Ajker Patrika

পানি ঘোলা করার একটি খোলা চিঠি 

আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৩, ১২: ২১
পানি ঘোলা করার একটি খোলা চিঠি 

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্বের রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন ৷ ওই চিঠিকে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনীতির পানি খোলা করার উপাদান হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। চিঠিটি সংবাদের বদলে 'মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে' যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশিত হওয়ায় নানা আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, সরকারের তরফ থেকে ড. ইউনূস কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে যখন বাংলাদেশের কোনো গণমাধ্যমে কোনো খবর সম্প্রতি প্রকাশ হয়নি, তখন বিদেশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশিষ্টজনেরা কেন উদ্বেগ প্রকাশ করলেন তা পরিষ্কার নয়। প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘খোলা চিঠি’ কি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা স্বপ্রণোদিত হয়ে দিয়েছেন, না কি ড. ইউনূস বা তাঁর পক্ষ থেকে কেউ চেষ্টা-তদ্বির করে এটা লিখিয়েছেন? প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। এই টাকার জোগানদাতাই বা কে বা কারা?

চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের তালিকায় রয়েছেন- যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন ও প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির ছেলে টেড কেনেডি জুনিয়র, সংগীতজ্ঞ ও অধিকারকর্মী বোনো; ইউনিসেফের সাবেক উপনির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব কুল গৌতম, রকফেলার ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পিটার সি গোল্ডমার্ক জুনিয়র, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি, বিশ্বব্যাংকের সাবেক ইউএস বোর্ড ডিরেক্টর ও সাউদার্ন ব্যান করপোরেশনের উপদেষ্টা জ্যান পিয়ারসি, অভিনেত্রী শ্যারন স্টোন, বৈশ্বিক নারীবিষয়ক সাবেক মার্কিন অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ মিলেন ভারভির এবং উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলসের মতো ব্যক্তিরা। 

ইংরেজিতে লেখা চিঠির শুরুতে বলা হয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমরা বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আপনাকে লিখছি, যারা আপনার দেশের জনগণের সাহস ও উদ্ভাবনী দক্ষতার প্রশংসা করে ৷ আমাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজের নেতা ও সমাজসেবক আছেন ৷ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মতো আমরাও বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ও সারা বিশ্বে গৃহীত উদ্ভাবনগুলো দ্বারা অনুপ্রাণিত৷ আপনার দেশের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকেই আমরা আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের একজন, শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মহান অবদানকে সমর্থন ও স্বীকৃতি দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে আপনাকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখছি ৷

‘ড. ইউনূসের ভালো থাকা, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবিক উন্নয়নে তিনি যে অবদান রেখে চলছেন, তা অব্যাহত রাখতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগ রয়েছে ৷ আমরা নিশ্চিত, আপনি জানেন যে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অবদান, বিশেষ করে অতিদরিদ্র ও সবচেয়ে বিপদাপন্ন মানুষের জন্য তাঁর অবদান বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সম্মানিত ৷

‘উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অধ্যাপক ইউনূস ইতিহাসের সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম ও কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন ৷ এই সাতজনের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, মাদার তেরেসা ও এলি উইজেলের মতো ব্যক্তিরা আছেন ৷ '

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে খুব বেশি প্রভাবশালী না হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষত পশ্চিমা বিশ্বে যথেষ্ট পরিচিত ও প্রভাবশালী। দেশের বাইরে অনেক খ্যাতিমান মানুষের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা। কোনো কোনো দেশের রাজা-রানীর সঙ্গেও তিনি খানাপিনা করেন। এক সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তাঁর স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাঁর পারিবারিক বন্ধু। হিলারিও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে সেই সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময় জাবরা গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যকর্ম চালু করে তিনি আলোচনায় আসেন। পরে গরিব মানুষের ব্যাংক ঋণ পাওয়ার বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে তিনি নজরে আসেন। বলে রাখা প্রয়োজন যে গ্রামীণ ব্যাংক কোনো এনজিও বা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন নয়, এটা একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং এতে সরকারের অর্থায়ন আছে। ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে একটি নির্দিষ্ট বিধিবিধান মেনে গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালিত হয়। তবে এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যাংকটিকে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবহার করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণদান কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে সাফল্য কতটুকু তা নিয়ে কোনো গবেষণা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে কিস্তি শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো ঘটনা সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। তবে এটা ঠিক, বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিক্রি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। পৃথিবীর কেথায় কি মানবিক উন্নয়ন তিনি সাধন করেছেন, তা বাংলাদেশের খুব জানাশোনা মানুষের কাছেও হয়তো স্পষ্ট নয়। তবে তিনি যে মোটা টাকার বিনিময়ে তাঁর বক্তৃতা বিক্রি করেন, তা অনেকেরই জানা।

২০০৬ সালে ড. ইউনূস যখন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান, তখন এই প্রশ্ন উঠেছিল যে তিনি বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবীর কোন অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকৃতপক্ষে দৃশ্যমান কি অবদান রেখেছেন? গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম যদি দারিদ্র্য বিমোচনে বড় অবদান রেখে থাকে তাহলে তাঁকে অর্থনীতিতে নোবেল না দিয়ে শান্তিতে কেন দেওয়া হলো?

মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যাণ্ডেলা ও মাদাম তেরেসার সঙ্গে এক মাপে দাঁড় করিয়ে ড. ইউনূসের সুখ্যাতি করে ৪০ বিশ্ব নাগরিক নিজেদের প্রতি কতটা সুবিচার করলেন, তা হয়তো তারা বুঝতে পারছেন না। কারণ তাঁরা ড. ইউনূসের হাতে কলকে রেখে তামাক টেনেছেন। বাংলাদেশে এসে খোঁজখবর নিলে জানতে পারতেন যে এই বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এমন: তিনি গরিবের মাথায় লবণ রেখে বরই খান।

শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ড. ইউনূসের কিছু সমস্যা নেই তা নয়। ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। এই মামলায় শ্রমিকদের অর্থ লোপাট, কল্যাণ তহবিলের অর্থ বিতরণ না করে আত্মসাৎ এবং মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর ড. ইউনূসের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে তাঁকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ড. ইউনূসের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন করলে হাইকোর্ট তাঁর আবেদনটি খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে সরকারের অবসর দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে সঠিক বলে আদেশ জারি করেন উচ্চ আদালত। বিষয়টি নিয়ে সে সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে ইউনূসকে পুনর্বহালের অনুরোধ করেছিলেন। তখনই প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, আদালতের নির্দেশের বাইরে সরকারের বা তাঁর কিছু করার সুযোগ নেই।

পদে থেকে হিলারি ক্লিন্টন ড. ইউনূসের পক্ষে শেখ হাসিনাকে নরম করতে পারেননি, এখন ‘প্রাক্তন’ হয়ে তিনি সফল হবেন, এমন ধারণা কি করে হলো?

ড. ইউনূস খ্যাতির কাঙাল। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. ইউনূস রাজনীতির প্রতিও আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। বিশেষ করে সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেত্রীকে মাইনাস করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলেন। সেই সময় তিনি নাগরিক শক্তি নামে একটি দল গঠনের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বও ওই সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় ধারা সৃষ্টি করে ইউনূসকে সামনে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের অন্যতম কুশীলবও ইউনূস। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ তাঁর ‘শান্তির স্বপ্নে’ গ্রন্থে লিখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে তাঁদের প্রথম পছন্দ ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁদের জানান, স্বল্পকালীন সময়ের জন্য তিনি সরকারপ্রধান হতে রাজি নন, তাঁর ইচ্ছা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা। 

ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠন করে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। এই ব্যর্থতার জন্য তিনি আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন কি-না, তা জানা না গেলেও বর্তমান সরকারের প্রতি তাঁর বিরূপতা গোপন নয়। ইউনূসের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সেই টানাপড়েন তীব্র হয়, যখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ও কার্যক্রমে লবিস্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, কথিত দুর্নীতির আন্তর্জাতিক অপপ্রচারের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বাতিলের নেপথ্যেও ছিলেন ড. ইউনূস।

যদি এগুলোকে ‘আওয়ামী প্রপাগান্ডা’ হিসেবে মনে করা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে, ড. ইউনূস তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পরিচিতিকে বাংলাদেশের কোন স্বার্থে কাজে লাগিয়েছেন, তার দুয়েকটা দৃষ্টান্ত কি দিতে পারবেন? এই যে এত বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের ওপর চেপে বসেছে, তা নিয়ে কি ড. ইউনূস কখনো কিছু বলেছেন? প্রভাব খাটিয়েছেন কিংবা বিশ্বনেতাদের দিয়ে খোলা চিঠি লিখিয়েছেন? করোনাকালে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা কিংবা টিকা-ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে কি তিনি তাঁর পরিচিতি কাজে লাগিয়েছেন? ড. ইউনূসের মানবিক সেবা কার্যক্রমের কোনো নমুনা কি ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের ওপর ঘৃণ্য নিপীড়নের সময় দেখা গেছে? দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ব্যাপারে কখনো মুখ খুলেছেন? সাম্প্রদায়িক শক্তির অপতৎপরতা কিংবা জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিপদ নিয়েও তো তাঁর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নেই। এসব থেকে কি এটা প্রমাণ হয় যে তিনি অতিদরিদ্র ও বিপদাপন্ন মানুষের প্রতি দরদি?

সামনেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল সক্রিয় হয় উঠছেন। বিশ্ব মোড়লেরা ওই নির্বাচনকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করবে- এটাই স্বাভাবিক। 'ঘোলা পানিতে মাছ শিকার' বলে একটি কথা আমাদের দেশে চালু আছে। বিশ্বের ৪০ প্রভাবশালী ব্যক্তির খোলা চিঠি পানি ঘোলা করার কাজটি এগিয়ে নেওয়ার একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ কি না, কে বলতে পারে?

বিশ্বের ৪০ প্রভাবশালী ব্যক্তির চিঠি সম্পর্কে শেসে বলার কথা এটাই যে ড. ইউনুস খ্যাতিমান বলেই আইনের ঊর্ধ্বে নন। নোবেল বিজয়ীদের নিয়ে অন্য দেশে সমস্যা হয় না তাতো নয়। অনেককে তো জেল-জুলুমও সহ্য করতে হয়। ড. ইউনূসের চলা-বলা বাধামুক্ত। 

অন্য দুই বাঙালি নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অমর্ত্য সেন পুরস্কারের অর্থ দিয়ে কি করেছেন, তা আমরা সবাই জানি। ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কারের অর্থ কোনো মহৎ কাজে ব্যয় করেছেন, সেটা কারও জানা আছে কি? আর হ্যাঁ, ড. ইউনূস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ২০২০ সালের পর নাকি দারিদ্র্য মিউজিয়ামে থাকবে। তিনি কি এই বাণী আর প্রচার করেন? 

