মাসুমা হক প্রিয়াংকা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রচারণার মাধ্যমে বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে একধরনের ‘গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী’ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে বিরোধীদের দুর্বল করা এবং আন্দোলন দমনের জন্য নানামুখী কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর একটি প্রধান অস্ত্র হলো গণমাধ্যমের ব্যবহার।
বর্তমানে বাংলাদেশে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর একটি বড় অংশ সরকারপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই অবস্থান শুধু নিরপেক্ষতার অভাব থেকেই তৈরি হয়নি, বরং এটি একটি পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ। গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকীয় নীতি এবং সংবাদ পরিবেশনের ধরন পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট হয়, তারা প্রায়ই সরকারপন্থী ভাষ্য প্রচারে আগ্রহী। বিশেষত, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদনগুলোতে ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ নাম দিয়ে এমন সব তথ্য দেওয়া হয়, যার নির্ভরযোগ্য সূত্র থাকে না। ‘বিশ্লেষকদের মতে’ বা ‘বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে’ বলা হয়—এ ধরনের অস্পষ্ট সূত্র উল্লেখ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা চলে।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, প্রতিপক্ষকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি হিসেবে চিত্রিত করা। এই চেষ্টার মূল লক্ষ্য ছিল বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, যাতে তারা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে না পারে। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তখন বিরোধী দলের প্রতিটি আন্দোলনকে ‘নাশকতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল, যা গণমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। একই কৌশল ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও প্রয়োগ করা হয়, যখন আন্দোলনকারীদের ভারতবিরোধী ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল।
বর্তমান সময়ে একই ন্যারেটিভ নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এবার শুধু বিএনপি বা জামায়াত নয়, বরং বামপন্থীদেরও একই শ্রেণিতে ফেলার চেষ্টা চলছে। এতে দুটি প্রধান লক্ষ রয়েছে। প্রথমত, ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের মতো আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে বৈধতা না দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বামপন্থীদের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি থেকে আলাদা করা। কেননা, বামপন্থীদের আন্দোলন দমিয়ে রাখলে বিরোধী রাজনীতির মূল স্রোত কেবল বিএনপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এখানে আওয়ামী লীগের আরেকটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কৌশলের কথা মনে করা যায়। দলটি একদিকে দাবি করত যে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক এবং বামপন্থীরা তাদের স্বাভাবিক মিত্র। আবার অন্যদিকে, যখন প্রয়োজন মনে করেছে, তখন একই বামপন্থীদের ‘ষড়যন্ত্রকারী’ আখ্যা দিয়ে দমননীতি চালাতে দ্বিধা করেনি। এই দ্বৈত নীতি নতুন নয়। ১৯৭২-৭৫ সময়কালেও একই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।
বামপন্থীদের নিয়ে প্রচারণার দুটি দিক রয়েছে। একদিকে বলা হয়, তাঁরা আওয়ামী লীগের ‘অঘোষিত মিত্র’, ভারতপন্থী এবং সুবিধাবাদী। অন্যদিকে বলা হয়, তাঁরা সহিংস বিপ্লব চায়, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এই দুই ধরনের প্রচারণার উদ্দেশ্য একটাই—বামপন্থীদের রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমানো। বাস্তবে, বামপন্থীরা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের সমালোচনা করেছেন এবং কখনো কখনো স্বাধীন অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু যখন আওয়ামী লীগ বামদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়, তখন সেটি রাষ্ট্রীয় প্রচারণার অংশ হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচারণার অন্যতম প্রধান কৌশল হলো, দেশের অস্থিতিশীলতার জন্য আন্দোলনকারীদের দায়ী করা। অথচ বাস্তবতা হলো, অস্থিতিশীলতা তৈরি হয় যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়ে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, প্রশাসনিক নিপীড়ন বৃদ্ধি পায় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একপক্ষীয় হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৬ শতাংশে, যা আগের কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। একই সময়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ১২-১৪ শতাংশ হারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যখন মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, তখন সেটাকে ‘অরাজকতা’ হিসেবে প্রচার করা রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছু নয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এক অদ্ভুত দুষ্টচক্রে আটকে গেছে। প্রতিটি সরকার বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে, কিন্তু যখন ক্ষমতা বদল হয়, তখন তারাই নির্যাতনের শিকার হয়। এই সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ একাই তৈরি করেনি, তবে তারা এটিকে সাংগঠনিক রূপ দিয়েছে এবং ক্ষমতায় থাকার প্রতিটি বছর এটি আরও সুসংহত হয়েছে। বিরোধী দলগুলো যখন এই দমননীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন তারা ক্ষমতায় গেলে একই কাজ করে। ফলে, এই চক্র থেকে মুক্তির কোনো পথ দেখা যায় না।
সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন স্বাধীন গণমাধ্যম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বহুমাত্রিক রাজনৈতিক চর্চা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম অবস্থানে রয়েছে, যা গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। সরকারপন্থী প্রচারণার ফলে বাস্তব পরিস্থিতি আড়ালে চলে যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক সচেতনতার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা।
বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে প্রচারণা এবং বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। অধিকাংশ গণমাধ্যম নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবিরাম এমন সব প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই কৌশল ব্যর্থ হয়, কারণ জনগণের অভিজ্ঞতা সরাসরি তাদের জীবনযাত্রার ওপর নির্ভরশীল। ইতিহাস বলে, যখন প্রচারণা আর বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি হয়ে যায়, তখন সমাজে একটি বিস্ফোরণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কি তেমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রচারণার মাধ্যমে বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে একধরনের ‘গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী’ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে বিরোধীদের দুর্বল করা এবং আন্দোলন দমনের জন্য নানামুখী কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর একটি প্রধান অস্ত্র হলো গণমাধ্যমের ব্যবহার।
বর্তমানে বাংলাদেশে মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর একটি বড় অংশ সরকারপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই অবস্থান শুধু নিরপেক্ষতার অভাব থেকেই তৈরি হয়নি, বরং এটি একটি পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ। গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকীয় নীতি এবং সংবাদ পরিবেশনের ধরন পর্যবেক্ষণ করলে স্পষ্ট হয়, তারা প্রায়ই সরকারপন্থী ভাষ্য প্রচারে আগ্রহী। বিশেষত, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদনগুলোতে ‘বিশেষ প্রতিনিধি’ নাম দিয়ে এমন সব তথ্য দেওয়া হয়, যার নির্ভরযোগ্য সূত্র থাকে না। ‘বিশ্লেষকদের মতে’ বা ‘বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে’ বলা হয়—এ ধরনের অস্পষ্ট সূত্র উল্লেখ করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করার চেষ্টা চলে।
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল, প্রতিপক্ষকে শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নয়, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি হিসেবে চিত্রিত করা। এই চেষ্টার মূল লক্ষ্য ছিল বিরোধী দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, যাতে তারা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে না পারে। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনের সময় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। তখন বিরোধী দলের প্রতিটি আন্দোলনকে ‘নাশকতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল, যা গণমাধ্যমের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। একই কৌশল ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও প্রয়োগ করা হয়, যখন আন্দোলনকারীদের ভারতবিরোধী ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল।
বর্তমান সময়ে একই ন্যারেটিভ নতুনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এবার শুধু বিএনপি বা জামায়াত নয়, বরং বামপন্থীদেরও একই শ্রেণিতে ফেলার চেষ্টা চলছে। এতে দুটি প্রধান লক্ষ রয়েছে। প্রথমত, ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের মতো আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে বৈধতা না দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বামপন্থীদের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি থেকে আলাদা করা। কেননা, বামপন্থীদের আন্দোলন দমিয়ে রাখলে বিরোধী রাজনীতির মূল স্রোত কেবল বিএনপি বা জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
এখানে আওয়ামী লীগের আরেকটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক কৌশলের কথা মনে করা যায়। দলটি একদিকে দাবি করত যে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক এবং বামপন্থীরা তাদের স্বাভাবিক মিত্র। আবার অন্যদিকে, যখন প্রয়োজন মনে করেছে, তখন একই বামপন্থীদের ‘ষড়যন্ত্রকারী’ আখ্যা দিয়ে দমননীতি চালাতে দ্বিধা করেনি। এই দ্বৈত নীতি নতুন নয়। ১৯৭২-৭৫ সময়কালেও একই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।
