সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
একাত্তরের যুদ্ধকালের মতো সমষ্টিগত দুঃসময় আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি। যুদ্ধটা ছিল রাজনৈতিক এবং তাতে জাতীয়তাবাদ নানাভাবে ও বিভিন্ন দিক দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তি সে সময়ে বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, তার দুর্বলতাও যে ধরা পড়েনি এমন নয়। বাঙালির জাতীয়তাবাদের শক্তি ছিল ঐক্যে, দুর্বলতা ছিল নেতৃত্বের পেটি বুর্জোয়া চরিত্রে।
বিপরীত পক্ষে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদও পরীক্ষা দিয়েছিল। তার দুর্বলতা ছিল অনৈতিকতায় ও অনৈকের। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের কৃত্রিমতা তখন উন্মোচিত হয়ে যায়। ছাপ্পান্ন জনের ওপর চুয়াল্লিশ জন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; আক্রমণের চরিত্রটা ছিল গণহত্যার। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের রক্ষকেরা পরিণত হয়েছিল হানাদার ঘাতক ও দস্যুতে; তাদের অন্য কোনো জোর ছিল না অস্ত্রের জোর ছাড়া। নৈতিক জোর তো নয়ই। ওই যুদ্ধে ভারত যুক্ত হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই, তাদের তাগিদটাও জাতীয়তাবাদেরই ছিল। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া এদের সংযোগটাও যে জাতীয় স্বার্থের বিবেচনার দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল, সে বিষয়েও সন্দেহ নেই।
আসলে বাংলাদেশের মানুষ তো একসময় পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকেই নিজেদের মধ্যে ধারণ করত। এমনকি একাত্তরের প্রথম দিকেও। পয়লা মার্চ ঢাকার স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা চলছিল পাকিস্তানি টিমের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এমসিসি টিমের; পরিবেশটা ছিল রীতিমতো উৎসবমুখর। স্টেডিয়াম ভর্তি বাঙালি দর্শকেরা সবাই প্রবলভাবে পাকিস্তানি দলকে সমর্থন করছিল; কিন্তু ভরদুপুরে যে মুহূর্তে শোনা গেল গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে, অমনি দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেল।
স্টেডিয়াম মুখরিত হলো ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে। আসন তছনছ করা, আগুন জ্বালানো, সবকিছু ঘটল। পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা আক্রান্ত হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় তাদের জান বাঁচিয়ে আশ্রয় নিতে হলো এমপি হোস্টেলে, মাস ঘুরতে না ঘুরতেই যে আবাসটি পরিণত হয়েছিল বাঙালি নির্যাতনের কেন্দ্রে। পরিবর্তনটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। কিছুটা পরিবর্তিত জাতীয়তাবাদের প্রতি অবিশ্বাস গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল এবং আক্রমণের মুখে তা প্রতিরোধে পরিণত হয়েছিল। আক্রমণটা পাকিস্তানিরাই করেছে এবং কাজটা শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই সাতচল্লিশ সালেই। পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই।
কিন্তু তবু সত্য তো এটাও যে একদা বাঙালি মুসলমানই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। তারা একই সঙ্গে বাঙালি ও মুসলমান ছিল। বাঙালিত্বটাই ছিল প্রধান, সেটিই ছিল স্বাভাবিক, তবে তারা নিজেদের মুসলমান পরিচয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছিল রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশাতে। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল তাদের স্বপ্ন আক্রান্ত হয়েছে। ওই আক্রমণের মুখেই তারা তাদের বাঙালি পরিচয়ের কাছে ফিরে গেছে, ওই পরিচয়টিকেই প্রধান করে তুলেছে। আক্রমণটি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল ২৫ মার্চের মধ্যরাতে। অখণ্ড পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার কাজটা বাঙালিদের হস্তক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করেনি, পাকিস্তানি হানাদারেরাই সেটা শুরু ও শেষ করেছে।
