ডা. আবু ইলিয়াস প্রধান
৫ মে সকালে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন বলেছে, জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি সংবিধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আইনি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশও করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো একটি ন্যায্য, মানবিক ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গঠনের পথে দৃশ্যমান বাধাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দুর্নীতি, সক্ষমতার ঘাটতি, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং চিকিৎসাশিক্ষার নিম্নমান ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকি হয়েই আছে।
স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকার বছরের পর বছর বরাদ্দ কম দিয়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছেন। গত এক দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জাতীয় বাজেটের গড়ে ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয় স্বাস্থ্যে। অন্যদিকে জিডিপির অংশ ২ শতাংশ কখনো ছাড়ায়নি। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন মনে করে, স্বাস্থ্যে জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বহুদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অবহেলায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে এটি একটি। কমিশনের মতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত এবং তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করাই হবে কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রথম ধাপ। একই সঙ্গে, অতিদরিদ্রদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে নিশ্চিত করা এবং মোট স্বাস্থ্য বাজেটে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ বিশেষভাবে আলোচিত হওয়ার মতো।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, গ্রামীণ ও শহুরে উভয় পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেলভিত্তিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে রোগীরা ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবে এবং উচ্চতর পর্যায়ে না গিয়ে স্থানীয় পর্যায়েই অধিকাংশ সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এর ফলে চাপ কমবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালসহ শহরের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রকে একীভূত করে কার্যকর চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও এসেছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থ, প্রশিক্ষিত জনবল, ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী, তবে এর জন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক সংশোধন, যা রাজনীতিকদের ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বহু ক্ষেত্রেই বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রাখে, সেখানে শুধু সুপারিশ নয়, তার বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি। কমিশনের মতে, এ রূপান্তর সম্পন্ন হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, বাস্তবে এটি আরও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হবে।
এখন জরুরি প্রয়োজন আইন প্রণয়ন ও সংস্কার। কমিশন একযোগে অন্তত ১৫টি নতুন আইন প্রণয়নের এবং বেশ কিছু বিদ্যমান আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন’, ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন’, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’, ‘ঔষধ মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন’, ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন’, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন’ প্রভৃতি। পাশাপাশি রোগী নিরাপত্তা আইন, ডায়াগনস্টিক অ্যাক্রিডিটেশন আইন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও রয়েছে। তবে এসব আইনের বাস্তবায়ন নিয়েই রয়েছে প্রধান প্রশ্ন। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনের খসড়া তৈরি থেকে সংসদে পাস হওয়া, তারপর মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ পর্যন্ত একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ প্রক্রিয়া অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিরোধ, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সদিচ্ছার অভাবে ভেস্তে যায়।
প্রস্তাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে ওষুধ খাত। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা এবং তা বিনা মূল্যে কিংবা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কমিশন সুপারিশ করেছে। সরকারি হাসপাতালের ফার্মেসিগুলোকে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা এবং তা একটি জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টিও প্রস্তাবে আছে। একই সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রভাব কমানো এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ এসেছে, যা চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। কোম্পানির পক্ষ থেকে শুধু ডাক বা ই-মেইলের মাধ্যমে পণ্য তথ্য ও পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। উপহার বা সম্মেলন স্পনসরের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার বন্ধ করার প্রস্তাব জনস্বাস্থ্য নীতিমালায় বড় ধরনের নৈতিক সংস্কারের ইঙ্গিতবাহী। এ ছাড়া ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ওষুধের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করার প্রস্তাব নিম্নমধ্যবিত্ত জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাজেট ঘাটতি ও রাজস্ব আহরণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, চিকিৎসকদের পোস্টিং অনুযায়ী কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করা এবং মেডিকেল শিক্ষাকে কেন্দ্রীয়ভাবে অ্যাক্রেডিট করার প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রশাসনিক জটিলতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে পেশাজীবীদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তনগুলো ভালো হলেও সেসব বাস্তবায়নের পথে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শীর্ষ পর্যায়ের মনোযোগ ঘাটতি। স্বাস্থ্য খাতের যেসব আইন বা কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত তদারকি, দায়বদ্ধতা ও সামাজিক সংলাপের অভাব।
