বিএনপি যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছানোকেই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের অবস্থান হলো সংবিধান-সংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার হতে হবে নির্বাচিত সংসদে। কাজেই সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদের জন্য থাকবে। অন্য আইনগত বিষয়াদি যেগুলো আছে সেগুলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
অরুণ কর্মকার

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায়ও কোনো অস্পষ্টতা নেই। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সেই শঙ্কা আবার প্রকাশ করছে রাজনৈতিক দলগুলোই, যারা দেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রধান কারিগর। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কেন এই শঙ্কা! তাহলে কি আমরা সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যা দেখছি, অন্তরালে তার থেকে ভিন্ন রকম কিছু চলছে! অস্বাভাবিক নয়, চলতে পারে। কারণ, রাজনীতির খেলাধুলা খুব জটিল বিষয়।
প্রশ্নটা উঠছে কারণ, এই সেদিনও (২৭ আগস্ট বুধবার) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন বানচাল করার জন্যই নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে। এর আগেও অনেক দলের অনেক নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের এই সব সন্দেহ-সংশয়ের পেছনে সরকারের অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকাণ্ডের ভূমিকা আছে কি না, আমরা জানি না। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্রদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের যে ভূমিকা আছে, তা স্পষ্ট। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দলীয় এক সমাবেশে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী এবং আরও কোনো কোনো ইসলামি দলের অবস্থানেরও ভূমিকা থাকতে পারে।
এনসিপিই-বা কেন এমন কথা বলছে! বলছে কারণ তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে, যেগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন হোক, সেটা তারা চায় না। একইভাবে জামায়াতেরও সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে। তারাও চায় সরকার সেই দাবিগুলোর ফয়সালা করেই নির্বাচনের আয়োজন করুক। বিএনপিরও একটা স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে। সমস্যাটা এখন ঠেকেছে এখানে এসে। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কারণেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। তাহলে কি তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান অনুযায়ী দাবিগুলোর মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। যদি হয়, তারা কি সে নির্বাচনে অংশ নেবে না! এই বিষয়গুলোর প্রতি একটু আলোকপাত করা দরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই যে অবস্থানগত বিরোধ বা দূরত্ব, তা সৃষ্টি হয়েছে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে। এক. সংবিধান সংস্কার। দুই. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং তিন. সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। এই বিষয়গুলোতে এনসিপি এবং জামায়াতের অবস্থান কাছাকাছি। মোটাদাগে এনসিপির চাওয়া হলো জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি, সনদটির বাস্তবায়ন এবং ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন। প্রথমে গণপরিষদ, পরে সংসদ নির্বাচন। অথবা একটির সঙ্গে দুটি নির্বাচন। নির্বাচিত গণপরিষদ সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এনসিপির এসব দাবির সঙ্গে জামায়াতের কোনো ভিন্নমত আছে বলে শোনা যায়নি। এর সঙ্গে তাদের আরেকটি দাবি হলো, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। যদিও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তেমন আলোচিতই হয়নি। তাদের অবস্থান হলো—এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন পিছিয়েও যায় তাতে তাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু বিএনপির তাতে আপত্তি আছে। তারা যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছানোকেই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের অবস্থান হলো সংবিধানসংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার হতে হবে নির্বাচিত সংসদে। কাজেই সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদের জন্য থাকবে। অন্য আইনগত বিষয়াদি যেগুলো আছে সেগুলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া কিংবা জুলাই সনদ কার্যকর করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারা ঘোর বিরোধী। আর সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি তো তারা মানেই না। সংসদের উচ্চকক্ষেও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে তারা আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়ে রেখেছে। জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় কিছু পরিবর্তনও বিএনপির দাবি।
