জাহাঙ্গীর আলম
নেপাল ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেবল ভৌগোলিক নয়; হাজার বছরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ। উন্মুক্ত সীমান্ত, অভিন্ন হিন্দু ঐতিহ্য এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল বাস্তবতা। এই মনোভাবের মূল ভিত্তি হলো ভারতের ‘দাদাগিরি’ বা আধিপত্যবাদী আচরণ এবং নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দিল্লির হস্তক্ষেপের অভিযোগ। ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল শান্তি ও মৈত্রী চুক্তির পর থেকে এই ধারণা আরও তীব্র হয়েছে। কারণ, অনেক নেপালি মনে করেন, এই অসম চুক্তি নেপালের সার্বভৌমত্বকে সীমিত করে ভারতের হাতে পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে।
নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণগুলো বহুস্তরীয় এবং ঐতিহাসিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর একটি হলো ২০১৫ সালের সীমান্ত অবরোধ। ওই বছর নেপাল যখন নতুন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণয়ন করে, তখন ভারত কিছু ধারার বিরোধিতা করে। ভারতের অভিযোগ ছিল, এই মদেশি তফসিলি সম্প্রদায়ের অধিকারকে প্রান্তিক করে তুলছে। এর প্রতিবাদে ভারত-নেপাল সীমান্তে এক অনানুষ্ঠানিক অবরোধ শুরু হয়। এই পদক্ষেপ নেপালের জনগণকে চরম সংকটে ফেলে। জ্বালানি, খাদ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিলে নেপালি জনগণ এর জন্য সরাসরি ভারতকে দায়ী করে। এ ঘটনা ভারতবিরোধী মনোভাবকে নতুন করে উসকে দেয়।
এরপর ২০২০ সালে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সরকার যখন নতুন একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, তাতে ভারতের দাবি করা কালাপানি, লিপুলেক এবং লিম্পিয়াধুরার মতো বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পদক্ষেপ নেপালি জনগণের মধ্যে তীব্র জাতীয়তাবাদী চেতনা তৈরি করে এবং ভারতকে সম্প্রসারণবাদী হিসেবে চিত্রিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ইস্যু দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে উত্তপ্ত করে তোলে।
এ ছাড়া নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই ভারতের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে; বিশেষ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন দেওয়ার মতো অভিযোগগুলো নেপালি জনগণের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস তৈরি করে। অলি নিজেই ক্ষমতায় থাকার সময় ২০২১ সালে ভারতের হেজিমনির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, প্রথমবারের মতো প্রথা ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতকে এড়িয়ে প্রথম সফরে চীন গেছেন, যা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের একটি কৌশল ছিল বলেই মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি: ২০২৪-২০২৫
২০২৪-২৫ সালে নেপালের অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি এবং ভূরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ভারতবিরোধী মনোভাব আরও তীব্র হয়েছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীরগতি, মূল্যস্ফীতি এবং জলবিদ্যুতের জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধি এবং অলির চীনঘনিষ্ঠ নীতির কারণে নেপাল-ভারত সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে।
রাজতন্ত্র ও হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (২০২৫-এর শুরুতে) : ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার মানুষ নেপালের রাজতন্ত্র (যা ২০০৮ সালে বিলুপ্ত হয়েছিল) এবং একটি হিন্দু রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাবেশ করে। আন্দোলনকারীরা ‘রাজা আও দেশ বাঁচাও’ (রাজা এসো, দেশকে বাঁচাও) স্লোগান দেয় এবং সেক্যুলার কমিউনিস্ট নেতৃত্বে সরকারের দুর্নীতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারানোর সমালোচনা করে। যদিও কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষক এটিকে ‘কমিউনিস্ট’ শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ হিসেবে দেখে, অনেক নেপালি সমালোচক মনে করেন, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো (যেমন আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ—ভিএইচপি) এই সমাবেশকে অর্থায়ন করছে এবং হিন্দুত্ববাদী আদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে।
সাম্প্রতিক জেন-জি (যুব) আন্দোলন
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে একটি উল্লেখযোগ্য যুব আন্দোলন শুরু হয়, যা নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয় এবং প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগে বাধ্য করে। ‘জেন-জি আন্দোলন’ নামে পরিচিত এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (টিকটক, ফেসবুক, এক্স) নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
