রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিতি শব্দ হলো ফ্যাঁকড়া। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই ফ্যাঁকড়ায় পড়েছি। কখনো ফ্যাঁকড়া থেকে উত্তীর্ণ হতে পেরেছি, আবার কখনো ফ্যাঁকড়াতেই জীবন অতিবাহিত করছি। কিন্তু আমরা কি জানি ফ্যাঁকড়া শব্দটির মূল অর্থ কী? কীভাবে শব্দটি বাংলা ভাষায় এমন নেতিবাচক রূপ লাভ করেছে? শব্দটির মূল অর্থই কি নেতিবাচক? এতসব প্রশ্নের বেড়াজালে না জড়িয়ে চলুন জেনে নিই ফ্যাঁকড়া শব্দের সাতসতেরো।
ফ্যাঁকড়া দেশি শব্দ। এটি বিশেষ্য পদ। ফ্যাঁকড়া শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো প্রশাখা; গাছের ডাল। অপরদিকে ফ্যাঁকড়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ফ্যাসাদ, ঝামেলা; বাধা, বিঘ্ন, ছলচাতুরী; মূল বিষয় থেকে উদ্ভূত অন্যান্য বিষয়। মূলত ফ্যাঁকড়া শব্দের আক্ষরিক অর্থ থেকেই ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে নেতিবাচক অর্থটি জাত।
‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ আমাদের বহুল প্রচলিত স্লোগানগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি তীব্র তাপপ্রবাহের মুখে বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণের পক্ষে সরব প্রচারণা প্রত্যক্ষ করেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মূল কথা হলো, বৃক্ষ একেবারেই আলাদা এক প্রাণ, স্বতন্ত্র এক অস্তিত্ব। এ সত্যকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে না পারলে, বৃক্ষকে ভালোবাসতে না পারলে কখনো বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তাকে অন্তর থেকে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। বৃক্ষ নিয়ে কেন এতগুলো কথা বললাম, তার কারণ হলো আমাদের আলোচ্য ফ্যাঁকড়া শব্দটি সরাসরি বৃক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত। মূলত বৃক্ষের উপশাখা তথা ছোট ছোট ডালপালাকে ফ্যাঁকড়া বলে। একটি গাছ যখন ছোট থেকে বড় হয় তখন এই ফ্যাঁকড়ার ধাপ অতিক্রম করে করেই বড় হয়। যত বড় গাছ তত বেশি ফ্যাঁকড়া। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি বাড়ির মুরব্বিরা বছরে একবার গাছ ছেঁটে দিতেন। এই গাছ ছেঁটে দেওয়া বলতে প্রকৃতপক্ষে গাছের ফ্যাঁকড়াকে পর্যায়ক্রমে ঝেড়ে ফেলা বুঝায়। সচরাচর দেখা যায় বড় প্রজাতির গাছগুলোর গুঁড়ির দিকের ফ্যাঁকড়া ছাঁটাই করা না হলে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় না। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং সুষম পুষ্টিগুণ অব্যাহত রাখতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ফ্যাঁকড়া ছাঁটাই করার কোনো বিকল্প নেই। আশানুরূপ ফলন পেতেও যেমন আমরা খেতে নিড়ানি দিই, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর গাছের ফ্যাঁকড়া ছাঁটাইও অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
কোনো পরিকল্পনা বা কোনো সুনির্দিষ্ট কাজে যদি গাছের ফ্যাঁকড়ার মতো ফ্যাঁকড়া বাধে তবে ওই কাজ আর সিদ্ধ হয় না। কেননা ফ্যাঁকড়া কাজের স্বাভাবিক বিকাশ বা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। অঞ্চলভেদে ফ্যাঁকড়া শব্দের নানান রূপভেদ রয়েছে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেমন ফ্যাঁকড়া ছেঁটে ফেলতে হয়, তেমনি কোনো পরিকল্পনা বা কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ওই কাজের ফ্যাঁকড়া ঝেড়ে ফেলতে হয়। নতুবা এই ফ্যাঁকড়া থেকে কাজে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