এই পটভূমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামা সংশোধন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যেসব আপত্তি, পরামর্শ ও মতামত এসেছে, সনদে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্যই কমিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে রয়েছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে সংস্কার কমিশনগুলো থেকে আসা ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব। তৃতীয় পর্বে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৮ দফা অঙ্গীকারনামা। এই অঙ্গীকারনামার কিছু কিছু বিষয় নিয়েই বিএনপি এবং তাদের সমমনা অনেক দল আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া, জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এমন বিধান রাখার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এই বিধানগুলো রাখা প্রয়োজন।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে—তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ও বিভক্তির কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির যে মতভিন্নতা রয়েছে, সে বিষয়ে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। তাতে এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশন জারির মতো কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে। এসব মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশন ও সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করা।
কমিশনের ওই সূত্র বলেছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু ছাড় দেওয়া এবং নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তনের মানসিকতা থাকা দরকার বলে মনে করে ঐকমত্য কমিশন। যদি সেটা তারা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করে কোনো একটি পথ নির্ধারণ করতে পারেন, যা তিনি এর আগে কখনোই করেননি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায়ও কোনো অস্পষ্টতা নেই। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সেই শঙ্কা আবার প্রকাশ করছে রাজনৈতিক দলগুলোই, যারা দেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রধান কারিগর। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কেন এই শঙ্কা! তাহলে কি আমরা সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যা দেখছি, অন্তরালে তার থেকে ভিন্ন রকম কিছু চলছে! অস্বাভাবিক নয়, চলতে পারে। কারণ, রাজনীতির খেলাধুলা খুব জটিল বিষয়।
প্রশ্নটা উঠছে কারণ, এই সেদিনও (২৭ আগস্ট বুধবার) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন বানচাল করার জন্যই নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে। এর আগেও অনেক দলের অনেক নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের এই সব সন্দেহ-সংশয়ের পেছনে সরকারের অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকাণ্ডের ভূমিকা আছে কি না, আমরা জানি না। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্রদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের যে ভূমিকা আছে, তা স্পষ্ট। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দলীয় এক সমাবেশে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী এবং আরও কোনো কোনো ইসলামি দলের অবস্থানেরও ভূমিকা থাকতে পারে।
এনসিপিই-বা কেন এমন কথা বলছে! বলছে কারণ তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে, যেগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন হোক, সেটা তারা চায় না। একইভাবে জামায়াতেরও সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে। তারাও চায় সরকার সেই দাবিগুলোর ফয়সালা করেই নির্বাচনের আয়োজন করুক। বিএনপিরও একটা স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে। সমস্যাটা এখন ঠেকেছে এখানে এসে। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কারণেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। তাহলে কি তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান অনুযায়ী দাবিগুলোর মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। যদি হয়, তারা কি সে নির্বাচনে অংশ নেবে না! এই বিষয়গুলোর প্রতি একটু আলোকপাত করা দরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই যে অবস্থানগত বিরোধ বা দূরত্ব, তা সৃষ্টি হয়েছে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে। এক. সংবিধান সংস্কার। দুই. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং তিন. সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। এই বিষয়গুলোতে এনসিপি এবং জামায়াতের অবস্থান কাছাকাছি। মোটাদাগে এনসিপির চাওয়া হলো জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি, সনদটির বাস্তবায়ন এবং ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন। প্রথমে গণপরিষদ, পরে সংসদ নির্বাচন। অথবা একটির সঙ্গে দুটি নির্বাচন। নির্বাচিত গণপরিষদ সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এনসিপির এসব দাবির সঙ্গে জামায়াতের কোনো ভিন্নমত আছে বলে শোনা যায়নি। এর সঙ্গে তাদের আরেকটি দাবি হলো, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। যদিও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তেমন আলোচিতই হয়নি। তাদের অবস্থান হলো—এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন পিছিয়েও যায় তাতে তাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু বিএনপির তাতে আপত্তি আছে। তারা যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছানোকেই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের অবস্থান হলো সংবিধানসংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার হতে হবে নির্বাচিত সংসদে। কাজেই সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদের জন্য থাকবে। অন্য আইনগত বিষয়াদি যেগুলো আছে সেগুলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া কিংবা জুলাই সনদ কার্যকর করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারা ঘোর বিরোধী। আর সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি তো তারা মানেই না। সংসদের উচ্চকক্ষেও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে তারা আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়ে রেখেছে। জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় কিছু পরিবর্তনও বিএনপির দাবি।
