রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো চামচা। শব্দটির মানে আমরা কে না জানি! এর অর্থ বুঝতে এক কথায় আমাদের যাপিত জীবনের সামাজিক অভিধানের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা কি জানি চামচা শব্দের এ নেতিবাচক অর্থটি কীভাবে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করল? কীভাবে চামচা শব্দটি তার মূল অর্থকে অপেক্ষাকৃত গৌণ করে আলংকারিক অর্থে পরিগ্রহ করেছে? চামচ শব্দের সঙ্গে কি চামচা শব্দের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তবে চলুন আজ জানব চামচা শব্দের আদ্যোপান্ত।
ফারসি চম্চহ্ শব্দ থেকে বাংলা চামচা শব্দের উৎপত্তি। এটি বিশেষ্য পদ। চামচা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো তোষামোদকারী, চাটুকার, তাঁবেদার প্রভৃতি। কিন্তু অর্থটি কীভাবে এই রূপ ধারণ করল? এটি বুঝতে আমাদের ফিরতে হবে শব্দটির ফারসি ভাষার মূল অর্থে। ফারসি ভাষায় চম্চহ্ শব্দের অর্থ হলো ছোট হাতলওয়ালা চামচ। মূলত এই অর্থটি থেকেই বাংলা চামচা শব্দটির অর্থ গঠিত হয়েছে। সোনা বা রুপার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানোর কথা তো আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি। আবার খাবার টেবিলে কিংবা রান্নায় চামচের ব্যবহার সর্বত্র রয়েছে।
ব্যবহারভেদে রয়েছে এর নানাবিধ আকারও। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেও চামচের ব্যবহার ছিল। মিসরীয়রা বিভিন্ন রকম চামচের ব্যবহার করত। তখনকার দিনে চামচ ছিল পাথর, কাঠ কিংবা হাতির দাঁত কেটে বানানো। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে চীনে হাড়ের তৈরি চামচের সন্ধান পাওয়া যায়। এ তো গেল ইতিহাসের কথা, এবার জানব আকৃতি ও প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে চামচের রকমফের।
একটি কাটলারি সেটে সবচেয়ে ছোট্ট যে চামচটি থাকে সেটি হলো টি স্পুন বা চায়ের চামচ। চায়ে দুধ-চিনি দেওয়া বা মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেতে এই চামচ ব্যবহার করা যায়। এর চেয়ে একটু বড় আকৃতির যে চামচ, সেটি হলো ডেজার্ট স্পুন বা মিষ্টির চামচ। আমরা সাধারণত এটিকেই চা-চামচ মনে করি। প্রকৃতপক্ষে চা-চামচ এর থেকেও ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। মূল খাবার খাওয়ার চামচ হয় মাঝারি আকৃতির। এগুলোই আসলে টেবিল চামচ নামে পরিচিত। মিষ্টি খাওয়ার জন্য ছোট কাঁটাচামচও ব্যবহার করা হয়। এগুলো সাধারণত তিন থেকে চার কাঁটার হয়ে থাকে। এটিকে বলা হয় ডেজার্ট ফর্ক।
ফল ও সালাদ খাওয়ার জন্য থাকে দুই বা তিন কাঁটার চামচ। তবে অনেক সময় ডেজার্ট ফর্ক দিয়েও সালাদ বা ফল খাওয়া হয়। স্যুপ খাওয়ার জন্য স্যুপের আলাদা চামচ ছাড়াও ইদানীং ব্যবহৃত হচ্ছে মাঝারি আকৃতির এবং গোল মাথাওয়ালা চামচ। এমনকি স্যুপ বেড়ে দেওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হয় ডাবর আকৃতির চামচ। টেবিল চামচের চেয়ে খানিকটা বড় হয় তরকারির চামচ বা কারি স্পুন। ভাত ও পোলাও বাড়তে ব্যবহার করা হয় বড়, চওড়া, এককথায় ফ্ল্যাট চামচ। আর লবণের চামচ তো একেবারেই ছোট আকৃতির হয়। আচারের জন্য আছে আলাদা চামচ। এগুলোকে বলা হয় পিকলস স্পুন। পানিজাতীয় কিছু পান করার সময় যদি নাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন যে চামচটি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো ড্রিংক স্পুন। এর ডাঁট সরু এবং মুখটি গোলাকৃতি হয়ে থাকে। এ ছাড়া রোস্ট বা কাবাব বেড়ে দেওয়ার জন্য টং নামে একধরনের চামচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আগেই বলা হয়েছে এই চামচ শব্দটির সঙ্গে চামচা শব্দটির গভীর যোগ রয়েছে। খাওয়ার টেবিল থেকে শুরু করে রান্নাঘর এমনকি ক্রোকারিজের দোকানেও আমরা কাটলারি সেটে বড় বড় চামচের সঙ্গে ছোট চামচও রাখতে দেখি। কাকতালীয় হলেও সত্য, সচরাচর রান্নাঘরের শেলফে রাখা বড় চামচগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় বড় চামচের সংখ্যার চেয়ে ছোট চামচের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ বড় চামচগুলো হলো নেতা আর ছোট চামচগুলো হলো তার অনুসারী। একজন ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতার আশপাশে যেমন অনেক ছোট ছোট নেতা ঘুরঘুর করে, ঠিক তেমনি কাটলারি সেট বা রান্নাঘরের শেলফে বড় চামচের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে অনেক ছোট ছোট চামচ। ছোট চামচগুলো বিভিন্নভাবে যেমন বড় চামচের কাজকে সহযোগিতা করে, তেমনি পাতিনেতা বা ছোট ছোট নেতাদের কাজ হলো বড় নেতার চারপাশে ঘিরে থেকে তার তোষামোদ করা।
প্রকৃতপক্ষে চামচের কাজ হলো খাবার গ্রহণে ব্যক্তিকে সহায়তা করা। ঠিক তেমনি চামচার কাজও নৈতিক-অনৈতিক পারম্পর্য বিচার না করে নেতার তাঁবেদারি করা।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো চামচা। শব্দটির মানে আমরা কে না জানি! এর অর্থ বুঝতে এক কথায় আমাদের যাপিত জীবনের সামাজিক অভিধানের অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা কি জানি চামচা শব্দের এ নেতিবাচক অর্থটি কীভাবে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করল? কীভাবে চামচা শব্দটি তার মূল অর্থকে অপেক্ষাকৃত গৌণ করে আলংকারিক অর্থে পরিগ্রহ করেছে? চামচ শব্দের সঙ্গে কি চামচা শব্দের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? তবে চলুন আজ জানব চামচা শব্দের আদ্যোপান্ত।
ফারসি চম্চহ্ শব্দ থেকে বাংলা চামচা শব্দের উৎপত্তি। এটি বিশেষ্য পদ। চামচা শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো তোষামোদকারী, চাটুকার, তাঁবেদার প্রভৃতি। কিন্তু অর্থটি কীভাবে এই রূপ ধারণ করল? এটি বুঝতে আমাদের ফিরতে হবে শব্দটির ফারসি ভাষার মূল অর্থে। ফারসি ভাষায় চম্চহ্ শব্দের অর্থ হলো ছোট হাতলওয়ালা চামচ। মূলত এই অর্থটি থেকেই বাংলা চামচা শব্দটির অর্থ গঠিত হয়েছে। সোনা বা রুপার চামচ মুখে নিয়ে জন্মানোর কথা তো আমরা সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি। আবার খাবার টেবিলে কিংবা রান্নায় চামচের ব্যবহার সর্বত্র রয়েছে।
ব্যবহারভেদে রয়েছে এর নানাবিধ আকারও। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগেও চামচের ব্যবহার ছিল। মিসরীয়রা বিভিন্ন রকম চামচের ব্যবহার করত। তখনকার দিনে চামচ ছিল পাথর, কাঠ কিংবা হাতির দাঁত কেটে বানানো। খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় অব্দে চীনে হাড়ের তৈরি চামচের সন্ধান পাওয়া যায়। এ তো গেল ইতিহাসের কথা, এবার জানব আকৃতি ও প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে চামচের রকমফের।