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এইচএসসির ফল: শিক্ষাব্যবস্থার আয়নায় প্রতিফলিত চিত্র

শিক্ষকসংকট নিরসন ও প্রশিক্ষণের অভাব দূর করতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া কঠিন। প্রশিক্ষণের অভাব, কম বেতন, অনুপ্রেরণার ঘাটতি—সব মিলিয়ে শিক্ষকের মানে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এটা নিরসন করতে না পারলে শিক্ষার হাল খুব একটা পাল্টাবে বলে মনে হয় না।

চিররঞ্জন সরকার
মেয়েরা এখন শিক্ষাকে আত্মনির্ভরতার বিষয় হিসেবে দেখছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মেয়েরা এখন শিক্ষাকে আত্মনির্ভরতার বিষয় হিসেবে দেখছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক সমাজে ছড়িয়ে পড়ে একধরনের অস্বস্তি, হতাশা, আবার কোথাও কোথাও তীব্র প্রশ্নবোধ। কারণ, এবারের পাসের হার মাত্র ৫৮.৮৩ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ কম এবং গত ২১ বছরের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন। মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২,৩৫,৬৬১ জন, এর মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছেন ৫,৮৭,০০১ জন। এমনকি ২০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেননি, যা গত বছরের তুলনায় তিন গুণ বেশি।

অন্যদিকে, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী মাত্র ৬৯,০৮৭ জন, যেখানে গত বছর ছিল প্রায় দেড় লাখ। অর্থাৎ, অর্ধেকের বেশি কমেছে সর্বোচ্চ গ্রেডপ্রাপ্তের সংখ্যা। এই পরিসংখ্যান অনেককেই উদ্বেগাকুল করে তুলেছে, কারণ এটি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সংকটকেই যেন তুলে ধরেছে।

কেন এমন ফল? এ নিয়ে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তবে বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির একটি শক্ত কথা বলেছেন। তাঁর মতে, ‘এবারের ফলাফল দরিদ্র নয়, বরং বাস্তবতার প্রতিফলন।’ বিগত বছরগুলোতে কোভিড-পরবর্তী মূল্যায়নপ্রক্রিয়ায় যে ‘সহানুভূতিমূলক মূল্যায়ন’ বা ওভারমার্কিং প্রথা চালু ছিল, এবার তা বন্ধ করা হয়েছে। বোর্ড থেকে পরীক্ষকদের কোনো ‘উদার নির্দেশনা’ দেওয়া হয়নি; বরং কঠোরভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই এবারের ফলে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রস্তুতি ও জ্ঞানের স্তরকে বাস্তবভাবে প্রতিফলিত করেছে।

এই বাস্তবতা নির্মম, তবে নিরর্থক নয়। এটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় জমে থাকা দীর্ঘমেয়াদি গলদেরই যেন প্রকাশ। প্রায় দুই দশক ধরে দেশে ‘পাসের হার’ এবং ‘জিপিএ-৫ প্রাপ্তি’কে শিক্ষার মানের একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা—যেখানে জ্ঞান, যুক্তি এবং প্রয়োগের বিকাশ ঘটে—সেই জায়গাটি আমরা উপেক্ষা করেছি। এবার বিবর্ণ চিত্রটা হঠাৎই বেরিয়ে এসেছে।

এবারের ফলে সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে ব্যাপক ব্যর্থতা। ইংরেজিতে পাসের হার নেমেছে ৭৭ শতাংশ থেকে ৫৮ শতাংশে, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। আইসিটি বিষয়েও একই রকম ধস নেমেছে।

এটি শুধু পরীক্ষার ফল নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর বর্তমান দুনিয়ায় ইংরেজি রপ্ত করতে না পারলে সে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য। আর আইসিটিতে দুর্বলতা মানে প্রতিযোগিতামূলক আধুনিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর অভাব, ইন্টারনেট ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা এবং ডিজিটাল শিক্ষাসামগ্রীর অভাব এই দুই বিষয়ের ফলকে ভয়াবহ করে তুলেছে।

এবারের ফলে আরও একটি উদ্বেগজনক বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠেছে: দেশের ২০২টি প্রতিষ্ঠান থেকে একজনও পাস করেননি। শহরের উন্নত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে ভালো ফল করেছেন, কিন্তু গ্রামীণ অঞ্চলের কলেজগুলো পিছিয়ে। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, ‘যে অঞ্চল যত বেশি গ্রামীণ, শিক্ষক ও শিক্ষাগত সম্পদের ঘাটতি তত স্পষ্ট।’ এই চিত্রটি কেবল শিক্ষা নয়, একটি ন্যায়সংগত সমাজ গঠনের মৌলিক শর্তের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে আমাদের। শহর আর গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ-সুবিধার বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যের কারণে ক্রমেই গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। তারা মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। এতে করে সামাজিক বৈষম্য আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

তবে সব হতাশার মধ্যেও এবারের এইচএসসির ফলে একটি ইতিবাচক দিক রয়েছে—ছাত্রীরা আবারও এগিয়ে। ছাত্রীদের পাসের হার ৬২.৯৭ শতাংশ, ছাত্রদের ৫৪.৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও ছাত্রীরা এগিয়ে—মোট ৩৭ হাজার ৪৪ জন ছাত্রী যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছেন, সেখানে ছেলেরা পেয়েছেন ৩২ হাজার ৫৩ জন। ক্রমবর্ধমান পশ্চাৎপদ রক্ষণশীল চেতনা বিকাশের কালে মেয়েদের ভালো ফল নিঃসন্দেহে একটি আশাপ্রদ দিক। মেয়েরা এখন শিক্ষাকে আত্মনির্ভরতার বিষয় হিসেবে দেখছে। তারা লেখাপড়ায় বেশি মনোযোগী এবং পরিবারের সমর্থনও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। নারীশিক্ষার প্রতি বিনিয়োগের এই ফল সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