সরকার যদি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে এবং সুপারিশগুলোর একটি বাস্তবধর্মী ক্রমিক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তাহলে একটি রূপান্তর সম্ভব হতে পারে। তবে তা হতে হবে পর্যায়ক্রমিক, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক, যাতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, রোগী, ওষুধ কোম্পানি, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন অংশীদার এবং নাগরিক সমাজ সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকতে পারে। একসঙ্গে সবকিছু পরিবর্তনের চেষ্টা করতে গিয়ে যেন কিছুই না হয়, সে আশঙ্কাও মাথায় রাখতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, একাধিক কমিশন গঠনের পরও তার অনেক সুপারিশ সরকার গ্রহণ করেনি কিংবা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন যদি সুষ্ঠু ও ধারাবাহিকভাবে হয়, তবে সেটি হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে সেটি কেবল তখনই সম্ভব, যখন এই খাতকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অনুশীলন চলবে। স্বাস্থ্য খাতকে শুধুই রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্র না দেখে, জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ ও মানবিক মর্যাদার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা ছাড়া প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
৫ মে সকালে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কমিশন বলেছে, জনমুখী, সহজলভ্য ও সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষকে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি সংবিধানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে আইনি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশও করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো একটি ন্যায্য, মানবিক ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গঠনের পথে দৃশ্যমান বাধাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দুর্নীতি, সক্ষমতার ঘাটতি, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং চিকিৎসাশিক্ষার নিম্নমান ভবিষ্যতের জন্য গুরুতর হুমকি হয়েই আছে।
স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকার বছরের পর বছর বরাদ্দ কম দিয়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসছেন। গত এক দশকের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জাতীয় বাজেটের গড়ে ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয় স্বাস্থ্যে। অন্যদিকে জিডিপির অংশ ২ শতাংশ কখনো ছাড়ায়নি। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন মনে করে, স্বাস্থ্যে জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ এবং জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বহুদিন ধরে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষতা ও অবহেলায় ভুগতে থাকা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে গঠিত ১১টি কমিশনের মধ্যে এটি একটি। কমিশনের মতে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত এবং তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করাই হবে কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রথম ধাপ। একই সঙ্গে, অতিদরিদ্রদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে নিশ্চিত করা এবং মোট স্বাস্থ্য বাজেটে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ বিশেষভাবে আলোচিত হওয়ার মতো।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, গ্রামীণ ও শহুরে উভয় পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে ভিত্তি ধরে একটি রেফারেলভিত্তিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যেখানে রোগীরা ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাবে এবং উচ্চতর পর্যায়ে না গিয়ে স্থানীয় পর্যায়েই অধিকাংশ সেবা গ্রহণ করতে পারবে। এর ফলে চাপ কমবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতালসহ শহরের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রকে একীভূত করে কার্যকর চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবও এসেছে। এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থ, প্রশিক্ষিত জনবল, ব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী, তবে এর জন্য প্রয়োজন সাংবিধানিক সংশোধন, যা রাজনীতিকদের ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বহু ক্ষেত্রেই বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি রাখে, সেখানে শুধু সুপারিশ নয়, তার বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি। কমিশনের মতে, এ রূপান্তর সম্পন্ন হতে প্রায় দুই বছর সময় লাগতে পারে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, বাস্তবে এটি আরও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হবে।
এখন জরুরি প্রয়োজন আইন প্রণয়ন ও সংস্কার। কমিশন একযোগে অন্তত ১৫টি নতুন আইন প্রণয়নের এবং বেশ কিছু বিদ্যমান আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন’, ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন’, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’, ‘ঔষধ মূল্য নির্ধারণ ও প্রবেশাধিকার আইন’, ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কাউন্সিল আইন’, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল আইন’ প্রভৃতি। পাশাপাশি রোগী নিরাপত্তা আইন, ডায়াগনস্টিক অ্যাক্রিডিটেশন আইন এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবও রয়েছে। তবে এসব আইনের বাস্তবায়ন নিয়েই রয়েছে প্রধান প্রশ্ন। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইনের খসড়া তৈরি থেকে সংসদে পাস হওয়া, তারপর মাঠপর্যায়ে প্রয়োগ পর্যন্ত একটি জটিল এবং দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে। এ প্রক্রিয়া অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিরোধ, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সদিচ্ছার অভাবে ভেস্তে যায়।
