ড. মো. আজিজুল ইসলাম বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি একই সঙ্গে বুয়েটের এম এ রশীদ হলের সহকারী প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সঙ্গে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বর্তমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
বিএসসি প্রকৌশলী এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ, পদোন্নতি এবং বেতন-ভাতায় যে বৈষম্য দেখা যায়, তার মূল কারণগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের ধরন ও রুটই ভিন্ন। কাজের পরিধিও আলাদা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চার বছরের সিলেবাসে আসলে ফিল্ডে কাজ করার জন্যই প্রস্তুত করা হয়। ফিল্ডের কাজ ইমপ্লিমেন্ট করতে এবং ফিল্ডের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁদেরকে তৈরি করা হয়। সুতরাং তাঁরা ফিল্ড লেভেল বিশেষজ্ঞ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
আর বিএসসি প্রকৌশলীরা ডেস্ক লেভেলে যেমন—অ্যানালাইসিস, ড্রয়িং, ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। এভাবে দুই ক্ষেত্রে দুইভাবে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ট্রেন্ডআপ করা হয়। বিএসসি প্রকৌশলীদের বেতন-ভাতা এবং অন্য সুবিধাদি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের তুলনায় এমনিতেই বেশি হওয়া দরকার। কারণ, বিএসসি প্রকৌশলীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি। একই সঙ্গে একাডেমিক সিলেবাসের গভীরতা এবং শিক্ষাগতজীবনও দুই বছরের বেশি। এ জন্য শুরু থেকেই তাঁদের বেতনকাঠামো ডিপ্লোমাদের চেয়ে বেশি।
আর ডিপ্লোমাদের বেতনকাঠামো বিএসসি প্রকৌশলীদের চেয়ে কম।
‘প্রকৌশলী’ উপাধি শুধু বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার দাবি কেন করা হচ্ছে? এই উপাধি ব্যবহারে কী এমন পার্থক্য তৈরি হবে, যা উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
এ বিষয়টা অবশ্যই আমাদের বাইরের দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা করতে হবে। আমি আমেরিকায় ছিলাম পাঁচ বছরের বেশি সময়। ওই দেশের কেউ যদি কোনো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা বা বিএসসি শেষ করেন, তাহলে তিনি প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। কেউই প্রকৌশলী উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন না, যতক্ষণ তাঁরা প্রফেশনাল একটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারেন। এই পরীক্ষায় পাস করার পর আরও কিছু রিকোয়ারমেন্ট (আবশ্যকতা) আছে। যেমন এথিকস রিলেটেড এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে পরীক্ষায় পাস করার পর প্রকৌশলী উপাধিটা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পেশাগত প্রকৌশলী হওয়ার সংস্কৃতিটা নেই বললেই চলে। মাঝখানে সেটা শুরু হয়েছিল, কিন্তু এখন নেই। আবার বাইরের দেশে ডিপ্লোমা পাস করার পর কারও প্রকৌশলী হওয়ার সুযোগ নেই। শুধু বিএসসিরা প্রকৌশলী উপাধিটা পেয়ে থাকেন। তাঁদেরও একইভাবে পরীক্ষার ধাপগুলো পার হয়ে এই উপাধিটা পেতে হবে। এ কারণে আমাদের দেশের বিএসসি প্রকৌশলীরা এই দাবিটা তুলেছেন। যেহেতু বাইরের দেশে এটা নেই, সেহেতু আমাদের দেশে তা কেন থাকবে? আর ডিপ্লোমাদের ডিগ্রিটা যেহেতু শুধু টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে বা টেকনিশিয়ান টাইপের, সেহেতু তাঁদের এ দাবি তোলা ভুল।
যাঁরা চার বছর ধরে বিএসসি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন, ডিজাইন করা থেকে নানা ধরনের অ্যানালাইসিস এবং সমস্যা সমাধানের কাজগুলো করেন, তাঁরাই শুধু প্রকৌশলী উপাধিটা ব্যবহার করবেন, এটাই আমার কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয়।
যেহেতু এখানে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য পরীক্ষাপদ্ধতি নেই। তাহলে আপনারা কেন সেটা এককভাবে দাবি করছেন?