বামপন্থীদের নিয়ে প্রচারণার দুটি দিক রয়েছে। একদিকে বলা হয়, তাঁরা আওয়ামী লীগের ‘অঘোষিত মিত্র’, ভারতপন্থী এবং সুবিধাবাদী। অন্যদিকে বলা হয়, তাঁরা সহিংস বিপ্লব চায়, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এই দুই ধরনের প্রচারণার উদ্দেশ্য একটাই—বামপন্থীদের রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমানো। বাস্তবে, বামপন্থীরা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের সমালোচনা করেছেন এবং কখনো কখনো স্বাধীন অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু যখন আওয়ামী লীগ বামদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়, তখন সেটি রাষ্ট্রীয় প্রচারণার অংশ হয়ে ওঠে।
আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচারণার অন্যতম প্রধান কৌশল হলো, দেশের অস্থিতিশীলতার জন্য আন্দোলনকারীদের দায়ী করা। অথচ বাস্তবতা হলো, অস্থিতিশীলতা তৈরি হয় যখন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়ে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, প্রশাসনিক নিপীড়ন বৃদ্ধি পায় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো একপক্ষীয় হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৫.৬ শতাংশে, যা আগের কয়েক বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। একই সময়ে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে ১২-১৪ শতাংশ হারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে যখন মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, তখন সেটাকে ‘অরাজকতা’ হিসেবে প্রচার করা রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছু নয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এক অদ্ভুত দুষ্টচক্রে আটকে গেছে। প্রতিটি সরকার বিরোধীদের দমন করতে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে, কিন্তু যখন ক্ষমতা বদল হয়, তখন তারাই নির্যাতনের শিকার হয়। এই সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ একাই তৈরি করেনি, তবে তারা এটিকে সাংগঠনিক রূপ দিয়েছে এবং ক্ষমতায় থাকার প্রতিটি বছর এটি আরও সুসংহত হয়েছে। বিরোধী দলগুলো যখন এই দমননীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন তারা ক্ষমতায় গেলে একই কাজ করে। ফলে, এই চক্র থেকে মুক্তির কোনো পথ দেখা যায় না।
সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন স্বাধীন গণমাধ্যম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বহুমাত্রিক রাজনৈতিক চর্চা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম অবস্থানে রয়েছে, যা গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। সরকারপন্থী প্রচারণার ফলে বাস্তব পরিস্থিতি আড়ালে চলে যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক সচেতনতার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা।
বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখানে প্রচারণা এবং বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। অধিকাংশ গণমাধ্যম নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবিরাম এমন সব প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে এই কৌশল ব্যর্থ হয়, কারণ জনগণের অভিজ্ঞতা সরাসরি তাদের জীবনযাত্রার ওপর নির্ভরশীল। ইতিহাস বলে, যখন প্রচারণা আর বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি হয়ে যায়, তখন সমাজে একটি বিস্ফোরণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কি তেমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে?
দীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণ বদলে দিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মূলত এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে একধরনের শীতলতা সৃষ্টি হয়েছে। একসময়ের
৭ ঘণ্টা আগেগত বছরই এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটা রেজিমের পতন ঘটিয়েছিল। এ জন্য অসংখ্য তাজা প্রাণ বলি দিতে হয়েছে। কিন্তু আমলাতন্ত্রে যে কোনো পরিবর্তন হয়নি, সেটা বুঝতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। আমলারা নিজের গামলা ভরার বিষয়টি ভালো বোঝেন। এ নিয়েই ২০ এপ্রিল আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত
৭ ঘণ্টা আগেদেশের সংবিধান, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের নানা আলাপ হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু এই সময়ে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারেরই গঠন করা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
১ দিন আগেঈশ্বরকে এখনো বুঝে উঠতে পারিনি আমরা। এ কারণে মানবদেহ থাকলেও মনুষ্যত্ব, মানবিকতা নেই কিংবা মানুষ হয়ে উঠতে পারিনি। ঈশ্বরকে বোঝার জন্য আমরা দায়বদ্ধ নই, যদিও আমাদের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গটি এখানে আসার কথা ছিল না। শব্দটি প্রযোজ্য নয় এখানে। কিন্তু জন্ম, মৃত্যু ও ধর্মকে পুঁজি করে এক অদৃশ্য নাগপাশে বাঁধা পড়ে
১ দিন আগে