সত্য এই যে, জাতীয় মুক্তির জরুরি প্রশ্নটিকে সবাই সমান গুরুত্ব দিতে পারেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের প্রভাব ছিল; ছিল আচরণগত অভ্যাস, এমনকি ওই জাতীয়তাবাদে আস্থা যে ছিল না, তা-ও নয়। যে জন্য দেখা যায় একাত্তরের আগে তো বটেই, পরেও স্থানে স্থানে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের চিহ্ন রয়ে গেছে, বন্যার স্রোত নেমে গেলেও যেমন পানি আটকে থাকে এখানে-সেখানে। যেকোনো বিশ্বাসের পক্ষেই মানসিক সম্পত্তি ও আশ্রয়ে পরিণত হওয়াটা কোনো অসম্ভব ঘটনা নয়। দক্ষিণপন্থীরা পাকিস্তানি ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন, বামপন্থীদের একটি অংশকেও দেখা গেছে শ্রেণি প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে জাতি প্রশ্নকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের যেভাবে অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত ছিল, সেভাবে তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সেই সঙ্গে এটাও তো জানি আমরা যে মার্চ মাসের শেষ দিনগুলোতে বাঙালিদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তানিদের হর্তাকর্তা ইয়াহিয়া খান যে দরকষাকষি করছিলেন, সেটা পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য ছিল না, ছিল তাকে বাঁচানোর জন্যই। সবকিছু মিলিয়ে-মিশিয়ে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বলয় থেকে বাঙালির পক্ষে বের হয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না; মতাদর্শিক নিষেধটা নষ্ট হয়ে যায়নি, তার চেয়েও প্রবল ছিল রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। মুজিবের পেছনে ছিল জনমতের অকুণ্ঠ সমর্থন, ইয়াহিয়ার হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। জনমতের জন্য জায়গা করে দেওয়াটা হতো ন্যায়সংগত, সেটা ঘটেনি; অস্ত্র দমন করতে চেয়েছে জনমতকে। শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি; জনমতেরই জয় হয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীরা হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের যে মহোৎসব বসিয়েছিল, তার তুলনা ইতিহাসে বিরল।
মানসিক আনুগত্যের ব্যাপারটা সামান্য ছিল না। ১৯৪৮-এর মার্চে জিন্নাহ ঢাকায় এসে উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে—এই ঘোষণা দিয়ে বাঙালির ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ছাত্রদের। কিন্তু তারপরেও দেখা যাবে যে তিনি জাতির পিতা ও কায়েদে আজম রয়ে গেছেন, এমনকি ছাত্রদের একাংশের মধ্যেও। ফারুক আজিজ খান তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র। একাত্তরের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে ‘স্প্রিং ১৯৭১’ নামে তিনি একটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি স্মরণ করেছেন যে জিন্নাহ মারা গেছেন, বিবিসিতে এই খবর শুনে মুসলিম লীগপন্থী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সদস্যরা বামপন্থী হিসেবে পরিচিত ছাত্রদের ওপর এমনভাবে চড়াও হন, যেন জিন্নাহর মৃত্যুর জন্য বামপন্থীরাই দায়ী। মুনীর চৌধুরী তখন ওই আবাসিক হলে থাকতেন, তিনিও আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। পাকিস্তানপন্থীরা একাত্তরে কী করবে, তার পূর্বাভাস উনপঞ্চাশেই পাওয়া গিয়েছিল। ফারুক আজিজ লিখেছেন, আক্রমণকারীরা এমনকি তাঁর ওপরও ক্রুদ্ধ ছিল, যদিও বামপন্থী বলে তিনি পরিচিত ছিলেন না। কারণ? কারণ তিনি জিন্নাহর মৃত্যুতে যথোপযুক্ত পরিমাণে শোক প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের আদত শত্রু বামপন্থীরাই, এই রকমের একটা বোধ পাকিস্তানপন্থীদের চেতনায় সানন্দে খেলাধুলা করত, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সামরিক এবং বেসামরিকদের ভেতর খুব যে একটা পার্থক্য দেখা গেছে, তা নয়। তবে তাদের এই বোধ একেবারে যে অযৌক্তিক ছিল, তা-ও নয়। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ছিল ধর্ম, আর বামপন্থীরা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, তাঁদের ‘নাস্তিক’ বলারও রেওয়াজ ছিল। তা ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের আওয়াজ যে বামপন্থীরাই প্রথমে তোলেন, এটাও তো ঐতিহাসিকভাবে সত্য। পাকিস্তানের নিপীড়নকারী ও অবৈজ্ঞানিক সত্তাটি তাদের কাছে স্পষ্ট না হয়ে পারেনি।
পাকিস্তান যে রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তসমর্থ হবে না, এই বোধটা যাঁদের মধ্যে ছিল, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্বয়ং তাঁদের একজন। যে জন্য তিনি ভরসা করতে চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী ও অভিন্ন রাষ্ট্রভাষার ওপর। দেশভাগের সময় তাঁর বিশেষ উদ্বেগ ছিল সেনাবাহিনীর যথোপযুক্ত ভাগ পাওয়ার বিষয়ে। উপযুক্ত একটি সেনাবাহিনী তিনি পেয়েছিলেনও বইকি। অফিসার ও সৈন্য উভয় গণনাতেই সেখানে ছিল পাঞ্জাবিদের একক আধিপত্য। রাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে অস্ত্রধারী সেনাবাহিনীই আবির্ভূত হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রের ধ্বংসও মাশাআল্লাহ তাদের হাতেই সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় ভরসা ছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ওপর, বাঙালিরা সেটা মেনে নেয়নি; বাঙালি জাতীয়তাবাদের অপ্রতিহত বিকাশ ওই না-মানা থেকেই শুরু। তারপরে রাষ্ট্র চলে গেছে সেনাবাহিনীর হাতে।
রাষ্ট্রের ওপর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবেই কায়েম হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল বেসামরিক আমলাতন্ত্র। উভয় ক্ষেত্রেই প্রাধান্য ছিল পাঞ্জাবিদের। এদের অধিকাংশ ব্রিটিশের হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। শুরুতে কিন্তু একটি সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল আকবর খান। তিনিও পাঞ্জাবেরই লোক, কিন্তু তাঁর কিছুটা ঝোঁক ছিল বামপন্থার দিকে। তাঁর স্ত্রী নাসিমা আকবর খান নাকি কমিউনিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তৎপরতার শুরু ১৯৪৯-এ, পূর্ণতা পায় ১৯৫১-তে গিয়ে। আকবর খান তখন রাওয়ালপিন্ডিতে চিফ অব জেনারেল স্টাফ। পরিকল্পনাটি ছিল এই রকমের। মার্চের ৩-৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের রাওয়ালপিন্ডিতে যাওয়ার কথা, সেখানে তাঁকে বন্দী করা হবে। বন্দী অবস্থায় তাঁকে বেতারকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে, তাঁকে বাধ্য করা হবে ক্ষমতা ত্যাগের ঘোষণা দিতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে অযোগ্যতা ও দুর্নীতির। ক্ষমতা চলে যাবে একটি সামরিক কাউন্সিলের হাতে, যার প্রধান হবেন আকবর খান। পরিকল্পনা সফল না হলে বিকল্প হিসেবে হাজারা উপত্যকায় একটি বিপ্লবী বাহিনী গড়ে তোলারও কাজ চলছিল। কিন্তু উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়ে যায় খবর ফাঁস হওয়ার দরুন। আকবর খান, তাঁর স্ত্রী এবং অন্য দশজন বিভিন্ন মাপের অফিসার গ্রেপ্তার হন। কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ এবং পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সাজ্জাদ জহীরকেও মামলায় জড়ানো হয়। এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হলেন আইয়ুব খান। আকবর খান তাঁর সিনিয়র ছিলেন, তিনি অপসারিত হলেন; সিনিয়র অন্য দুজনকেও কর্তারা উপযুক্ত মনে করলেন না। আইয়ুব