‘চিকেন ট্যাক্স’ থেকে ট্রাম্পের ট্যারিফ
জাহাঙ্গীর আলম
জে পি মর্গ্যানের হিসাব অনুযায়ী, আগস্টে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ১৫.৮ শতাংশ। এর মধ্যে কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ শুল্কও আছে। সর্বশেষ যে গড় কার্যকর শুল্কহার দাঁড়িয়েছে, তা ২০২৪ সালের শেষের দিকে ২.৩ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, তবে স্বাধীনতা দিবসে ঘোষিত ২২ শতাংশের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ কম।
বর্তমানে অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতগুলোকে ঘিরে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষ করে ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস। ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে ওষুধের ওপর শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। অবশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক দেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শুল্ক কমিয়ে নিতে পেরেছে। এমনকি প্রভাবশালী অনেক দেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে বলেও শোনা যায়। যেমন এরই মধ্যে টিকটকের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর নিয়ে স্পেনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একটি চুক্তির রূপরেখায় একমত হয়েছেন। শুরুতে ভারত আপসহীন মনোভাব দেখালেও এখন সমঝোতার টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিচ্ছে উভয় পক্ষই। ফলে পাল্টা শুল্ক এমনকি ‘শাস্তিমূলক শুল্ক’ও শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এটি বলা মুশকিল।
তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি কথা জোর দিয়েই বলা যায়, বুমারদের ‘চিকেন ট্যাক্স’ ফেনোমেনার পুনরাবৃত্তি দেখতে যাচ্ছে জেন-জি। শুল্ক সম্পূর্ণ না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে কেন দীর্ঘস্থায়ী হওয়াই নিয়তি, সেটির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হবে তাদের।
ষাটের দশকে ইউরোপের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাল সময়ে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন আমদানি করা পিকআপ ট্রাক ও কার্গো ভ্যানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এটি ছিল প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা, মূল লক্ষ্য ছিল ইউরোপীয় দেশগুলোকে, বিশেষত ফ্রান্স এবং পশ্চিম জার্মানিকে শাস্তি দেওয়া। কারণ, তারা আমেরিকান মুরগির ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছিল।
সেই বাণিজ্যযুদ্ধ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু পিকআপ ট্রাক এবং কার্গো ভ্যানের ওপর সেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আজও বহাল। কার্যত, এই ‘চিকেন ট্যাক্স’ শুধু আমদানি করা যানবাহন ব্যয়বহুল করেই তোলেনি, আমেরিকান ভোক্তাদের সামনে বিকল্পের পরিসরকেও সীমিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, টয়োটা হিলাক্স বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পিকআপ ট্রাক হলেও যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় না। এই শুল্কের কারণেই আমেরিকার পিকআপ ট্রাকগুলোর দাম এত বেশি। কারণ, মার্কিন গাড়ি কোম্পানিগুলোকে সেভাবে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় না, ফলে তারা ক্রেতাকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করে।
‘চিকেন ট্যাক্স’-এর এই স্থায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেয়। আগস্টে কয়েক ডজন দেশের ওপর নির্দিষ্ট হারে শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যা মার্কিন অর্থনীতি এবং বাণিজ্যনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, শুল্ক কেবল পণ্যকে ব্যয়বহুল করা এবং বাজারের গতি-প্রকৃতিই বদলে দেয় না, এটি একবার আরোপ করা হলে বেশ ভালোমতোই জেঁকে বসে।