প্রকৃতিজুড়েই রয়েছে প্রাণের মেলা। এই মেলার বড় অংশজুড়েই গাছ। প্রতিটি গাছই আলাদা। কারও কারও হাতের যত্নে গাছ যেমন তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি কারও কারও নেতিবাচক ভূমিকার কারণে কাজের ফ্যাঁকড়াও বেড়ে যেতে পারে। এগুলো এড়াতে গাছের যেমন চাই বাড়তি যত্ন, তেমনি কাজেকর্মে ফ্যাঁকড়া এড়াতে চাই প্রয়োজনীয় সতর্কতা। ফ্যাঁকড়া শব্দটি গাছ থেকে জাত হয়ে এভাবেই আমাদের মুখের ভাষায় চলে এসেছে। তবে মনে রাখতে হবে, গাছের ফ্যাঁকড়া যেমন আকারে ছোট, তেমনি কোনো কাজের ফ্যাঁকড়াও ঝামেলা বা কোনো বিপদ থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু ফ্যাঁকড়া নির্মূল না করে কোনো কর্মে শতভাগ সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় অতিপরিচিতি শব্দ হলো ফ্যাঁকড়া। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই ফ্যাঁকড়ায় পড়েছি। কখনো ফ্যাঁকড়া থেকে উত্তীর্ণ হতে পেরেছি, আবার কখনো ফ্যাঁকড়াতেই জীবন অতিবাহিত করছি। কিন্তু আমরা কি জানি ফ্যাঁকড়া শব্দটির মূল অর্থ কী? কীভাবে শব্দটি বাংলা ভাষায় এমন নেতিবাচক রূপ লাভ করেছে? শব্দটির মূল অর্থই কি নেতিবাচক? এতসব প্রশ্নের বেড়াজালে না জড়িয়ে চলুন জেনে নিই ফ্যাঁকড়া শব্দের সাতসতেরো।
ফ্যাঁকড়া দেশি শব্দ। এটি বিশেষ্য পদ। ফ্যাঁকড়া শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো প্রশাখা; গাছের ডাল। অপরদিকে ফ্যাঁকড়া শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ফ্যাসাদ, ঝামেলা; বাধা, বিঘ্ন, ছলচাতুরী; মূল বিষয় থেকে উদ্ভূত অন্যান্য বিষয়। মূলত ফ্যাঁকড়া শব্দের আক্ষরিক অর্থ থেকেই ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়ে নেতিবাচক অর্থটি জাত।
‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’ আমাদের বহুল প্রচলিত স্লোগানগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বিপর্যস্ত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। এমনকি তীব্র তাপপ্রবাহের মুখে বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণের পক্ষে সরব প্রচারণা প্রত্যক্ষ করেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। মূল কথা হলো, বৃক্ষ একেবারেই আলাদা এক প্রাণ, স্বতন্ত্র এক অস্তিত্ব। এ সত্যকে মনেপ্রাণে ধারণ করতে না পারলে, বৃক্ষকে ভালোবাসতে না পারলে কখনো বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তাকে অন্তর থেকে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। বৃক্ষ নিয়ে কেন এতগুলো কথা বললাম, তার কারণ হলো আমাদের আলোচ্য ফ্যাঁকড়া শব্দটি সরাসরি বৃক্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত। মূলত বৃক্ষের উপশাখা তথা ছোট ছোট ডালপালাকে ফ্যাঁকড়া বলে। একটি গাছ যখন ছোট থেকে বড় হয় তখন এই ফ্যাঁকড়ার ধাপ অতিক্রম করে করেই বড় হয়। যত বড় গাছ তত বেশি ফ্যাঁকড়া। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি বাড়ির মুরব্বিরা বছরে একবার গাছ ছেঁটে দিতেন। এই গাছ ছেঁটে দেওয়া বলতে প্রকৃতপক্ষে গাছের ফ্যাঁকড়াকে পর্যায়ক্রমে ঝেড়ে ফেলা বুঝায়। সচরাচর দেখা যায় বড় প্রজাতির গাছগুলোর গুঁড়ির দিকের ফ্যাঁকড়া ছাঁটাই করা না হলে গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় না। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং সুষম পুষ্টিগুণ অব্যাহত রাখতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ফ্যাঁকড়া ছাঁটাই করার কোনো বিকল্প নেই। আশানুরূপ ফলন পেতেও যেমন আমরা খেতে নিড়ানি দিই, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর গাছের ফ্যাঁকড়া ছাঁটাইও অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
