উপসম্পাদকীয়
ভাই, ব্যানার ঠিক আছে? পোস্টার সোজা লাগছে তো? আরে না না, ওই কোনার ছেলেটা একটু ডান দিকে সরো—পোস্টারের অর্ধেক ঢাকা পড়ে গেছে। ক্যামেরায় হাসিটা ভালো আসছে তো? কেউ কি ‘লাইক’ বাড়ানোর মতো ছবি তুলেছে?
এইসব কথাবার্তার মধ্য দিয়েই শুরু হয় আজকালকার মিছিল। কেউ আর চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে না—‘কার জন্য এই সংগ্রাম?’ বরং বলে—‘এই ছবিটা কি কভার ফটো হতে পারে?’
মিছিল এখন আর কেবল বিক্ষোভ নয়, এটা একধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। আগে যেভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজিয়ে তোলা হতো মঞ্চ, এখন ঠিক তেমনই সাজানো হয় ব্যানার, মুখাবয়ব, এমনকি স্লোগানও। উদ্বোধনী বক্তব্যের পর এক মিনিট নীরবতা, তারপর এক মিনিট ফটোসেশন। এক সিনিয়র নেতা নির্দেশ দেন—‘পোস্টারটা একটু উঁচু করে ধরো, পাশে দাঁড়াও, স্লোগান যেন ব্যানারের মধ্যে আসে। সেলফি তোলো, এরপর হাঁটা শুরু করো।’ যেন বিপ্লব নয়, ফ্যাশন শোতে হাঁটার প্রস্তুতি।
একসময় মিছিল মানেই ছিল উত্তাল মুখ, তপ্ত পা—‘মুখে গর্জন, পায়ে ঝড়’। এখন তা বদলে দাঁড়িয়েছে—‘মুখে পাউডার, চোখে সানগ্লাস’। যদি অ্যাঙ্গেল ভালো না আসে, তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সেলফি কেমন করে শেয়ার হবে? লাইক কম পড়লে কি সরকারের মসনদ কাঁপবে?
আন্দোলনের আগেই ঘোষণা আসে—ফেসবুক ইভেন্ট তৈরি হয়েছে, সবাইকে ইনভাইট করো। মিছিল শুরুর আগে ফেসবুক লাইভ, ইনস্টাগ্রামে স্টোরি, ক্যাপশন: ‘পথে নেমেছি—চোখে আগুন, বুকে ধ্বনি!’ এক তরুণ নেতা বলেন, ‘স্লোগান শুরু করার আগে স্টোরি আপলোডটা দরকার ভাই। জনগণ জানুক—আমরা পথেই আছি!’ সঙ্গে সেলফি, হাসি, পোজ—ক্যামেরার সামনে বিপ্লবী হতে পারলে তবেই তো বিপ্লব সফল!
অন্যদিকে, পুলিশও যেন নাটক বুঝে রিহার্সাল করে আসে। আগের মতো পেছন থেকে হানা
দেয় না, এখন বলে, ‘তুলে নেন ভাই, এরপর ঠেলা দেই।’ ক্যামেরার দিকে মুখ করে প্রথমে একটু চোখ রাঙিয়ে নেয়, তারপর নায়কোচিত ভঙ্গিতে লাঠি তোলে। যেন রাষ্ট্রীয় দমনও একটা দৃশ্যমান আর্ট ফর্ম!
