্যারিয়ার সব সময় বড় কোনো সিদ্ধান্তের নাম নয়, বরং অসংখ্য ছোট নির্বাচনের যোগফল। আজ কিছু শিখলে, কাল একটু সাহস করে এগোলে, পরশু কারও কাছ থেকে জ্ঞান নিলে—এভাবেই তৈরি হতে থাকে তোমার পথের ভিত। আর ভিত মজবুত হলেই সিদ্ধান্ত নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথমেই জানতে হবে, তোমার আসল আগ্রহ কোথায়? কোন কাজ করতে গেলে সময়ের হিসাব ভুলে যাও, কোন বিষয়ে প্রাণে উত্তেজনা আসে—এই ছোট অনুভূতিগুলোই আসল দিকনির্দেশনা দেয়। আগ্রহ ও দক্ষতা যেখানে মিল খুঁজে পায়, সেখানেই সাধারণত জন্ম নেয় সন্তোষজনক ও স্থায়ী ক্যারিয়ার।
এরপর দরকার খোঁজখবর। তুমি যেসব ক্ষেত্র ভাবছ, সেগুলোর কাজের পরিবেশ কেমন, মানুষ কী ধরনের কাজ করে, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটা—এসব জেনে নিলে বিভ্রান্তি অনেকটাই কমে যায়।
শেষ পর্যন্ত সমাধান শুরু হয় নিজেকে বোঝা থেকে। কোন কাজ তোমাকে ক্লান্ত করে না, বরং জীবন্ত করে তোলে—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমাকে তোমার পথে টেনে নিয়ে যাবে। তোমার নিজের ভেতরের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দাও। বুঝতে পারবে, পথটা আসলে তোমার সরল চোখের সামনেই ছিল।
সমাধান লুকিয়ে থাকে আত্মবিশ্বাসে, ধৈর্যে এবং নিজের ভয়কে অতিক্রম করার ছোট ছোট সাহসে। তুমি যখন অল্প অল্প করে এগোতে থাকবে, কুয়াশা একসময় আপনাতেই মিলিয়ে যাবে।
ক্যারিয়ার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নয় যে একবার ভুল হলে পথ শেষ। মানুষ সময়ের সঙ্গে বদলায়, শেখে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে—আর তার সঙ্গে দিকও বদলায়। তাই বিভ্রান্তি মানে পথ হারানো নয়; বরং নতুন পথ খুঁজে পাওয়ার সূচনা।

আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি ঠিক সেই মুহূর্তের মতো, যখন কেউ ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে পথ খোঁজে। পথ আছে, আলোও আছে কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেটা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ভাবে, ‘আমার জীবনে সমস্যা আছে’। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা কোনো সমস্যা নয়, বরং বড় হওয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।
কারণ, বিভ্রান্তি প্রমাণ করে তুমি ভাবছ, খুঁজছ, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিরিয়াস হয়ে উঠেছ। যারা কখনো চিন্তা করে না, তাদের বিভ্রান্তিও হয় না। বিভ্রান্তি আসলে সেই প্রথম দরজাটা, যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি, ‘আমি সত্যিই কী চাই’।
অনেকে মনে করে, ক্যারিয়ার মানেই একটা ঠিকঠাক, স্পষ্ট পথ; যার মানচিত্র সবাই নাকি আগেই জানে। বাস্তবে বিষয়টা একদমই এমন নয়। সবাই চেষ্টা করে, ভুল করে, আবার উঠে দাঁড়ায়—তারপর ধীরে ধীরে বুঝে যায়, কোনটা নিজের সঙ্গে মানায়, আর কোনটা মানায় না। চেষ্টা না করলে দিনের শেষে জানা যায় না, কোন পথটা সত্যি তোমার জন্য।
ছোট একটি কাজ, একটি কোর্স কিংবা মাত্র একটুখানি অভিজ্ঞতাও তোমার ভেতরের কুয়াশা সরাতে বড় ভূমিকা রাখে। বাস্তবের স্পর্শ যত বাড়ে, সিদ্ধান্তও ততটাই পরিষ্কার হয়।