এই পটভূমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামা সংশোধন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যেসব আপত্তি, পরামর্শ ও মতামত এসেছে, সনদে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্যই কমিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে রয়েছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে সংস্কার কমিশনগুলো থেকে আসা ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব। তৃতীয় পর্বে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৮ দফা অঙ্গীকারনামা। এই অঙ্গীকারনামার কিছু কিছু বিষয় নিয়েই বিএনপি এবং তাদের সমমনা অনেক দল আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া, জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এমন বিধান রাখার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এই বিধানগুলো রাখা প্রয়োজন।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে—তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ও বিভক্তির কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির যে মতভিন্নতা রয়েছে, সে বিষয়ে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। তাতে এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশন জারির মতো কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে। এসব মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশন ও সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করা।
কমিশনের ওই সূত্র বলেছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু ছাড় দেওয়া এবং নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তনের মানসিকতা থাকা দরকার বলে মনে করে ঐকমত্য কমিশন। যদি সেটা তারা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করে কোনো একটি পথ নির্ধারণ করতে পারেন, যা তিনি এর আগে কখনোই করেননি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বিএনপি যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছানোকেই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের অবস্থান হলো সংবিধান-সংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার হতে হবে নির্বাচিত সংসদে। কাজেই সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদের জন্য থাকবে। অন্য আইনগত বিষয়াদি যেগুলো আছে সেগুলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
অরুণ কর্মকার

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায়ও কোনো অস্পষ্টতা নেই। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সেই শঙ্কা আবার প্রকাশ করছে রাজনৈতিক দলগুলোই, যারা দেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রধান কারিগর। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কেন এই শঙ্কা! তাহলে কি আমরা সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যা দেখছি, অন্তরালে তার থেকে ভিন্ন রকম কিছু চলছে! অস্বাভাবিক নয়, চলতে পারে। কারণ, রাজনীতির খেলাধুলা খুব জটিল বিষয়।
প্রশ্নটা উঠছে কারণ, এই সেদিনও (২৭ আগস্ট বুধবার) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন বানচাল করার জন্যই নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে। এর আগেও অনেক দলের অনেক নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের এই সব সন্দেহ-সংশয়ের পেছনে সরকারের অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকাণ্ডের ভূমিকা আছে কি না, আমরা জানি না। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্রদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের যে ভূমিকা আছে, তা স্পষ্ট। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দলীয় এক সমাবেশে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী এবং আরও কোনো কোনো ইসলামি দলের অবস্থানেরও ভূমিকা থাকতে পারে।
এনসিপিই-বা কেন এমন কথা বলছে! বলছে কারণ তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে, যেগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন হোক, সেটা তারা চায় না। একইভাবে জামায়াতেরও সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে। তারাও চায় সরকার সেই দাবিগুলোর ফয়সালা করেই নির্বাচনের আয়োজন করুক। বিএনপিরও একটা স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে। সমস্যাটা এখন ঠেকেছে এখানে এসে। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কারণেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। তাহলে কি তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান অনুযায়ী দাবিগুলোর মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। যদি হয়, তারা কি সে নির্বাচনে অংশ নেবে না! এই বিষয়গুলোর প্রতি একটু আলোকপাত করা দরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই যে অবস্থানগত বিরোধ বা দূরত্ব, তা সৃষ্টি হয়েছে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে। এক. সংবিধান সংস্কার। দুই. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং তিন. সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। এই বিষয়গুলোতে এনসিপি এবং জামায়াতের অবস্থান কাছাকাছি। মোটাদাগে এনসিপির চাওয়া হলো জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি, সনদটির বাস্তবায়ন এবং ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন। প্রথমে গণপরিষদ, পরে সংসদ নির্বাচন। অথবা একটির সঙ্গে দুটি নির্বাচন। নির্বাচিত গণপরিষদ সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এনসিপির এসব দাবির সঙ্গে জামায়াতের কোনো ভিন্নমত আছে বলে শোনা যায়নি। এর সঙ্গে তাদের আরেকটি দাবি হলো, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। যদিও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তেমন আলোচিতই হয়নি। তাদের অবস্থান হলো—এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন পিছিয়েও যায় তাতে তাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু বিএনপির তাতে আপত্তি আছে। তারা যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছানোকেই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের অবস্থান হলো সংবিধানসংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার হতে হবে নির্বাচিত সংসদে। কাজেই সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদের জন্য থাকবে। অন্য আইনগত বিষয়াদি যেগুলো আছে সেগুলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া কিংবা জুলাই সনদ কার্যকর করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারা ঘোর বিরোধী। আর সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি তো তারা মানেই না। সংসদের উচ্চকক্ষেও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে তারা আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়ে রেখেছে। জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় কিছু পরিবর্তনও বিএনপির দাবি।
এই পটভূমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামা সংশোধন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যেসব আপত্তি, পরামর্শ ও মতামত এসেছে, সনদে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্যই কমিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে রয়েছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে সংস্কার কমিশনগুলো থেকে আসা ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব। তৃতীয় পর্বে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৮ দফা অঙ্গীকারনামা। এই অঙ্গীকারনামার কিছু কিছু বিষয় নিয়েই বিএনপি এবং তাদের সমমনা অনেক দল আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া, জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এমন বিধান রাখার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এই বিধানগুলো রাখা প্রয়োজন।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে—তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ও বিভক্তির কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির যে মতভিন্নতা রয়েছে, সে বিষয়ে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। তাতে এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশন জারির মতো কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে। এসব মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশন ও সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করা।
কমিশনের ওই সূত্র বলেছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু ছাড় দেওয়া এবং নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তনের মানসিকতা থাকা দরকার বলে মনে করে ঐকমত্য কমিশন। যদি সেটা তারা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করে কোনো একটি পথ নির্ধারণ করতে পারেন, যা তিনি এর আগে কখনোই করেননি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায়ও কোনো অস্পষ্টতা নেই। তারপরও এই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সেই শঙ্কা আবার প্রকাশ করছে রাজনৈতিক দলগুলোই, যারা দেশে নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রধান কারিগর। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে কেন এই শঙ্কা! তাহলে কি আমরা সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যা দেখছি, অন্তরালে তার থেকে ভিন্ন রকম কিছু চলছে! অস্বাভাবিক নয়, চলতে পারে। কারণ, রাজনীতির খেলাধুলা খুব জটিল বিষয়।
প্রশ্নটা উঠছে কারণ, এই সেদিনও (২৭ আগস্ট বুধবার) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন বানচাল করার জন্যই নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে। এর আগেও অনেক দলের অনেক নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে বক্তব্য রেখেছেন। তাঁদের এই সব সন্দেহ-সংশয়ের পেছনে সরকারের অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকাণ্ডের ভূমিকা আছে কি না, আমরা জানি না। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স ছাত্রদের গড়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের যে ভূমিকা আছে, তা স্পষ্ট। দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দলীয় এক সমাবেশে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী এবং আরও কোনো কোনো ইসলামি দলের অবস্থানেরও ভূমিকা থাকতে পারে।
