মৃত্যুঞ্জয় রায়
চন্দ্রালোকবিজয়ী লে. কর্নেল নিল আর্মস্টং, মাইকেল কলিন্স এবং এডউইন ই অলড্রিন ঢাকায় এসেছিলেন ১৯৬৯ সালের ২৭ অক্টোবর। ঢাকায় তাঁরা ছিলেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁরা এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সাংবাদিক ফজলুল করিম তাঁর মহানগরীর তরুসজ্জা নিবন্ধে সেই স্মৃতিচারণা করে লিখেছেন, ‘চন্দ্রলোকবিহারী নিল আর্মস্টংকে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ঢাকা আপনার কেমন লাগলো?” মহাকাশচারী জবাবে বলেছিলেন, “এমন সবুজ শোভা আর কোথাও দেখিনি।” জবাব শুনে আমাদের বুক ভরে উঠেছিল আনন্দে। প্রতিদিনকার সান্নিধ্য ভুলে যাওয়া আমার শ্যামল জন্মভূমির মূর্তিটি আরেকবার দেখি মানসচক্ষে, এক বিদেশীর চোখ দিয়ে। অনুভব করতে পারি বিলাসবহুল অভিজাত হোটেলের উচ্চতম কক্ষের বাতায়নে নজর পড়তেই দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল রমনার সবুজ সমারোহ। এদিক ওদিক অনেক ইমারত টাওয়ার মাথা তুলে দাঁড়ালেও সেগুনের দীর্ঘ বিথী, গুলমোহর (কৃষ্ণচূড়া), রাজশিরীষ (গগনশিরীষ), পাদাউক-এর দীর্ঘ সবুজ শীর্ষ আর সামনে প্রসারিত রমনার মাঠ তাদের শ্যামল মহিমায় পরাভূত করেছে মনুষ্য রচিত ইট-কাঠের স্তূপকে।’ সে সবুজকে আমরা আবার ফিরে পেতে চাই, চাই আমাদের শহরগুলো পরিবেশবান্ধব সবুজ নগর হয়ে থাকুক। যেকোনো শহরের বাসযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরমের দিনে ঠান্ডা থাকাটা আরামের, তেমনি শীতের দিনে গরম। এ দুটো কাজই প্রকৃতিতে করতে পারে একমাত্র গাছপালা। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টির ধারা নামাতে সাহায্য করে গাছপালা। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, জীবন বাঁচানোর অক্সিজেন দেয়, পাখি ও প্রাণীদের আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়। তাই একটি শহরকে যদি পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক করতে হয়, তাহলে সে শহরে গাছপালা রাখার কোনো বিকল্প নেই। শহরগুলোর বড় সমস্যা হলো অতিরিক্ত দালানকোঠা ও পাকা স্থাপনা এবং জলাভূমি ভরাট হয়ে আসা। যেসব জলাভূমি থেকে জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস উঠে এসে শহরকে ঠান্ডা রাখত, যেসব গাছপালার পাতা থেকে জলীয় বাষ্প প্রস্বেদনের মাধ্যমে বাতাসে মিশে ঠান্ডা রাখত, জলাশয় ও গাছপালা কমে যাওয়ায় তা আর সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে, ধূলিদূষণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে শহরে থাকা বিপুলসংখ্যক কলকারখানা। বৃষ্টি পড়লে সেসব পানি মাটি শুষে নেয়। যে শহরে মাটিটাই রাস্তা, ফুটপাত, ইমারতের মতো কংক্রিটে ঢাকা, সেখানে মাটি সে পানি নেবে কী করে?