খানের অবসর গ্রহণ আসন্ন ছিল; তিনি অবসরে তো গেলেনই না, উপরন্তু তাঁর নিয়োগ বর্ধিত হলো এবং তিনি কমান্ডার-ইন-চিফের দায়িত্ব পেয়ে গেলেন। তারপরের ইতিহাস আমরা জানি। আমেরিকানদের সমর্থন নিয়ে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিলেন। নিয়ে রাষ্ট্রের ওপর সেনাবাহিনীর একক কর্তৃত্ব স্থায়ী করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধান বাতিল করে দিলেন এবং নিজেই একটি সংবিধান জারি করলেন, ১৯৬২ সালে। ছাপ্পান্নর সংবিধানে দুটি অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক বিধান ছিল, একটি হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যাসাম্য, অপরটি পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট। আইয়ুবের সংবিধানে ওই দুই বিধান রয়ে গেল এবং তাদের সঙ্গে যোগ হলো রাষ্ট্রপতি শাসন ও অতিঅদ্ভুত বনিয়াদি গণতন্ত্র।
একাত্তরের যুদ্ধকালের মতো সমষ্টিগত দুঃসময় আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি। যুদ্ধটা ছিল রাজনৈতিক এবং তাতে জাতীয়তাবাদ নানাভাবে ও বিভিন্ন দিক দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তি সে সময়ে বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, তার দুর্বলতাও যে ধরা পড়েনি এমন নয়। বাঙালির জাতীয়তাবাদের শক্তি ছিল ঐক্যে, দুর্বলতা ছিল নেতৃত্বের পেটি বুর্জোয়া চরিত্রে।
বিপরীত পক্ষে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদও পরীক্ষা দিয়েছিল। তার দুর্বলতা ছিল অনৈতিকতায় ও অনৈকের। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের কৃত্রিমতা তখন উন্মোচিত হয়ে যায়। ছাপ্পান্ন জনের ওপর চুয়াল্লিশ জন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; আক্রমণের চরিত্রটা ছিল গণহত্যার। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের রক্ষকেরা পরিণত হয়েছিল হানাদার ঘাতক ও দস্যুতে; তাদের অন্য কোনো জোর ছিল না অস্ত্রের জোর ছাড়া। নৈতিক জোর তো নয়ই। ওই যুদ্ধে ভারত যুক্ত হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই, তাদের তাগিদটাও জাতীয়তাবাদেরই ছিল। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া এদের সংযোগটাও যে জাতীয় স্বার্থের বিবেচনার দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল, সে বিষয়েও সন্দেহ নেই।
আসলে বাংলাদেশের মানুষ তো একসময় পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকেই নিজেদের মধ্যে ধারণ করত। এমনকি একাত্তরের প্রথম দিকেও। পয়লা মার্চ ঢাকার স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা চলছিল পাকিস্তানি টিমের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এমসিসি টিমের; পরিবেশটা ছিল রীতিমতো উৎসবমুখর। স্টেডিয়াম ভর্তি বাঙালি দর্শকেরা সবাই প্রবলভাবে পাকিস্তানি দলকে সমর্থন করছিল; কিন্তু ভরদুপুরে যে মুহূর্তে শোনা গেল গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে, অমনি দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেল।
স্টেডিয়াম মুখরিত হলো ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে। আসন তছনছ করা, আগুন জ্বালানো, সবকিছু ঘটল। পাকিস্তানি খেলোয়াড়েরা আক্রান্ত হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় তাদের জান বাঁচিয়ে আশ্রয় নিতে হলো এমপি হোস্টেলে, মাস ঘুরতে না ঘুরতেই যে আবাসটি পরিণত হয়েছিল বাঙালি নির্যাতনের কেন্দ্রে। পরিবর্তনটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। কিছুটা পরিবর্তিত জাতীয়তাবাদের প্রতি অবিশ্বাস গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল এবং আক্রমণের মুখে তা প্রতিরোধে পরিণত হয়েছিল। আক্রমণটা পাকিস্তানিরাই করেছে এবং কাজটা শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই সাতচল্লিশ সালেই। পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই।