ক্যারিয়ার সব সময় বড় কোনো সিদ্ধান্তের নাম নয়, বরং অসংখ্য ছোট নির্বাচনের যোগফল। আজ কিছু শিখলে, কাল একটু সাহস করে এগোলে, পরশু কারও কাছ থেকে জ্ঞান নিলে—এভাবেই তৈরি হতে থাকে তোমার পথের ভিত। আর ভিত মজবুত হলেই সিদ্ধান্ত নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রথমেই জানতে হবে, তোমার আসল আগ্রহ কোথায়? কোন কাজ করতে গেলে সময়ের হিসাব ভুলে যাও, কোন বিষয়ে প্রাণে উত্তেজনা আসে—এই ছোট অনুভূতিগুলোই আসল দিকনির্দেশনা দেয়। আগ্রহ ও দক্ষতা যেখানে মিল খুঁজে পায়, সেখানেই সাধারণত জন্ম নেয় সন্তোষজনক ও স্থায়ী ক্যারিয়ার।
এরপর দরকার খোঁজখবর। তুমি যেসব ক্ষেত্র ভাবছ, সেগুলোর কাজের পরিবেশ কেমন, মানুষ কী ধরনের কাজ করে, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কতটা—এসব জেনে নিলে বিভ্রান্তি অনেকটাই কমে যায়।
শেষ পর্যন্ত সমাধান শুরু হয় নিজেকে বোঝা থেকে। কোন কাজ তোমাকে ক্লান্ত করে না, বরং জীবন্ত করে তোলে—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমাকে তোমার পথে টেনে নিয়ে যাবে। তোমার নিজের ভেতরের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দাও। বুঝতে পারবে, পথটা আসলে তোমার সরল চোখের সামনেই ছিল।
সমাধান লুকিয়ে থাকে আত্মবিশ্বাসে, ধৈর্যে এবং নিজের ভয়কে অতিক্রম করার ছোট ছোট সাহসে। তুমি যখন অল্প অল্প করে এগোতে থাকবে, কুয়াশা একসময় আপনাতেই মিলিয়ে যাবে।
ক্যারিয়ার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নয় যে একবার ভুল হলে পথ শেষ। মানুষ সময়ের সঙ্গে বদলায়, শেখে, নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে—আর তার সঙ্গে দিকও বদলায়। তাই বিভ্রান্তি মানে পথ হারানো নয়; বরং নতুন পথ খুঁজে পাওয়ার সূচনা।

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা...
০৯ অক্টোবর ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের
১৩ মিনিট আগে
বিষ্ণু দে কাব্যসাধনার একেবারে শুরুতে ‘মহাভারত’ পাঠের অভিজ্ঞতার সূত্রে খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনন্য ‘শান্ত কর্মৈষণা’, যা কিনা নানা ধরনের পরিবর্তনের, দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চেতনায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে। সে-সঙ্গে এটিও দেখতে পাই যে দ্বন্দ্বের
২৬ মিনিট আগে
ট্রেনের ছাদে ওঠা যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার সময়ে আমাদের দেশের বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো যানবাহনের ছাদে উঠে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসার দৃশ্য খুব সাধারণ বিষয়। এভাবে ভ্রমণ করলে ঝুঁকিও থাকে। লঞ্চডুবি, বাস উল্টে খাদে পড়া কিংবা ট্রেনের ছাদ থেকে
৩৩ মিনিট আগেসৌভিক রেজা

বিষ্ণু দে কাব্যসাধনার একেবারে শুরুতে ‘মহাভারত’ পাঠের অভিজ্ঞতার সূত্রে খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনন্য ‘শান্ত কর্মৈষণা’, যা কিনা নানা ধরনের পরিবর্তনের, দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চেতনায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে। সে-সঙ্গে এটিও দেখতে পাই যে দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের ভেতর দিয়ে বিষ্ণু দের কাব্যচেতনার মূলসূত্র