কেন একবার শুল্ক আরোপ করা হলে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন সত্ত্বেও টিকে থাকে—অর্থনীতিবিদেরা এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তবে সাধারণ কারণ হলো, যেসব অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী এই অতিরিক্ত শুল্ক থেকে উপকৃত হয়, তারা এটি টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যে আরোপিত বেশির ভাগ শুল্কই বহাল রেখেছিলেন। অথচ ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, অর্থনীতির একজন নবীন ছাত্রও বুঝবে এই শুল্কগুলো অর্থনীতির ক্ষতি করছে। কিন্তু শুল্কগুলো প্রত্যাহার করলে ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের অসন্তুষ্ট হওয়ার ঝুঁকি ছিল। ট্রাম্পের ভোটব্যাংক ছিল এরাই। শুল্ক বহাল রেখে এই ভোটগুলো বাগানোর প্রত্যাশা করেছিলেন বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাট শিবির।
প্রগ্রেসিভ পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি এড গ্রেসার ব্যাখ্যা করেন, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, এর ধ্রুপদি ব্যাখ্যা হলো, তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বাস করে, তারা শুল্ক থেকে উপকৃত হচ্ছে, অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এর জন্য ক্রমবর্ধমান মূল্য দিতে হয় (যা প্রায়ই জাতীয় ক্ষতির কারণ হয়), কিন্তু তারা শুল্ক প্রত্যাহারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে দেখে না।
আপাতদৃষ্টিতে, আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া ট্রাম্পের জন্য কোনো ব্যাপারই না! কারণ, এসব শুল্ক এতটাই বিস্তৃত যে এর শিল্পভিত্তিক সুবিধাভোগী সেই গোষ্ঠীর সংখ্যা কম, যারা এটি বহাল রাখার জন্য তদবির করবে। কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের পরিবর্তে একটি নির্বাহী আদেশেই এগুলো বাতিল করা যেতে পারে। আর জনগণ যেহেতু এই শুল্কের প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী, তাই তারা এ ব্যাপারে সচেতন, এখন পর্যন্ত শক্তিশালী নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেসকে এগুলো বাতিল করার জন্য জনগণ প্রয়োজনীয় চাপ দিতে পারে।
কিন্তু আদালত এই শুল্কগুলোকে বাতিল করতে সমর্থ না হলে, মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতিই এগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সম্প্রসারণ সাধারণত পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা স্বাভাবিক হিসেবেই গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ নেতারা অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য একতরফাভাবে শুল্ককে ব্যবহার করার লোভ সামলাতে পারবেন না।
লিবার্টেরিয়ান থিংক ট্যাংক ‘কম্পিটিটিভ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট’-এর সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রায়ান ইয়াং বলেন, ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তিনি যে দলেরই হন না কেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এই যে অসাধারণ ক্ষমতাচর্চার সুযোগ করে দিলেন, সেটি থেকে নিজেকে তাঁরা সংযত রাখতে চাইবেন না।’
ইয়াং বিশ্বাস করেন, উচ্চমূল্যের কারণে ভোটারদের হতাশার প্রতিক্রিয়ায় বা ট্রাম্পের নীতিগুলো বাতিলের প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে ভবিষ্যতে শুল্ক কিছুটা কমানো হতে পারে। কিন্তু পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে বা কোনো পছন্দের শিল্প খাতকে সাহায্য করার জন্য শুল্ক আরোপের ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবেন।
আবার, কিছু শুল্ক কেবল নীতিনির্ধারণের স্থবিরতা বা ধীরগতির কারণে টিকে থাকে। ট্রাম্প এক শতকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শুল্ক বাড়ানো শুরু করার আগে, মার্কিন শুল্কনীতিতে সর্বোচ্চ শুল্ক ছিল টেক্সটাইল, পোশাক এবং জুতার ওপর। এগুলো মূলত দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন প্রায় অস্তিত্বহীন, কেবল খাতাপত্রে আছে। কারণ, এগুলো অপসারণের কোনো গরজ কারও নেই। যদিও এর কারণে আমেরিকানদের শার্ট, অন্তর্বাস এবং স্নিকারের জন্য অযৌক্তিকভাবে বেশি দাম দিতে হয়।
ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনা বিবেচনায় হরেদরে পাল্টা শুল্কগুলো একটি ধাপ্পা অথবা হোয়াইট হাউস শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে, এমনটা ভেবে অনেকে স্বস্তি পেতে পারেন। এই শুল্ক আসলে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা, ট্রাম্প মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং কিছু দেশকে মার্কিন পণ্য কিনতে বাধ্য করতে, কোনো ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বেয়াড়া কাউকে বাগে আনতে এমন বেপরোয়া আচরণ করছেন। ভবিষ্যতে পরবর্তী কোনো প্রশাসন তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক এবং মুক্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যের জগতে আমাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে—এমনটা ভাবতেও ভালোই লাগে।
কিন্তু ইতিহাস বলে, তেমনটি হয় না। শুল্ক একবার গেড়ে বসলে শিকড় ছড়িয়ে যায় গভীরে। নানা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। আকস্মিক অতিরিক্ত শুল্ক বাজারের গতি-প্রকৃতি বদলে দেয়, অনেকাংশে বিকৃত করে এবং এমন এক অদ্ভুত রাজনৈতিক প্রেরণা তৈরি করে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এর জন্য আমেরিকানদের যেমন ভুগতে হবে, তারচেয়ে বেশি ভুগতে হবে তৃতীয় বিশ্বের খেটে খাওয়া মানুষদের।
লেখক: সাংবাদিক
জে পি মর্গ্যানের হিসাব অনুযায়ী, আগস্টে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার দাঁড়িয়েছে ১৫.৮ শতাংশ। এর মধ্যে কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ৩০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ শুল্কও আছে। সর্বশেষ যে গড় কার্যকর শুল্কহার দাঁড়িয়েছে, তা ২০২৪ সালের শেষের দিকে ২.৩ শতাংশ থেকে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, তবে স্বাধীনতা দিবসে ঘোষিত ২২ শতাংশের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ কম।
বর্তমানে অব্যাহতিপ্রাপ্ত খাতগুলোকে ঘিরে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষ করে ওষুধ ও ইলেকট্রনিকস। ট্রাম্প প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে ওষুধের ওপর শুল্ক ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। অবশ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক দেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শুল্ক কমিয়ে নিতে পেরেছে। এমনকি প্রভাবশালী অনেক দেশের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে বলেও শোনা যায়। যেমন এরই মধ্যে টিকটকের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর নিয়ে স্পেনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা একটি চুক্তির রূপরেখায় একমত হয়েছেন। শুরুতে ভারত আপসহীন মনোভাব দেখালেও এখন সমঝোতার টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিচ্ছে উভয় পক্ষই। ফলে পাল্টা শুল্ক এমনকি ‘শাস্তিমূলক শুল্ক’ও শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে, এটি বলা মুশকিল।
তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একটি কথা জোর দিয়েই বলা যায়, বুমারদের ‘চিকেন ট্যাক্স’ ফেনোমেনার পুনরাবৃত্তি দেখতে যাচ্ছে জেন-জি। শুল্ক সম্পূর্ণ না হলেও বিশেষ ক্ষেত্রে কেন দীর্ঘস্থায়ী হওয়াই নিয়তি, সেটির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হবে তাদের।
ষাটের দশকে ইউরোপের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাল সময়ে, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন আমদানি করা পিকআপ ট্রাক ও কার্গো ভ্যানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। এটি ছিল প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা, মূল লক্ষ্য ছিল ইউরোপীয় দেশগুলোকে, বিশেষত ফ্রান্স এবং পশ্চিম জার্মানিকে শাস্তি দেওয়া। কারণ, তারা আমেরিকান মুরগির ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছিল।