কিন্তু তবু সত্য তো এটাও যে একদা বাঙালি মুসলমানই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। তারা একই সঙ্গে বাঙালি ও মুসলমান ছিল। বাঙালিত্বটাই ছিল প্রধান, সেটিই ছিল স্বাভাবিক, তবে তারা নিজেদের মুসলমান পরিচয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছিল রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশাতে। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল তাদের স্বপ্ন আক্রান্ত হয়েছে। ওই আক্রমণের মুখেই তারা তাদের বাঙালি পরিচয়ের কাছে ফিরে গেছে, ওই পরিচয়টিকেই প্রধান করে তুলেছে। আক্রমণটি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল ২৫ মার্চের মধ্যরাতে। অখণ্ড পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার কাজটা বাঙালিদের হস্তক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করেনি, পাকিস্তানি হানাদারেরাই সেটা শুরু ও শেষ করেছে।
সত্য এই যে, জাতীয় মুক্তির জরুরি প্রশ্নটিকে সবাই সমান গুরুত্ব দিতে পারেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের প্রভাব ছিল; ছিল আচরণগত অভ্যাস, এমনকি ওই জাতীয়তাবাদে আস্থা যে ছিল না, তা-ও নয়। যে জন্য দেখা যায় একাত্তরের আগে তো বটেই, পরেও স্থানে স্থানে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের চিহ্ন রয়ে গেছে, বন্যার স্রোত নেমে গেলেও যেমন পানি আটকে থাকে এখানে-সেখানে। যেকোনো বিশ্বাসের পক্ষেই মানসিক সম্পত্তি ও আশ্রয়ে পরিণত হওয়াটা কোনো অসম্ভব ঘটনা নয়। দক্ষিণপন্থীরা পাকিস্তানি ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন, বামপন্থীদের একটি অংশকেও দেখা গেছে শ্রেণি প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে জাতি প্রশ্নকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের যেভাবে অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত ছিল, সেভাবে তাঁরা অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সেই সঙ্গে এটাও তো জানি আমরা যে মার্চ মাসের শেষ দিনগুলোতে বাঙালিদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তানিদের হর্তাকর্তা ইয়াহিয়া খান যে দরকষাকষি করছিলেন, সেটা পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য ছিল না, ছিল তাকে বাঁচানোর জন্যই। সবকিছু মিলিয়ে-মিশিয়ে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বলয় থেকে বাঙালির পক্ষে বের হয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না; মতাদর্শিক নিষেধটা নষ্ট হয়ে যায়নি, তার চেয়েও প্রবল ছিল রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। মুজিবের পেছনে ছিল জনমতের অকুণ্ঠ সমর্থন, ইয়াহিয়ার হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। জনমতের জন্য জায়গা করে দেওয়াটা হতো ন্যায়সংগত, সেটা ঘটেনি; অস্ত্র দমন করতে চেয়েছে জনমতকে। শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি; জনমতেরই জয় হয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীরা হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের যে মহোৎসব বসিয়েছিল, তার তুলনা ইতিহাসে বিরল।
মানসিক আনুগত্যের ব্যাপারটা সামান্য ছিল না। ১৯৪৮-এর মার্চে জিন্নাহ ঢাকায় এসে উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে—এই ঘোষণা দিয়ে বাঙালির ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ছাত্রদের। কিন্তু তারপরেও দেখা যাবে যে তিনি জাতির পিতা ও কায়েদে আজম রয়ে গেছেন, এমনকি ছাত্রদের একাংশের মধ্যেও। ফারুক আজিজ খান তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র। একাত্তরের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে ‘স্প্রিং ১৯৭১’ নামে তিনি একটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি স্মরণ করেছেন যে জিন্নাহ মারা গেছেন, বিবিসিতে এই খবর শুনে মুসলিম লীগপন্থী পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সদস্যরা বামপন্থী হিসেবে পরিচিত ছাত্রদের ওপর এমনভাবে চড়াও হন, যেন জিন্নাহর মৃত্যুর জন্য বামপন্থীরাই দায়ী। মুনীর চৌধুরী তখন ওই আবাসিক হলে থাকতেন, তিনিও আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। পাকিস্তানপন্থীরা একাত্তরে কী করবে, তার পূর্বাভাস উনপঞ্চাশেই পাওয়া গিয়েছিল। ফারুক আজিজ লিখেছেন, আক্রমণকারীরা এমনকি তাঁর ওপরও ক্রুদ্ধ ছিল, যদিও বামপন্থী বলে তিনি পরিচিত ছিলেন না। কারণ? কারণ তিনি জিন্নাহর মৃত্যুতে যথোপযুক্ত পরিমাণে শোক প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের আদত শত্রু বামপন্থীরাই, এই রকমের একটা বোধ পাকিস্তানপন্থীদের চেতনায় সানন্দে খেলাধুলা করত, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সামরিক এবং বেসামরিকদের ভেতর খুব যে একটা পার্থক্য দেখা গেছে, তা নয়। তবে তাদের এই বোধ একেবারে যে অযৌক্তিক ছিল, তা-ও নয়। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ছিল ধর্ম, আর বামপন্থীরা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, তাঁদের ‘নাস্তিক’ বলারও রেওয়াজ ছিল। তা ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের আওয়াজ যে বামপন্থীরাই প্রথমে তোলেন, এটাও তো ঐতিহাসিকভাবে সত্য। পাকিস্তানের নিপীড়নকারী ও অবৈজ্ঞানিক সত্তাটি তাদের কাছে স্পষ্ট না হয়ে পারেনি।
পাকিস্তান যে রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তসমর্থ হবে না, এই বোধটা যাঁদের মধ্যে ছিল, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্বয়ং তাঁদের একজন। যে জন্য তিনি ভরসা করতে চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী ও অভিন্ন রাষ্ট্রভাষার ওপর। দেশভাগের সময় তাঁর বিশেষ উদ্বেগ ছিল সেনাবাহিনীর যথোপযুক্ত ভাগ পাওয়ার বিষয়ে। উপযুক্ত একটি সেনাবাহিনী তিনি পেয়েছিলেনও বইকি। অফিসার ও সৈন্য উভয় গণনাতেই সেখানে ছিল পাঞ্জাবিদের একক আধিপত্য। রাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে অস্ত্রধারী সেনাবাহিনীই আবির্ভূত হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রের ধ্বংসও মাশাআল্লাহ তাদের হাতেই সম্পন্ন হয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় ভরসা ছিল উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ওপর, বাঙালিরা সেটা মেনে নেয়নি; বাঙালি জাতীয়তাবাদের অপ্রতিহত বিকাশ ওই না-মানা থেকেই শুরু। তারপরে রাষ্ট্র চলে গেছে সেনাবাহিনীর হাতে।
রাষ্ট্রের ওপর সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব দ্রুত ও ধারাবাহিকভাবেই কায়েম হচ্ছিল। সঙ্গে ছিল বেসামরিক আমলাতন্ত্র। উভয় ক্ষেত্রেই প্রাধান্য ছিল পাঞ্জাবিদের। এদের অধিকাংশ ব্রিটিশের হাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। শুরুতে কিন্তু একটি সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছিল। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মেজর জেনারেল আকবর খান। তিনিও পাঞ্জাবেরই লোক, কিন্তু তাঁর কিছুটা ঝোঁক ছিল বামপন্থার দিকে। তাঁর স্ত্রী নাসিমা আকবর খান নাকি কমিউনিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তৎপরতার শুরু ১৯৪৯-এ, পূর্ণতা পায় ১৯৫১-তে গিয়ে। আকবর খান তখন রাওয়ালপিন্ডিতে চিফ অব জেনারেল স্টাফ। পরিকল্পনাটি ছিল এই রকমের। মার্চের ৩-৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের রাওয়ালপিন্ডিতে যাওয়ার কথা, সেখানে তাঁকে বন্দী করা হবে। বন্দী অবস্থায় তাঁকে বেতারকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে, তাঁকে বাধ্য করা হবে ক্ষমতা ত্যাগের