ক্রমাগত একটা দৃঢ়তর ভিত্তি পেয়েছে। এই প্রবণতার ভেতরে সরলীকরণের কোনো ঝোঁক কিন্তু কখনো দেখা যায় না। বস্তুত তাঁর কাব্যচিন্তায় যেকোনো ধরনের সরলীকরণের বিপক্ষে ছিলেন বিষ্ণু দে। সরলীকরণের ঝোঁকটাকে তাঁর কাছে মনে হয়েছে একধরনের ‘ভাববিলাসের’ প্রতি মোহ, যা কিনা গভীর কোনো ভাববিন্যাসের দিকে মানুষকে কখনো নিয়ে যায় না। সে-কারণেই কি সাহিত্যবিচারের ক্ষেত্রে, কি ঐতিহ্যচেতনার দিক থেকে, চৈতন্যের জটিলতাকে বিষ্ণু দে কখনোই এড়িয়ে যাননি; বরং জটিলতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি তাকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন, পর্যালোচনা করতে উৎসাহিত বোধ করেছেন।
বিষ্ণু দে যৌক্তিকভাবেই মনে করতেন, ‘আমাদের ইতিহাস মোটেই সরল নয়, তাতে কালের ও নানা পাত্রের নানান জট...যেমন ইতিহাসে তেমনি স্বতন্ত্রভাবে সাহিত্যবিচারেও জট আমাদের খুলতে হবে।’ নানা সময়ের এসব বিভিন্ন জট খোলার প্রত্যয়ে স্থিত ছিলেন বলেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘সঙ্গত দৃষ্টির ও আপেক্ষিক উক্তির জটিল ও ধৈর্যশীল পথেই আমাদের ভবিষ্যৎ, যান্ত্রিক প্রয়োগের লোভে বা ভাববিলাসের আশু-তৃপ্তিতে দক্ষিণ থেকে বাম, বাম থেকে দক্ষিণাচারে যেন আমরা না-ভুলি।’ এইভাবে নিজস্ব পথরেখায় স্থিত রাখতে মার্ক্সবাদী নন্দনতত্ত্ব কবিকে সামর্থ্য জুগিয়েছিল।
আমাদের এটিও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কি জীবনে কি সাহিত্য-চিন্তায় সব রকমের উগ্র মতবাদের বিরোধী ছিলেন বিষ্ণু দে। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, পরিপ্রেক্ষিতহীন যেকোনো ধরনের উগ্র মতবাদ শিল্প-সাহিত্যে, এমনকি স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বের বিকাশের পক্ষেও প্রতিকূল। আর সে-কারণেই তিনি মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী হয়েও সেই দর্শনের যান্ত্রিক প্রয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘মার্ক্সিয় দর্শনে...চিরকালের জন্য একবার অর্জিত অভ্যাসের যান্ত্রিকতা অচল। সে-দর্শনের ভিত্তিই হচ্ছে চিরদ্বৈতাদ্বৈতের গতিশীল জীবন্ত পরিণতিতে, প্রথাসিদ্ধ দার্শনিকতার জড় অবসর মার্ক্সিজমে নেই।’ প্রথাসিদ্ধতার জড় অবসরের হাতে পড়বার কারণেই সারা বিশ্বে মার্ক্সবাদ আজ তার অস্তিত্বের সংকটে পতিত—এই সত্যিটা আজ আমাদের বুঝে নিতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। বিশেষ কোনো মতবাদে কখনোই চরম আস্থা স্থাপন করেনি বলেই হয়তো সাহিত্যের পাশাপাশি কবি বিষ্ণু দের বন্ধুত্বের পরিবৃত্তটি ছিল বেশ বিচিত্র। সেখানে কমিউনিস্ট-বিরোধী সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন একেবারেই রাজনীতিবিমুখ বুদ্ধদেব বসু। আবার কমিউনিস্ট বা কমিউনিস্টদের প্রতি সহানুভূতিশীল হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন, চঞ্চলকুমার চট্টোপাধ্যায়—এঁরাও ছিলেন। বন্ধুত্বের এই বিচিত্র-বৃত্তটি ছিল বিষ্ণু দের ব্যক্তিত্বের সমগ্রতারই পরিচায়ক। কাউকেই বর্জন করে নয়; বরং সবাইকে নিয়েই আত্মবিকাশের ও আত্মপ্রকাশের একটা নিরন্তর তাগিদ নিজের মধ্যে সব সময় অনুভব করেছেন এই কবি। ব্যক্তিক সমন্বয়ের এই উদাহরণ নিয়েই তিনি শুধু সন্তুষ্ট ছিলেন না; তাঁর সাহিত্যচেতনার মধ্যেও আমরা দেখতে পাই সেই বৈচিত্র্যের সমাহার।