শহরে পড়া বৃষ্টির পানির বেশির ভাগই মাটিতে না থেকে চলে যায় পয়োনালা দিয়ে অন্যত্র। মাটির শুষ্কতা মানেই গাছেরও শুকিয়ে যাওয়া। গাছপালা তেষ্টায় থাকে, তাই গাছ থাকলেও সেসব শীর্ণ গাছের পাতাগুলো পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়তে পারে না। তাই গবেষকেরা বলছেন, যেকোনো শহরকে সবুজ শহরে পরিণত করতে হলে সে শহরের পানি ব্যবস্থাপনা, মাটি ও গাছপালার মধ্যে সমন্বয় ও সাম্যতা স্থাপনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা উচিত। এসব প্রযুক্তির ভেতর বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তার যৌক্তিক ব্যবহার, জলাশয়গুলোতে পানি ধরে রাখা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, মাটির নিচ থেকে যথাসম্ভব পানি না তুলে গার্হস্থ্য পানি ব্যবহারের পর তাকে আবার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ইত্যাদি। সম্প্রতি গ্রিন সিটি বা সবুজ শহরের ধারণায় আরেকটি ধারণা যুক্ত হয়েছে, তা হলো ‘গ্রিন-ব্লু রুফ’ বা ‘সবুজ-নীল ছাদ’ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে ছাদেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা, সেসব পানিকে গার্হস্থ্য কাজে ব্যবহার করা এবং সে পানি দিয়েই ছাদের গাছপালা বাঁচানো। এতে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ওপর চাপ কমবে, ব্যাপকসংখ্যক ছাদে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে তা শহরের পরিবেশ রক্ষা ও আর্থিক সাশ্রয়েও ভূমিকা রাখবে।
আইইউসিএন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সমাজের বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে বাংলাদেশের শহরগুলোকে সবুজ করার প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান খোঁজার জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল। কর্মশালায় ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক ও তরুণ প্রফেশনালরা। কর্মশালায় তাঁরা মতামত দিয়েছিলেন, যদি অতি ঘন জনবসতিপূর্ণ শহরগুলোকে সত্যিকার বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে শহরগুলোকে সবুজায়ন করার কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের সেটিই সবচেয়ে সহজ ও সুলভ পথ। তাঁরা প্রস্তাব করেন, এর সমাধান হতে পারে ছাদে বাগান করা, দেয়ালে বাগান করা, বাড়িতে বাড়িতে সুবিধামতো বাগান করা, নগর উদ্যান তৈরি করা, শহরের সব জলাভূমি ও জলাশয়কে সংরক্ষণ এবং তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, প্রতিটি শহরেই একটি নির্দিষ্ট অংশে নগর বন বা খুদে বন সৃজন করা ইত্যাদি। স্বাস্থ্যকর সুপরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য শহরের এরূপ শ্যামলিমা বাড়ানো ও জলাধার ধরে রাখার বিষয়টি খুবই জরুরি। এর জন্য দরকার একটি জাতীয় পরিকল্পনার ফ্রেমওয়ার্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্মিলিত উদ্যোগ। তরুণসমাজ ও স্থানীয় মানুষের অন্তর্ভুক্তি এ ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শুধু ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করলেই হবে না, এই ফ্রেমওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে দেশের সব শহরকেই। বাংলাদেশে ১২টি মহানগর রয়েছে। ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর, দ্বিতীয় বড় শহর চট্টগ্রাম। কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জও বড় শহর। এ ছাড়া রয়েছে ৩৩০টি পৌরনগর, যেসব নগরের লোকসংখ্যা এক লাখের ওপরে। সবার জন্য বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি শহরেরই সবুজায়ন পরিকল্পনা করতে হবে। না হলে সেসব শহরের অবস্থাও একদিন ঢাকা শহরের মতো হবে। চাইলেই রাতারাতি একটি শহর সবুজ শহর হয় না। এর জন্য থাকতে হয় সঠিক সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা, বাস্তবধর্মী কৌশল, পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টা এবং মনিটরিং ও মূল্যায়ন।