প্রস্তাবনায় গুরুত্ব পেয়েছে ওষুধ খাত। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের প্রাপ্যতা এবং তা বিনা মূল্যে কিংবা ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কমিশন সুপারিশ করেছে। সরকারি হাসপাতালের ফার্মেসিগুলোকে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা এবং তা একটি জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টিও প্রস্তাবে আছে। একই সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রভাব কমানো এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করার সুপারিশ এসেছে, যা চিকিৎসাসেবা এবং ওষুধ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। কোম্পানির পক্ষ থেকে শুধু ডাক বা ই-মেইলের মাধ্যমে পণ্য তথ্য ও পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। উপহার বা সম্মেলন স্পনসরের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার বন্ধ করার প্রস্তাব জনস্বাস্থ্য নীতিমালায় বড় ধরনের নৈতিক সংস্কারের ইঙ্গিতবাহী। এ ছাড়া ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ওষুধের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ করার প্রস্তাব নিম্নমধ্যবিত্ত জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাজেট ঘাটতি ও রাজস্ব আহরণে চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
চিকিৎসাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, চিকিৎসকদের পোস্টিং অনুযায়ী কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করা এবং মেডিকেল শিক্ষাকে কেন্দ্রীয়ভাবে অ্যাক্রেডিট করার প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রশাসনিক জটিলতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে পেশাজীবীদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্তনগুলো ভালো হলেও সেসব বাস্তবায়নের পথে রয়েছে আমলাতান্ত্রিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং শীর্ষ পর্যায়ের মনোযোগ ঘাটতি। স্বাস্থ্য খাতের যেসব আইন বা কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর না হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত তদারকি, দায়বদ্ধতা ও সামাজিক সংলাপের অভাব।
সরকার যদি আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করে এবং সুপারিশগুলোর একটি বাস্তবধর্মী ক্রমিক বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তাহলে একটি রূপান্তর সম্ভব হতে পারে। তবে তা হতে হবে পর্যায়ক্রমিক, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক, যাতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, রোগী, ওষুধ কোম্পানি, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন অংশীদার এবং নাগরিক সমাজ সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকতে পারে। একসঙ্গে সবকিছু পরিবর্তনের চেষ্টা করতে গিয়ে যেন কিছুই না হয়, সে আশঙ্কাও মাথায় রাখতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, একাধিক কমিশন গঠনের পরও তার অনেক সুপারিশ সরকার গ্রহণ করেনি কিংবা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্বাস্থ্য কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন যদি সুষ্ঠু ও ধারাবাহিকভাবে হয়, তবে সেটি হবে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে সেটি কেবল তখনই সম্ভব, যখন এই খাতকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং শাসনব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অনুশীলন চলবে। স্বাস্থ্য খাতকে শুধুই রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্র না দেখে, জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ ও মানবিক মর্যাদার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা ছাড়া প্রকৃত সংস্কার সম্ভব নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ-সংঘাত, দুরবস্থা, দ্বৈতনীতি, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদির ভেতর বাংলাদেশ কেমন আছে? ফুটন্ত তেলের কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলা, আবার চুলা থেকে টগবগে কড়াই—এই তো চলছে এ দেশের জনগণকে নিয়ে। বরং যত দিন যাচ্ছে কড়াইয়ের তেল ও চুলার আগুন উভয়ই আরও উত্তপ্ত ও পরাবাস্তব হয়ে উঠছে।
৯ ঘণ্টা আগেগত আট মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যমানতা তৈরি হয়েছে ২৬টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের রেশ না কাটতেই একে একে এদের উত্থান অনেককেই বিস্মিত করেছে, কেউ কেউ দেখেছেন সম্ভাবনার নতুন আলো, আবার কেউ কেউ দেখেছেন এটি বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিরতারই
৯ ঘণ্টা আগেশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ডিআইএতে নিয়োগ নিয়ে যা হয়ে গেল, তাকে ‘ম্যাজিক কারবার’ বলা হলে ভুল বলা হবে না। সকালে পরীক্ষা নিয়ে রাতেই ফল প্রকাশ করার এক অতি মানবীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ডিআইএ। তারাই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছে, তারাই খাতা মূল্যায়নের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। সুতরাং এই ম্যাজিকের জন্মদাতা কে—তা
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে এখন প্রেমও রাজনৈতিক। আগে প্রেমে পড়লে মানুষ কবিতা লিখত, এখন ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়। একসময় ‘কিছু বলব না, বুঝে নিও’ টাইপ প্রেমিকা ছিল—এখন ‘টক্সিসিটিই প্রেমের সৌন্দর্য’ বলে নিজের ফ্যান-ফলোয়ারদের মাঝে থ্রো করে দেয় একখানা থিওরিটিক্যাল বোমা।
৯ ঘণ্টা আগে