মাসুদ কামাল
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি ছিল ২৪ অক্টোবরের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকার এক দিন আগে, ২৩ তারিখেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এক ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এ কাজে তারা ব্যবহার করেছে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনটিকে। যে আইনটিকে সব গণতান্ত্রিক শক্তিই সমালোচনা করেছে, সরকার সেই আইনটিকেই ব্যবহার করেছে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আচরণ ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে এদের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিও কারও মনে জাগ্রত হবে বলে মনে হয় না। হেন কোনো অপকর্ম নেই যা এদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে এরা ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে হলে শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টন—সব কাজই ছিল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। সবশেষ এবারের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিরীহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর যে নৃশংস হামলা, তার সঙ্গেও সরাসরি জড়িত ছিল এরা। এমন সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। এতসব অপকর্মের জন্য তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শাস্তিটা হবে কার? দলের নাকি নেতৃত্বের? তা ছাড়া শাস্তির মাত্রা ও ধরনটা নির্ধারণ করা হবে কোন প্রক্রিয়ায়? শাস্তিটা দেবেই বা কে?
ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিটিও কিন্তু উচ্চারিত হচ্ছিল। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ গণহত্যার, গণতন্ত্র হরণের। সেই সঙ্গে গুম, খুন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, অপশাসন—এ রকম অনেক অভিযোগ। কেউ বলছেন সংগঠনটির রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারবে না, আবার কেউ বলছেন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না—এমন দাবি সবচেয়ে বেশি জোরালো।
কেবল আওয়ামী লীগই নয়, নিষিদ্ধ কিংবা রাজনীতি থেকে বিরত রাখার দাবি উঠেছে আওয়ামী জোটভুক্ত দলগুলোর বিরুদ্ধেও। জোটের বাইরে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী শাসনের সহযোগী হিসেবে থাকা জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়েও রয়েছে আপত্তি। মাঝে জাতীয় পার্টি একটা কর্মসূচি দিল, ২ নভেম্বর তারা একটা সমাবেশ করবে। এই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না, রাজনীতিই করতে দেওয়া হবে না তাদের, স্বৈরাচারের দোসররা রাজনীতি করতে পারবে না—এমন সব দাবিকে সামনে রেখে ৩১ অক্টোবর হামলা হলো জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ব্যাপক ভাঙচুর শেষে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো। আগুন যারা ধরাল, তারা সেখানে হাজির হয়েছিল ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’ ব্যানারে। এরা আসলে কারা? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি অফিসে হামলার কোনো সিদ্ধান্ত তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির ছিল না। কিন্তু কেন্দ্রীয় দুজন নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম তাঁদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দল বেঁধে জাপা অফিসের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সেদিনই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যে ছিল না, সেটা জানা গেছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর। গত পরশু রাতে একটি টেলিভিশন টক শোতে সারজিস আলমের কথা শুনে মনে হলো, তাঁরা এখনো জাতীয় পার্টিকে কোনো ধরনের রাজনীতি করতে দিতে রাজি নয়।
প্রশ্নটা ঠিক এখানেই। এই যে রাজনীতি করতে না দেওয়ার মানসিকতা, এটাকে ঠিক গণতান্ত্রিক বলা যায় কি না। কাউকে কথা বলতে না দেওয়া, জোর করে চেয়ার থেকে নামিয়ে দেওয়া, কিংবা মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়াকে গণতান্ত্রিক আচরণ বলা যায় কীভাবে?