আমাদের দেশে সরকার যেহেতু সাংবিধানিকভাবে এবং অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় সেই পরীক্ষাটা চালু করেনি, সেহেতু কে, কীভাবে ওই উপাধিটি ব্যবহার করবে, সেটা এখন গ্রে এরিয়ার মধ্যে
পড়ে গেছে। তবে বিএসসি প্রকৌশলীদের ফোকাস কিন্তু প্রকৌশল বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকে। আর ডিপ্লোমারা যেহেতু শুধু টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন, সেহেতু তাঁদেরকে প্রকৌশলী উপাধিটা দেওয়া ঠিক হবে না।
বিএসসি প্রকৌশলীরা কেন মনে করেন যে নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু বিএসসি প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া উচিত?
নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী এবং তার ওপরের পদগুলোতে তাঁদের দায়িত্ব হলো, বিভিন্ন ডিজাইন সেকশনে কাজ করা। সে জন্য তাঁদের ডিজাইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে হয়। ধরেন, একটা বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভূমিকম্প বা ঝড়ের জন্য কী প্রযুক্তি থাকা দরকার, সেটা না জানা থাকলে কিন্তু ভালো ডিজাইন করা সম্ভব না। কিন্তু যাঁরা ডিপ্লোমা থেকে পাস করে দশম গ্রেডে চাকরির জন্য যে সিলেবাস নিয়ে পড়াশোনা করেন, সেখানে শুধু ফিল্ডের বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। আবার ধরেন, একটা বিল্ডিং নির্মাণের সময় কোথায় কোন রড বাঁধতে হবে, কোন রেশিওতে কমপ্লিটিং করতে হবে, কোন পাথর ভালো ও খারাপ এবং কোয়ালিটির বিষয়গুলো ডিপ্লোমার লোকেরা অনেক ভালো জানেন। এসব তাঁরা তাঁদের সিলেবাস থেকে শিক্ষা অর্জন করে থাকেন। আর তাঁদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র হলো ফিল্ড লেভেলে। তাঁদের কিন্তু ডিজাইন ও পরিকল্পনা করার কোনো যোগ্যতা নেই। তাঁরা ডিজাইন করতে না পারার কারণে এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারছেন না।
তাঁরা যখন দশম গ্রেডে প্রমোশন পেয়ে নবম গ্রেডে আসবেন এবং তার ওপরের পদে দায়িত্ব নেবেন, তখন তো তাঁদের ডিজাইনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ডিজাইনের বেসিক জানা না থাকলে তাঁরা তো সেটা করতে পারবেন না। আবার ধরেন, নির্মাণাধীন বিল্ডিং করতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলো, সেটার জন্য এক্সটেনসিভ (ব্যাপক) অ্যানালাইসিসের দরকার পড়বে। মানে গভীরভাবে সেটা জেনে সেটার সমাধান করতে হবে। সমস্যাটা কিন্তু অ্যানালাইসিসের পরেই ধরা পড়বে। সেসব কিন্তু ডিপ্লোমাতে শেখানো হয় না। সেটা শুধু বিএসসি লেভেলে শেখানো হয়। আর নবম গ্রেডের চাকরিতে এই বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করতে হয়।
আমাদের সিলেবাসে থাকার কারণে বিএসসি পড়ুয়ারা চাকরিতে সেসব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। দশম গ্রেডের লোকেরা যখন নবম গ্রেডে প্রমোশন পেয়ে যান, তখন তাঁদের সেই ঘাটতিটা থেকে যায়। সে জন্য বিএসসিরা চাইছেন না, সহকারী প্রকৌশলী পদটি নবম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে থাক। বিএসসিদের দাবি হলো, দশম গ্রেডে যাঁরা ঢুকছেন তাঁরা প্রমোশন পাবেন না, বিষয়টা সেটা না। তাঁরা প্রমোশন পাবেন। কিন্তু তাঁদের আলাদা স্কেল থাকবে। তাঁরা সাব-ইঞ্জিনিয়ার বা সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঢুকবেন। কিন্তু তাঁদের আলাদা র্যাঙ্ক থাকবে। যেমন ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে হয়ে থাকে। নার্সদের প্রমোশন হয় কিন্তু আলাদা র্যাঙ্কে। নার্সরা কিন্তু প্রমোশন পেয়ে কখনো ডাক্তার হতে পারেন না। আবার যেমন সেনাবাহিনীতেও কেউ সৈনিক থেকে মেজর হতে পারেন না। সবারই আলাদাভাবে র্যাঙ্ক অনুযায়ী প্রমোশন হয়ে থাকে। এ কারণে এই দাবিটা করা হয়েছে বিএসসি প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে।
উপসহকারী প্রকৌশলী পদটি ঐতিহ্যগতভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের কেন এই পদে আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন? এতে তো ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরি পেতে সমস্যা হওয়ার কথা।