দেশ-বিদেশের নানা জাতের সাহিত্য থেকে শুরু করে আমাদের লোকসাহিত্য, আদিবাসীদের সাহিত্য, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের অবহেলিত সাহিত্যের প্রতিও কবি বিষ্ণু দের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। এ ছাড়া চিত্রকলা, সংগীত—এসবকেও বিষ্ণু দে তাঁর কবিতা তথা নন্দনবিশ্বের সঙ্গে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর সে কারণেই যামিনী রায়ের মতো চিত্রশিল্পী তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। যামিনী
রায় সম্পর্কে বিষ্ণু দে বলেছেন, ‘যামিনী রায়ের চিত্রসাধনায় যে শুধু আমাদের শিল্পের মুক্তি, তা-ই নয়, আমাদের সাধারণ বাংলার মানুষের চোখের আনন্দে তিনি আমাদের মনোজগৎকেও রূপ দিয়েছেন—দৃশ্যপথে। এবং এই আনন্দ যেহেতু দেশের আনন্দে, মানুষের শান্তিতে প্রসাদে মৃন্ময়; তাই আমরা সবাই তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।...যামিনী রায়ের শান্ত ও রঙিন চিত্রলোক আমাদের যেন সেই নিশান নির্দেশে সমৃদ্ধ করে—আমাদের দ্বিধান্বিত অসম্পূর্ণতায়, গৌণতার গ্লানির মধ্যে অপরাজেয়।’ এইভাবে একজন চিত্রশিল্পীর প্রতি শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েই বিষ্ণু দে তাঁর দায়িত্ব শেষ করতে চাননি। বরং এই চিত্রকলার এই দায়বোধকে তিনি তাঁর কবিতার মধ্যেও আত্মস্থ করে নিতে চেয়েছেন।
বিষ্ণু দের মতো একজন নিরন্তর সৃষ্টিশীল কবি, সংবেদনশীল মানুষের কাছে সংগীতের ভূমিকা কতখানি ছিল, সেটি জিষ্ণু দের সাক্ষ্য থেকে আরও একবার বুঝে নেওয়া যেতে পারে। কবি-পুত্র আমাদের জানিয়েছেন, ‘আমার বাবার কাছে কবিতা লেখা ও “গান শোনা’’ একই রকম ছিল।’ অন্যদিকে প্রয়াত সমালোচক অরুণ সেনের মতে, বিষ্ণু দের কবিসত্তার মধ্যেই নিহিত ছিল ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল সংগীতের ‘বহুধা বৈচিত্র্য’; তিনি অবশ্য এটিও স্বীকার করেছেন যে পাশ্চাত্য সিম্ফনি ও ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত—এই দুই ঐতিহ্যের সংগীতই জীবনের দ্বন্দ্ব ও উত্তীর্ণ সুষমাকে প্রকাশ করেছে বিষ্ণু দের কবিতা। এইভাবেই ঐতিহ্যের প্রবহমানতা বজায় রেখে রাজনীতি, চিত্রকলা থেকে থেকে সংগীত—সবকিছু মিলিয়ে জীবনের সমগ্রতাকে নিরূপণ করতে চেয়েছিলেন বিষ্ণু দে। আর এসবের মধ্য দিয়ে এই কবির রুচির সমগ্রতাকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
‘সমগ্রতার এই বোধ’ তাঁর চেতনার কতটা গভীরে বিস্তৃত সেটা বুঝে নিতে পারা যায়, বিষ্ণু দে যখন বলেন, যদি কারও শুধু আধুনিক সংগীত ভালো লাগে অথচ আধুনিক কাব্য বা চিত্র অসহ্য মনে হয়, তাহলে তাঁর সততায় বা তাঁর স্বভাবের সমগ্রতায় সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। যাকে বিষ্ণু দে বলেছেন স্বভাবের সমগ্রতা, সেটা যে একজন মানুষের রুচির সমগ্রতারই রকমফের, সেটি লেখাই বাহুল্য।
৩ ডিসেম্বর কবির প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।
![বিষ্ণু দে [জন্ম: ১৮ জুলাই ১৯০৯; মৃত্যু ৩ ডিসেম্বর ১৯৮২]](https://images.ajkerpatrika.com/original_images/bishnu.jpg)