আন্দোলনের সূত্রপাত: ৭ সেপ্টেম্বর এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশের যুবসমাজ, যারা বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারণে হতাশ ছিল, তারা দ্রুত প্রতিবাদ শুরু করে। তাদের মূল দাবি ছিল দুর্নীতি দমন, নতুন নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের অন্যায় সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা।
সহিংসতা ও পতন: ৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। কাঠমান্ডুসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন ও যানবাহনে আগুন দেয় এবং অলির বাসভবন পুড়িয়ে দেয়। এই সহিংস বিক্ষোভের ফলে ৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং চাপের মুখে অলি পদত্যাগ করেন।
যুব আন্দোলন এবং ভারতবিরোধী মনোভাবের সংযোগ
এই আন্দোলন নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাবকে আরও জটিল করেছে। একাধিক পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হলেও এটিকে বহিরাগত শক্তি, বিশেষ করে ভারত, ছিনতাই করেছে।
ভারতের হস্তক্ষেপের ধারণা: কিছু নেপালি, যাঁদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ও বিশ্লেষকেরাও রয়েছেন, অভিযোগ করেন যে, আরপিপির মতো ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর আকস্মিক উত্থানের পেছনে ভারতীয় গ্রুপগুলোর অর্থায়ন রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকে ভারতীয় নেতা; যেমন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবিসংবলিত পোস্টার বহন করেছে এবং হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, এগুলো ভারতে প্রচ্ছন্ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত।
ভারতের বিপরীত বয়ান: ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এই আন্দোলনকে কমিউনিস্ট বিরোধ এবং হিন্দুত্ববাদী হিসেবে তুলে ধরছে। এই বিক্ষোভ ভারতের জন্য উপকারী বলেই মনে করছে তারা। তাদের মতে, এটি চীন-ঘনিষ্ঠ শক্তিকে দুর্বল করতে পারে। তবে নেপালি ডায়াসপোরা এবং যুবসমাজ সতর্ক করেছে, ভারতীয় হেজিমনি এবং অর্থনৈতিক চাপই এই অস্থিরতার মূল কারণ।
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ও প্রভাব
এই যুব আন্দোলন নেপালের গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতাকেই উন্মুক্ত করেছে। অলির পদত্যাগের ফলে সৃষ্ট ক্ষমতার শূন্যতা দেশের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। যদি এই আন্দোলনকে বাহ্যিকভাবে প্রভাবিত মনে করা হয়, তাহলে তা ভারত-নেপাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও খারাপ করতে পারে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, এটি নেপালি যুবকদের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং সংস্কারের জন্য একটি নতুন চেতনা তৈরি করেছে।
ভারতের জন্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমর্থন এবং নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এড়ানো একটি চতুর ভারসাম্য বজায়ের কৌশল হতে পারে। সামগ্রিকভাবে, নেপালের এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় যুবশক্তির উত্থানের একটি সংকেত, কিন্তু বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের কারণে এটি আরও জটিল এবং বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। নেপালে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য ভারত ও নেপালের মধ্যে সীমান্ত এবং অর্থনীতির মতো ইস্যুগুলোর ওপর এখন সংলাপ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
লেখক: সাংবাদিক
নেপাল ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেবল ভৌগোলিক নয়; হাজার বছরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ। উন্মুক্ত সীমান্ত, অভিন্ন হিন্দু ঐতিহ্য এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল বাস্তবতা। এই মনোভাবের মূল ভিত্তি হলো ভারতের ‘দাদাগিরি’ বা আধিপত্যবাদী আচরণ এবং নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দিল্লির হস্তক্ষেপের অভিযোগ। ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল শান্তি ও মৈত্রী চুক্তির পর থেকে এই ধারণা আরও তীব্র হয়েছে। কারণ, অনেক নেপালি মনে করেন, এই অসম চুক্তি নেপালের সার্বভৌমত্বকে সীমিত করে ভারতের হাতে পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে।
নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণগুলো বহুস্তরীয় এবং ঐতিহাসিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর একটি হলো ২০১৫ সালের সীমান্ত অবরোধ। ওই বছর নেপাল যখন নতুন ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণয়ন করে, তখন ভারত কিছু ধারার বিরোধিতা করে। ভারতের অভিযোগ ছিল, এই মদেশি তফসিলি সম্প্রদায়ের অধিকারকে প্রান্তিক করে তুলছে। এর প্রতিবাদে ভারত-নেপাল সীমান্তে এক অনানুষ্ঠানিক অবরোধ শুরু হয়। এই পদক্ষেপ নেপালের জনগণকে চরম সংকটে ফেলে। জ্বালানি, খাদ্য এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিলে নেপালি জনগণ এর জন্য সরাসরি ভারতকে দায়ী করে। এ ঘটনা ভারতবিরোধী মনোভাবকে নতুন করে উসকে দেয়।
এরপর ২০২০ সালে নেপালের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সরকার যখন নতুন একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে, তাতে ভারতের দাবি করা কালাপানি, লিপুলেক এবং লিম্পিয়াধুরার মতো বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই পদক্ষেপ নেপালি জনগণের মধ্যে তীব্র জাতীয়তাবাদী চেতনা তৈরি করে এবং ভারতকে সম্প্রসারণবাদী হিসেবে চিত্রিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ইস্যু দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে উত্তপ্ত করে তোলে।
এ ছাড়া নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়শই ভারতের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে; বিশেষ করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা ভারতপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোকে সমর্থন দেওয়ার মতো অভিযোগগুলো নেপালি জনগণের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস তৈরি করে। অলি নিজেই ক্ষমতায় থাকার সময় ২০২১ সালে ভারতের হেজিমনির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, প্রথমবারের মতো প্রথা ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতকে এড়িয়ে প্রথম সফরে চীন গেছেন, যা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের একটি কৌশল ছিল বলেই মনে করা হয়।
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি: ২০২৪-২০২৫
২০২৪-২৫ সালে নেপালের অর্থনৈতিক সংকট, ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি এবং ভূরাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে ভারতবিরোধী মনোভাব আরও তীব্র হয়েছে। কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীরগতি, মূল্যস্ফীতি এবং জলবিদ্যুতের জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা জনগণের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে প্রভাব বৃদ্ধি এবং অলির চীনঘনিষ্ঠ নীতির কারণে নেপাল-ভারত সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে।
রাজতন্ত্র ও হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন (২০২৫-এর শুরুতে) : ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, কাঠমান্ডুতে হাজার হাজার মানুষ নেপালের রাজতন্ত্র (যা ২০০৮ সালে বিলুপ্ত হয়েছিল) এবং একটি হিন্দু রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাবেশ করে। আন্দোলনকারীরা ‘রাজা আও দেশ বাঁচাও’ (রাজা এসো, দেশকে বাঁচাও) স্লোগান দেয় এবং সেক্যুলার কমিউনিস্ট নেতৃত্বে সরকারের দুর্নীতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারানোর সমালোচনা করে। যদিও কিছু ভারতীয় পর্যবেক্ষক এটিকে ‘কমিউনিস্ট’ শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ হিসেবে দেখে, অনেক নেপালি সমালোচক মনে করেন, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো (যেমন আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ—ভিএইচপি) এই সমাবেশকে অর্থায়ন করছে এবং হিন্দুত্ববাদী আদর্শের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে।
সাম্প্রতিক জেন-জি (যুব) আন্দোলন
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে একটি উল্লেখযোগ্য যুব আন্দোলন শুরু হয়, যা নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয় এবং প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির পদত্যাগে বাধ্য করে। ‘জেন-জি আন্দোলন’ নামে পরিচিত এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম (টিকটক, ফেসবুক, এক্স) নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।
আন্দোলনের সূত্রপাত: ৭ সেপ্টেম্বর এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশের যুবসমাজ, যারা বেকারত্ব, দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির কারণে হতাশ ছিল, তারা দ্রুত প্রতিবাদ শুরু করে। তাদের মূল দাবি ছিল দুর্নীতি দমন, নতুন নির্বাচন এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের অন্যায় সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা।
সহিংসতা ও পতন: ৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। কাঠমান্ডুসহ অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয় এবং ৫০ জনের বেশি আহত হয়। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবন ও যানবাহনে আগুন দেয় এবং অলির বাসভবন পুড়িয়ে দেয়। এই সহিংস বিক্ষোভের ফলে ৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয় এবং চাপের মুখে অলি পদত্যাগ করেন।
