জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
ভাষা নিয়ে কিছু বলতে গেলে সে সময়ের সমাজ নিয়েও কথা বলতে হয়। কীভাবে বাংলা ভাষা জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সকলের ভাষা হয়ে উঠল, কীভাবে রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে দেশের জনগণ বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রস্তুত হলো, তার পটভূমি জানা দরকার।
ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতা এসে গিয়েছিল, কিন্তু তখনও প্রকাশ্যে তা ভয়ানক আকার ধারণ করেনি। মুসলিম জাগরণের নেতা স্যার সৈয়দ আমীর আলী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘সে যুগে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে কোনো তিক্ততা ছিল না।
সম্পূর্ণ শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তারা একসঙ্গে বসবাস করেছে। নামাজের সময় মসজিদের পাশ দিয়ে হিন্দু মিছিল গেলে মুসল্লিরা তেড়ে আসেনি। অপরপক্ষে বকরা ঈদে কোরবানিকে কেন্দ্র করেও হিন্দুরা কোনো তুলকালাম কাণ্ড করেনি।...সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট হয় সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচন নিয়ে। ঐ ইস্যু সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমানদের সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কে চিড় ধরেনি।’
নির্মোহ হয়ে এই সময়কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মূলত আন্তসম্প্রদায়ভিত্তিক সরকারি চাকরিবিষয়ক পরিসংখ্যানের উদ্দেশ্যমূলক বিশ্লেষণ হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে ঘোলাটে করেছে। দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যদিও বাংলায় মুসলমানেরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে তাদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিল সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। কিন্তু মুসলমানদের জন্য সৃষ্টির পরও যখন দেখা গেল সেসব শূন্যস্থান পূরণ করতে তারা অপারগ, তখন তারা আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ল। মুসলমানদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন সরকারি পদ পূরণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ পাওয়া যায়নি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গটি। মুসলমানদের অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্পসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবার বেশির ভাগই ছিলেন অবাঙালি।
মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতারা চাকরি-ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম বৈষম্য দেখানোর জন্য সম্প্রদায়ভিত্তিক যে পরিসংখ্যান দিতেন, তাতে যোগ্য প্রার্থী কোন সম্প্রদায়ে কত ছিল, সে ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতেন। যোগ্যতা যে মুসলমানদের কম ছিল, সেটাও দেখা যাবে নবাব সলিমুল্লাহর আমলাতন্ত্রের দিকে তাকালে। ১৯০৭ সালে ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহর জমিদারিতে মোট কর্মচারী বা আমলার সংখ্যা ছিল ৩৭১ জন। এর মধ্যে মুসলমান আমলার সংখ্যা ছিল মাত্র পঁয়তাল্লিশ জন।
যে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল, সেই সালে এন্ট্রান্স পাসের পরিসংখ্যান নিলেও বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সে বছর ৩০২১ জন ছাত্র এন্ট্রান্স পাস করেছিল। এদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮৮ জন। তাই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সাম্প্রদায়িক বৈষম্য প্রমাণের জন্য যেসব সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক।
ভাষা নিয়ে কিছু বলতে গেলে সে সময়ের সমাজ নিয়েও কথা বলতে হয়। কীভাবে বাংলা ভাষা জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সকলের ভাষা হয়ে উঠল, কীভাবে রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে দেশের জনগণ বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রস্তুত হলো, তার পটভূমি জানা দরকার।
ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতা এসে গিয়েছিল, কিন্তু তখনও প্রকাশ্যে তা ভয়ানক আকার ধারণ করেনি। মুসলিম জাগরণের নেতা স্যার সৈয়দ আমীর আলী নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, ‘সে যুগে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে কোনো তিক্ততা ছিল না।