বিষ্ণু দে কাব্যসাধনার একেবারে শুরুতে ‘মহাভারত’ পাঠের অভিজ্ঞতার সূত্রে খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনন্য ‘শান্ত কর্মৈষণা’, যা কিনা নানা ধরনের পরিবর্তনের, দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চেতনায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে। সে-সঙ্গে এটিও দেখতে পাই যে দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের ভেতর দিয়ে বিষ্ণু দের কাব্যচেতনার মূলসূত্র ক্রমাগত একটা দৃঢ়তর ভিত্তি পেয়েছে। এই প্রবণতার ভেতরে সরলীকরণের কোনো ঝোঁক কিন্তু কখনো দেখা যায় না। বস্তুত তাঁর কাব্যচিন্তায় যেকোনো ধরনের সরলীকরণের বিপক্ষে ছিলেন বিষ্ণু দে। সরলীকরণের ঝোঁকটাকে তাঁর কাছে মনে হয়েছে একধরনের ‘ভাববিলাসের’ প্রতি মোহ, যা কিনা গভীর কোনো ভাববিন্যাসের দিকে মানুষকে কখনো নিয়ে যায় না। সে-কারণেই কি সাহিত্যবিচারের ক্ষেত্রে, কি ঐতিহ্যচেতনার দিক থেকে, চৈতন্যের জটিলতাকে বিষ্ণু দে কখনোই এড়িয়ে যাননি; বরং জটিলতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি তাকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন, পর্যালোচনা করতে উৎসাহিত বোধ করেছেন।
বিষ্ণু দে যৌক্তিকভাবেই মনে করতেন, ‘আমাদের ইতিহাস মোটেই সরল নয়, তাতে কালের ও নানা পাত্রের নানান জট...যেমন ইতিহাসে তেমনি স্বতন্ত্রভাবে সাহিত্যবিচারেও জট আমাদের খুলতে হবে।’ নানা সময়ের এসব বিভিন্ন জট খোলার প্রত্যয়ে স্থিত ছিলেন বলেই তিনি সতর্কতার সঙ্গে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘সঙ্গত দৃষ্টির ও আপেক্ষিক উক্তির জটিল ও ধৈর্যশীল পথেই আমাদের ভবিষ্যৎ, যান্ত্রিক প্রয়োগের লোভে বা ভাববিলাসের আশু-তৃপ্তিতে দক্ষিণ থেকে বাম, বাম থেকে দক্ষিণাচারে যেন আমরা না-ভুলি।’ এইভাবে নিজস্ব পথরেখায় স্থিত রাখতে মার্ক্সবাদী নন্দনতত্ত্ব কবিকে সামর্থ্য জুগিয়েছিল।
আমাদের এটিও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে কি জীবনে কি সাহিত্য-চিন্তায় সব রকমের উগ্র মতবাদের বিরোধী ছিলেন বিষ্ণু দে। তাঁর কাছে মনে হয়েছে, পরিপ্রেক্ষিতহীন যেকোনো ধরনের উগ্র মতবাদ শিল্প-সাহিত্যে, এমনকি স্বাধীনচেতা ব্যক্তিত্বের বিকাশের পক্ষেও প্রতিকূল। আর সে-কারণেই তিনি মার্ক্সবাদে বিশ্বাসী হয়েও সেই দর্শনের যান্ত্রিক প্রয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘মার্ক্সিয় দর্শনে...চিরকালের জন্য একবার অর্জিত অভ্যাসের যান্ত্রিকতা অচল। সে-দর্শনের ভিত্তিই হচ্ছে চিরদ্বৈতাদ্বৈতের গতিশীল জীবন্ত পরিণতিতে, প্রথাসিদ্ধ দার্শনিকতার জড় অবসর মার্ক্সিজমে নেই।’ প্রথাসিদ্ধতার জড় অবসরের হাতে পড়বার কারণেই সারা বিশ্বে মার্ক্সবাদ আজ তার অস্তিত্বের সংকটে পতিত—এই সত্যিটা আজ আমাদের বুঝে নিতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। বিশেষ কোনো মতবাদে কখনোই চরম আস্থা স্থাপন করেনি বলেই হয়তো সাহিত্যের পাশাপাশি কবি বিষ্ণু দের বন্ধুত্বের পরিবৃত্তটি ছিল বেশ বিচিত্র। সেখানে কমিউনিস্ট-বিরোধী সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন একেবারেই রাজনীতিবিমুখ বুদ্ধদেব বসু। আবার কমিউনিস্ট বা কমিউনিস্টদের প্রতি সহানুভূতিশীল হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন, চঞ্চলকুমার চট্টোপাধ্যায়—এঁরাও ছিলেন। বন্ধুত্বের এই বিচিত্র-বৃত্তটি ছিল বিষ্ণু দের ব্যক্তিত্বের সমগ্রতারই পরিচায়ক। কাউকেই বর্জন করে নয়; বরং সবাইকে নিয়েই আত্মবিকাশের ও আত্মপ্রকাশের একটা নিরন্তর তাগিদ নিজের মধ্যে সব সময় অনুভব করেছেন এই কবি। ব্যক্তিক সমন্বয়ের এই উদাহরণ নিয়েই তিনি শুধু সন্তুষ্ট ছিলেন না; তাঁর সাহিত্যচেতনার মধ্যেও আমরা দেখতে পাই সেই বৈচিত্র্যের সমাহার।
