বাসব রায়
২০২৫-এর এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হলো ১০ জুলাই। এবার বিগত প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হলো। সব বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৮.৪৫, যা অতীতের অনেক বছরের চেয়ে সর্বনিম্ন। মোট অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। ভাবা যায়! শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। সারা দেশে মোট ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি। গতবারের তুলনায় ৮৩টি বেশি প্রতিষ্ঠান পাস না করার সঙ্গে যুক্ত হলো। কোনো পরিস্থিতিতেই এ রকম ফলাফল অবশ্যই দুঃখজনক। এ লজ্জা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, এ লজ্জা শিক্ষকদের, এ ব্যর্থতা পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে। দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস পর শুরু হয়। এখানেই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সংকট তৈরি হয়। দুই মাস পেছানোয় তাদের মনোভাবে নানা রকমের জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে ভাবা যেতে পারে। আবার এ কারণে উদ্ভূত হতাশা ও উৎকণ্ঠা পরীক্ষা খারাপেরও অন্যতম কারণ হতে পারে।
বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হওয়ায় আমাদের কম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সরাসরি পরিলক্ষিত হয়। তাই ফল আশানুরূপ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একটা কারিকুলাম অনুসারে চলতে চলতে ছয় মাসের মধ্যেই আরেকটা কারিকুলাম চালু হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো প্রায় বেশির ভাগই হয় দায়সারা গোছের। প্রশিক্ষণের সম্মানী পকেটে আসা পর্যন্ত প্রশিক্ষণে থাকা যায়; এর পর পর্যন্ত থাকাটা বাতুলতা ছাড়া অন্য কিছু মনেই হয় না; ‘বঙ্গদেশীয় চরিত্রম’! লেজেগোবরে অবস্থার শিকার এই শিক্ষাব্যবস্থা। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও যথাযথ ব্যবহার হতো না উপকরণসহ অন্য জিনিসগুলোর। প্রকৃতপক্ষে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ছিল একটা বড় রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে সব ধরনের ব্যবসা চলত, চলত না শুধু লেখাপড়ার বাণিজ্যিক চর্চা। জাতিগতভাবে আমাদের পেশাদারি মনোভাব থাকবেই কিন্তু বাজারে সম্ভব-অসম্ভব বলে একটা কথা প্রচলিত আছে; সে জন্যই আজ এ রকম ফল দেখতে হচ্ছে।
এই অবস্থায় আরও নিবিড়ভাবে তদারকি বাড়িয়ে পাবলিক পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে পাসের হার ভয়ংকরভাবে তলানিতে পড়বে। প্রাইভেট স্কুলগুলো টাকার পাহাড় জমাচ্ছে এবং পুরোটাই শিক্ষা-বাণিজ্য। অথচ দেখেও কেউ দেখে না। উচ্চাভিলাষী অভিভাবকেরাও অনেক টাকা টিউশন ফি দিয়ে সেখানে বাচ্চাদের ভর্তি করাচ্ছেন। এ কারণে প্রাইভেট স্কুল কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে ওঠে যেকোনো পন্থায় ভালো ফল করাতে। আর এ জন্য কর্তৃপক্ষ বিবিধ কৌশল অবলম্বনসহ অনৈতিক উপায়ে পাস করিয়ে দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব পালন করে। আশপাশের বেসরকারি বিদ্যালয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা পড়ে। এদের অভিভাবকেরা বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই তাঁরা বেশি বেতন দিয়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর সুযোগ নিতে পারেন না। প্রক্রিয়াজনিত জটিলতার ফলে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বেসরকারি হাইস্কুলের লেখাপড়ার মানও যথেষ্ট নয়; তবে সব বেসরকারি হাইস্কুল আবার এই কাতারে পড়ে না। যাহোক, কমিটির প্রাধান্য থাকায় এবং রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য এসব শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তাই মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আসা শিক্ষকেরা অবশ্যই মেধাবী এবং যোগ্য। তাঁরা এনার্জেটিক এবং দায়িত্ববোধসম্পন্ন। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি ভালো অবস্থানে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই, যদি রিক্রুটিং পদ্ধতিতে ব্যাপক স্বচ্ছতা থাকে।