মাঝে দেখলাম, স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করে কয়েকজন উচ্চ আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হলো। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলো। মজার বিষয় হলো, তাঁদের প্রকারান্তরে সরিয়ে দেওয়াও হলো। সেই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই কিনা জানি না, এর পরেই দেখা গেল ছাত্ররা দাবি করল—সরে যেতে হবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে। ছাত্রদের এমন দাবির পেছনে সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার প্রচ্ছন্ন উসকানিও অনেকটা দৃশ্যমান ছিল। হয়তো এই দাবিও এত দিনে বাস্তবায়িত হয়ে যেত, যদি না বিএনপির দিক থেকে আপত্তি না উঠত। কেবল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগই নয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিটিকেও প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়।
আমি নিজেও জাতীয় পার্টিকে খুবই অপছন্দ করি। এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার, আমি করতেই পারি। আমার বিবেচনায়, ২০১৪ সাল থেকে এ দেশে গণতন্ত্র হত্যার যে প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ চালু করেছিল, তার প্রধান সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টি। ইদানীং দেখি জাতীয় পার্টির নেতারা নানা রকম অজুহাত দিচ্ছেন। বলছেন—আওয়ামী লীগ নাকি তাঁদের কখনো জোর করে, কখনো ব্ল্যাকমেল করে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। এসব অজুহাত হাস্যকর। জোর করে বা ব্ল্যাকমেল করেই যদি নির্বাচনে নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ তখন বিএনপি বা অন্য দলগুলোকেও একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে যেতে বাধ্য করত। অন্যরা যদি সেই চাপ সহ্য করতে পারে, ব্ল্যাকমেল এড়াতে পারে, তাহলে জাপা পারল না কেন? নাকি তারা পারতে চায়-ই নাই? এটাই এই দলটির ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতার জন্য তাদের উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
এই যে জাতীয় পার্টির প্রতি আমার অপছন্দ, এতটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, এর মাধ্যমে কি এই দলের অফিসে আগুন দেওয়ার অধিকার আমার জন্মায়? না, সেটা আমি পারি না। সেটা আসলে কেউই করতে পারে না। গণতন্ত্র সে অধিকারটি কাউকে দেয়নি। একটা মুক্ত সমাজে সবারই রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত।
আর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়টি তো আরও ভয়ংকর। সরকারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করার যে কী বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ তো জামায়াতে ইসলামী নিজেই। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চেষ্টা করে গেছে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে। মেরে-পিটে এদের মাঠেই নামতে দেয়নি। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। নেতৃত্বশূন্য করতে সবই করা হয়েছে। পুরো ১৫ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর লোকজনকে দৌড়ের ওপর রাখা হয়েছে। তারা তাদের অফিস পর্যন্ত খুলতে পারত না। আর একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও জামায়াতকে নিঃশেষ কি করা গেছে? যায়নি। বরং জামায়াত আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে। এত দিন দেখা গেছে জামায়াত কোনো একটি বড় দলের সহযোগী হয়ে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। আর এখন তারা নিজেরা একক শক্তিতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। গায়ের জোরে নিষিদ্ধ করতে গেলে বরং দলটির প্রতি মানুষের সিমপ্যাথি জন্ম নেয়। তখন তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। আসলে নিষিদ্ধ করে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। কখনো যায়নি, এখনো যায় না। কোনো একটি দল নিশ্চিহ্ন কেবল তখনই হয়, যখন জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে, জনগণ সেটাকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি ছিল ২৪ অক্টোবরের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। সরকার এক দিন আগে, ২৩ তারিখেই নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এক ঘোষণার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের এই ছাত্রসংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এ কাজে তারা ব্যবহার করেছে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনটিকে। যে আইনটিকে সব গণতান্ত্রিক শক্তিই সমালোচনা করেছে, সরকার সেই আইনটিকেই ব্যবহার করেছে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে।
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আচরণ ও কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে এদের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতিও কারও মনে জাগ্রত হবে বলে মনে হয় না। হেন কোনো অপকর্ম নেই যা এদের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে এরা ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে হলে শিক্ষার্থীদের সিট বণ্টন—সব কাজই ছিল ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। সবশেষ এবারের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিরীহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর যে নৃশংস হামলা, তার সঙ্গেও সরাসরি জড়িত ছিল এরা। এমন সংগঠনের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকাটাই স্বাভাবিক। এতসব অপকর্মের জন্য তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শাস্তিটা হবে কার? দলের নাকি নেতৃত্বের? তা ছাড়া শাস্তির মাত্রা ও ধরনটা নির্ধারণ করা হবে কোন প্রক্রিয়ায়? শাস্তিটা দেবেই বা কে?