এনসিপিই-বা কেন এমন কথা বলছে! বলছে কারণ তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে, যেগুলোর বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন হোক, সেটা তারা চায় না। একইভাবে জামায়াতেরও সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি আছে। তারাও চায় সরকার সেই দাবিগুলোর ফয়সালা করেই নির্বাচনের আয়োজন করুক। বিএনপিরও একটা স্বতন্ত্র অবস্থান রয়েছে। সমস্যাটা এখন ঠেকেছে এখানে এসে। এই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কারণেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। তাহলে কি তাদের নিজ নিজ দলের অবস্থান অনুযায়ী দাবিগুলোর মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না। যদি হয়, তারা কি সে নির্বাচনে অংশ নেবে না! এই বিষয়গুলোর প্রতি একটু আলোকপাত করা দরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই যে অবস্থানগত বিরোধ বা দূরত্ব, তা সৃষ্টি হয়েছে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে। এক. সংবিধান সংস্কার। দুই. জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং তিন. সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। এই বিষয়গুলোতে এনসিপি এবং জামায়াতের অবস্থান কাছাকাছি। মোটাদাগে এনসিপির চাওয়া হলো জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি, সনদটির বাস্তবায়ন এবং ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন। প্রথমে গণপরিষদ, পরে সংসদ নির্বাচন। অথবা একটির সঙ্গে দুটি নির্বাচন। নির্বাচিত গণপরিষদ সংবিধান সংস্কার বা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে। এনসিপির এসব দাবির সঙ্গে জামায়াতের কোনো ভিন্নমত আছে বলে শোনা যায়নি। এর সঙ্গে তাদের আরেকটি দাবি হলো, সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন। যদিও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের বিষয়টি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে তেমন আলোচিতই হয়নি। তাদের অবস্থান হলো—এই কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচন পিছিয়েও যায় তাতে তাদের আপত্তি নেই।
কিন্তু বিএনপির তাতে আপত্তি আছে। তারা যেকোনো কারণে নির্বাচন পেছানোকেই ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। তাদের অবস্থান হলো সংবিধানসংক্রান্ত যেকোনো সংস্কার হতে হবে নির্বাচিত সংসদে। কাজেই সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদের জন্য থাকবে। অন্য আইনগত বিষয়াদি যেগুলো আছে সেগুলো রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া কিংবা জুলাই সনদ কার্যকর করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারা ঘোর বিরোধী। আর সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি তো তারা মানেই না। সংসদের উচ্চকক্ষেও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে তারা আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়ে রেখেছে। জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায় কিছু পরিবর্তনও বিএনপির দাবি।
এই পটভূমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামা সংশোধন ও বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে যেসব আপত্তি, পরামর্শ ও মতামত এসেছে, সনদে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্যই কমিশন এই উদ্যোগ নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া তিনটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে রয়েছে সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে সংস্কার কমিশনগুলো থেকে আসা ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব। তৃতীয় পর্বে আছে সনদ বাস্তবায়নের ৮ দফা অঙ্গীকারনামা। এই অঙ্গীকারনামার কিছু কিছু বিষয় নিয়েই বিএনপি এবং তাদের সমমনা অনেক দল আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া, জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এমন বিধান রাখার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এই বিধানগুলো রাখা প্রয়োজন।
জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে—তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ও বিভক্তির কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির যে মতভিন্নতা রয়েছে, সে বিষয়ে এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা একাধিকবার আলোচনায় বসেছে। তাতে এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশন জারির মতো কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে। এসব মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতে সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশন ও সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিকল্প খুঁজে বের করা।
কমিশনের ওই সূত্র বলেছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু ছাড় দেওয়া এবং নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তনের মানসিকতা থাকা দরকার বলে মনে করে ঐকমত্য কমিশন। যদি সেটা তারা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কর্তৃত্ব ব্যবহার করে কোনো একটি পথ নির্ধারণ করতে পারেন, যা তিনি এর আগে কখনোই করেননি।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৬ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৭ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৭ ঘণ্টা আগেসম্পাদকীয়

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে।
৩০ আগস্ট ২০২৫
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৭ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৭ ঘণ্টা আগেঅরুণ কর্মকার

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ এক্সিটের প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন। আর এবার তো জানা গেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গত বুধবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দৃষ্টিতে দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের নামধামের তালিকাই নিয়ে গিয়েছিল। তবে ওই দিন সেই তালিকা তারা প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়নি। প্রয়োজন হলে পরে দেবে। এবার শুধু বিষয়টি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং কয়েকজন উপদেষ্টা বিএনপির পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছে।
শুধু উপদেষ্টা নয়, জামায়াত সুনির্দিষ্ট নাম-ঠিকানা নিয়ে গিয়েছিল প্রায় ৪০ জন আমলারও, যাঁরা তাদের দৃষ্টিতে কোনো না কোনো দলের হয়ে, বিশেষত বিএনপির হয়ে কাজ করছেন। আর বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নেতারা উল্লেখ করেছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোকই বিএনপির। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে জামায়াত বলেছে, নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। এ জন্য সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে রদবদল আনতে হবে। বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াতের আরও অভিযোগ, বিএনপি রাজনৈতিক চাপে পড়ে গণভোটে রাজি হলেও এখন জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
ওই দিনই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদলও পৃথকভাবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছেন, নির্বাচনের আগে বড় রাজনৈতিক দলগুলো প্রশাসন ও পুলিশে নিজেদের মতো ভাগ-বাঁটোয়ারা শুরু করেছে। ডিসি-এসপিদের তালিকা করে সরকারকে দিচ্ছে এবং সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্য থেকেও এ ব্যাপারে তারা সহযোগিতা পাচ্ছে।
এনসিপির আরও বড় অভিযোগ নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। প্রধান উপদেষ্টাকে তারা বলেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। কোনো কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। শাপলা প্রতীক পাওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়ে এনসিপির সঙ্গে ন্যায়বিচার করে না, তার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতা বা সঠিক ফলাফল পাওয়ার ব্যাপারে ভরসা করা যায় না। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি হলো, নির্বাচন কমিশনের কারণে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয়, সেই দায়ও সরকারের ওপরই পড়বে।
উপদেষ্টাদের নিয়ে প্রশ্ন আছে বিএনপিরও। জামায়াত ও এনসিপির এক দিন আগে, গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেই বৈঠকে তারাও কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি তুলেছে। কারও নাম উল্লেখ না করেই বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এর আগেও বিএনপির পক্ষ থেকে এমন আহ্বান জানানো হয়েছিল। তখন দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল বলেও খবর বেরিয়েছে। তবে তাঁরা তখনই তাতে রাজি হননি। উপদেষ্টাদের ছাড়াও প্রশাসন নিয়েও অন্য দুই দলের মতোই উদ্বেগ আছে বিএনপিরও। মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা এই বলে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যে প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচার বিভাগের প্রায় ৫০ ভাগ ফ্যাসিস্টের দোসর।
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকেই প্রধান উপদেষ্টা সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে আপনারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আমরা ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি; সামনে আরও অনেক উদ্যোগ আপনারা দেখতে পাবেন।’
তা প্রধান উপদেষ্টা যতই নিশ্চয়তা দিন না কেন, যেখানে সব দলের কাছেই উপদেষ্টাদের (সবার নয়) এবং প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টতা স্পষ্ট, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে উল্লেখ করে যখন প্রকাশ্যে বারবার অভিযোগ করা হচ্ছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নিশ্চিন্তে নিশ্চিত থাকতে পারে! তা ছাড়া, মাঝেমধ্যেই তো দলগুলোর পরস্পরের প্রতি বৈরী বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক তাঁর ফেসবুক পোস্টে বললেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) নিয়ে জামায়াতের আন্দোলন রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। কিংবা জামায়াত জুলাই অভ্যুত্থানের আগে-পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি। কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বললেন আরও একটু শক্ত কথা—‘জন্মের পরই বাপের সাথে পাল্লা দিতে যেও না।’ সরকার ভাবতে পারে যে এগুলো তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার বাহাস। এটা নিয়ে তাদের অতটা না ভাবলেও চলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই বাহাসগুলো তো রাজনৈতিক বাস্তবতা। এগুলো তো রাজনৈতিক অঙ্গনকে অস্থিতিশীল করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তারপর উল্লেখ করা যায় মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি যে অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, সে সম্পর্কে এনসিপির প্রতিক্রিয়ার কথা। এনসিপি বলল হঠাৎ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পরামর্শটি দুরভিসন্ধিমূলক। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার। সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি তাদের ম্যান্ডেট। অথচ বিএনপির বক্তব্যটি ছিল—নিরপেক্ষতার নিরিখে এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা নিতে হবে।