২১২০ সালে শহরগুলো কেমন সবুজ ও বাসযোগ্য হবে, নেদারল্যান্ডস তার একটি পরিকল্পনা করেছে ২০২০ সালে। সে পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানগুলোর ওপর। কেননা, এগুলোই পারে পরিবেশের জটিল সমস্যাগুলোকে সহজে সমাধান করতে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, প্রাকৃতিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে পরিবেশসম্মত জীবনযাপন করাই এর মূল সূত্র। আমাদেরও শহরগুলোকে সবুজ শহরে পরিণত করতে এ রকম একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়নের কথা ভাবতে পারি। আইইউসিএন সাতটি জলবায়ুগত বিপত্তির ভিত্তিতে ২০টি প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের উপায় অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে। এগুলোকেও মনে হয় জাতীয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও শিশুদের অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যেখানে থাকি তার চারপাশের পরিবেশ-প্রকৃতিই তাদের জন্য হতে পারে প্রকৃতিপাঠের বড় উপাদান। শিশুরা যেন ছোটবেলা থেকেই তাদের চারপাশটা চিনতে পারে, বুঝতে পারে তারা ছাড়াও তাদের সঙ্গে আর কারা থাকে, তাদের কে কীভাবে সেবা করে চলেছে, কাদের জন্য তারা বেঁচে আছে, তাদের জন্য কী করা উচিত। স্কুলের শিশুদের মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে নিয়ে সেসব পাঠ দিতে হবে। গাড়ির বদলে শিশুরা যেন সাইকেল চালাতে শেখে, শহরে গাড়ির চেয়ে গাছ বেশি থাকাটাই তাদের জন্য বেশি মঙ্গলজনক হবে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
চন্দ্রালোকবিজয়ী লে. কর্নেল নিল আর্মস্টং, মাইকেল কলিন্স এবং এডউইন ই অলড্রিন ঢাকায় এসেছিলেন ১৯৬৯ সালের ২৭ অক্টোবর। ঢাকায় তাঁরা ছিলেন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁরা এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। সাংবাদিক ফজলুল করিম তাঁর মহানগরীর তরুসজ্জা নিবন্ধে সেই স্মৃতিচারণা করে লিখেছেন, ‘চন্দ্রলোকবিহারী নিল আর্মস্টংকে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, “ঢাকা আপনার কেমন লাগলো?” মহাকাশচারী জবাবে বলেছিলেন, “এমন সবুজ শোভা আর কোথাও দেখিনি।” জবাব শুনে আমাদের বুক ভরে উঠেছিল আনন্দে। প্রতিদিনকার সান্নিধ্য ভুলে যাওয়া আমার শ্যামল জন্মভূমির মূর্তিটি আরেকবার দেখি মানসচক্ষে, এক বিদেশীর চোখ দিয়ে। অনুভব করতে পারি বিলাসবহুল অভিজাত হোটেলের উচ্চতম কক্ষের বাতায়নে নজর পড়তেই দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল রমনার সবুজ সমারোহ। এদিক ওদিক অনেক ইমারত টাওয়ার মাথা তুলে দাঁড়ালেও সেগুনের দীর্ঘ বিথী, গুলমোহর (কৃষ্ণচূড়া), রাজশিরীষ (গগনশিরীষ), পাদাউক-এর দীর্ঘ সবুজ শীর্ষ আর সামনে প্রসারিত রমনার মাঠ তাদের শ্যামল মহিমায় পরাভূত করেছে মনুষ্য রচিত ইট-কাঠের স্তূপকে।’ সে সবুজকে আমরা আবার ফিরে পেতে চাই, চাই আমাদের শহরগুলো পরিবেশবান্ধব সবুজ নগর হয়ে থাকুক। যেকোনো শহরের বাসযোগ্যতা ও স্থায়িত্বের জন্য তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরমের দিনে ঠান্ডা থাকাটা আরামের, তেমনি শীতের দিনে গরম। এ দুটো কাজই প্রকৃতিতে করতে পারে একমাত্র গাছপালা। শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টির ধারা নামাতে সাহায্য করে গাছপালা। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, জীবন বাঁচানোর অক্সিজেন দেয়, পাখি ও প্রাণীদের আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়। তাই একটি শহরকে যদি পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক করতে হয়, তাহলে সে শহরে গাছপালা রাখার কোনো বিকল্প নেই। শহরগুলোর বড় সমস্যা হলো অতিরিক্ত দালানকোঠা ও পাকা স্থাপনা এবং জলাভূমি ভরাট হয়ে আসা। যেসব জলাভূমি থেকে জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস উঠে এসে শহরকে ঠান্ডা রাখত, যেসব গাছপালার পাতা থেকে জলীয় বাষ্প প্রস্বেদনের মাধ্যমে বাতাসে মিশে ঠান্ডা রাখত, জলাশয় ও গাছপালা কমে যাওয়ায় তা আর সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শহরের তাপমাত্রা বাড়ছে, ধূলিদূষণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে শহরে থাকা বিপুলসংখ্যক কলকারখানা। বৃষ্টি পড়লে সেসব পানি মাটি শুষে নেয়। যে শহরে মাটিটাই রাস্তা, ফুটপাত, ইমারতের মতো কংক্রিটে ঢাকা, সেখানে মাটি সে পানি নেবে কী করে?