যুব আন্দোলন এবং ভারতবিরোধী মনোভাবের সংযোগ
এই আন্দোলন নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাবকে আরও জটিল করেছে। একাধিক পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন হলেও এটিকে বহিরাগত শক্তি, বিশেষ করে ভারত, ছিনতাই করেছে।
ভারতের হস্তক্ষেপের ধারণা: কিছু নেপালি, যাঁদের মধ্যে বিক্ষোভকারী ও বিশ্লেষকেরাও রয়েছেন, অভিযোগ করেন যে, আরপিপির মতো ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর আকস্মিক উত্থানের পেছনে ভারতীয় গ্রুপগুলোর অর্থায়ন রয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অনেকে ভারতীয় নেতা; যেমন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ছবিসংবলিত পোস্টার বহন করেছে এবং হিন্দুত্ববাদী স্লোগান দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, এগুলো ভারতে প্রচ্ছন্ন অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের ইঙ্গিত।
ভারতের বিপরীত বয়ান: ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো এই আন্দোলনকে কমিউনিস্ট বিরোধ এবং হিন্দুত্ববাদী হিসেবে তুলে ধরছে। এই বিক্ষোভ ভারতের জন্য উপকারী বলেই মনে করছে তারা। তাদের মতে, এটি চীন-ঘনিষ্ঠ শক্তিকে দুর্বল করতে পারে। তবে নেপালি ডায়াসপোরা এবং যুবসমাজ সতর্ক করেছে, ভারতীয় হেজিমনি এবং অর্থনৈতিক চাপই এই অস্থিরতার মূল কারণ।
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ ও প্রভাব
এই যুব আন্দোলন নেপালের গণতন্ত্রের ভঙ্গুরতাকেই উন্মুক্ত করেছে। অলির পদত্যাগের ফলে সৃষ্ট ক্ষমতার শূন্যতা দেশের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। যদি এই আন্দোলনকে বাহ্যিকভাবে প্রভাবিত মনে করা হয়, তাহলে তা ভারত-নেপাল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও খারাপ করতে পারে। তবে ইতিবাচক দিক হলো, এটি নেপালি যুবকদের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং সংস্কারের জন্য একটি নতুন চেতনা তৈরি করেছে।
ভারতের জন্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমর্থন এবং নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এড়ানো একটি চতুর ভারসাম্য বজায়ের কৌশল হতে পারে। সামগ্রিকভাবে, নেপালের এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় যুবশক্তির উত্থানের একটি সংকেত, কিন্তু বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের কারণে এটি আরও জটিল এবং বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে। নেপালে একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য ভারত ও নেপালের মধ্যে সীমান্ত এবং অর্থনীতির মতো ইস্যুগুলোর ওপর এখন সংলাপ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
লেখক: সাংবাদিক
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা-সংশয় যা-ই বলি, এত দিন সে বিষয়টির পরিসর সীমিত ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য এবং সাধারণত নির্বাক থাকা দেশের আমজনতার মনোজগতে। কিন্তু এখন যখন সরকারপ্রধান নিজেই সেই শঙ্কার কথা ব্যক্ত করছেন, তখন বিষয়টি যে মোটেই অমূলক নয়, তা স্বীকার করতে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না
১৫ ঘণ্টা আগেআজ থেকে খুব বেশি দিন না, এই ধরেন, বারো-সাড়ে বারো শ বছর আগের কথা। হীরকরাজ্যে তখনো জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিদ্যা-শিক্ষার চর্চা হতো। রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। ৩০০ বছর ধরে শুধু উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকেই নয়, বরং চীন, তিব্বত, ব্রহ্মদেশ (মিয়ানমার), শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড), মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়াসহ
১৬ ঘণ্টা আগে৭ সেপ্টেম্বর বদরুদ্দীন উমরের জীবনের প্রস্থান হয়েছে। তাঁর এই প্রস্থানের মধ্য দিয়ে তিন পুরুষের রাজনৈতিক ধারারও সমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর দাদা আবুল কাসেম ছিলেন তৎকালীন জাতীয় কংগ্রেসের পার্লামেন্টারিয়ান বোর্ডের সদস্য। বাবা আবুল হাশিম ছিলেন মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আর তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট ধারার নেতা।
১৬ ঘণ্টা আগেশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু পড়াশোনার জায়গা নয়, এটি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশেরও জায়গা। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড একটি শিশুর পূর্ণাঙ্গ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানের ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এই মৌলিক অধিকার বিঘ্নিত হয়, তখন তা
১৬ ঘণ্টা আগে