এইসব রাজনৈতিক টানাপোড়েন ছাড়াও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অমীমাংসিত রয়েছে। যেমন জামায়াতের কাছে অমীমাংসিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, ওই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বরে গণভোট। এই দাবিতে জামায়াতসহ আটটি দল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এনসিপির কাছে অমীমাংসিত বিষয় জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন এবং তাদের দাবিকৃত নির্বাচনী প্রতীক শাপলা বরাদ্দ দেওয়া। বিএনপির কাছে সবচেয়ে বড় ইস্যু সময়মতো সুষ্ঠু নির্বাচন। এ ছাড়া এই তিনটি দলের কাছেই (হয়তো আরও অনেক দলের কাছে) সাধারণ ইস্যু হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দলঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় প্রতিটি দল চায় না। এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সেই ভূমিকা নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রতীয়মান হওয়া এক বড় চ্যালেঞ্জই বটে।

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে।
৩০ আগস্ট ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৬ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৭ ঘণ্টা আগেহেনা শিকদার

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি। এমন এক পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে যে সম্পর্কটি, মানুষের আত্মার সঙ্গে মিশে থাকে—বন্ধুত্ব।
একসময় বন্ধুত্ব ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক দারুণ উদাহরণ। সেখানে লেনদেনের কোনো হিসাব ছিল না, ছিল শুধু একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা এবং নির্ভরতা। শৈশবের সেই দিনগুলোর কথা মনে করলে আজও অনেকের মন আর্দ্র হয়ে ওঠে। টিফিনের খাবার ভাগ করে খাওয়া, বন্ধুর দুঃখে নির্দ্বিধায় পাশে দাঁড়ানো, কিংবা সামান্য কারণে অহেতুক ঝগড়া করে আবার মুহূর্তেই সব ভুলে গিয়ে একে অপরের হাত ধরার মধ্যে যে পবিত্রতা ছিল, আজকের যান্ত্রিক সভ্যতায় তা যেন এক দুর্লভ বস্তু।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে সবকিছুকে ব্যক্তিগত লাভের নিরিখে বিচার করতে হয়। আমরা এখন বন্ধু বানানোর আগেও অবচেতন মনে বিচার করে নিই—এই সম্পর্কটি আমার জীবনে কতটা মূল্য যোগ করবে? তার সামাজিক অবস্থান, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কিংবা তার মাধ্যমে আমার কোনো উপকার হবে কি না—এইসব প্রশ্নই এখন বন্ধুত্বের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে, একধরনের ‘শর্তাধীন’ বন্ধুত্বের জন্ম হচ্ছে, যেখানে স্বার্থের লেনদেন শেষ হলেই সম্পর্কের সুতো ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের বন্ধুত্ব অনেকটা ব্যবসায়িক চুক্তির মতো, যেখানে একে অপরকে ব্যবহার করে নিজের আখের গোছানোই মূল উদ্দেশ্য।
এই স্বার্থপরতার পেছনে অবশ্য বেশ কিছু সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক কারণও রয়েছে। প্রথমত, আধুনিক জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান চাপ এবং প্রতিযোগিতা মানুষকে এতটাই আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে যে, সে নিজের জগৎ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিস্তার এক মায়াবী জগতের সৃষ্টি করেছে। এখানে মানুষের বন্ধুর সংখ্যা হাজার হাজার, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভরসা করার মতো বন্ধুর সংখ্যা প্রায় শূন্য। লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ারের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আসলে একধরনের লোকদেখানো সম্পর্ক, যার গভীরে কোনো প্রাণের ছোঁয়া নেই। এখানে সবাই যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নেমেছে—কার কত বন্ধু, কে কতটা জনপ্রিয়। এই জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি আমাদের সত্যিকারের আবেগ এবং অনুভূতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।
তবে এই হতাশাজনক চিত্রের মধ্যেও আশার আলো রয়েছে। স্বার্থের এই ঝোড়ো হাওয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়েও কিছু মানুষ এখনো সত্যিকারের বন্ধুত্বের পতাকা উড়িয়ে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্ব মানে শুধু দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয়, বরং এটি একটি আত্মিক টান, যা কোনো স্বার্থের বিনিময়ে বিক্রি হয় না। একজন সত্যিকারের বন্ধু আয়নার মতো, যে কেবল আমাদের ভালো দিকগুলোই তুলে ধরে না, বরং আমাদের ভুলগুলোও দেখিয়ে দেয়। সে আমাদের বিপদের দিনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এবং আনন্দের দিনে মন খুলে হাসে।
এই স্বার্থপর সময়ে সত্যিকারের বন্ধু খুঁজে পাওয়া হয়তো কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। বন্ধুত্বের সম্পর্ককে যদি আমরা লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকে মুক্ত করতে পারি, তবেই এর আসল সৌন্দর্য উপলব্ধি করা সম্ভব। বন্ধুত্ব কোনো পণ্য নয় যে তাকে ব্যবহার করে ফেলে দিতে হবে। এটি একটি চারা গাছের মতো, যাকে যত্ন, বিশ্বাস এবং সময় দিয়ে বড় করে তুলতে হয়। যখন একজন মানুষ সব ধরনের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ায়, তখনই জন্ম নেয় এক নির্মল বন্ধুত্ব।