শহরে পড়া বৃষ্টির পানির বেশির ভাগই মাটিতে না থেকে চলে যায় পয়োনালা দিয়ে অন্যত্র। মাটির শুষ্কতা মানেই গাছেরও শুকিয়ে যাওয়া। গাছপালা তেষ্টায় থাকে, তাই গাছ থাকলেও সেসব শীর্ণ গাছের পাতাগুলো পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়তে পারে না। তাই গবেষকেরা বলছেন, যেকোনো শহরকে সবুজ শহরে পরিণত করতে হলে সে শহরের পানি ব্যবস্থাপনা, মাটি ও গাছপালার মধ্যে সমন্বয় ও সাম্যতা স্থাপনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা উচিত। এসব প্রযুক্তির ভেতর বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তার যৌক্তিক ব্যবহার, জলাশয়গুলোতে পানি ধরে রাখা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা, মাটির নিচ থেকে যথাসম্ভব পানি না তুলে গার্হস্থ্য পানি ব্যবহারের পর তাকে আবার পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা ইত্যাদি। সম্প্রতি গ্রিন সিটি বা সবুজ শহরের ধারণায় আরেকটি ধারণা যুক্ত হয়েছে, তা হলো ‘গ্রিন-ব্লু রুফ’ বা ‘সবুজ-নীল ছাদ’ প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে ছাদেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা, সেসব পানিকে গার্হস্থ্য কাজে ব্যবহার করা এবং সে পানি দিয়েই ছাদের গাছপালা বাঁচানো। এতে ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ওপর চাপ কমবে, ব্যাপকসংখ্যক ছাদে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করলে তা শহরের পরিবেশ রক্ষা ও আর্থিক সাশ্রয়েও ভূমিকা রাখবে।
আইইউসিএন এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সমাজের বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে বাংলাদেশের শহরগুলোকে সবুজ করার প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান খোঁজার জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল। কর্মশালায় ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, পরিকল্পনাবিদ, নীতিনির্ধারক ও তরুণ প্রফেশনালরা। কর্মশালায় তাঁরা মতামত দিয়েছিলেন, যদি অতি ঘন জনবসতিপূর্ণ শহরগুলোকে সত্যিকার বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে শহরগুলোকে সবুজায়ন করার কোনো বিকল্প নেই। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের সেটিই সবচেয়ে সহজ ও সুলভ পথ। তাঁরা প্রস্তাব করেন, এর সমাধান হতে পারে ছাদে বাগান করা, দেয়ালে বাগান করা, বাড়িতে বাড়িতে সুবিধামতো বাগান করা, নগর উদ্যান তৈরি করা, শহরের সব জলাভূমি ও জলাশয়কে সংরক্ষণ এবং তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, প্রতিটি শহরেই একটি নির্দিষ্ট অংশে নগর বন বা খুদে বন সৃজন করা ইত্যাদি। স্বাস্থ্যকর সুপরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য শহরের এরূপ শ্যামলিমা বাড়ানো ও জলাধার ধরে রাখার বিষয়টি খুবই জরুরি। এর জন্য দরকার একটি জাতীয় পরিকল্পনার ফ্রেমওয়ার্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্মিলিত উদ্যোগ। তরুণসমাজ ও স্থানীয় মানুষের অন্তর্ভুক্তি এ ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শুধু ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করলেই হবে না, এই ফ্রেমওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে দেশের সব শহরকেই। বাংলাদেশে ১২টি মহানগর রয়েছে। ঢাকা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শহর, দ্বিতীয় বড় শহর চট্টগ্রাম। কুমিল্লা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জও বড় শহর। এ ছাড়া রয়েছে ৩৩০টি পৌরনগর, যেসব নগরের লোকসংখ্যা এক লাখের ওপরে। সবার জন্য বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি শহরেরই সবুজায়ন পরিকল্পনা করতে হবে। না হলে সেসব শহরের অবস্থাও একদিন ঢাকা শহরের মতো হবে। চাইলেই রাতারাতি একটি শহর সবুজ শহর হয় না। এর জন্য থাকতে হয় সঠিক সময়ভিত্তিক পরিকল্পনা, বাস্তবধর্মী কৌশল, পদক্ষেপ ও প্রচেষ্টা এবং মনিটরিং ও মূল্যায়ন।