সেই বাণিজ্যযুদ্ধ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু পিকআপ ট্রাক এবং কার্গো ভ্যানের ওপর সেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আজও বহাল। কার্যত, এই ‘চিকেন ট্যাক্স’ শুধু আমদানি করা যানবাহন ব্যয়বহুল করেই তোলেনি, আমেরিকান ভোক্তাদের সামনে বিকল্পের পরিসরকেও সীমিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, টয়োটা হিলাক্স বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পিকআপ ট্রাক হলেও যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় না। এই শুল্কের কারণেই আমেরিকার পিকআপ ট্রাকগুলোর দাম এত বেশি। কারণ, মার্কিন গাড়ি কোম্পানিগুলোকে সেভাবে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় না, ফলে তারা ক্রেতাকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য করে।
‘চিকেন ট্যাক্স’-এর এই স্থায়িত্ব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কেও ইঙ্গিত দেয়। আগস্টে কয়েক ডজন দেশের ওপর নির্দিষ্ট হারে শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যা মার্কিন অর্থনীতি এবং বাণিজ্যনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, শুল্ক কেবল পণ্যকে ব্যয়বহুল করা এবং বাজারের গতি-প্রকৃতিই বদলে দেয় না, এটি একবার আরোপ করা হলে বেশ ভালোমতোই জেঁকে বসে।
কেন একবার শুল্ক আরোপ করা হলে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন সত্ত্বেও টিকে থাকে—অর্থনীতিবিদেরা এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেন। তবে সাধারণ কারণ হলো, যেসব অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী এই অতিরিক্ত শুল্ক থেকে উপকৃত হয়, তারা এটি টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্যে আরোপিত বেশির ভাগ শুল্কই বহাল রেখেছিলেন। অথচ ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, অর্থনীতির একজন নবীন ছাত্রও বুঝবে এই শুল্কগুলো অর্থনীতির ক্ষতি করছে। কিন্তু শুল্কগুলো প্রত্যাহার করলে ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের অসন্তুষ্ট হওয়ার ঝুঁকি ছিল। ট্রাম্পের ভোটব্যাংক ছিল এরাই। শুল্ক বহাল রেখে এই ভোটগুলো বাগানোর প্রত্যাশা করেছিলেন বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাট শিবির।
প্রগ্রেসিভ পলিসি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক সহকারী মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি এড গ্রেসার ব্যাখ্যা করেন, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, সোলার প্যানেল এবং অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, এর ধ্রুপদি ব্যাখ্যা হলো, তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বাস করে, তারা শুল্ক থেকে উপকৃত হচ্ছে, অন্যদিকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এর জন্য ক্রমবর্ধমান মূল্য দিতে হয় (যা প্রায়ই জাতীয় ক্ষতির কারণ হয়), কিন্তু তারা শুল্ক প্রত্যাহারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের বিষয় হিসেবে দেখে না।
আপাতদৃষ্টিতে, আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া ট্রাম্পের জন্য কোনো ব্যাপারই না! কারণ, এসব শুল্ক এতটাই বিস্তৃত যে এর শিল্পভিত্তিক সুবিধাভোগী সেই গোষ্ঠীর সংখ্যা কম, যারা এটি বহাল রাখার জন্য তদবির করবে। কংগ্রেসে আইন প্রণয়নের পরিবর্তে একটি নির্বাহী আদেশেই এগুলো বাতিল করা যেতে পারে। আর জনগণ যেহেতু এই শুল্কের প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী, তাই তারা এ ব্যাপারে সচেতন, এখন পর্যন্ত শক্তিশালী নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেসকে এগুলো বাতিল করার জন্য জনগণ প্রয়োজনীয় চাপ দিতে পারে।
কিন্তু আদালত এই শুল্কগুলোকে বাতিল করতে সমর্থ না হলে, মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতিই এগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সম্প্রসারণ সাধারণত পরবর্তী প্রেসিডেন্টরা স্বাভাবিক হিসেবেই গ্রহণ করেন। এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ নেতারা অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য একতরফাভাবে শুল্ককে ব্যবহার করার লোভ সামলাতে পারবেন না।