ছাত্রলীগের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিটিও কিন্তু উচ্চারিত হচ্ছিল। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ গণহত্যার, গণতন্ত্র হরণের। সেই সঙ্গে গুম, খুন, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, অপশাসন—এ রকম অনেক অভিযোগ। কেউ বলছেন সংগঠনটির রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারবে না, আবার কেউ বলছেন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। আগামী নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগকে অংশ নিতে দেওয়া যাবে না—এমন দাবি সবচেয়ে বেশি জোরালো।
কেবল আওয়ামী লীগই নয়, নিষিদ্ধ কিংবা রাজনীতি থেকে বিরত রাখার দাবি উঠেছে আওয়ামী জোটভুক্ত দলগুলোর বিরুদ্ধেও। জোটের বাইরে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী শাসনের সহযোগী হিসেবে থাকা জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিয়েও রয়েছে আপত্তি। মাঝে জাতীয় পার্টি একটা কর্মসূচি দিল, ২ নভেম্বর তারা একটা সমাবেশ করবে। এই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না, রাজনীতিই করতে দেওয়া হবে না তাদের, স্বৈরাচারের দোসররা রাজনীতি করতে পারবে না—এমন সব দাবিকে সামনে রেখে ৩১ অক্টোবর হামলা হলো জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ব্যাপক ভাঙচুর শেষে ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো। আগুন যারা ধরাল, তারা সেখানে হাজির হয়েছিল ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা’ ব্যানারে। এরা আসলে কারা? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি অফিসে হামলার কোনো সিদ্ধান্ত তাঁদের কেন্দ্রীয় কমিটির ছিল না। কিন্তু কেন্দ্রীয় দুজন নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম তাঁদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে দল বেঁধে জাপা অফিসের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন সেদিনই। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত যে ছিল না, সেটা জানা গেছে ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর, ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর। গত পরশু রাতে একটি টেলিভিশন টক শোতে সারজিস আলমের কথা শুনে মনে হলো, তাঁরা এখনো জাতীয় পার্টিকে কোনো ধরনের রাজনীতি করতে দিতে রাজি নয়।
প্রশ্নটা ঠিক এখানেই। এই যে রাজনীতি করতে না দেওয়ার মানসিকতা, এটাকে ঠিক গণতান্ত্রিক বলা যায় কি না। কাউকে কথা বলতে না দেওয়া, জোর করে চেয়ার থেকে নামিয়ে দেওয়া, কিংবা মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেওয়াকে গণতান্ত্রিক আচরণ বলা যায় কীভাবে?