২১২০ সালে শহরগুলো কেমন সবুজ ও বাসযোগ্য হবে, নেদারল্যান্ডস তার একটি পরিকল্পনা করেছে ২০২০ সালে। সে পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানগুলোর ওপর। কেননা, এগুলোই পারে পরিবেশের জটিল সমস্যাগুলোকে সহজে সমাধান করতে। পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, প্রাকৃতিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে পরিবেশসম্মত জীবনযাপন করাই এর মূল সূত্র। আমাদেরও শহরগুলোকে সবুজ শহরে পরিণত করতে এ রকম একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ধাপে ধাপে তার বাস্তবায়নের কথা ভাবতে পারি। আইইউসিএন সাতটি জলবায়ুগত বিপত্তির ভিত্তিতে ২০টি প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের উপায় অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে। এগুলোকেও মনে হয় জাতীয় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় আমাদের তরুণ প্রজন্ম ও শিশুদের অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা যেখানে থাকি তার চারপাশের পরিবেশ-প্রকৃতিই তাদের জন্য হতে পারে প্রকৃতিপাঠের বড় উপাদান। শিশুরা যেন ছোটবেলা থেকেই তাদের চারপাশটা চিনতে পারে, বুঝতে পারে তারা ছাড়াও তাদের সঙ্গে আর কারা থাকে, তাদের কে কীভাবে সেবা করে চলেছে, কাদের জন্য তারা বেঁচে আছে, তাদের জন্য কী করা উচিত। স্কুলের শিশুদের মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে নিয়ে সেসব পাঠ দিতে হবে। গাড়ির বদলে শিশুরা যেন সাইকেল চালাতে শেখে, শহরে গাড়ির চেয়ে গাছ বেশি থাকাটাই তাদের জন্য বেশি মঙ্গলজনক হবে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এবার যে নববর্ষের আগমন, তা রাঙিয়ে দিয়ে যাক প্রত্যেক মানুষের জীবন। বাংলা নববর্ষের উজ্জীবনী সুধায় স্নান করুক মানুষ। আশা ও আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নপূরণে সার্থক হোক পৃথিবী। গ্লানি, জ্বরা মুছে গিয়ে অগ্নিস্নানে ধরণিকে শুচি করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ...
২ দিন আগেবাংলা নববর্ষ বরণকে কেন্দ্র করে আমাদের নগরকেন্দ্রিক জীবনে উপচানো আবেগ-উচ্ছ্বাস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আবেগ-উচ্ছ্বাস জাতিগত পারস্পরিক সৌহার্দ্যের নয়, সমষ্টিগতও নয়, একান্তই আত্মকেন্দ্রিকতায় সীমাবদ্ধ।
২ দিন আগেনতুন বছরে প্রবেশ করলাম আমরা। পৃথিবীব্যাপী বসবাসরত নানা জনগোষ্ঠী যেমন নতুন বছরকে উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেয়, তেমনি বাঙালিও নানা আনন্দ-আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। একটি নতুন আশা, উদ্দীপনা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বছরের প্রথম দিনটিতে।
২ দিন আগেআশেকা ইরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারপারসন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র জেন্ডার, ভূ-কৌশলগত ও আঞ্চলিক সম্পর্ক নিয়ে। ফিলিস্তিন পরিস্থিতিতে আরব বিশ্বের ভূমিকা...
৩ দিন আগে