দেশ-বিদেশের নানা জাতের সাহিত্য থেকে শুরু করে আমাদের লোকসাহিত্য, আদিবাসীদের সাহিত্য, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের অবহেলিত সাহিত্যের প্রতিও কবি বিষ্ণু দের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। এ ছাড়া চিত্রকলা, সংগীত—এসবকেও বিষ্ণু দে তাঁর কবিতা তথা নন্দনবিশ্বের সঙ্গে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর সে কারণেই যামিনী রায়ের মতো চিত্রশিল্পী তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। যামিনী
রায় সম্পর্কে বিষ্ণু দে বলেছেন, ‘যামিনী রায়ের চিত্রসাধনায় যে শুধু আমাদের শিল্পের মুক্তি, তা-ই নয়, আমাদের সাধারণ বাংলার মানুষের চোখের আনন্দে তিনি আমাদের মনোজগৎকেও রূপ দিয়েছেন—দৃশ্যপথে। এবং এই আনন্দ যেহেতু দেশের আনন্দে, মানুষের শান্তিতে প্রসাদে মৃন্ময়; তাই আমরা সবাই তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।...যামিনী রায়ের শান্ত ও রঙিন চিত্রলোক আমাদের যেন সেই নিশান নির্দেশে সমৃদ্ধ করে—আমাদের দ্বিধান্বিত অসম্পূর্ণতায়, গৌণতার গ্লানির মধ্যে অপরাজেয়।’ এইভাবে একজন চিত্রশিল্পীর প্রতি শুধু শ্রদ্ধা জানিয়েই বিষ্ণু দে তাঁর দায়িত্ব শেষ করতে চাননি। বরং এই চিত্রকলার এই দায়বোধকে তিনি তাঁর কবিতার মধ্যেও আত্মস্থ করে নিতে চেয়েছেন।
বিষ্ণু দের মতো একজন নিরন্তর সৃষ্টিশীল কবি, সংবেদনশীল মানুষের কাছে সংগীতের ভূমিকা কতখানি ছিল, সেটি জিষ্ণু দের সাক্ষ্য থেকে আরও একবার বুঝে নেওয়া যেতে পারে। কবি-পুত্র আমাদের জানিয়েছেন, ‘আমার বাবার কাছে কবিতা লেখা ও “গান শোনা’’ একই রকম ছিল।’ অন্যদিকে প্রয়াত সমালোচক অরুণ সেনের মতে, বিষ্ণু দের কবিসত্তার মধ্যেই নিহিত ছিল ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল সংগীতের ‘বহুধা বৈচিত্র্য’; তিনি অবশ্য এটিও স্বীকার করেছেন যে পাশ্চাত্য সিম্ফনি ও ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত—এই দুই ঐতিহ্যের সংগীতই জীবনের দ্বন্দ্ব ও উত্তীর্ণ সুষমাকে প্রকাশ করেছে বিষ্ণু দের কবিতা। এইভাবেই ঐতিহ্যের প্রবহমানতা বজায় রেখে রাজনীতি, চিত্রকলা থেকে থেকে সংগীত—সবকিছু মিলিয়ে জীবনের সমগ্রতাকে নিরূপণ করতে চেয়েছিলেন বিষ্ণু দে। আর এসবের মধ্য দিয়ে এই কবির রুচির সমগ্রতাকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
‘সমগ্রতার এই বোধ’ তাঁর চেতনার কতটা গভীরে বিস্তৃত সেটা বুঝে নিতে পারা যায়, বিষ্ণু দে যখন বলেন, যদি কারও শুধু আধুনিক সংগীত ভালো লাগে অথচ আধুনিক কাব্য বা চিত্র অসহ্য মনে হয়, তাহলে তাঁর সততায় বা তাঁর স্বভাবের সমগ্রতায় সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। যাকে বিষ্ণু দে বলেছেন স্বভাবের সমগ্রতা, সেটা যে একজন মানুষের রুচির সমগ্রতারই রকমফের, সেটি লেখাই বাহুল্য।
৩ ডিসেম্বর কবির প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা...