কোনো পরিকল্পনা বা কোনো সুনির্দিষ্ট কাজে যদি গাছের ফ্যাঁকড়ার মতো ফ্যাঁকড়া বাধে তবে ওই কাজ আর সিদ্ধ হয় না। কেননা ফ্যাঁকড়া কাজের স্বাভাবিক বিকাশ বা প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। অঞ্চলভেদে ফ্যাঁকড়া শব্দের নানান রূপভেদ রয়েছে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেমন ফ্যাঁকড়া ছেঁটে ফেলতে হয়, তেমনি কোনো পরিকল্পনা বা কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ওই কাজের ফ্যাঁকড়া ঝেড়ে ফেলতে হয়। নতুবা এই ফ্যাঁকড়া থেকে কাজে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হবে।
প্রকৃতিজুড়েই রয়েছে প্রাণের মেলা। এই মেলার বড় অংশজুড়েই গাছ। প্রতিটি গাছই আলাদা। কারও কারও হাতের যত্নে গাছ যেমন তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে, তেমনি কারও কারও নেতিবাচক ভূমিকার কারণে কাজের ফ্যাঁকড়াও বেড়ে যেতে পারে। এগুলো এড়াতে গাছের যেমন চাই বাড়তি যত্ন, তেমনি কাজেকর্মে ফ্যাঁকড়া এড়াতে চাই প্রয়োজনীয় সতর্কতা। ফ্যাঁকড়া শব্দটি গাছ থেকে জাত হয়ে এভাবেই আমাদের মুখের ভাষায় চলে এসেছে। তবে মনে রাখতে হবে, গাছের ফ্যাঁকড়া যেমন আকারে ছোট, তেমনি কোনো কাজের ফ্যাঁকড়াও ঝামেলা বা কোনো বিপদ থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট। কিন্তু ফ্যাঁকড়া নির্মূল না করে কোনো কর্মে শতভাগ সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়।
লেখক: রাজীব কুমার সাহা
আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত কোনো কোনো শিরোনাম ও সংবাদ বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়তে চান পাঠক। আজকের পত্রিকায় ৩১ মে প্রকাশিত প্রধান শিরোনাম, ‘৬ মাসের টানাটানিতে ভোট’ শীর্ষক সংবাদটি সম্পর্কে আমাকে একজন সম্পাদক ফোন করে প্রশংসা করলেন। আমি বুঝতে পারলাম শিরোনামটি যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভোট নিয়ে জনগণের আগ
১২ ঘণ্টা আগেঈদ—এই শব্দটির সঙ্গে অগণিত মানুষের হৃদয়ে যে অনুভব জাগে, তা আনন্দ, উৎসব আর মিলনের। ঘরে ঘরে নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, কোলাকুলি আর রঙিন খুশির চিত্র যেন ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সেই পরিচিত দৃশ্যের বাইরে যে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো—ঈদ কি সবার জন্য একরকম? ঈদের দিন কি সকলের মুখেই সমান হাসি? ঈদের আনন
১২ ঘণ্টা আগে১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঈদ এসেছিল। সেই ঈদের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একটা বিশেষ নাটক লিখেছিলাম। যুদ্ধরত শিল্পীদের অভিনয়ে সমৃদ্ধ হয়ে নাটকটি প্রচারিত হয়েছিল ঈদের আগের দিন। নাটকটির নাম ছিল ‘চান্দের তলোয়ার’। ঈদের চাঁদ সাধারণত আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। খুশির এই ঈদের বড় প্রতীক হলো চাঁদ।
১২ ঘণ্টা আগেদরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। প্রতিবছর আরবি বর্ষপঞ্জির ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ ও পশু কোরবানির মাধ্যমে উদ্যাপিত হয় এই উৎসব। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি এই উৎসবের লক্ষ্য—ত্যাগের মহিমায় সমাজটা সুন্দর করে তোলা, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনে সৃষ্টির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।
১৩ ঘণ্টা আগে