একটি কাটলারি সেটে সবচেয়ে ছোট্ট যে চামচটি থাকে সেটি হলো টি স্পুন বা চায়ের চামচ। চায়ে দুধ-চিনি দেওয়া বা মিষ্টিজাতীয় জিনিস খেতে এই চামচ ব্যবহার করা যায়। এর চেয়ে একটু বড় আকৃতির যে চামচ, সেটি হলো ডেজার্ট স্পুন বা মিষ্টির চামচ। আমরা সাধারণত এটিকেই চা-চামচ মনে করি। প্রকৃতপক্ষে চা-চামচ এর থেকেও ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। মূল খাবার খাওয়ার চামচ হয় মাঝারি আকৃতির। এগুলোই আসলে টেবিল চামচ নামে পরিচিত। মিষ্টি খাওয়ার জন্য ছোট কাঁটাচামচও ব্যবহার করা হয়। এগুলো সাধারণত তিন থেকে চার কাঁটার হয়ে থাকে। এটিকে বলা হয় ডেজার্ট ফর্ক।
ফল ও সালাদ খাওয়ার জন্য থাকে দুই বা তিন কাঁটার চামচ। তবে অনেক সময় ডেজার্ট ফর্ক দিয়েও সালাদ বা ফল খাওয়া হয়। স্যুপ খাওয়ার জন্য স্যুপের আলাদা চামচ ছাড়াও ইদানীং ব্যবহৃত হচ্ছে মাঝারি আকৃতির এবং গোল মাথাওয়ালা চামচ। এমনকি স্যুপ বেড়ে দেওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হয় ডাবর আকৃতির চামচ। টেবিল চামচের চেয়ে খানিকটা বড় হয় তরকারির চামচ বা কারি স্পুন। ভাত ও পোলাও বাড়তে ব্যবহার করা হয় বড়, চওড়া, এককথায় ফ্ল্যাট চামচ। আর লবণের চামচ তো একেবারেই ছোট আকৃতির হয়। আচারের জন্য আছে আলাদা চামচ। এগুলোকে বলা হয় পিকলস স্পুন। পানিজাতীয় কিছু পান করার সময় যদি নাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন যে চামচটি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো ড্রিংক স্পুন। এর ডাঁট সরু এবং মুখটি গোলাকৃতি হয়ে থাকে। এ ছাড়া রোস্ট বা কাবাব বেড়ে দেওয়ার জন্য টং নামে একধরনের চামচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আগেই বলা হয়েছে এই চামচ শব্দটির সঙ্গে চামচা শব্দটির গভীর যোগ রয়েছে। খাওয়ার টেবিল থেকে শুরু করে রান্নাঘর এমনকি ক্রোকারিজের দোকানেও আমরা কাটলারি সেটে বড় বড় চামচের সঙ্গে ছোট চামচও রাখতে দেখি। কাকতালীয় হলেও সত্য, সচরাচর রান্নাঘরের শেলফে রাখা বড় চামচগুলোর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় বড় চামচের সংখ্যার চেয়ে ছোট চামচের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ বড় চামচগুলো হলো নেতা আর ছোট চামচগুলো হলো তার অনুসারী। একজন ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতার আশপাশে যেমন অনেক ছোট ছোট নেতা ঘুরঘুর করে, ঠিক তেমনি কাটলারি সেট বা রান্নাঘরের শেলফে বড় চামচের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে অনেক ছোট ছোট চামচ। ছোট চামচগুলো বিভিন্নভাবে যেমন বড় চামচের কাজকে সহযোগিতা করে, তেমনি পাতিনেতা বা ছোট ছোট নেতাদের কাজ হলো বড় নেতার চারপাশে ঘিরে থেকে তার তোষামোদ করা।
প্রকৃতপক্ষে চামচের কাজ হলো খাবার গ্রহণে ব্যক্তিকে সহায়তা করা। ঠিক তেমনি চামচার কাজও নৈতিক-অনৈতিক পারম্পর্য বিচার না করে নেতার তাঁবেদারি করা।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
১৮ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
১৮ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
১৮ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
২ দিন আগে