তবে এই ফলে আমাদের শিক্ষা নিয়ে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ কথা স্পষ্ট যে সমস্যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নয়, বরং ব্যবস্থার গভীরে। মলম দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না, স্থায়ী নিরাময়ের পথ-পদ্ধতি অন্বেষণ করতে হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি যথার্থই বলেছেন, ‘বাংলাদেশে শেখার সংকট শুরু হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই।’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পড়া, লেখা, বোঝা ও বিশ্লেষণের যে ভিত্তি গড়ে ওঠার কথা, তা অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল থেকে যায়। এখানে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত যদি মজবুত করা না যায়, তাহলে শিক্ষার চিত্র খুব একটা বদলাবে না।

এ ক্ষেত্রে শিক্ষকসংকট নিরসন ও প্রশিক্ষণের অভাব দূর করতে হবে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া কঠিন। প্রশিক্ষণের অভাব, কম বেতন, অনুপ্রেরণার ঘাটতি—সব মিলিয়ে শিক্ষকের মানে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা যায়। এটা নিরসন করতে না পারলে শিক্ষার হাল খুব একটা পাল্টাবে বলে মনে হয় না।

পাঠদানের ধরন ও পাঠ্যক্রমও বাস্তবতার নিরিখে নতুন করে ঢেলে সাজানো উচিত। শিক্ষার্থীরা বই মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখে আসে, কিন্তু তা বাস্তবজীবনে কতটা প্রযোজ্য—সেই ভাবনা কেউ ভাবে না। সমালোচনামূলক চিন্তা, বিশ্লেষণ, সৃজনশীলতা—এই দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিত থাকে। মূল্যায়ন পদ্ধতিও বদলানো দরকার। বছরের পর বছর ধরে মুখস্থনির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা বিকাশের সুযোগ কমে যায়। মূল্যায়ন যথাযথভাবে করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ভালো করছে না। এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে।

ডিজিটাল বৈষম্য দূর করার ব্যাপারেও উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। শহরের শিক্ষার্থী যেখানে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেটসহ আধুনিক শিক্ষাসহায়তা পায়, গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষার্থী এখনো ব্ল্যাকবোর্ড ও নোটবইয়ে সীমাবদ্ধ। এই ব্যবধানই আইসিটির ফলে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত, মানবিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ জন্য প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিকে পাঠ বোঝা, লেখা, ইংরেজি, আইসিটি ও গণিতের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। শিক্ষক উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য পারিশ্রমিক ও প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে শিক্ষকেরা পেশাকে পেশা হিসেবেই নেন—চাকরি হিসেবে নয়।

মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও বৈচিত্র্য আনতে হবে। কেবল লিখিত পরীক্ষার ওপর নির্ভর না করে ধারাবাহিক মূল্যায়ন, প্রজেক্ট ও মৌখিক পরীক্ষার সমন্বয় করতে হবে। গ্রামীণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি ও ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শিক্ষায় নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের শুধু নম্বর নয়, দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা ও সামাজিক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে। মোবাইলের ফোনে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেশায় আসক্ত শিক্ষার্থীরা যেন লেখাপড়া থেকে দূরে সরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

সরকার গণ্ডায় গণ্ডায় কমিশন করেছে জাতিকে সংস্কারের দিশা দিতে। শিক্ষা বাদে বাকি প্রায় সব বিষয়েই কমিশনগুলো মাতিয়ে রেখেছে জাতিকে। কমিশন তৈরি করে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ তৈরির চেষ্টাও বাদ যায়নি, বরং সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ ছিল এই কমিশন। তারা দিনের পর দিন সভা করেছে যে কীভাবে ‘এক বা একাধিক দলকে বাদ দিয়ে’ জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা যায়! তারা এই আলোচনার অনুপ্রেরণা পেয়েছে ‘সাম্য আর অন্তর্ভুক্তিমূলক’ রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের এক ইউটোপিয়ান অভিপ্রায় থেকে। যদিও তাতে কাজের কাজ কতটুকু কী হয়েছে বা হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে এই ডামাডোল ও কসরতের মধ্যে দেশের শিক্ষা যেন অনেকটাই খেই হারিয়ে ফেলেছে। এইচএসসির ফলে যেন তারই একটি সতর্কসংকেত।

যদি এই ফলকে আমরা আত্মসমালোচনার সূচনা হিসেবে গ্রহণ করি, তবে এটি হবে এক নতুন যাত্রার শুরু। আজ যাঁরা ফেল করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আগামী দিনে সমাজের সফলতম মানুষ হয়ে উঠবেন—যদি আমরা তাঁদের জন্য সঠিক পরিবেশ, শিক্ষক ও সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমরা কি শিক্ষা ছাড়াই সবকিছু বদলে দিতে চাই

আব্দুর রাজ্জাক 
গত বছরের আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা। ফাইল ছবি
গত বছরের আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা। ফাইল ছবি

আমাদের দেশের শিক্ষার মান নিয়ে অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কয়েক ভাগে বিভক্ত। বেশির ভাগ মানুষ আমাদের চিরাচরিত পদ্ধতি অর্থাৎ স্কুল-কলেজে বাংলাদেশের শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রণীত সিলেবাসের ওপর আস্থা রাখে। তারপরে আছে মাদ্রাসা কারিকুলাম—মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিয়া মাদ্রাসা কর্তৃক প্রণীত সিলেবাস অনুসারে এখানে শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে। আছে কওমি মাদ্রাসা—এখানে সাধারণ মানের শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে তাদের পদ্ধতি আলাদা। এখানে হাদিস-কোরআন-আরবি শিক্ষাই বেশি দেওয়া হয়। সবশেষ হলো ইংরেজি মাধ্যম—এখানে ব্রিটিশ কারিকুলাম, আমেরিকান অথবা কানাডিয়ান কারিকুলাম অনুসারে শিক্ষাপদ্ধতি প্রচলিত আছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ শিক্ষাপদ্ধতি। সাধারণ মানুষ এই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।