সম্পূর্ণ শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে তারা একসঙ্গে বসবাস করেছে। নামাজের সময় মসজিদের পাশ দিয়ে হিন্দু মিছিল গেলে মুসল্লিরা তেড়ে আসেনি। অপরপক্ষে বকরা ঈদে কোরবানিকে কেন্দ্র করেও হিন্দুরা কোনো তুলকালাম কাণ্ড করেনি।...সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট হয় সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচন নিয়ে। ঐ ইস্যু সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত হিন্দু-মুসলমানদের সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কে চিড় ধরেনি।’
নির্মোহ হয়ে এই সময়কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মূলত আন্তসম্প্রদায়ভিত্তিক সরকারি চাকরিবিষয়ক পরিসংখ্যানের উদ্দেশ্যমূলক বিশ্লেষণ হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে ঘোলাটে করেছে। দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যদিও বাংলায় মুসলমানেরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, কিন্তু সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে তাদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিল সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। কিন্তু মুসলমানদের জন্য সৃষ্টির পরও যখন দেখা গেল সেসব শূন্যস্থান পূরণ করতে তারা অপারগ, তখন তারা আরও বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ল। মুসলমানদের অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন সরকারি পদ পূরণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ পাওয়া যায়নি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রসঙ্গটি। মুসলমানদের অগ্রাধিকার দেওয়া সত্ত্বেও ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্পসংখ্যক মুসলিম শিক্ষক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে আবার বেশির ভাগই ছিলেন অবাঙালি।
মুসলিম জাতীয়তাবাদী নেতারা চাকরি-ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলিম বৈষম্য দেখানোর জন্য সম্প্রদায়ভিত্তিক যে পরিসংখ্যান দিতেন, তাতে যোগ্য প্রার্থী কোন সম্প্রদায়ে কত ছিল, সে ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতেন। যোগ্যতা যে মুসলমানদের কম ছিল, সেটাও দেখা যাবে নবাব সলিমুল্লাহর আমলাতন্ত্রের দিকে তাকালে। ১৯০৭ সালে ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহর জমিদারিতে মোট কর্মচারী বা আমলার সংখ্যা ছিল ৩৭১ জন। এর মধ্যে মুসলমান আমলার সংখ্যা ছিল মাত্র পঁয়তাল্লিশ জন।
যে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয়েছিল, সেই সালে এন্ট্রান্স পাসের পরিসংখ্যান নিলেও বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সে বছর ৩০২১ জন ছাত্র এন্ট্রান্স পাস করেছিল। এদের মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮৮ জন। তাই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, সাম্প্রদায়িক বৈষম্য প্রমাণের জন্য যেসব সম্প্রদায়ভিত্তিক পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মওলানা ভাসানীকে সভাপতি এবং শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ। তখন শেখ মুজিবুর রহমান জেলে ছিলেন, তাঁকে করা হয়েছিল দলের যুগ্ম সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে শামসুল হক অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাওয়ায় শেখ মুজিবুর রহমানকে দলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
৯ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আইনকানুন কিংবা বিধিবিধান নেই। তাহলে এই সরকারের মেয়াদ কত দিন হবে? একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে, সেই অভ্যুত্থানের চালিকাশক্তির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এই সরকার গঠিত ও ক্ষমতায়িত হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেভাই, ব্যানার ঠিক আছে? পোস্টার সোজা লাগছে তো? আরে না না, ওই কোনার ছেলেটা একটু ডান দিকে সরো—পোস্টারের অর্ধেক ঢাকা পড়ে গেছে। ক্যামেরায় হাসিটা ভালো আসছে তো? কেউ কি ‘লাইক’ বাড়ানোর মতো ছবি তুলেছে? এইসব কথাবার্তার মধ্য দিয়েই শুরু হয় আজকালকার মিছিল। কেউ আর চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে না—‘কার জন্য এই সংগ্রাম?’
৯ ঘণ্টা আগেকিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসি কি জিলাপি খেতে চেয়েই বিপদে পড়লেন? নাকি জিলাপির সঙ্গে আরও কিছু তিনি খেতে চেয়েছিলেন, যে ব্যাপারে টেলিফোনের অন্য পাশের ছাত্রনেতা বলেছিলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেবো নে!’
৯ ঘণ্টা আগে