স্বার্থের এই সমাজে বন্ধুত্বের মানে হলো এক নিঃস্বার্থ আশ্রয়। এমন এক সম্পর্ক, যেখানে আপনি কোনো মুখোশ ছাড়াই নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন, যেখানে আপনার দুর্বলতাগুলো নিয়ে কেউ উপহাস করবে না, বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই বন্ধুত্ব আপনাকে শেখাবে যে পৃথিবীতে এখনো এমন কিছু সম্পর্ক আছে, যা অর্থ বা ক্ষমতার বিনিময়ে কেনা যায় না, যা কেবল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায়। তাই এই যান্ত্রিক সভ্যতায় হারিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের উচিত জীবনের সেই নিঃস্বার্থ বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলোকে খুঁজে বের করা এবং পরম মমতায় সেগুলো আগলে রাখা। কারণ, দিন শেষে এই সম্পর্কগুলোই আমাদের বেঁচে থাকার আসল প্রেরণা জোগায়।
শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে।
৩০ আগস্ট ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৬ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৭ ঘণ্টা আগে
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
১৭ ঘণ্টা আগেরিয়াদ হোসেন

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবন এ দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে মাতৃস্নেহে আগলে রেখেছে। ঝড়-ঝঞ্ঝা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিক্ষয় রোধসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করে আসছে। এই সুন্দরবনের এক অনন্য প্রজাতির প্রাণী হলো রয়েল বেঙ্গল টাইগার।
সাধারণ মানুষের মতো বাঘেরও প্রধান দুটি মৌলিক চাহিদা হলো খাদ্য ও বাসস্থান। বিশেষ করে খাদ্যের জোগান এবং আবাসস্থল নিরাপদ করতে পারলে বাঘ বাঁচিয়ে রাখা কিংবা তাদের প্রজনন বৃদ্ধিতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য সুন্দরবনকে বন্য প্রাণীর অবাধ বিচরণের জায়গা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে বাঘসহ অন্য প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। পৃথিবীর মাত্র ১৩টি দেশে এখন বাঘের অস্তিত্ব আছে। বাঘ বাঁচাতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সেসব দেশের সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অন্য প্রজাতির প্রাণী থেকে বাঘ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সুন্দরবনে চোরা শিকারি বাঘের প্রধান হুমকি। কিছু অতিলোভী চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের জন্য দিন দিন বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। সবশেষ তথ্যমতে, সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি। কয়েক বছর আগে বড় বড় বনদস্যু দলের আত্মসমর্পণের ফলে বাঘনিধন কিছুটা কমে এসেছে। দুই বছর আগেও খাদ্যসংকটে বাঘ লোকালয়ে এলে হত্যা করা হতো। এখন সেটিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। বন সংরক্ষণে বন মন্ত্রণালয়ের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবনসংলগ্ন স্থানীয় মানুষ আগের থেকে অনেক সচেতন হয়ে উঠেছে। এ জন্য বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষগুলোর জীবিকায় সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে।
সুন্দরবনকে বাঁচাতে এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে বাঘ সংরক্ষণের বিকল্প নেই। আর এ জন্য বন বিভাগ কিংবা সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকলে সুন্দরবন বা বাঘ কোনোটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না; যদি আমরা আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সচেতন না হই। পাশাপাশি বাঘনিধন ও হরিণ শিকার বন্ধের জন্য ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যে আইনের ৩৬ ধারায় বাঘশিকারি বা হত্যাকারী জামিন-অযোগ্য হবেন এবং সর্বোচ্চ সাত বছর সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড ও ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। এ আইনটিও অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে সুন্দরবন বাঁচানোর পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

দেশজুড়ে একটি নির্বাচনী আবহ সৃষ্টির প্রক্রিয়া ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হচ্ছে। বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক দলগুলোই এই আবহ সৃষ্টি করছে। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) তাদের যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসি নির্বাচনের একটি পথনকশাও (রোডম্যাপ) ঘোষণা করেছে।
৩০ আগস্ট ২০২৫
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
১৬ ঘণ্টা আগে
না, সব উপদেষ্টা প্রশ্নবিদ্ধ নন। তবে সংখ্যাটা যে নেহাত কম হবে না, তা অনুমান করা যায় যখন প্রধান তিনটি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলই আলাদা আলাদাভাবে উপদেষ্টাদের দলঘনিষ্ঠতার অভিযোগ তোলে। অবশ্য এবারই প্রথম নয়, এর আগেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছে, যখন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কোনো কোনো উপদেষ্টার সেফ...
১৭ ঘণ্টা আগে
সমাজ এগিয়ে চলেছে দ্রুতগতিতে, পৃথিবী প্রবেশ করেছে এক নতুন যুগে। এই গতিময় সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা হয়তো অনেক কিছু পাচ্ছি, কিন্তু হারিয়ে ফেলছি আরও বেশি কিছু। আজ আমরা এক অদ্ভুত স্বার্থপর সময়ে বাস করছি, যেখানে প্রতিটি সম্পর্কের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতি।
১৭ ঘণ্টা আগে