মূল কথায় আসি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা সবকিছু বদলে দিতে চাই। বদলে দিতে পারি বা না-ই পারি, মুখে মুখে অন্তত বদলে দিতে চাই, বিপ্লব ঘটাতে চাই, আমূল পরিবর্তন করব—এই রকম হাঁকডাক দিয়েই যাচ্ছি সবাই মিলে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অনেকগুলো কমিটি করা হয়েছে। একটি কমিটির বাস্তব রূপ দেখলাম গত শুক্রবার—সংবিধান সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অবশ্য আমার লেখার উপজীব্য এটা নিয়ে নয়। আরও অনেক কমিশন যে হয়েছে, আমরা সবকিছু বদলে দিতে চাই বলে, সেগুলোর অবস্থা কী—আমিসহ বোধ হয় কেউই এ সম্পর্কে ভালো কিছু ধারণা রাখেন না। যাই হোক, আমাদের সদিচ্ছা থাকলে সবকিছু বদলাবে। প্রশ্ন হলো, সবকিছু যে বদলাবে, সেটা কি ভালোর দিকে যাবে, উন্নতির দিকে যাবে, না নিম্নমুখী হবে? মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। আশা করি ভালোর দিকেই যাবে।

আমরা সবকিছুকে কেমন করে পরিবর্তন করব যেখানে শিক্ষাকেই গুরুত্ব দিতে পারছি না? গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছিল সাত বিষয়ে, অন্য পরীক্ষা হয়নি। আমাদের দেশের বিপ্লবী ছাত্ররা অর্থাৎ এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও করে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছ থেকে অটোপাসের আংশিক সনদ নিয়ে এসেছিলেন। যাই হোক, সেই আংশিক অটোপাস দিয়ে তাঁরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি হয়েছিলেন; আলোচনা হয়েছিল বিভিন্ন কলেজে বেশ কিছু আসন খালি ছিল। এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় যদিও অটোপাস পদ্ধতি ছিল না; যথানিয়মে পরীক্ষা হয়েছে, ফল দেখা গেল গড়ে ৫৮ শতাংশ পাস, বাকি ৪২ শতাংশ ফেল। মুক্ত পরিবেশে যখন সবকিছু পরিবর্তন হচ্ছে, আমরা মনে করেছিলাম সবকিছু ভালোর দিকে পরিবর্তন হবে, এ বছর পাসের হার আরও বেশি হবে। ফল হলো উল্টোটা।

এমনিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আমাদের কারিকুলামে যেসব বিষয়ে পড়ানো হয়, পশ্চিমা দেশে এতসব বিষয়ে না পড়িয়ে দরকারি বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। আমরা সেই পদ্ধতিতে এখনো যেতে পারিনি। তারপরও যদি পাসের হার এমন হয়, তাহলে বোঝা যাচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কোথায় যাচ্ছে। আমরা শুধু কথায় বলি, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। এখন প্রশ্ন ওঠে, এই মেরুদণ্ড কি ভেঙে যাচ্ছে, না ধীরে ধীরে নুয়ে পড়ছে।

এ দেশের তরুণ ছাত্ররা গত বছর আন্দোলন করল। তাদের দাবি ছিল বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা, কোনো কোটা চায় না তারা, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে ও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সঙ্গে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা তেমনভাবে লক্ষ করিনি, উল্লিখিত ব্যক্তিরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ছাত্রদের প্রতি ক্লাসে ফিরে গিয়ে মন দিয়ে পড়াশোনা করার আহ্বান জানিয়েছেন এই বলে যে এ দেশ গড়তে হলে সুশিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিক দরকার। এককথায় বলতে গেলে বাস্তবমুখী শিক্ষা দরকার। মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টারও তেমন কোনো কথা শোনা যায় না।

কিছুদিন আগে আমি একটি জেলা শহরে গিয়েছিলাম, এখানে একটি সরকারি কলেজে অনার্স আছে। কোনো একটি বিভাগের চেয়ারম্যান আমার বন্ধু। আমি যথারীতি তাঁর রুমে ঢোকার পরে দেখলাম পাঁচজন ছাত্র বসে আছেন তাঁর সামনে। আমার বন্ধু খুবই বিনয়ের সঙ্গে একেবারে মোলায়েম ভাষায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলছেন, চা-বিস্কুট খাওয়াচ্ছেন। বন্ধু তাঁদের প্রতি খেয়াল রাখার আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু ছাত্রদের মুখ থেকে একবারও শুনলাম না সুশিক্ষা পাওয়ার আবেদন করতে। এই পাঁচজন ছাত্র বের হয়ে যাওয়ার পরে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম তাঁরা কারা। বন্ধু একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললেন, এরা বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা। এরা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যায়, কথাবার্তা বলে তাদের দলে টানার চেষ্টা করে, ভবিষ্যতে এখানে তারা নির্বাচন করবে, ছাত্রসংগঠন নির্বাচন, সেই ব্যাপারে তারা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বললাম, তারা তো লেখাপড়ার ব্যাপারে কোনো কথা বলল না। বন্ধুর উত্তর, ‘আর বলিস না, এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে থাকতে হয়। একটু পান থেকে চুন খসলেই কী ট্যাগ লাগিয়ে স্লোগান আরম্ভ করবে, সেই ভয়ে আছি।’