যোগাযোগমাধ্যমও কম যায় না। আন্দোলনের খবর মানেই এখন নেতার জুতা ঝাড়া দৃশ্য, নেত্রীর শাড়ি ঠিক করার মুহূর্ত, আর কিছু ঝলমলে হাসি। পাঠকের চোখের আরাম আর বিরোধী দলের নেতার বিজ্ঞাপন একসঙ্গেই চলে। এক ফটোসাংবাদিক বলেন, ‘এই যুগে বিপ্লব না দেখাতে পারলে, গণতন্ত্র আসে না। আগে ছবি, পরে দাবি।’
আরেকবার এক মিছিলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হতেই ছাতা খুঁজতে ব্যস্ত সবাই। কেউ না ভিজলেও ব্যানার যেন না ভেজে। ব্যানারের কালি গলে গেলে বিপ্লবের মানেই বদলে যাবে—এমনই আশঙ্কাজনক অবস্থা। তৎক্ষণাৎ ঘোষণা আসে, ‘আজকের মিছিল বাতিল। ছবি যথেষ্ট হয়ে গেছে। সবাই শেয়ার করে দেন।’
সবাই জানে, আন্দোলন এখন আর রাস্তায় গড়ে ওঠে না, গড়ে ওঠে নিউজফিডে। ইনস্টাগ্রামের ফিল্টারে সাদা-কালো ছবি, সঙ্গে হ্যাশট্যাগ—#প্রতিবাদের_পথে, #গণতন্ত্র_ফিরিয়ে_দাও, #লড়বো_জিতব।
পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে ট্যাগ করার জন্য, কেউ স্টোরির রিপোস্ট চায়, কেউ বলে, ‘ভাই, ওই ছবিটা ইনবক্স করেন তো, আমি কাল টুইট করব।’
নেতাদের চেহারাও বদলেছে। আগে তাঁরা ছিলেন মাঠের মানুষ—মরচে ধরা স্যান্ডেল, কণ্ঠে হুংকার, চোখে আগুন। এখন তাঁরা ক্যামেরাবান্ধব। কোনটা ফ্রন্ট ক্যামেরা, কোনটা ব্যাক, কোন অ্যাঙ্গেলে দাঁড়ালে ধ্বনিত হবে বিপ্লব—সবই জানেন তাঁরা। ‘বক্তব্য কেমন হবে?’—এই চিন্তা নয়, ‘ক্যাপশন কেমন হবে?’—এই চিন্তা নিয়েই তাঁরা এখন পথ হাঁটেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যারা আন্দোলন করতে চায়, তারাও ভাবছে কোন সময় ট্রেন্ড হবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা—এই সময়টা সবচেয়ে কার্যকর। কারণ, তখন সবচেয়ে বেশি দর্শক অনলাইনে থাকে। রাজনীতি এখন প্রাইমটাইমে সম্প্রচারযোগ্য না হলে, সেটা কি আদৌ রাজনীতি?
তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একটাই প্রশ্ন—বিপ্লব কি আসলেই গড়ে ওঠে মানুষের কণ্ঠে, রক্তে, ঘামে? নাকি গড়ে ওঠে শেয়ার, লাইক আর ফিল্টারে? এখনকার মিছিল শেষে সবাই একসঙ্গে বসে দেখে—‘কে কতটা ভাইরাল হলো?’ তারপর বলে, ‘ভাই, এইটুকু হইলেই হয়। কাল আবার নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করব!’
বিপ্লব এখন আর মাটিতে নয়, মাউসে। মাঠে নয়, মেমোরিতে। গর্জন নয়, গ্ল্যামারে। আর প্রতিরোধ নয়, পোস্টে!
ভাই, ব্যানার ঠিক আছে? পোস্টার সোজা লাগছে তো? আরে না না, ওই কোনার ছেলেটা একটু ডান দিকে সরো—পোস্টারের অর্ধেক ঢাকা পড়ে গেছে। ক্যামেরায় হাসিটা ভালো আসছে তো? কেউ কি ‘লাইক’ বাড়ানোর মতো ছবি তুলেছে?
এইসব কথাবার্তার মধ্য দিয়েই শুরু হয় আজকালকার মিছিল। কেউ আর চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে না—‘কার জন্য এই সংগ্রাম?’ বরং বলে—‘এই ছবিটা কি কভার ফটো হতে পারে?’
মিছিল এখন আর কেবল বিক্ষোভ নয়, এটা একধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। আগে যেভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজিয়ে তোলা হতো মঞ্চ, এখন ঠিক তেমনই সাজানো হয় ব্যানার, মুখাবয়ব, এমনকি স্লোগানও। উদ্বোধনী বক্তব্যের পর এক মিনিট নীরবতা, তারপর এক মিনিট ফটোসেশন। এক সিনিয়র নেতা নির্দেশ দেন—‘পোস্টারটা একটু উঁচু করে ধরো, পাশে দাঁড়াও, স্লোগান যেন ব্যানারের মধ্যে আসে। সেলফি তোলো, এরপর হাঁটা শুরু করো।’ যেন বিপ্লব নয়, ফ্যাশন শোতে হাঁটার প্রস্তুতি।
একসময় মিছিল মানেই ছিল উত্তাল মুখ, তপ্ত পা—‘মুখে গর্জন, পায়ে ঝড়’। এখন তা বদলে দাঁড়িয়েছে—‘মুখে পাউডার, চোখে সানগ্লাস’। যদি অ্যাঙ্গেল ভালো না আসে, তাহলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সেলফি কেমন করে শেয়ার হবে? লাইক কম পড়লে কি সরকারের মসনদ কাঁপবে?