লিবার্টেরিয়ান থিংক ট্যাংক ‘কম্পিটিটিভ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট’-এর সিনিয়র অর্থনীতিবিদ রায়ান ইয়াং বলেন, ‘পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তিনি যে দলেরই হন না কেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য এই যে অসাধারণ ক্ষমতাচর্চার সুযোগ করে দিলেন, সেটি থেকে নিজেকে তাঁরা সংযত রাখতে চাইবেন না।’
ইয়াং বিশ্বাস করেন, উচ্চমূল্যের কারণে ভোটারদের হতাশার প্রতিক্রিয়ায় বা ট্রাম্পের নীতিগুলো বাতিলের প্রতীকী পদক্ষেপ হিসেবে ভবিষ্যতে শুল্ক কিছুটা কমানো হতে পারে। কিন্তু পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে বা কোনো পছন্দের শিল্প খাতকে সাহায্য করার জন্য শুল্ক আরোপের ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইবেন।
আবার, কিছু শুল্ক কেবল নীতিনির্ধারণের স্থবিরতা বা ধীরগতির কারণে টিকে থাকে। ট্রাম্প এক শতকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শুল্ক বাড়ানো শুরু করার আগে, মার্কিন শুল্কনীতিতে সর্বোচ্চ শুল্ক ছিল টেক্সটাইল, পোশাক এবং জুতার ওপর। এগুলো মূলত দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন প্রায় অস্তিত্বহীন, কেবল খাতাপত্রে আছে। কারণ, এগুলো অপসারণের কোনো গরজ কারও নেই। যদিও এর কারণে আমেরিকানদের শার্ট, অন্তর্বাস এবং স্নিকারের জন্য অযৌক্তিকভাবে বেশি দাম দিতে হয়।
ট্রাম্পের খামখেয়ালিপনা বিবেচনায় হরেদরে পাল্টা শুল্কগুলো একটি ধাপ্পা অথবা হোয়াইট হাউস শেষ পর্যন্ত এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে, এমনটা ভেবে অনেকে স্বস্তি পেতে পারেন। এই শুল্ক আসলে একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা, ট্রাম্প মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং কিছু দেশকে মার্কিন পণ্য কিনতে বাধ্য করতে, কোনো ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে বেয়াড়া কাউকে বাগে আনতে এমন বেপরোয়া আচরণ করছেন। ভবিষ্যতে পরবর্তী কোনো প্রশাসন তুলনামূলকভাবে কম শুল্ক এবং মুক্ত বৈশ্বিক বাণিজ্যের জগতে আমাদের আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবে—এমনটা ভাবতেও ভালোই লাগে।
কিন্তু ইতিহাস বলে, তেমনটি হয় না। শুল্ক একবার গেড়ে বসলে শিকড় ছড়িয়ে যায় গভীরে। নানা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে ওঠে। আকস্মিক অতিরিক্ত শুল্ক বাজারের গতি-প্রকৃতি বদলে দেয়, অনেকাংশে বিকৃত করে এবং এমন এক অদ্ভুত রাজনৈতিক প্রেরণা তৈরি করে, যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এর জন্য আমেরিকানদের যেমন ভুগতে হবে, তারচেয়ে বেশি ভুগতে হবে তৃতীয় বিশ্বের খেটে খাওয়া মানুষদের।
লেখক: সাংবাদিক
হঠাৎ জ্বলে ওঠা নেপালের জেনারেশন জেড বিদ্রোহ যেমন দ্রুতই থেমে গেছে, তেমনি এটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। বরং এর অভিঘাত ভবিষ্যতের রাজনীতিকে স্পষ্টভাবে প্রভাবিত করবে। নেপালের সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, প্রতিটি আন্দোলনই রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে।
৮ ঘণ্টা আগেযাঁরা হরর বা ভয়ের চলচ্চিত্র পছন্দ করেন, তাঁরা সম্ভবত এ ধরনের চলচ্চিত্রের একটি প্যাটার্ন বুঝতে পারেন। বিশেষ করে প্রেতাত্মানির্ভর সিনেমাগুলোয় এই প্যাটার্ন খুব স্পষ্ট। গল্প আর প্রেক্ষাপট যা-ই হোক না কেন, এসব চলচ্চিত্রে ঘাড়ে চেপে বসা প্রেতাত্মাকে বিদায় করতে গিয়ে রোগী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পৌঁছে যায়।
৯ ঘণ্টা আগেদেশের মধ্যে নানা নেতিবাচক সংবাদের ভিড়ে কিছু সংবাদ আসলেই মন ভালো করে দেয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পক্ষ থেকে ভারতবর্ষের কিংবদন্তি গায়ক শচীন দেববর্মনের পৈতৃক বাড়ি সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেদেশে মনে হয় সাহিত্যচর্চা ভালোই চলছে; বিশেষ করে রাজশাহীর বিভিন্ন জেলায়—অন্তত পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লেখা বইগুলো তো তা-ই বলে। পুলিশের চাকরির সুবাদে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেই লেখা যায় তদন্ত, আইনকানুন, নিয়মনীতি ও প্রশিক্ষণবিষয়ক বই। তাঁরা দায়িত্বের ফাঁকে এসব বই লেখেন, আর সেসব নাকি শত শত ক্রেতা...
১ দিন আগে