বিএসসিদের দাবি হলো, দশম গ্রেড উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এই দাবির কারণে সাধারণ মানুষজন বলবে বিএসসি প্রকৌশলীরা তাহলে তো বেশি সুযোগ পাবেন। সে তুলনায় ডিপ্লোমাধারীরা বঞ্চিত হবেন। অধিকাংশের ধারণা হলো, ডিপ্লোমাদের তুলনায় বিএসসিরা বেশি মেধাবী। কিন্তু পদটা হলো ফিল্ডের মানে উপসহকারী প্রকৌশলী। সেই পদের জন্য বেশি যোগ্য তাঁরাই হবেন, যাঁরা ফিল্ডে কাজ করার বেশি সুযোগ পাবেন। এখন কথা হলো, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষাটা ডিপ্লোমা সিলেবাসে নেওয়া হলে, তখন তো অবশ্যই ডিপ্লোমাধারীরা ভালো করবেন। এখন যদি কোনো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ফিল্ডের ক্ষেত্রে ভালো করেন, তাহলে তিনি চাকরিতে নিয়োগ পাবেন। সে কারণে এই পদে ডিপ্লোমাদেরই ভালো করার সুযোগ আছে।
এখন দশম গ্রেডের এই পদটি শুধু ডিপ্লোমাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এখন বিএসসিদের মধ্যে যাঁদের ফিল্ড নলেজ ভালো, তাঁরা তো বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। সবার জন্য পদটি উন্মুক্ত থাকলে যাঁরা ভালো করবেন, তাঁরাই চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বিএসসি প্রকৌশলীদের তুলনায় কম মূল্যায়ন করা হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
আমার মনে হয়, মূল্যায়নটা দুই ধরনের প্রকৌশলীর জন্য আলাদাভাবে করতে হবে। যেমন ডাক্তার ও নার্সের ভূমিকা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার পুরো সেবা দিতে পারবেন না। তিনি শুধু প্রেসক্রাইব করেন। তিনি কিন্তু সরাসরি সেবা দিতে পারেন না। সেটা নার্স দিতে পারেন। একইভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন আর বিএসসি প্রকৌশলীরা প্ল্যানিং পর্যায়ে কাজ করেন। দুই গ্রুপের প্রকৌশলীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের কাউকেই অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। সে জন্য ডিপ্লোমা ও বিএসসি প্রকৌশলীদের আলাদা কাঠামোতে মূল্যায়ন করাটা যথার্থ হবে। ডিপ্লোমারা মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তাঁদের কাঠামোয় মূল্যায়িত হবেন এবং একইভাবে বিএসসিরাও তাঁদের কাঠামোয় মূল্যায়িত হবেন। যদি কোনোভাবে ডিপ্লোমাধারীরা অবমূল্যায়িত হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা আমি কোনোভাবেই সমর্থন করি না। কারণ, যেসব ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর অনেক বেশি অভিজ্ঞতা এবং কাজের প্রতি ডেডিকেশন ও নিষ্ঠা আছে, তাঁদেরকে অবমূল্যায়ন করা কোনোভাবেই উচিত না। সে জন্য তাঁদের কাঠামোতেই তাঁদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
বিএসসি প্রকৌশলী এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের সুযোগ, পদোন্নতি এবং বেতন-ভাতায় যে বৈষম্য দেখা যায়, তার মূল কারণগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাজের ধরন ও রুটই ভিন্ন। কাজের পরিধিও আলাদা। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চার বছরের সিলেবাসে আসলে ফিল্ডে কাজ করার জন্যই প্রস্তুত করা হয়। ফিল্ডের কাজ ইমপ্লিমেন্ট করতে এবং ফিল্ডের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাঁদেরকে তৈরি করা হয়। সুতরাং তাঁরা ফিল্ড লেভেল বিশেষজ্ঞ, এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
আর বিএসসি প্রকৌশলীরা ডেস্ক লেভেলে যেমন—অ্যানালাইসিস, ড্রয়িং, ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। এভাবে দুই ক্ষেত্রে দুইভাবে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের ট্রেন্ডআপ করা হয়। বিএসসি প্রকৌশলীদের বেতন-ভাতা এবং অন্য সুবিধাদি ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের তুলনায় এমনিতেই বেশি হওয়া দরকার। কারণ, বিএসসি প্রকৌশলীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি। একই সঙ্গে একাডেমিক সিলেবাসের গভীরতা এবং শিক্ষাগতজীবনও দুই বছরের বেশি। এ জন্য শুরু থেকেই তাঁদের বেতনকাঠামো ডিপ্লোমাদের চেয়ে বেশি।
আর ডিপ্লোমাদের বেতনকাঠামো বিএসসি প্রকৌশলীদের চেয়ে কম।
‘প্রকৌশলী’ উপাধি শুধু বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার দাবি কেন করা হচ্ছে? এই উপাধি ব্যবহারে কী এমন পার্থক্য তৈরি হবে, যা উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?