০৯ অক্টোবর ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের
১৩ মিনিট আগে
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি ঠিক সেই মুহূর্তের মতো, যখন কেউ ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে পথ খোঁজে। পথ আছে, আলোও আছে কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেটা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ভাবে, ‘আমার জীবনে সমস্যা আছে’। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা কোনো সমস্যা নয়, বরং বড় হওয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।
২১ মিনিট আগে
ট্রেনের ছাদে ওঠা যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার সময়ে আমাদের দেশের বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো যানবাহনের ছাদে উঠে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসার দৃশ্য খুব সাধারণ বিষয়। এভাবে ভ্রমণ করলে ঝুঁকিও থাকে। লঞ্চডুবি, বাস উল্টে খাদে পড়া কিংবা ট্রেনের ছাদ থেকে
৩৩ মিনিট আগেসম্পাদকীয়

ট্রেনের ছাদে ওঠা যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার সময়ে আমাদের দেশের বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো যানবাহনের ছাদে উঠে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসার দৃশ্য খুব সাধারণ বিষয়। এভাবে ভ্রমণ করলে ঝুঁকিও থাকে। লঞ্চডুবি, বাস উল্টে খাদে পড়া কিংবা ট্রেনের ছাদ থেকে যাত্রীদের পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনার খবর বিরল নয়। তবে এবার মেট্রোরেলের ছাদে এক শিশুর উঠে যাওয়ার ঘটনা অবশ্যই বিরল এবং প্রথম।
আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে পাঠক জেনেছেন ৩০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর সচিবালয় মেট্রো স্টেশনে ঘটে যাওয়া কাণ্ডটির কথা। ১২-১৩ বছরের এক পথশিশুকে স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মীরা মেট্রোরেলের ছাদ থেকে নামিয়েছেন। ইয়াসিন নামের ওই শিশুর কোনো ধারণাই নেই, মেট্রোরেলের ছাদে ওঠা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মেট্রোরেল বিদ্যুতে চালিত, আর বিদ্যুতের সেই শক্তিশালী তার থাকে মেট্রোরেলের ছাদের ওপরে। যে কেউ এটির ছাদে উঠলে বিদ্যুতায়িত হতে পারে।
উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার থাকা এবং সাধারণ ট্রেনের চেয়ে তুলনামূলক দ্রুতগতিসম্পন্ন মেট্রোরেলের ছাদ বেশ পিচ্ছিল। একটু হোঁচট খেলেই সেখান থেকে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
ইয়াসিনের এসব না জানাটাই স্বাভাবিক। তাকে কেউ শেখায়নি কোনো সিভিক সেন্স কিংবা নাগরিক জ্ঞান; বরং আখাউড়ার কোনো এক ‘অনেক বড় ডাকাত’ ভাইয়ের কাছ থেকে সে শিখেছে, কী করে ট্রেনের ছাদে উঠতে হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্পষ্টই বোঝা যায়, শিশুটির বুদ্ধির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তাকে এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করব, শিশু ইয়াসিনের মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে। এ ছাড়া তাকে শেখানো হবে সাধারণ নাগরিক জ্ঞানও।
কিন্তু এই ঘটনা দেখে বিকশিত বুদ্ধিওয়ালা কিছু মানুষের নাগরিক জ্ঞান জাগ্রত হবে কি? আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের তা নেই বললেই চলে। ফলে তারা এমন সব কর্মকাণ্ড করে বসে, যা তাদের কাছে বীরত্বের একটা ব্যাপার বলে মনে হয়। মেট্রোরেলের ছাদে ওঠার এই ঘটনার পর তাদের মধ্যে কেউ যে আবার একই কাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করবে না, এই নিশ্চয়তা কি দেওয়া যায়? আসলে নাগরিক জ্ঞান না মেনে আইন অমান্য করা যে একটা লজ্জার ব্যাপার, তা তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে। তারা বুঝতে চায় না যে জনতার টাকায় গড়ে ওঠা অবকাঠামোর যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা যায় না।
জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করার দায় সব সময় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। এর দায় রয়েছে সাধারণ মানুষেরও—যাদের নাগরিক জ্ঞান আছে এবং যাদের নেই—সবার। এ ঘটনায় ইয়াসিন শুধু আমাদের মনে করিয়ে দিল। আপাতত মানুষকে এ ব্যাপারে শিক্ষিত করার জন্য গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সেই শিক্ষা জনগণ নেবে কি না, সেটিও তাদের ওপর নির্ভর করে।