রাজনৈতিক সংগঠন, ছাত্রসংগঠন—কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিবৃতি দিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে নির্দেশ দিল না যে, তোমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কোনো রকম তর্কে জড়াবে না, তাঁদের অপমান করবে না, তাঁদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে, শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করবে ইত্যাদি। এই ধরনের নীতিবাক্য কোনো সংগঠনের পক্ষে এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। শিক্ষকেরা ভয়ে থাকেন, ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো হুমকি পান কি না। আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, গত শতকের সত্তর-আশির দশকের দিকে, তখন চিত্র ছিল উল্টো।

আমার আরেক বন্ধু, পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তাঁর সঙ্গে কথা বললে তিনি বললেন, এখন আর প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস মন দিয়ে ছাত্ররা ফলো করে না। ছাত্ররা জানে প্র্যাকটিক্যালে শিক্ষকেরাই সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে দেবেন, তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। মফস্বল স্কুলের হেডমাস্টারসহ সবাই মাথা নিচু করে স্কুলে যান, পাঠদান শেষে শিক্ষকদের সাহস হয় না ছাত্রদের কাছে জিজ্ঞেস করার, ‘তোমরা পড়াশোনা করেছ? হোমওয়ার্ক করে এসেছ?’ তাদের কাছে প্রশ্ন করতেও শিক্ষকেরা এখন কুণ্ঠাবোধ করেন। সবকিছুর ফল আমরা দেখলাম এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায়।

এ বছর বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা আন্দোলনে। সামনে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পরীক্ষা, এই সময় শিক্ষকেরা ক্লাসে অনুপস্থিত। জানি না আগামী বছর এসএসসির ফল কী হবে। এসএসসির ফল খারাপ হলে, সঠিক শিক্ষা না পেলে, সেই প্রভাব এইচএসসিতে পড়বেই, এ কথা হলফ করে বলতে পারি।

আমি গত সপ্তাহে মফস্বলে গিয়েছিলাম। আমার স্কুলজীবনের একমাত্র জীবিত শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করলাম। স্যার আমাকে বললেন, ‘তুই আজকে একটু পাবলিক লাইব্রেরির দিকে যাস, বিকেলে দেখবি খা খা পড়ে আছে লাইব্রেরির সব চেয়ার-টেবিল, বইগুলো আলমারিতে সাজানো। সবকিছুই আছে, লাইব্রেরিয়ান আছে, সঙ্গে দুজন সহকারীও, শুধু নেই পাঠক।’

স্যারের কথামতো লাইব্রেরিতে গেলাম। হায়রে আমাদের অভাগা জাতি, সবকিছুই পরিবর্তন করতে চাও তোমরা। শুধু শিক্ষার প্রতি তোমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই, আগ্রহ নেই। সবকিছু বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, বর্তমান তরুণসমাজের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কেন কম, এ ব্যাপারে একটি গবেষণা হওয়া দরকার। তরুণ শিক্ষার্থীরা কি ধরে নিয়েছেন কষ্ট করে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ভালো কোনো কাজ পাওয়া যায় না, ভালো কোনো ফল পাওয়া যায় না? আর আন্দোলন-সংগ্রাম-লড়াই করে রাজনৈতিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়? যেসব কাজ করলে তাড়াতাড়ি বড়লোক হওয়া যায়, রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি করা যায়, এদিকে কি তাঁদের মনোযোগ বেশি? অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ নেই তাঁদের। এই তরুণ ছাত্র-ছাত্রীরা চোখের সামনে দেখছেন, কীভাবে হঠাৎ করে ছাত্ররা অনেক ক্ষমতা হাতে পেয়ে গেল, রাতারাতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেল। এইসব দেখেই হয়তো তাঁদের মাথা বিগড়ে যেতে পারে। সঠিকভাবে মোটিভেশন করে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনা দরকার তাঁদের।

লেখক: প্রকৌশলী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সততা

সম্পাদকীয়
সততা

বেশ কিছুদিন আগে এক ভিক্ষুকের মৃত্যুর পর তাঁর ঘর থেকে টাকার বস্তা পাওয়া যায়। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের দলগাঁও গ্রামের সত্তর বছর বয়সী সেই ভিক্ষুকের নাম নাসির মিয়া। এলাকাবাসী তাঁকে জানতেন সৎ, সরল, মিতব্যয়ী ও নিরহংকারী হিসেবে। ৯ অক্টোবর মৃত্যুর পর তাঁর ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে পাওয়া যায় টাকার বস্তা।

সেই বস্তায় অল্প অল্প করে বছরের পর বছর ভিক্ষা ও অনুদানের ২ লাখ ২৪ হাজার টাকা তিনি জমিয়েছিলেন। এখন তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই টাকার মালিক।

সিরাজগঞ্জ শহরের কওমি জুটমিলের শ্রমিকদের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের একটি বারান্দার কোণে থাকেন সালেহা বেগম।

তাঁকে সবাই চেনে ‘সালেহা পাগলি’ নামে। তিনিও ভিক্ষা করে টাকা জমিয়েছেন। তাঁর কাছে ৯ অক্টোবর ২ বস্তা ও ১১ অক্টোবর আরও এক বস্তা টাকার সন্ধান পায় স্থানীয়রা। তিন বস্তা থেকে মোট ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯ টাকা পাওয়া যায়। সালেহা এখন অসুস্থ। এই টাকা দিয়েই হবে তাঁর চিকিৎসা। একমাত্র মেয়ে শাপলা বেগম করছেন সেই তদারকি।

নাসির মিয়া কিংবা সালেহা বেগম কেন ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছেন, তা আজকের সম্পাদকীয়র মূল বিষয় নয়। বরং তাঁরা যে সততার পরিচয় দিয়েছেন, অধম পন্থায় টাকা উপার্জনের সিদ্ধান্ত নেননি এবং মিতব্যয়ীর পরিচয় দিয়েছেন, তা দৃষ্টান্তমূলক বলেই গণ্য করা যায়।