এ বিষয়টা অবশ্যই আমাদের বাইরের দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা করতে হবে। আমি আমেরিকায় ছিলাম পাঁচ বছরের বেশি সময়। ওই দেশের কেউ যদি কোনো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা বা বিএসসি শেষ করেন, তাহলে তিনি প্রকৌশলী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। কেউই প্রকৌশলী উপাধি ব্যবহার করতে পারবেন না, যতক্ষণ তাঁরা প্রফেশনাল একটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারেন। এই পরীক্ষায় পাস করার পর আরও কিছু রিকোয়ারমেন্ট (আবশ্যকতা) আছে। যেমন এথিকস রিলেটেড এবং অভিজ্ঞতা নিয়ে পরীক্ষায় পাস করার পর প্রকৌশলী উপাধিটা দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পেশাগত প্রকৌশলী হওয়ার সংস্কৃতিটা নেই বললেই চলে। মাঝখানে সেটা শুরু হয়েছিল, কিন্তু এখন নেই। আবার বাইরের দেশে ডিপ্লোমা পাস করার পর কারও প্রকৌশলী হওয়ার সুযোগ নেই। শুধু বিএসসিরা প্রকৌশলী উপাধিটা পেয়ে থাকেন। তাঁদেরও একইভাবে পরীক্ষার ধাপগুলো পার হয়ে এই উপাধিটা পেতে হবে। এ কারণে আমাদের দেশের বিএসসি প্রকৌশলীরা এই দাবিটা তুলেছেন। যেহেতু বাইরের দেশে এটা নেই, সেহেতু আমাদের দেশে তা কেন থাকবে? আর ডিপ্লোমাদের ডিগ্রিটা যেহেতু শুধু টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে বা টেকনিশিয়ান টাইপের, সেহেতু তাঁদের এ দাবি তোলা ভুল।
যাঁরা চার বছর ধরে বিএসসি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেন, ডিজাইন করা থেকে নানা ধরনের অ্যানালাইসিস এবং সমস্যা সমাধানের কাজগুলো করেন, তাঁরাই শুধু প্রকৌশলী উপাধিটা ব্যবহার করবেন, এটাই আমার কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয়।
যেহেতু এখানে প্রকৌশলী হওয়ার জন্য পরীক্ষাপদ্ধতি নেই। তাহলে আপনারা কেন সেটা এককভাবে দাবি করছেন?
আমাদের দেশে সরকার যেহেতু সাংবিধানিকভাবে এবং অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় সেই পরীক্ষাটা চালু করেনি, সেহেতু কে, কীভাবে ওই উপাধিটি ব্যবহার করবে, সেটা এখন গ্রে এরিয়ার মধ্যে
পড়ে গেছে। তবে বিএসসি প্রকৌশলীদের ফোকাস কিন্তু প্রকৌশল বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকে। আর ডিপ্লোমারা যেহেতু শুধু টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন, সেহেতু তাঁদেরকে প্রকৌশলী উপাধিটা দেওয়া ঠিক হবে না।
বিএসসি প্রকৌশলীরা কেন মনে করেন যে নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী পদে শুধু বিএসসি প্রকৌশলীদের নিয়োগ দেওয়া উচিত?
নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী এবং তার ওপরের পদগুলোতে তাঁদের দায়িত্ব হলো, বিভিন্ন ডিজাইন সেকশনে কাজ করা। সে জন্য তাঁদের ডিজাইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে হয়। ধরেন, একটা বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভূমিকম্প বা ঝড়ের জন্য কী প্রযুক্তি থাকা দরকার, সেটা না জানা থাকলে কিন্তু ভালো ডিজাইন করা সম্ভব না। কিন্তু যাঁরা ডিপ্লোমা থেকে পাস করে দশম গ্রেডে চাকরির জন্য যে সিলেবাস নিয়ে পড়াশোনা করেন, সেখানে শুধু ফিল্ডের বিষয়ে দক্ষ করে তোলা হয়। আবার ধরেন, একটা বিল্ডিং নির্মাণের সময় কোথায় কোন রড বাঁধতে হবে, কোন রেশিওতে কমপ্লিটিং করতে হবে, কোন পাথর ভালো ও খারাপ এবং কোয়ালিটির বিষয়গুলো ডিপ্লোমার লোকেরা অনেক ভালো জানেন। এসব তাঁরা তাঁদের সিলেবাস থেকে শিক্ষা অর্জন করে থাকেন। আর তাঁদের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র হলো ফিল্ড লেভেলে। তাঁদের কিন্তু ডিজাইন ও পরিকল্পনা করার কোনো যোগ্যতা নেই। তাঁরা ডিজাইন করতে না পারার কারণে এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারছেন না।
তাঁরা যখন দশম গ্রেডে প্রমোশন পেয়ে নবম গ্রেডে আসবেন এবং তার ওপরের পদে দায়িত্ব নেবেন, তখন তো তাঁদের ডিজাইনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ডিজাইনের বেসিক জানা না থাকলে তাঁরা তো সেটা করতে পারবেন না। আবার ধরেন, নির্মাণাধীন বিল্ডিং করতে গিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলো, সেটার জন্য এক্সটেনসিভ (ব্যাপক) অ্যানালাইসিসের দরকার পড়বে। মানে গভীরভাবে সেটা জেনে সেটার সমাধান করতে হবে। সমস্যাটা কিন্তু অ্যানালাইসিসের পরেই ধরা পড়বে। সেসব কিন্তু ডিপ্লোমাতে শেখানো হয় না। সেটা শুধু বিএসসি লেভেলে শেখানো হয়। আর নবম গ্রেডের চাকরিতে এই বিষয়গুলো নিয়েই কাজ করতে হয়।
আমাদের সিলেবাসে থাকার কারণে বিএসসি পড়ুয়ারা চাকরিতে সেসব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন। দশম গ্রেডের লোকেরা যখন নবম গ্রেডে প্রমোশন পেয়ে যান, তখন তাঁদের সেই ঘাটতিটা থেকে যায়। সে জন্য বিএসসিরা চাইছেন না, সহকারী প্রকৌশলী পদটি নবম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে থাক। বিএসসিদের দাবি হলো, দশম গ্রেডে যাঁরা ঢুকছেন তাঁরা প্রমোশন পাবেন না, বিষয়টা সেটা না। তাঁরা প্রমোশন পাবেন। কিন্তু তাঁদের আলাদা স্কেল থাকবে। তাঁরা সাব-ইঞ্জিনিয়ার বা সিনিয়র সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ঢুকবেন। কিন্তু তাঁদের আলাদা র্যাঙ্ক থাকবে। যেমন ডাক্তার ও নার্সদের মধ্যে হয়ে থাকে। নার্সদের প্রমোশন হয় কিন্তু আলাদা র্যাঙ্কে। নার্সরা কিন্তু প্রমোশন পেয়ে কখনো ডাক্তার হতে পারেন না। আবার যেমন সেনাবাহিনীতেও কেউ সৈনিক থেকে মেজর হতে পারেন না। সবারই আলাদাভাবে র্যাঙ্ক অনুযায়ী প্রমোশন হয়ে থাকে। এ কারণে এই দাবিটা করা হয়েছে বিএসসি প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে।
উপসহকারী প্রকৌশলী পদটি ঐতিহ্যগতভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের কেন এই পদে আবেদন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন? এতে তো ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরি পেতে সমস্যা হওয়ার কথা।
বিএসসিদের দাবি হলো, দশম গ্রেড উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এই দাবির কারণে সাধারণ মানুষজন বলবে বিএসসি প্রকৌশলীরা তাহলে তো বেশি সুযোগ পাবেন। সে তুলনায় ডিপ্লোমাধারীরা বঞ্চিত হবেন। অধিকাংশের ধারণা হলো, ডিপ্লোমাদের তুলনায় বিএসসিরা বেশি মেধাবী। কিন্তু পদটা হলো ফিল্ডের মানে উপসহকারী প্রকৌশলী। সেই পদের জন্য বেশি যোগ্য তাঁরাই হবেন, যাঁরা ফিল্ডে কাজ করার বেশি সুযোগ পাবেন। এখন কথা হলো, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষাটা ডিপ্লোমা সিলেবাসে নেওয়া হলে, তখন তো অবশ্যই ডিপ্লোমাধারীরা ভালো করবেন। এখন যদি কোনো বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ফিল্ডের ক্ষেত্রে ভালো করেন, তাহলে তিনি চাকরিতে নিয়োগ পাবেন। সে কারণে এই পদে ডিপ্লোমাদেরই ভালো করার সুযোগ আছে।