আন্দোলনের আগেই ঘোষণা আসে—ফেসবুক ইভেন্ট তৈরি হয়েছে, সবাইকে ইনভাইট করো। মিছিল শুরুর আগে ফেসবুক লাইভ, ইনস্টাগ্রামে স্টোরি, ক্যাপশন: ‘পথে নেমেছি—চোখে আগুন, বুকে ধ্বনি!’ এক তরুণ নেতা বলেন, ‘স্লোগান শুরু করার আগে স্টোরি আপলোডটা দরকার ভাই। জনগণ জানুক—আমরা পথেই আছি!’ সঙ্গে সেলফি, হাসি, পোজ—ক্যামেরার সামনে বিপ্লবী হতে পারলে তবেই তো বিপ্লব সফল!
অন্যদিকে, পুলিশও যেন নাটক বুঝে রিহার্সাল করে আসে। আগের মতো পেছন থেকে হানা
দেয় না, এখন বলে, ‘তুলে নেন ভাই, এরপর ঠেলা দেই।’ ক্যামেরার দিকে মুখ করে প্রথমে একটু চোখ রাঙিয়ে নেয়, তারপর নায়কোচিত ভঙ্গিতে লাঠি তোলে। যেন রাষ্ট্রীয় দমনও একটা দৃশ্যমান আর্ট ফর্ম!
যোগাযোগমাধ্যমও কম যায় না। আন্দোলনের খবর মানেই এখন নেতার জুতা ঝাড়া দৃশ্য, নেত্রীর শাড়ি ঠিক করার মুহূর্ত, আর কিছু ঝলমলে হাসি। পাঠকের চোখের আরাম আর বিরোধী দলের নেতার বিজ্ঞাপন একসঙ্গেই চলে। এক ফটোসাংবাদিক বলেন, ‘এই যুগে বিপ্লব না দেখাতে পারলে, গণতন্ত্র আসে না। আগে ছবি, পরে দাবি।’
আরেকবার এক মিছিলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হতেই ছাতা খুঁজতে ব্যস্ত সবাই। কেউ না ভিজলেও ব্যানার যেন না ভেজে। ব্যানারের কালি গলে গেলে বিপ্লবের মানেই বদলে যাবে—এমনই আশঙ্কাজনক অবস্থা। তৎক্ষণাৎ ঘোষণা আসে, ‘আজকের মিছিল বাতিল। ছবি যথেষ্ট হয়ে গেছে। সবাই শেয়ার করে দেন।’
সবাই জানে, আন্দোলন এখন আর রাস্তায় গড়ে ওঠে না, গড়ে ওঠে নিউজফিডে। ইনস্টাগ্রামের ফিল্টারে সাদা-কালো ছবি, সঙ্গে হ্যাশট্যাগ—#প্রতিবাদের_পথে, #গণতন্ত্র_ফিরিয়ে_দাও, #লড়বো_জিতব।
পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে ট্যাগ করার জন্য, কেউ স্টোরির রিপোস্ট চায়, কেউ বলে, ‘ভাই, ওই ছবিটা ইনবক্স করেন তো, আমি কাল টুইট করব।’
নেতাদের চেহারাও বদলেছে। আগে তাঁরা ছিলেন মাঠের মানুষ—মরচে ধরা স্যান্ডেল, কণ্ঠে হুংকার, চোখে আগুন। এখন তাঁরা ক্যামেরাবান্ধব। কোনটা ফ্রন্ট ক্যামেরা, কোনটা ব্যাক, কোন অ্যাঙ্গেলে দাঁড়ালে ধ্বনিত হবে বিপ্লব—সবই জানেন তাঁরা। ‘বক্তব্য কেমন হবে?’—এই চিন্তা নয়, ‘ক্যাপশন কেমন হবে?’—এই চিন্তা নিয়েই তাঁরা এখন পথ হাঁটেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, যারা আন্দোলন করতে চায়, তারাও ভাবছে কোন সময় ট্রেন্ড হবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৮টা—এই সময়টা সবচেয়ে কার্যকর। কারণ, তখন সবচেয়ে বেশি দর্শক অনলাইনে থাকে। রাজনীতি এখন প্রাইমটাইমে সম্প্রচারযোগ্য না হলে, সেটা কি আদৌ রাজনীতি?
তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একটাই প্রশ্ন—বিপ্লব কি আসলেই গড়ে ওঠে মানুষের কণ্ঠে, রক্তে, ঘামে? নাকি গড়ে ওঠে শেয়ার, লাইক আর ফিল্টারে? এখনকার মিছিল শেষে সবাই একসঙ্গে বসে দেখে—‘কে কতটা ভাইরাল হলো?’ তারপর বলে, ‘ভাই, এইটুকু হইলেই হয়। কাল আবার নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করব!’
বিপ্লব এখন আর মাটিতে নয়, মাউসে। মাঠে নয়, মেমোরিতে। গর্জন নয়, গ্ল্যামারে। আর প্রতিরোধ নয়, পোস্টে!
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
৮ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
৮ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
৮ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
১ দিন আগে