বার্ধক্য বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে যাঁরা ভিক্ষা করতে বাধ্য হন, তাঁরা কোনো অসৎ পথ অবলম্বন করে কিংবা চুরি-ডাকাতি অথবা লোক ঠকিয়েও অনেক বেশি উপার্জন করতে পারেন। কিন্তু নাসির-সালেহার মতো মানুষেরা সেই পথে পা বাড়াননি। তাঁদের সরল মনে অপরাধ কিংবা ছল-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার কথা কখনো আসেনি। অভাবে থাকলেও স্বভাব নষ্ট না হওয়ার ব্যতিক্রম উদাহরণ হতে পারেন তাঁরা।

অথচ লাখ-কোটি টাকা কামানোর পরেও অনেকের লোভী মন আরও চায়। সমাজের উঁচু স্তরেও এসব মানুষের বাস। ছিঁচকে চোরেরা হয়তো রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে পাওয়া যায় রাঘববোয়ালের মতো দুর্নীতিবাজদের। অনেক সময়ই খবরের শিরোনাম হন বদমাশদের শিরোমণিরা। তারা চাঁদাবাজি করে হাত পাকায়। ভিক্ষুকদের হাত পাতা আর তাদের হাত পাতার মধ্যে থাকে বিস্তর ফারাক। সততার মতো শব্দ তাদের অভিধানে নেই। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মরিয়া এসব মানুষ ঘৃণ্য অপরাধ করতেও পিছপা হয় না।

তারা কখনো নাসির মিয়া অথবা সালেয়া বেগমের কাছ থেকে সততা শিখবে না। তবে জীবনে ‘কী পেলাম আর কী পেলাম না’ ভাবা মানুষেরা অন্তত ভেবে দেখতে পারেন এই ভিক্ষুকেরা তাঁদের সততা বজায় রেখে ভুল পথে পা বাড়াননি। তাঁরা হয়তো কখনো জীবন নিয়ে হতাশ হননি। বরং নিজের মতো করে যা আর যতটুকু পেয়েছেন, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থেকেছেন।

যখন দুর্নীতি আর অসততার খবরগুলো বেশি চোখে পড়ে, তখন কেউ ভাবতে পারেন, সমাজে এই ধরনের মানুষের সংখ্যা হয়তো বেশি। তাহলে এই দুই ভিক্ষুকের মতো বাকিরা কি ‘অ্যালিয়েন’ বলে বিবেচিত হবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ম্যাগনাকার্টা নাকি ঘুমপাড়ানি গান

তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে সেটি বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা মহান সনদ হিসেবে ঠাঁই পেত ইতিহাসে। ম্যাগনাকার্টা হলো ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক সনদ, যা ১২১৫ সালের ১৫ জুন রাজা জন তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের চাপের মুখে সই করেছিলেন।

আজাদুর রহমান চন্দন
জুলাই সনদ দেশকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করেন প্রধান উপদেষ্টা।	ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
জুলাই সনদ দেশকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশা করেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদ সই করা হয়েছে। ১৭ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। যদিও অনুষ্ঠানস্থলে সনদে সই করেন ২৪টি দলের প্রতিনিধিরা। প্রতিটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি তাতে সই করেন। দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে অর্ধশতাধিক। নিবন্ধনবিহীন দলের সংখ্যা আরও বেশি। নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন বেশির ভাগ দলই জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় ৫০ শতাংশ দলকে (নিবন্ধিত) বাইরে রেখে সই হওয়া এই সনদ কতটা ‘জাতীয়’ সে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেননি সনদের অঙ্গীকারনামায় বাস্তবায়ন পদ্ধতির উল্লেখ না থাকাসহ তিন কারণে। এ ছাড়া বামপন্থী চারটি রাজনৈতিক দল—বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ অংশ নেয়নি। গণফোরাম অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও সনদে সই করেনি। গণফোরাম নেতাদের দাবি, তাঁরা যে খসড়া দলিল পেয়েছিলেন, তাতে সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করা এবং পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল না রাখার কথা ছিল। তাঁরা বলেছিলেন, এটা সংশোধন করা হলে তাঁরা সনদে সই করবেন। কমিশন তাঁদের আশ্বস্ত করেছিল যে এটা সংশোধন হবে। কিন্তু অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত কপি তাঁরা পাননি। এ জন্য তাঁরা সই করা থেকে বিরত ছিলেন। চূড়ান্ত কপি পর্যালোচনা করার পর রোববার গণফোরাম সনদে সই করেছে।

শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেসব বিষয়ে ঐক্য হবে, তার ভিত্তিতেই তৈরি করা হবে সনদ। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, শুধু সেগুলোই ঐকমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আরোপ করা সব বিষয়কে জাতীয় সনদ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এমনকি কোনো কোনো বিষয় শেষ মুহূর্তে দলিলে ঢুকিয়ে দেয় কমিশন। সর্বসম্মত বিষয় ছাড়াও নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দেওয়া প্রস্তাবগুলো সনদে যুক্ত করা হয়েছে। অনেক দলের নোট অব ডিসেন্টগুলোর কারণও যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।

স্বাভাবিক কারণেই অনুষ্ঠানের আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সিপিবিসহ বামপন্থী চারটি দলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছিল, সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ (স্বাধীনতার ঘোষণা) এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রোক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ (স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। এই দলগুলোর আপত্তির পর সনদে খানিকটা পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে সংবিধান থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ পড়ছে না।