কারিকুলামসহ কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিস বাড়াতে প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক এবং ভালো মনিটরিং। ব্যবস্থাপনা বলতে সরকারি নিয়মকানুনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত শিক্ষাবিদদের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমাধান টানতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে শিক্ষাব্যবস্থা একটি আদর্শ পর্যায়ে চলে আসবে। এসব কাজে তেমন কিছু আহামরি ভাবনা বা দর্শনের দরকার আছে বলে মনে হয় না, দরকার শুধু উন্নত মানসিকতা এবং নৈতিকতার মানদণ্ডে নিবেদিত হওয়া। আমরা ইচ্ছা করেই পিছিয়ে যাই, আর পিছিয়ে পড়ার প্রতিযোগিতায় মনের অজানতেই নাম লেখাই। অহেতুক প্রাইভেট, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হওয়া দরকার, গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া, প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ গ্রহণ ও প্রদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আগ্রহী হয়ে ওঠা, অভিভাবক ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া বা তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করা এবং সর্বোপরি শিক্ষা অফিসগুলোতে কাজের সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যাতে সুবিধাভোগী ও সুবিধা প্রদানকারী কেউই বিব্রতবোধ না করেন। প্রযুক্তির ব্যবহার হোক শুধু প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্নয়নে, আর এমনটি নিশ্চিত হলে কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের দেশও শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বে চ্যালেঞ্জিং অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
আশানুরূপ ফল না হওয়ার ব্যর্থতা একটু একটু করে সংশ্লিষ্ট সবার ওপরই বর্তায়। এককভাবে কাউকেই দায়ী বা দোষারোপ করার কিছু নেই—একটি সংঘবদ্ধ টিমের ব্যর্থতা। আবার ফল ভালো হলেও তার সবটুকু পাওনা এই সংঘবদ্ধ টিমেরই। শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো পরিস্থিতিতেই রাজনৈতিক মাতবরি থাকা যাবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করেছে রাষ্ট্রীয় বিরূপ পদক্ষেপগুলো। মাতবরদের অসাধু পন্থাকে শিরোধার্য বলে মেনে নেওয়া আর দলীয় ভেলকিবাজির নিদারুণ খেলায় নিজের আত্মসম্মানকে সযতনে বিলিয়ে দেওয়ার ফলেই আজ ফল বিপর্যয়ের শিকার হতে হয়েছে এবং আগামী আরও দু-এক বছর এর রেশ থাকবেই। শর্ত সাপেক্ষে বাইরের নির্দেশিত পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। এ দেশের মাটি, জল ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল মানুষের পাঠক্রম হবে মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার পাঠ্যক্রম; অধিকতর যোগ্যতার ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানসম্মত কারিকুলাম প্রযোজ্য হবে।
যাহোক, ধৈর্য ও পরিশীলিত ভাবনার মাধ্যমে উন্নত জীবন গঠনের শপথ নিয়ে শিক্ষাকে জীবনমুখী করে গড়ে তুলতে আমাদের ঐকমত্যে থাকাটা জরুরি। মানুষ প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে একদিন অবশ্যই শিক্ষিত হয়ে উঠবে আর তখনই দেশের সার্বিক মানেও যথেষ্ট উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে।
লেখক:– কবি
২০২৫-এর এসএসসি পরীক্ষার ফল বের হলো ১০ জুলাই। এবার বিগত প্রায় ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হলো। সব বোর্ডের গড় পাসের হার ৬৮.৪৫, যা অতীতের অনেক বছরের চেয়ে সর্বনিম্ন। মোট অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লাখের বেশি। ভাবা যায়! শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে, তা বলাই বাহুল্য। সারা দেশে মোট ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করতে পারেনি। গতবারের তুলনায় ৮৩টি বেশি প্রতিষ্ঠান পাস না করার সঙ্গে যুক্ত হলো। কোনো পরিস্থিতিতেই এ রকম ফলাফল অবশ্যই দুঃখজনক। এ লজ্জা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের, এ লজ্জা শিক্ষকদের, এ ব্যর্থতা পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে। দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস পর শুরু হয়। এখানেই শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সংকট তৈরি হয়। দুই মাস পেছানোয় তাদের মনোভাবে নানা রকমের জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে ভাবা যেতে পারে। আবার এ কারণে উদ্ভূত হতাশা ও উৎকণ্ঠা পরীক্ষা খারাপেরও অন্যতম কারণ হতে পারে।
বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হওয়ায় আমাদের কম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সরাসরি পরিলক্ষিত হয়। তাই ফল আশানুরূপ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। একটা কারিকুলাম অনুসারে চলতে চলতে ছয় মাসের মধ্যেই আরেকটা কারিকুলাম চালু হয়। কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো প্রায় বেশির ভাগই হয় দায়সারা গোছের। প্রশিক্ষণের সম্মানী পকেটে আসা পর্যন্ত প্রশিক্ষণে থাকা যায়; এর পর পর্যন্ত থাকাটা বাতুলতা ছাড়া অন্য কিছু মনেই হয় না; ‘বঙ্গদেশীয় চরিত্রম’! লেজেগোবরে অবস্থার শিকার এই শিক্ষাব্যবস্থা। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও যথাযথ ব্যবহার হতো না উপকরণসহ অন্য জিনিসগুলোর। প্রকৃতপক্ষে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ছিল একটা বড় রকমের ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র, যেখানে সব ধরনের ব্যবসা চলত, চলত না শুধু লেখাপড়ার বাণিজ্যিক চর্চা। জাতিগতভাবে আমাদের পেশাদারি মনোভাব থাকবেই কিন্তু বাজারে সম্ভব-অসম্ভব বলে একটা কথা প্রচলিত আছে; সে জন্যই আজ এ রকম ফল দেখতে হচ্ছে।
এই অবস্থায় আরও নিবিড়ভাবে তদারকি বাড়িয়ে পাবলিক পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হলে পাসের হার ভয়ংকরভাবে তলানিতে পড়বে। প্রাইভেট স্কুলগুলো টাকার পাহাড় জমাচ্ছে এবং পুরোটাই শিক্ষা-বাণিজ্য। অথচ দেখেও কেউ দেখে না। উচ্চাভিলাষী অভিভাবকেরাও অনেক টাকা টিউশন ফি দিয়ে সেখানে বাচ্চাদের ভর্তি করাচ্ছেন। এ কারণে প্রাইভেট স্কুল কর্তৃপক্ষ মরিয়া হয়ে ওঠে যেকোনো পন্থায় ভালো ফল করাতে। আর এ জন্য কর্তৃপক্ষ বিবিধ কৌশল অবলম্বনসহ অনৈতিক উপায়ে পাস করিয়ে দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব পালন করে। আশপাশের বেসরকারি বিদ্যালয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা পড়ে। এদের অভিভাবকেরা বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই তাঁরা বেশি বেতন দিয়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ানোর সুযোগ নিতে পারেন না। প্রক্রিয়াজনিত জটিলতার ফলে ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বেসরকারি হাইস্কুলের লেখাপড়ার মানও যথেষ্ট নয়; তবে সব বেসরকারি হাইস্কুল আবার এই কাতারে পড়ে না। যাহোক, কমিটির প্রাধান্য থাকায় এবং রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য এসব শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তাই মানসম্মত শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আসা শিক্ষকেরা অবশ্যই মেধাবী এবং যোগ্য। তাঁরা এনার্জেটিক এবং দায়িত্ববোধসম্পন্ন। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি ভালো অবস্থানে আসবে, তাতে সন্দেহ নেই, যদি রিক্রুটিং পদ্ধতিতে ব্যাপক স্বচ্ছতা থাকে।
কারিকুলামসহ কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিস বাড়াতে প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক এবং ভালো মনিটরিং। ব্যবস্থাপনা বলতে সরকারি নিয়মকানুনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত শিক্ষাবিদদের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমাধান টানতে হবে। তাহলেই ধীরে ধীরে শিক্ষাব্যবস্থা একটি আদর্শ পর্যায়ে চলে আসবে। এসব কাজে তেমন কিছু আহামরি ভাবনা বা দর্শনের দরকার আছে বলে মনে হয় না, দরকার শুধু উন্নত মানসিকতা এবং নৈতিকতার মানদণ্ডে নিবেদিত হওয়া। আমরা ইচ্ছা করেই পিছিয়ে যাই, আর পিছিয়ে পড়ার প্রতিযোগিতায় মনের অজানতেই নাম লেখাই। অহেতুক প্রাইভেট, কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হওয়া দরকার, গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল না হওয়া, প্রতিষ্ঠানে নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠ গ্রহণ ও প্রদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আগ্রহী হয়ে ওঠা, অভিভাবক ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ নেওয়া বা তাঁদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করা এবং সর্বোপরি শিক্ষা অফিসগুলোতে কাজের সার্বিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যাতে সুবিধাভোগী ও সুবিধা প্রদানকারী কেউই বিব্রতবোধ না করেন। প্রযুক্তির ব্যবহার হোক শুধু প্রয়োজনীয় দক্ষতার উন্নয়নে, আর এমনটি নিশ্চিত হলে কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের দেশও শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্বে চ্যালেঞ্জিং অবস্থান তৈরি করতে পারবে।
আশানুরূপ ফল না হওয়ার ব্যর্থতা একটু একটু করে সংশ্লিষ্ট সবার ওপরই বর্তায়। এককভাবে কাউকেই দায়ী বা দোষারোপ করার কিছু নেই—একটি সংঘবদ্ধ টিমের ব্যর্থতা। আবার ফল ভালো হলেও তার সবটুকু পাওনা এই সংঘবদ্ধ টিমেরই। শিক্ষাব্যবস্থায় কোনো পরিস্থিতিতেই রাজনৈতিক মাতবরি থাকা যাবে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে শেষ করেছে রাষ্ট্রীয় বিরূপ পদক্ষেপগুলো। মাতবরদের অসাধু পন্থাকে শিরোধার্য বলে মেনে নেওয়া আর দলীয় ভেলকিবাজির নিদারুণ খেলায় নিজের আত্মসম্মানকে সযতনে বিলিয়ে দেওয়ার ফলেই আজ ফল বিপর্যয়ের শিকার হতে হয়েছে এবং আগামী আরও দু-এক বছর এর রেশ থাকবেই। শর্ত সাপেক্ষে বাইরের নির্দেশিত পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। এ দেশের মাটি, জল ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল মানুষের পাঠক্রম হবে মাটি ও মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার পাঠ্যক্রম; অধিকতর যোগ্যতার ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানসম্মত কারিকুলাম প্রযোজ্য হবে।
যাহোক, ধৈর্য ও পরিশীলিত ভাবনার মাধ্যমে উন্নত জীবন গঠনের শপথ নিয়ে শিক্ষাকে জীবনমুখী করে গড়ে তুলতে আমাদের ঐকমত্যে থাকাটা জরুরি। মানুষ প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে একদিন অবশ্যই শিক্ষিত হয়ে উঠবে আর তখনই দেশের সার্বিক মানেও যথেষ্ট উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে।
লেখক:– কবি
বিবিসি (ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার এক পরম মানদণ্ড হয়ে উঠেছে। ১৯২২ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিরপেক্ষতা, বস্তুনিষ্ঠতা এবং গণস্বার্থে সাংবাদিকতা করার অঙ্গীকারে বিশ্বাস রেখেছে—এমন একটি অবস্থান, যা বিশ্বের অসংখ্য দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে
২ ঘণ্টা আগেআন্দোলনের অর্জন বলতে আমরা শুধু একটা রেজিমের পতন চাইনি, ব্যবস্থাটার পতন চেয়েছিলাম। তবে এটা সত্যি, আওয়ামী লীগ যে ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছিল—দুর্নীতি, হত্যা, সহিংসতা ইত্যাদির রূপটা আমরা সরিয়ে দিতে পেরেছি, সেটা একটা বড় অর্জন। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের পতন, আওয়ামী লীগের পতন এবং
১২ ঘণ্টা আগেসাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী একের পর এক সহিংস ও অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, দলটি কি নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, নাকি কোনো বিশেষ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নানা দুষ্কর্মের সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে বদনামের ভাগিদার করা হচ্ছে? মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলার অভাব, অপরাধের প্রতি...
১২ ঘণ্টা আগেরাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের সেবা, ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান এবং সমাজে শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার অনুশীলন নিশ্চিত করা। কিন্তু বাংলাদেশে দিনের পর দিন রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু অংশ যখন অপরাধ ও সহিংসতার আশ্রয় নেয়, তখন সেই রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা, নৈতিকতা ও কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।
১৯ ঘণ্টা আগে