ট্রেনের ছাদে ওঠা যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ঈদ কিংবা বিশ্ব ইজতেমার সময়ে আমাদের দেশের বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চের মতো যানবাহনের ছাদে উঠে যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসার দৃশ্য খুব সাধারণ বিষয়। এভাবে ভ্রমণ করলে ঝুঁকিও থাকে। লঞ্চডুবি, বাস উল্টে খাদে পড়া কিংবা ট্রেনের ছাদ থেকে যাত্রীদের পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনার খবর বিরল নয়। তবে এবার মেট্রোরেলের ছাদে এক শিশুর উঠে যাওয়ার ঘটনা অবশ্যই বিরল এবং প্রথম।
আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে পাঠক জেনেছেন ৩০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর সচিবালয় মেট্রো স্টেশনে ঘটে যাওয়া কাণ্ডটির কথা। ১২-১৩ বছরের এক পথশিশুকে স্টেশনের নিরাপত্তাকর্মীরা মেট্রোরেলের ছাদ থেকে নামিয়েছেন। ইয়াসিন নামের ওই শিশুর কোনো ধারণাই নেই, মেট্রোরেলের ছাদে ওঠা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, মেট্রোরেল বিদ্যুতে চালিত, আর বিদ্যুতের সেই শক্তিশালী তার থাকে মেট্রোরেলের ছাদের ওপরে। যে কেউ এটির ছাদে উঠলে বিদ্যুতায়িত হতে পারে।
উচ্চ ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তার থাকা এবং সাধারণ ট্রেনের চেয়ে তুলনামূলক দ্রুতগতিসম্পন্ন মেট্রোরেলের ছাদ বেশ পিচ্ছিল। একটু হোঁচট খেলেই সেখান থেকে পড়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
ইয়াসিনের এসব না জানাটাই স্বাভাবিক। তাকে কেউ শেখায়নি কোনো সিভিক সেন্স কিংবা নাগরিক জ্ঞান; বরং আখাউড়ার কোনো এক ‘অনেক বড় ডাকাত’ ভাইয়ের কাছ থেকে সে শিখেছে, কী করে ট্রেনের ছাদে উঠতে হয়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় স্পষ্টই বোঝা যায়, শিশুটির বুদ্ধির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। তাকে এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করব, শিশু ইয়াসিনের মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে। এ ছাড়া তাকে শেখানো হবে সাধারণ নাগরিক জ্ঞানও।
কিন্তু এই ঘটনা দেখে বিকশিত বুদ্ধিওয়ালা কিছু মানুষের নাগরিক জ্ঞান জাগ্রত হবে কি? আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের তা নেই বললেই চলে। ফলে তারা এমন সব কর্মকাণ্ড করে বসে, যা তাদের কাছে বীরত্বের একটা ব্যাপার বলে মনে হয়। মেট্রোরেলের ছাদে ওঠার এই ঘটনার পর তাদের মধ্যে কেউ যে আবার একই কাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করবে না, এই নিশ্চয়তা কি দেওয়া যায়? আসলে নাগরিক জ্ঞান না মেনে আইন অমান্য করা যে একটা লজ্জার ব্যাপার, তা তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে। তারা বুঝতে চায় না যে জনতার টাকায় গড়ে ওঠা অবকাঠামোর যাচ্ছেতাই ব্যবহার করা যায় না।
জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করার দায় সব সময় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। এর দায় রয়েছে সাধারণ মানুষেরও—যাদের নাগরিক জ্ঞান আছে এবং যাদের নেই—সবার। এ ঘটনায় ইয়াসিন শুধু আমাদের মনে করিয়ে দিল। আপাতত মানুষকে এ ব্যাপারে শিক্ষিত করার জন্য গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। সেই শিক্ষা জনগণ নেবে কি না, সেটিও তাদের ওপর নির্ভর করে।

তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ব্যাপক বিক্ষোভ, সরকার পতনের ঘটনা এখনো সবার মনে আছে। কেন সে বিক্ষোভ হয়েছিল, সেটাও অজানা নয় কারও। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পলায়ন, প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাঁর বিছানায় শুয়ে বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলা...
০৯ অক্টোবর ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনুভূত ভূমিকম্পগুলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলের কাছাকাছি থাকার কারণে বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং জলাশয় ভরাট করে নরম মাটির ওপর বহুতল ভবন নির্মাণের
১৩ মিনিট আগে
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার নিয়ে বিভ্রান্তি ঠিক সেই মুহূর্তের মতো, যখন কেউ ঘন কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে পথ খোঁজে। পথ আছে, আলোও আছে কিন্তু সামনে কী অপেক্ষা করছে, সেটা বোঝা যায় না। এই পরিস্থিতিতে অনেকে ভাবে, ‘আমার জীবনে সমস্যা আছে’। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এটা কোনো সমস্যা নয়, বরং বড় হওয়ার এক স্বাভাবিক অধ্যায়।
২১ মিনিট আগে
বিষ্ণু দে কাব্যসাধনার একেবারে শুরুতে ‘মহাভারত’ পাঠের অভিজ্ঞতার সূত্রে খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনন্য ‘শান্ত কর্মৈষণা’, যা কিনা নানা ধরনের পরিবর্তনের, দ্বন্দ্বের আর বৈপরীত্যের গ্রহণ-বর্জনের মধ্যে এখনো টিকে রয়েছে আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের চেতনায়, অভিজ্ঞতায়, উপলব্ধিতে। সে-সঙ্গে এটিও দেখতে পাই যে দ্বন্দ্বের
২৬ মিনিট আগে