ঘোষণা দিতে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে অযোগ্যতা ও দুর্নীতির। ক্ষমতা চলে যাবে একটি সামরিক কাউন্সিলের হাতে, যার প্রধান হবেন আকবর খান। পরিকল্পনা সফল না হলে বিকল্প হিসেবে হাজারা উপত্যকায় একটি বিপ্লবী বাহিনী গড়ে তোলারও কাজ চলছিল। কিন্তু উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়ে যায় খবর ফাঁস হওয়ার দরুন। আকবর খান, তাঁর স্ত্রী এবং অন্য দশজন বিভিন্ন মাপের অফিসার গ্রেপ্তার হন। কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজ এবং পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক সাজ্জাদ জহীরকেও মামলায় জড়ানো হয়। এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হলেন আইয়ুব খান। আকবর খান তাঁর সিনিয়র ছিলেন, তিনি অপসারিত হলেন; সিনিয়র অন্য দুজনকেও কর্তারা উপযুক্ত মনে করলেন না। আইয়ুব খানের অবসর গ্রহণ আসন্ন ছিল; তিনি অবসরে তো গেলেনই না, উপরন্তু তাঁর নিয়োগ বর্ধিত হলো এবং তিনি কমান্ডার-ইন-চিফের দায়িত্ব পেয়ে গেলেন। তারপরের ইতিহাস আমরা জানি। আমেরিকানদের সমর্থন নিয়ে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিলেন। নিয়ে রাষ্ট্রের ওপর সেনাবাহিনীর একক কর্তৃত্ব স্থায়ী করার উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধান বাতিল করে দিলেন এবং নিজেই একটি সংবিধান জারি করলেন, ১৯৬২ সালে। ছাপ্পান্নর সংবিধানে দুটি অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক বিধান ছিল, একটি হচ্ছে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যাসাম্য, অপরটি পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট। আইয়ুবের সংবিধানে ওই দুই বিধান রয়ে গেল এবং তাদের সঙ্গে যোগ হলো রাষ্ট্রপতি শাসন ও অতিঅদ্ভুত বনিয়াদি গণতন্ত্র।
নতুন শিল্পকারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাবের ওপর আয়োজিত এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক গণশুনানি সব শ্রেণির গ্রাহক প্রতিনিধিদের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদের মুখে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারেনি। গত বুধবার ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে দিনব্যাপী এই গণশুনানির আয়োজন করেছিল বিইআরসি।
৪ ঘণ্টা আগেবর্তমান পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে সামাজিক অপরাধের ব্যাপকতার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি জনমনে যথেষ্ট আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলার প্রয়োজন বোধ করছি। সমাজ হলো নাগরিকদের জন্য একটি দায়বদ্ধতার জায়গা। যেখানে মানবিক ও পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর প্রতিনিয়ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার...
৪ ঘণ্টা আগেরচিত হয়েছিল। এর মধ্যেই নিহিত ছিল এক নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন ও দিকনির্দেশনা। স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে এলেও সংবিধানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আজও অপরিসীম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। তবে সেই পরিবর্তন বা সংশোধন হবে কীভাবে—এটাই এখন বিতর্কের বিষয়।
৪ ঘণ্টা আগেধর্মীয় বিভক্তি এড়াতে হলে রাষ্ট্রের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ চরিত্র জরুরি। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, সম্ভাব্য নতুন দলটি আদর্শের প্রশ্নকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে। আদর্শগত জায়গায় বড় ফাঁক রেখে কি সুসংহত দল গঠন সম্ভব? এবং আদৌ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন সম্ভব কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।
১৯ ঘণ্টা আগে