এখন দশম গ্রেডের এই পদটি শুধু ডিপ্লোমাদের জন্য সংরক্ষিত। কিন্তু এখন বিএসসিদের মধ্যে যাঁদের ফিল্ড নলেজ ভালো, তাঁরা তো বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। সবার জন্য পদটি উন্মুক্ত থাকলে যাঁরা ভালো করবেন, তাঁরাই চাকরি পাওয়ার সুযোগ পাবেন।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বিএসসি প্রকৌশলীদের তুলনায় কম মূল্যায়ন করা হয়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
আমার মনে হয়, মূল্যায়নটা দুই ধরনের প্রকৌশলীর জন্য আলাদাভাবে করতে হবে। যেমন ডাক্তার ও নার্সের ভূমিকা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার পুরো সেবা দিতে পারবেন না। তিনি শুধু প্রেসক্রাইব করেন। তিনি কিন্তু সরাসরি সেবা দিতে পারেন না। সেটা নার্স দিতে পারেন। একইভাবে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন আর বিএসসি প্রকৌশলীরা প্ল্যানিং পর্যায়ে কাজ করেন। দুই গ্রুপের প্রকৌশলীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের কাউকেই অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। সে জন্য ডিপ্লোমা ও বিএসসি প্রকৌশলীদের আলাদা কাঠামোতে মূল্যায়ন করাটা যথার্থ হবে। ডিপ্লোমারা মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তাঁদের কাঠামোয় মূল্যায়িত হবেন এবং একইভাবে বিএসসিরাও তাঁদের কাঠামোয় মূল্যায়িত হবেন। যদি কোনোভাবে ডিপ্লোমাধারীরা অবমূল্যায়িত হয়ে থাকেন, তাহলে সেটা আমি কোনোভাবেই সমর্থন করি না। কারণ, যেসব ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর অনেক বেশি অভিজ্ঞতা এবং কাজের প্রতি ডেডিকেশন ও নিষ্ঠা আছে, তাঁদেরকে অবমূল্যায়ন করা কোনোভাবেই উচিত না। সে জন্য তাঁদের কাঠামোতেই তাঁদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
দেশের প্রকৌশল ও কারিগরি কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বিএসসি এবং ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার কথা। যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমের সুন্দর, সফল বাস্তবায়নের জন্য তা জরুরিও। যেকোনো দেশ ও জাতি একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে জনবল তৈরি করে। প্রত্যাশা করে সবার মিলিত প্রয়াসে জনকল্যাণ
৪ ঘণ্টা আগেআজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এই মহিমান্বিত দিনে মানবজাতির ইতিহাসে এক নতুন সূর্যের উদয় হয়েছিল মক্কার মরু প্রান্তরে। মা আমিনার কোল আলোকিত করেজন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব—যিনি বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর আগমনে অজ্ঞানতা ও বর্বরতার ঘোর আঁধার ভেদ করে সূচনা হয়েছিল
৫ ঘণ্টা আগেখবরটি শুনতে অসম্ভব বলে মনে হলেও, বাস্তবতা এই যে প্রযুক্তির রমরমা বিকাশের সময়ে বাংলাদেশের প্রান্তিক এক জনপদে এখনো বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নেই। ২ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাঙামাটির ভারত সীমান্তবর্তী বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ...
১ দিন আগেদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিমে জাপানের আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকীতে সম্প্রতি বেইজিংয়ে হয়ে গেল চীনের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজ। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আমন্ত্রণে সেই কুচকাওয়াজ দেখতে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন।
১ দিন আগে