মাঝে দেখলাম, স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করে কয়েকজন উচ্চ আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা হলো। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলো। মজার বিষয় হলো, তাঁদের প্রকারান্তরে সরিয়ে দেওয়াও হলো। সেই সাফল্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই কিনা জানি না, এর পরেই দেখা গেল ছাত্ররা দাবি করল—সরে যেতে হবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে। ছাত্রদের এমন দাবির পেছনে সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার প্রচ্ছন্ন উসকানিও অনেকটা দৃশ্যমান ছিল। হয়তো এই দাবিও এত দিনে বাস্তবায়িত হয়ে যেত, যদি না বিএনপির দিক থেকে আপত্তি না উঠত। কেবল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগই নয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিটিকেও প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি শুরু থেকেই বলে আসছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয়।
আমি নিজেও জাতীয় পার্টিকে খুবই অপছন্দ করি। এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার, আমি করতেই পারি। আমার বিবেচনায়, ২০১৪ সাল থেকে এ দেশে গণতন্ত্র হত্যার যে প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ চালু করেছিল, তার প্রধান সহযোগী ছিল জাতীয় পার্টি। ইদানীং দেখি জাতীয় পার্টির নেতারা নানা রকম অজুহাত দিচ্ছেন। বলছেন—আওয়ামী লীগ নাকি তাঁদের কখনো জোর করে, কখনো ব্ল্যাকমেল করে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করেছে। এসব অজুহাত হাস্যকর। জোর করে বা ব্ল্যাকমেল করেই যদি নির্বাচনে নেওয়া সম্ভব হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ তখন বিএনপি বা অন্য দলগুলোকেও একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে যেতে বাধ্য করত। অন্যরা যদি সেই চাপ সহ্য করতে পারে, ব্ল্যাকমেল এড়াতে পারে, তাহলে জাপা পারল না কেন? নাকি তারা পারতে চায়-ই নাই? এটাই এই দলটির ব্যর্থতা। আর এই ব্যর্থতার জন্য তাদের উচিত জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
এই যে জাতীয় পার্টির প্রতি আমার অপছন্দ, এতটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, এর মাধ্যমে কি এই দলের অফিসে আগুন দেওয়ার অধিকার আমার জন্মায়? না, সেটা আমি পারি না। সেটা আসলে কেউই করতে পারে না। গণতন্ত্র সে অধিকারটি কাউকে দেয়নি। একটা মুক্ত সমাজে সবারই রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত।
আর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিষয়টি তো আরও ভয়ংকর। সরকারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করার যে কী বিপরীত প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ তো জামায়াতে ইসলামী নিজেই। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চেষ্টা করে গেছে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে। মেরে-পিটে এদের মাঠেই নামতে দেয়নি। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। নেতৃত্বশূন্য করতে সবই করা হয়েছে। পুরো ১৫ বছর ধরে জামায়াতে ইসলামীর লোকজনকে দৌড়ের ওপর রাখা হয়েছে। তারা তাদের অফিস পর্যন্ত খুলতে পারত না। আর একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও জামায়াতকে নিঃশেষ কি করা গেছে? যায়নি। বরং জামায়াত আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে। এত দিন দেখা গেছে জামায়াত কোনো একটি বড় দলের সহযোগী হয়ে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। আর এখন তারা নিজেরা একক শক্তিতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। গায়ের জোরে নিষিদ্ধ করতে গেলে বরং দলটির প্রতি মানুষের সিমপ্যাথি জন্ম নেয়। তখন তারা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসে। আসলে নিষিদ্ধ করে নিশ্চিহ্ন করা যায় না। কখনো যায়নি, এখনো যায় না। কোনো একটি দল নিশ্চিহ্ন কেবল তখনই হয়, যখন জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করে, জনগণ সেটাকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনটি সমাজে নারী-পুরুষ সমতার বাস্তবায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কিছু সুস্পষ্টভাবে নারীর অধিকারে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম, আবার কিছু সুপারিশ কাঠামোগত ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের
৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ সাড়ে পনেরো বছর পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণ বদলে দিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের হাল ধরেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মূলত এর পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কে একধরনের শীতলতা সৃষ্টি হয়েছে। একসময়ের
১৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো প্রচারণার মাধ্যমে বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে একধরনের ‘গণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী’ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে বিরোধীদের দুর্বল করা এবং আন্দোলন দমনের জন্য নানামুখী কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছিল।
১৩ ঘণ্টা আগেগত বছরই এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটা রেজিমের পতন ঘটিয়েছিল। এ জন্য অসংখ্য তাজা প্রাণ বলি দিতে হয়েছে। কিন্তু আমলাতন্ত্রে যে কোনো পরিবর্তন হয়নি, সেটা বুঝতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। আমলারা নিজের গামলা ভরার বিষয়টি ভালো বোঝেন। এ নিয়েই ২০ এপ্রিল আজকের পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত
১৩ ঘণ্টা আগে