প্রায় আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৪ অক্টোবর সনদের অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছিল, বিদ্যমান সংবিধানের ক্রান্তিকালীন ও অস্থায়ী বিধানাবলি-সংক্রান্ত ১৫০ (২) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। এই সিদ্ধান্তে ৯টি দল একমত ছিল না। এরপর জুলাই সনদের এই জায়গায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। চূড়ান্ত সনদে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০ (২) সংশোধন করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট পঞ্চম ও ষষ্ঠ তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। সংবিধানে ১৫০ (২) অনুচ্ছেদের তফসিল পরিবর্তন ছাড়াও বিদ্যমান চার মূলনীতি—গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ বদলে ফেলা হয়েছে। এসব পরিবর্তন নিয়ে আদালতে প্রশ্ন না তোলার অঙ্গীকার রাখা হয়েছে।

সংবিধানের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল যুক্ত করা হয়েছিল ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে। পঞ্চম তফসিলে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ। ষষ্ঠ তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ‘২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে’ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা। আর সপ্তম তফসিলে আছে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। অর্থাৎ জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধানে সংস্কার হলে তাতে সংবিধানের তফসিলে ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে না। তবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থাকবে। সংগত কারণেই এই সনদের বিষয়ে অসন্তুষ্ট মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আস্থাশীল অনেক নাগরিক। একাত্তরের একটি বিশেষ গেরিলা বাহিনীর এক সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘জুলাই সনদ জাতীয় সনদ নয়, লাখো শহীদের আত্মদানে অর্জিত ’৭২-এর সংবিধানের মৃত্যু সনদ।’

এ দেশের জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতারণা এক বড় নজির নব্বইয়ে প্রণীত ‘তিন জোটের রূপরেখা’র বাস্তবায়ন না হওয়া। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের ঐকমত্য দেখা দিয়েছিল নব্বইয়ে। এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে দলগুলো এককাট্টা হয়ে ১৯৯০ সালে তিন জোট একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল। রূপরেখায় মূল বিষয়গুলো ছিল—হত্যা, ক্যু, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের ধারা থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশে পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা; একটি অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সার্বভৌম জাতীয় সংসদ গঠনের ব্যবস্থা করা; রাষ্ট্রীয় সব প্রচারমাধ্যমকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিণত করা; অসাংবিধানিক কোনো পথে ক্ষমতা দখল প্রতিরোধ করা; জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা; মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী সব আইন বাতিল করা; ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা ও অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকা, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় না দেওয়া এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করা। প্রধান দুই দলের দুই নেত্রী ওই সনদে সই না করায় প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা মাঠে মারা যায়। ফিরে আসে সাংঘর্ষিক রাজনীতির ধারা।

তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়িত হলে সেটি বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা মহান সনদ হিসেবে ঠাঁই পেত ইতিহাসে। ম্যাগনাকার্টা হলো ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক সনদ, যা ১২১৫ সালের ১৫ জুন রাজা জন তাঁর বিদ্রোহী ব্যারনদের চাপের মুখে সই করেছিলেন। এই মহান সনদটি ইংল্যান্ডের অলিখিত সংবিধানের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নব্বইয়ের পর এবারই প্রথম অনানুষ্ঠানিক ঐক্য গড়ে ওঠে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। একটি মহল শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মনোভাব ও সাতচল্লিশের চেতনা প্রতিষ্ঠার পণ নিয়ে তৎপর না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাংলাদেশের ‘ম্যাগনাকার্টা’র মর্যাদা পেতে পারত।

গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান-পরবর্তী সময়ে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বেশ কিছু কমিশন গঠন করে, যার অন্যতম সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই কমিশনের প্রধান হিসেবে প্রথমে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী রীয়াজকে। অথচ তাঁকে ঘিরে শুরু থেকেই ব্যাপক সমালোচনা ছিল। পরবর্তী সময়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতিও করা হয় আলী রীয়াজকে। প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হলেও আলী রীয়াজকেই সনদ প্রণয়নের মূল কাজটিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাঁর নানা মন্তব্য বিভিন্ন সময়ে বিতর্কের সৃষ্টি করে। শেষ দিকেও দেখা গেছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোরতর আপত্তি ও নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া বিষয়েও সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়, সব বিষয়ে সব দল একমত। এ নিয়ে সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ৬ অক্টোবর ফেসবুকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘খবরে শুনছি সব দল একমত! কয় দল হলে সব দল হয়? সব দল বললেই সব দল হয়ে যায়? ঐকমত্য কমিশনের এই ভুল বয়ান আর কত দিন শুনব?’

জুলাই জাতীয় সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সই করাকে ‘নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ হিসেবে অভিহিত করেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি আশা করেন, যে ঐক্যে জুলাই সনদে সই হলো, এই সুরই দেশকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। এই সুরকে বিএনপির জন্য ঘুমপাড়ানি গানের সুর হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। মনে করা হচ্ছে, অনেক বিষয়ে ঘোরতর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিএনপি ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আশায় মোহিত হয়ে সনদে সই করেছে। নির্বাচনটা যথাসময়ে হলে তা-ও কিছুটা রক্ষা হতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মাদ্রাসাছাত্রীকে তুলে রেস্তোরাঁয় নিয়ে ধর্ষণ, আড়াল করতে সাউন্ডবক্সে চলে গান

পর্নো সাইটে বাংলাদেশি যুগলের ১১২ ভিডিও, র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম: সিআইডি

৯ সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল সরকার

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান

জুবায়েদ হত্যায় ‎সন্দেহভাজন ছেলেকে যে কারণে থানায় দেন মা, জানালেন স্বজনেরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত