
ড. তাসনিম সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর মূল গবেষণা আন্তর্জাতিক অভিবাসন নিয়ে। ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট’-এর তিনি প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। অন্তর্বর্তী সরকারের ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্য তিনি। রাষ্ট্র সংস্কার ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের কিছু লক্ষ্য ছিল, সেগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পথে অন্তরায়গুলো কী?
জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের। সরকার পতনের পর অন্তত তিন দিন বাংলাদেশ ছিল সরকারবিহীন। অথচ তেমন কোনো বিশাল অঘটন কিন্তু ঘটেনি। বরং ছাত্র-জনতা চেষ্টা করেছে বিভিন্ন শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এবং ট্রাফিক সিস্টেম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। সবাই চাইছিল সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারের ছিল না কোনো পূর্ব প্রস্তুতি। ফলে তাকে গঠন করতে হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার কমিটি। এই কমিটিগুলো তাদের কাজ শেষ করলে সরকার দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবে তা বাস্তবায়নে। কয়েক মাসে এই সরকারকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিচার বিভাগের অ্যাপিলেট ডিভিশন, আনসার বাহিনী ও আমলাতন্ত্র থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নমত। সবশেষ বিপত্তিটি এসেছে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে ঘিরে। সে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর দ্রুত মোকাবিলা কোনো অবস্থায়ই সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের কথা উঠেছে। একটা সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার আর একটা নিজ নিজ দলের সংস্কারের বিষয়। সেটা কীভাবে সম্ভব?
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার জন্য চাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন গঠনতন্ত্র। বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেভাবে সন্নিবেশিত হয়নি। তাদের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সদস্যদের অধিকার নিয়ে কোনো অংশ নেই। বার্ষিক সম্মেলন, তার পরিচালনা পদ্ধতি এবং মাঠপর্যায় থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার নিয়মনীতি কিছুই সেখানে সেভাবে বিধৃত নেই। এই দলগুলোতে ইলেকশনের মাধ্যমে দলীয় নেতা নির্বাচন, কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন কখনোই দেখা যায় না। ক্ষমতার বিভাজন নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান এবং সংসদপ্রধান আলাদা আলাদা ব্যক্তি হয়ে থাকেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এ ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যে কারণে একই ব্যক্তি দলে এবং সংসদে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিতে থাকেন। দলের ভেতরে এবং ইলেকশনে প্রার্থী মনোনয়নের কোনো বিধান নেই। ইলেকশন ম্যানিফেস্টো তৈরিতে ও সাধারণ সদস্যদের মতামত প্রতিফলনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় সংস্কার প্রয়োজন দল ব্যবস্থাপনায়।
বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয় না। আমলাতন্ত্রের সংস্কারের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
গত তিনবার আওয়ামী সরকার ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকেনি। সে নির্ভর করেছে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং তার পেটোয়া ছাত্র-ক্যাডার বাহিনীর ওপরে। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ওপরের ধাপগুলোতে দলীয় রাজনীতি, নিপীড়ন এবং দুর্নীতি এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে তাদের সম্পূর্ণ সংস্কার ব্যতিরেকে একটি বৈষম্যহীন ইনক্লুসিভ, বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আগের স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বাদ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে স্থান করে দিয়েছে যারা আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। জনগণের চাহিদা কিন্তু ভিন্ন। জনগণ চায় নতুন প্রজন্মের দলনিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র, যারা কোনো দলের প্রতি অনুগত নয়।
দেশে ছয়টি সেক্টরের সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে আপনার কোনো ভাবনা আছে কি?
এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের পরে নারীবিষয়ক আরও একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি তো রয়েছেই। এই কমিশনগুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, সবাই অত্যন্ত যোগ্য। আন্তর্জাতিক শ্রম-অভিবাসন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আমি দুঃখিত যে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো কমিশন গঠন করেনি। আমরা জাতি হিসেবে খুব আবেগপ্রবণ। যেকোনো বিষয়ে দ্রুত সমর্থন ব্যক্ত করি। আবার দ্রুতই তা প্রত্যাহার করি। এই আচরণবিধি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের এই সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। বিভিন্ন রকম দাবি-দাওয়া তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা থেকেও বিরত হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশে কয়েকবার ঘটে গেছে ভয়াবহ বন্যা।
আমার মনে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু নিয়োগ খুব দ্রুততার সঙ্গে দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলোতে সার্চ কমিটি করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভিসি-প্রোভিসি ইত্যাদি পদে নিয়োগ দিলে আমরা দলীয় রঙের বাইরে গবেষণা এবং শিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক রেটিং বাড়াতে পারতাম।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলছেন বলে অভিযোগ আছে। আপনি কী বলবেন?
আমাদের ছাত্র-জনতা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তারা দেখেছে ব্যাপক নৃশংসতা। তাদের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তাদের ভাই-বন্ধুরা। ঘটনার বীভৎসতা তাদের এখনো গ্রাস করে রেখেছে। তাদের মধ্যে এখনো ট্রমা কাজ করছে। এই ট্রমার কারণে যে তারা সব সময় বাস্তববাদী কথা বলবে, এটা আমরা আশা করতে পারি না। বরং আমি মনে করি, এদের ট্রমা কাটানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। যেসব পরিবার তাদের সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে, তাদেরও ট্রমা ম্যানেজমেন্টের মধ্যে আনা দরকার। এ ধরনের কাজ হলে ছাত্র এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অস্থিরতা কমে আসবে।
কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, এখন ইসলামি শক্তির আধিপত্য বিরাজ করছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এই সরকারের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কেউই তো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক নন। কিন্তু গত সরকার দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি দমনের নামে স্বাধীনতার চেতনাসংক্রান্ত বয়ানকে এবং রাজাকার ট্যাগকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণকে সীমিত রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী দলটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে এবং শেষ পর্যায়ে এসে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন এই দলটি সহানুভূতি পাচ্ছে। তবে আমি এখনো মনে করি যে পপুলার ভোটে ৫ শতাংশের বেশি ভোট জামায়াতে ইসলামী দলটির সঙ্গে নেই।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে নানা মতও আছে। কীভাবে সেটা সম্ভব?
সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে আমি যে বিষয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইলেকশনের জন্য কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ফিরিয়ে আনা। প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণে দলের নেতৃত্ব, সংসদের নেতৃত্ব অন্যের হাতে প্রদান করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা। একটি কক্ষে পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল করে ৩৩ শতাংশ সিটে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা। পার্লামেন্টে গণশুনানির ব্যবস্থা রাখা, শ্যাডো-ক্যাবিনেট প্রতিষ্ঠা করা। সর্বোপরি এক ব্যক্তি যাতে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এসবই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্ভব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের কিছু লক্ষ্য ছিল, সেগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার পথে অন্তরায়গুলো কী?
জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের। সরকার পতনের পর অন্তত তিন দিন বাংলাদেশ ছিল সরকারবিহীন। অথচ তেমন কোনো বিশাল অঘটন কিন্তু ঘটেনি। বরং ছাত্র-জনতা চেষ্টা করেছে বিভিন্ন শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে এবং ট্রাফিক সিস্টেম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে। সবাই চাইছিল সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারের ছিল না কোনো পূর্ব প্রস্তুতি। ফলে তাকে গঠন করতে হয়েছে বিভিন্ন সংস্কার কমিটি। এই কমিটিগুলো তাদের কাজ শেষ করলে সরকার দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারবে তা বাস্তবায়নে। কয়েক মাসে এই সরকারকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বিচার বিভাগের অ্যাপিলেট ডিভিশন, আনসার বাহিনী ও আমলাতন্ত্র থেকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সংবিধান সংস্কার না পুনর্লিখন এ নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে ভিন্নমত। সবশেষ বিপত্তিটি এসেছে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে ঘিরে। সে ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলোর দ্রুত মোকাবিলা কোনো অবস্থায়ই সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।
বাংলাদেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের কথা উঠেছে। একটা সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার আর একটা নিজ নিজ দলের সংস্কারের বিষয়। সেটা কীভাবে সম্ভব?
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার জন্য চাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন গঠনতন্ত্র। বাংলাদেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের সংবিধানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেভাবে সন্নিবেশিত হয়নি। তাদের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সদস্যদের অধিকার নিয়ে কোনো অংশ নেই। বার্ষিক সম্মেলন, তার পরিচালনা পদ্ধতি এবং মাঠপর্যায় থেকে নেতৃত্ব তুলে আনার নিয়মনীতি কিছুই সেখানে সেভাবে বিধৃত নেই। এই দলগুলোতে ইলেকশনের মাধ্যমে দলীয় নেতা নির্বাচন, কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন কখনোই দেখা যায় না। ক্ষমতার বিভাজন নিশ্চিত করতে উন্নত বিশ্বে দলের প্রধান, সরকারপ্রধান এবং সংসদপ্রধান আলাদা আলাদা ব্যক্তি হয়ে থাকেন। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এ ধরনের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। যে কারণে একই ব্যক্তি দলে এবং সংসদে আমৃত্যু নেতৃত্ব দিতে থাকেন। দলের ভেতরে এবং ইলেকশনে প্রার্থী মনোনয়নের কোনো বিধান নেই। ইলেকশন ম্যানিফেস্টো তৈরিতে ও সাধারণ সদস্যদের মতামত প্রতিফলনের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমার মনে হয়, সবচেয়ে বড় সংস্কার প্রয়োজন দল ব্যবস্থাপনায়।
বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হলেও আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন হয় না। আমলাতন্ত্রের সংস্কারের ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
গত তিনবার আওয়ামী সরকার ইলেকশনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় থাকেনি। সে নির্ভর করেছে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং তার পেটোয়া ছাত্র-ক্যাডার বাহিনীর ওপরে। সামরিক এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রের ওপরের ধাপগুলোতে দলীয় রাজনীতি, নিপীড়ন এবং দুর্নীতি এমনভাবে জড়িয়ে ছিল যে তাদের সম্পূর্ণ সংস্কার ব্যতিরেকে একটি বৈষম্যহীন ইনক্লুসিভ, বহুমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব হাতে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার আগের স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বাদ দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে স্থান করে দিয়েছে যারা আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সরকারের প্রতি অনুগত ছিল। জনগণের চাহিদা কিন্তু ভিন্ন। জনগণ চায় নতুন প্রজন্মের দলনিরপেক্ষ আমলাতন্ত্র, যারা কোনো দলের প্রতি অনুগত নয়।
দেশে ছয়টি সেক্টরের সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ নিয়ে আপনার কোনো ভাবনা আছে কি?
এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের পরে নারীবিষয়ক আরও একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটি তো রয়েছেই। এই কমিশনগুলোতে যাঁরা কাজ করছেন, সবাই অত্যন্ত যোগ্য। আন্তর্জাতিক শ্রম-অভিবাসন বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। আমি দুঃখিত যে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো কমিশন গঠন করেনি। আমরা জাতি হিসেবে খুব আবেগপ্রবণ। যেকোনো বিষয়ে দ্রুত সমর্থন ব্যক্ত করি। আবার দ্রুতই তা প্রত্যাহার করি। এই আচরণবিধি থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের এই সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে। বিভিন্ন রকম দাবি-দাওয়া তুলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা থেকেও বিরত হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই দেশে কয়েকবার ঘটে গেছে ভয়াবহ বন্যা।
আমার মনে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু নিয়োগ খুব দ্রুততার সঙ্গে দিয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলোতে সার্চ কমিটি করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভিসি-প্রোভিসি ইত্যাদি পদে নিয়োগ দিলে আমরা দলীয় রঙের বাইরে গবেষণা এবং শিক্ষার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক রেটিং বাড়াতে পারতাম।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের মধ্যে কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলছেন বলে অভিযোগ আছে। আপনি কী বলবেন?
আমাদের ছাত্র-জনতা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় তারা দেখেছে ব্যাপক নৃশংসতা। তাদের চোখের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে তাদের ভাই-বন্ধুরা। ঘটনার বীভৎসতা তাদের এখনো গ্রাস করে রেখেছে। তাদের মধ্যে এখনো ট্রমা কাজ করছে। এই ট্রমার কারণে যে তারা সব সময় বাস্তববাদী কথা বলবে, এটা আমরা আশা করতে পারি না। বরং আমি মনে করি, এদের ট্রমা কাটানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। যেসব পরিবার তাদের সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে, তাদেরও ট্রমা ম্যানেজমেন্টের মধ্যে আনা দরকার। এ ধরনের কাজ হলে ছাত্র এবং ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অস্থিরতা কমে আসবে।
কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, এখন ইসলামি শক্তির আধিপত্য বিরাজ করছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এই সরকারের মধ্যে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরা কেউই তো ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক নন। কিন্তু গত সরকার দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি দমনের নামে স্বাধীনতার চেতনাসংক্রান্ত বয়ানকে এবং রাজাকার ট্যাগকে ব্যবহার করে ধর্মীয় মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণকে সীমিত রেখেছে। জামায়াতে ইসলামী দলটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করেছে এবং শেষ পর্যায়ে এসে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এখন এই দলটি সহানুভূতি পাচ্ছে। তবে আমি এখনো মনে করি যে পপুলার ভোটে ৫ শতাংশের বেশি ভোট জামায়াতে ইসলামী দলটির সঙ্গে নেই।
সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ নিয়ে নানা মতও আছে। কীভাবে সেটা সম্ভব?
সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে আমি যে বিষয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইলেকশনের জন্য কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ফিরিয়ে আনা। প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণে দলের নেতৃত্ব, সংসদের নেতৃত্ব অন্যের হাতে প্রদান করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা। একটি কক্ষে পেশাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা। সংরক্ষিত নারী আসন বাতিল করে ৩৩ শতাংশ সিটে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন বাধ্যতামূলক করা। পার্লামেন্টে গণশুনানির ব্যবস্থা রাখা, শ্যাডো-ক্যাবিনেট প্রতিষ্ঠা করা। সর্বোপরি এক ব্যক্তি যাতে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন তা নিশ্চিত করা। এসবই সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সম্ভব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায় হলো অদৃশ্য বার্ধক্যের যাত্রা। কিন্তু সবাই বার্ধক্যের জীবনে সমান মর্যাদা পায় না। সমাজের প্রান্তিক এক শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যখন তাঁরা শেষ বয়সে পৌঁছান, তখন তাঁরা এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে যায়। যৌবনে যাঁদের দেহই ছিল আয়ের একমাত্র মূলধন, বার্ধক্যে এসে সেই দেহই যেন হয়ে...
১ মিনিট আগে
১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জনগণই ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন নেতারা কথা বলতেন জনগণের ভাষায় এবং তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতেন রাজনীতিতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সামরিক শাসন...
৪ মিনিট আগে
আজকের পত্রিকায় রাজশাহীর আলুচাষিদের লোকসান নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক কেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে মজুত রাখা পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি ১৫-১৮ টাকা। এতে এক কেজিতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
১ দিন আগে
ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ যে সংকটের ভেতর পড়েছিল, এই একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে এসে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো সংকটের ভেতর পড়েছে। ইউরোপে সে সময় ধর্মের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। তারা আস্থা রাখতে শুরু করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর।
১ দিন আগেহাসান আলী

মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায় হলো অদৃশ্য বার্ধক্যের যাত্রা। কিন্তু সবাই বার্ধক্যের জীবনে সমান মর্যাদা পায় না। সমাজের প্রান্তিক এক শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যখন তাঁরা শেষ বয়সে পৌঁছান, তখন তাঁরা এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে যায়। যৌবনে যাঁদের দেহই ছিল আয়ের একমাত্র মূলধন, বার্ধক্যে এসে সেই দেহই যেন হয়ে ওঠে অবজ্ঞার প্রতীক। দক্ষিণ এশিয়ার অন্ধকার গলিপথ থেকে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রিত পল্লি—সবখানেই এই যৌনকর্মীর জীবনে নেমে আসে এক গভীর নিঃসঙ্গতা।
ঢাকার কোনো বস্তি কিংবা কলকাতার সোনাগাছি—সেখানে দেখা যায় মালতী বালা কিংবা রহিমা বেগমের মতো বৃদ্ধ নারীদের। যৌবনে গ্রাহকের ভিড়ে যাঁদের ঘরে আলো জ্বলত সারা রাত, আজ সেখানে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ভাঙা চারপাইয়ে বসে তাঁরা শোনেন পাশের ঘরে তরুণীদের হাসি-আনন্দ। বয়সের কারণে কেউ তাঁদের কাছে আর আসে না। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তান থাকলেও তাঁরা মায়ের অতীত জীবনের কারণে এবং সামাজিক লোকলজ্জার জন্য তাঁকে অস্বীকার করেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বয়সের নারীরা অর্থকষ্টের কারণে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। আবার কেউ কেউ ছোটখাটো কাজও করে থাকেন। কিছু এনজিও বা সমাজকর্মী মাঝে মাঝে চাল-ডাল দেন, কিন্তু তা জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ তো দূরের কথা, বার্ধক্যজনিত অসুখ আর যৌবনের পেশার কারণে সৃষ্ট রোগ তাঁদের জীবনকে তছনছ করে দেয়।
মালতী বালার মতো এক বৃদ্ধা একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘যৌবনে শরীর বিক্রি করেছি পেট চালানোর জন্য, আজ বার্ধক্যে শরীরই আমাকে তাড়া করছে। তবু মরতে পারি না। কারণ, মরে যাওয়ার মতো জায়গাও নেই।’ এই কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার হাজারো প্রবীণ যৌনকর্মীর মর্মন্তুদ কাহিনি।
অন্যদিকে ইউরোপে চিত্র ভিন্ন। বার্লিনের গ্রেটা বা আমস্টারডামের সোফিয়া—তাঁদের যৌবন কেটেছে বৈধ যৌনপল্লিতে। তাঁরা রাষ্ট্রকে কর দিয়েছেন, তাই অবসরে তাঁরা পান পেনশন ও চিকিৎসাসেবা। একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে একা থাকলেও তাঁদের নিত্য সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সামাজিক সংগঠনগুলো মাঝে মাঝে তাঁদের খোঁজ নেয়, তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক সুরক্ষা পেলেও হৃদয়ের শূন্যতা ভরাট হয় না। গ্রেটা প্রায়ই বলেন, ‘টাকা আছে, ওষুধ আছে, ফ্ল্যাট আছে; কিন্তু একাকিত্বে হৃদয়টা শুকিয়ে যায়। যৌবনের স্মৃতি আর নিঃসঙ্গতা বার্ধক্যে আমাকে তাড়া করে।’
পশ্চিমা বিশ্বে আইনি স্বীকৃতি থাকলেও আবেগগত বিচ্ছিন্নতা থেকে যায়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, সমাজের আড়ালে অতীত জীবনের ছায়া এবং বন্ধু না থাকার যন্ত্রণা তাঁদের প্রবীণ জীবন কষ্টকর হয়ে ওঠে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবীণ যৌনকর্মীর জীবন এককথায় দারিদ্র্য, কলঙ্ক ও নিঃসঙ্গতার চিত্র। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে বৈধতা আছে, সেখানে আর্থিক নিরাপত্তা থাকলেও আবেগগত শূন্যতা একই রকম রয়ে যায়। একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে নিঃসঙ্গতা—দুটিই যেন ভিন্ন পথে একই যন্ত্রণা হয়ে ফিরে আসে।
এই যৌনকর্মীরা মানবসমাজের যে প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থান করে, যাঁদের কথা আসলে কেউই ভাবে না। এমনকি রাষ্ট্র-সরকারও না। অথচ তাঁদেরও হাসি-কান্না, প্রেম-অভিমান, বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সমাজ ও রাষ্ট্র যদি তাঁদের বার্ধক্যে সম্মান ও আশ্রয় দিত, তাহলে হয়তো এই অদৃশ্য যাত্রা অনেকটাই আলোকিত হতো।
প্রবীণ যৌনকর্মীর জীবন আমাদের শেখায়—প্রতিটি মানুষ, যেই পেশায় থাকুক না কেন, বার্ধক্যে প্রাপ্য সম্মান ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-সরকার তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।

মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায় হলো অদৃশ্য বার্ধক্যের যাত্রা। কিন্তু সবাই বার্ধক্যের জীবনে সমান মর্যাদা পায় না। সমাজের প্রান্তিক এক শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যখন তাঁরা শেষ বয়সে পৌঁছান, তখন তাঁরা এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে যায়। যৌবনে যাঁদের দেহই ছিল আয়ের একমাত্র মূলধন, বার্ধক্যে এসে সেই দেহই যেন হয়ে ওঠে অবজ্ঞার প্রতীক। দক্ষিণ এশিয়ার অন্ধকার গলিপথ থেকে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্বের নিয়ন্ত্রিত পল্লি—সবখানেই এই যৌনকর্মীর জীবনে নেমে আসে এক গভীর নিঃসঙ্গতা।
ঢাকার কোনো বস্তি কিংবা কলকাতার সোনাগাছি—সেখানে দেখা যায় মালতী বালা কিংবা রহিমা বেগমের মতো বৃদ্ধ নারীদের। যৌবনে গ্রাহকের ভিড়ে যাঁদের ঘরে আলো জ্বলত সারা রাত, আজ সেখানে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ভাঙা চারপাইয়ে বসে তাঁরা শোনেন পাশের ঘরে তরুণীদের হাসি-আনন্দ। বয়সের কারণে কেউ তাঁদের কাছে আর আসে না। প্রায় ক্ষেত্রে দেখা যায়, সন্তান থাকলেও তাঁরা মায়ের অতীত জীবনের কারণে এবং সামাজিক লোকলজ্জার জন্য তাঁকে অস্বীকার করেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ বয়সের নারীরা অর্থকষ্টের কারণে ভিক্ষা করতে বাধ্য হন। আবার কেউ কেউ ছোটখাটো কাজও করে থাকেন। কিছু এনজিও বা সমাজকর্মী মাঝে মাঝে চাল-ডাল দেন, কিন্তু তা জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ তো দূরের কথা, বার্ধক্যজনিত অসুখ আর যৌবনের পেশার কারণে সৃষ্ট রোগ তাঁদের জীবনকে তছনছ করে দেয়।
মালতী বালার মতো এক বৃদ্ধা একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘যৌবনে শরীর বিক্রি করেছি পেট চালানোর জন্য, আজ বার্ধক্যে শরীরই আমাকে তাড়া করছে। তবু মরতে পারি না। কারণ, মরে যাওয়ার মতো জায়গাও নেই।’ এই কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার হাজারো প্রবীণ যৌনকর্মীর মর্মন্তুদ কাহিনি।
অন্যদিকে ইউরোপে চিত্র ভিন্ন। বার্লিনের গ্রেটা বা আমস্টারডামের সোফিয়া—তাঁদের যৌবন কেটেছে বৈধ যৌনপল্লিতে। তাঁরা রাষ্ট্রকে কর দিয়েছেন, তাই অবসরে তাঁরা পান পেনশন ও চিকিৎসাসেবা। একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে একা থাকলেও তাঁদের নিত্য সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সামাজিক সংগঠনগুলো মাঝে মাঝে তাঁদের খোঁজ নেয়, তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক সুরক্ষা পেলেও হৃদয়ের শূন্যতা ভরাট হয় না। গ্রেটা প্রায়ই বলেন, ‘টাকা আছে, ওষুধ আছে, ফ্ল্যাট আছে; কিন্তু একাকিত্বে হৃদয়টা শুকিয়ে যায়। যৌবনের স্মৃতি আর নিঃসঙ্গতা বার্ধক্যে আমাকে তাড়া করে।’
পশ্চিমা বিশ্বে আইনি স্বীকৃতি থাকলেও আবেগগত বিচ্ছিন্নতা থেকে যায়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, সমাজের আড়ালে অতীত জীবনের ছায়া এবং বন্ধু না থাকার যন্ত্রণা তাঁদের প্রবীণ জীবন কষ্টকর হয়ে ওঠে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবীণ যৌনকর্মীর জীবন এককথায় দারিদ্র্য, কলঙ্ক ও নিঃসঙ্গতার চিত্র। পশ্চিমা বিশ্বে যেখানে বৈধতা আছে, সেখানে আর্থিক নিরাপত্তা থাকলেও আবেগগত শূন্যতা একই রকম রয়ে যায়। একদিকে ক্ষুধা, অন্যদিকে নিঃসঙ্গতা—দুটিই যেন ভিন্ন পথে একই যন্ত্রণা হয়ে ফিরে আসে।
এই যৌনকর্মীরা মানবসমাজের যে প্রান্তিক পর্যায়ে অবস্থান করে, যাঁদের কথা আসলে কেউই ভাবে না। এমনকি রাষ্ট্র-সরকারও না। অথচ তাঁদেরও হাসি-কান্না, প্রেম-অভিমান, বেঁচে থাকার অধিকার আছে। সমাজ ও রাষ্ট্র যদি তাঁদের বার্ধক্যে সম্মান ও আশ্রয় দিত, তাহলে হয়তো এই অদৃশ্য যাত্রা অনেকটাই আলোকিত হতো।
প্রবীণ যৌনকর্মীর জীবন আমাদের শেখায়—প্রতিটি মানুষ, যেই পেশায় থাকুক না কেন, বার্ধক্যে প্রাপ্য সম্মান ও সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র-সরকার তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।

জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের।
০৩ নভেম্বর ২০২৪
১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জনগণই ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন নেতারা কথা বলতেন জনগণের ভাষায় এবং তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতেন রাজনীতিতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সামরিক শাসন...
৪ মিনিট আগে
আজকের পত্রিকায় রাজশাহীর আলুচাষিদের লোকসান নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক কেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে মজুত রাখা পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি ১৫-১৮ টাকা। এতে এক কেজিতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
১ দিন আগে
ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ যে সংকটের ভেতর পড়েছিল, এই একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে এসে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো সংকটের ভেতর পড়েছে। ইউরোপে সে সময় ধর্মের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। তারা আস্থা রাখতে শুরু করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর।
১ দিন আগেমো. শাহিন আলম

১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জনগণই ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন নেতারা কথা বলতেন জনগণের ভাষায় এবং তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতেন রাজনীতিতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সামরিক শাসন এবং পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক ধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের ভূমিকা নিম্নমুখী হলো, রাজনীতি অনেকটাই দলীয়করণ ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেল প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কাছে। ফলে রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্ন ছিল জনগণের জন্য, তা অনেক সময় দলীয় কিংবা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সময় এসেছে, আমরা কেমন রাজনীতি চাই?
অনেক দিন থেকে দেশ ও জনগণের সেবা করার বুলি আওড়ানো অনেক রাজনীতিবিদের দেখা মেলে শুধু ভোটের মৌসুমে। যেহেতু ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন, রাজনীতির মাঠ তাই এখন ভোটের শোরগোলে ব্যস্ত। যেখানে আছে প্রত্যাশা, কৌশল, আবার আশঙ্কাও। যদিও নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেনি। তবু বিভিন্ন দলীয় ও স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় শুরু হয়েছে প্রচারণার তোড়জোড়। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
কিন্তু জনগণ খুব সহজে তা বিশ্বাস করছে না। কারণ, বাস্তবতা হলো, নির্বাচনের পর প্রার্থীরা অনেক সময়ই হারিয়ে যান। অতীতে দেখা গেছে, ভোটে জয়ের পর অনেক নেতা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।
তবে এও সত্য, অনেক নেতা এখনো আন্তরিকভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য ভাবেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে তাঁরা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেন না। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে জনগণের ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। জনগণ এখন চায় এমন রাজনীতি, যেখানে সর্বস্তরে সুশাসন, ন্যায্যতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে রাজনীতিবিদদেরও আত্মসমালোচনার সময় এসেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া মানে কেবল কাঙ্ক্ষিত আসন পাওয়া নয়, বরং জনগণের আশা ও প্রয়োজন বুঝে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটানো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের রাজনীতিতে এই দায়বদ্ধতা প্রায়ই অনুপস্থিত। নির্বাচনের সময় জনগণকে মনে রাখা হয়, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়েই ভুলে যাওয়া হয় তাদের কষ্ট, তাদের স্বপ্ন।
দীর্ঘদিন ধরে জনগণকে কেবল দল ও নেতারা শুধু ভোটদাতা হিসেবে ভেবে এসেছেন। যদিও গণতন্ত্র কেবল ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি অংশগ্রহণ প্রক্রিয়াও, যেখানে জনগণ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে সরকারের কাজের জবাবদিহি করবে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় ব্যাপক ঘাটতির কারণে। তা ছাড়া, আন্তদলীয় কোন্দল এবং বিরোধীমতকে অনেক সময় দমন করার রীতিও বহুল প্রচলিত। এই বিষয়গুলোর ফলে জনগণ রাজনীতিতে অনেকাংশে আস্থা হারাচ্ছে। ফলে রাজনীতি আর জনগণের থাকছে না, হয়ে উঠছে বিশেষ গোষ্ঠীর সম্পত্তি।
আজকের রাজনীতি জনগণের জীবনের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত—এই প্রশ্নটি জরুরি। কেননা, রাজনীতির প্রতিটি সিদ্ধান্তই দেশের অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা ও জনগণের অংশগ্রহণের অভাব—উভয়কেই প্রতিফলিত করছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনগণ নিজস্ব মতামত দিচ্ছে, কিন্তু সেই আওয়াজ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। যখন রাজনীতি জনগণকেন্দ্রিক হয়, তখন স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও চাহিদা নীতি প্রণয়নে প্রতিফলিত হওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে, নীতি তৈরি হয় অনেকাংশে প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ অনুযায়ী।
রাজনীতির এই সংকটে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও তরুণেরা রাজনীতিতে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পায় না। স্থানীয় পর্যায় থেকে রাজনীতির মূলধারার আলোচনায় তারা একপ্রকার অনুপস্থিতই থেকে যায়।
তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। তবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে, বাস্তবিক অর্থে তেমন মৌলিক পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়নি। জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিছু রদবদল হয়েছে মাত্র।
তবু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো রাজনীতিতে আস্থা রাখে, বিশ্বাস করে পরিবর্তনের সম্ভাবনায়। প্রত্যাশা থাকে এমন রাজনীতির; যেখানে উন্নয়ন মানে কেবল অবকাঠামোগত সংস্কার নয়, বরং কৃষকের ন্যায্যমূল্য ও শ্রমিকের মজুরি থেকে শুরু করে যুবকের কর্মসংস্থান, প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবায় সংস্কার, পরিবহনে শৃঙ্খলা, নদী দখল বন্ধ, বাকস্বাধীনতা, নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায্য অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আইনের সুশাসন নিশ্চিত হবে।
এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে পরিত্রাণ চায় জনগণ। গ্রামগঞ্জ-শহরে সর্বত্র মানুষ এখন চায় শান্তির সুবাতাস। ভোটাররা এখন আগের চেয়ে যথেষ্ট সচেতন; তারা জানে একজন সৎ ও দক্ষ জনপ্রতিনিধি পুরো এলাকার চেহারা বদলে দিতে পারেন।
এখন প্রয়োজন এমন রাজনীতি, যেখানে উন্নয়ন হবে অংশগ্রহণমূলক, সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের মাঠঘাট থেকে, আর বাস্তবায়ন করবেন জনপ্রতিনিধি। রাজনীতি হতে হবে এমন এক চুক্তি, যেখানে ভোটের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি নয়, বরং বিশ্বাসের বন্ধনে সেই সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটি উপলব্ধি করতে হবে। তাদের নীতি-পরিকল্পনায় পরিবর্তনটা ধারণ করতে হবে। বুঝতে হবে যেনতেনভাবে একটা নির্বাচনই শেষ কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
রাজনীতির সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন সেটি জনগণের জীবনের সঙ্গে মিশে যায়। তাই প্রয়োজন এমন নেতৃত্ব, যা জনগণকে কেবল ভোটার নয়, বরং পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে দেখবে। বহুমাত্রিক রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে না পারলে জনগণ যে স্বপ্ন দেখছে, তা ফিকে হয়ে যাবে। তাই রাজনীতি হোক জনগণের হাতে, জনগণের স্বার্থে এবং জনগণের জন্য।
লেখক: এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জনগণই ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন নেতারা কথা বলতেন জনগণের ভাষায় এবং তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতেন রাজনীতিতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সামরিক শাসন এবং পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক ধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের ভূমিকা নিম্নমুখী হলো, রাজনীতি অনেকটাই দলীয়করণ ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হারিয়ে গেল প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কাছে। ফলে রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্ন ছিল জনগণের জন্য, তা অনেক সময় দলীয় কিংবা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর সময় এসেছে, আমরা কেমন রাজনীতি চাই?
অনেক দিন থেকে দেশ ও জনগণের সেবা করার বুলি আওড়ানো অনেক রাজনীতিবিদের দেখা মেলে শুধু ভোটের মৌসুমে। যেহেতু ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন, রাজনীতির মাঠ তাই এখন ভোটের শোরগোলে ব্যস্ত। যেখানে আছে প্রত্যাশা, কৌশল, আবার আশঙ্কাও। যদিও নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেনি। তবু বিভিন্ন দলীয় ও স্বতন্ত্র সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই নির্বাচনী এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায় শুরু হয়েছে প্রচারণার তোড়জোড়। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
কিন্তু জনগণ খুব সহজে তা বিশ্বাস করছে না। কারণ, বাস্তবতা হলো, নির্বাচনের পর প্রার্থীরা অনেক সময়ই হারিয়ে যান। অতীতে দেখা গেছে, ভোটে জয়ের পর অনেক নেতা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।
তবে এও সত্য, অনেক নেতা এখনো আন্তরিকভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য ভাবেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দলীয় আনুগত্য ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে তাঁরা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেন না। তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে জনগণের ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। জনগণ এখন চায় এমন রাজনীতি, যেখানে সর্বস্তরে সুশাসন, ন্যায্যতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে রাজনীতিবিদদেরও আত্মসমালোচনার সময় এসেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়া মানে কেবল কাঙ্ক্ষিত আসন পাওয়া নয়, বরং জনগণের আশা ও প্রয়োজন বুঝে সেগুলোর প্রতিফলন ঘটানো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের রাজনীতিতে এই দায়বদ্ধতা প্রায়ই অনুপস্থিত। নির্বাচনের সময় জনগণকে মনে রাখা হয়, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়েই ভুলে যাওয়া হয় তাদের কষ্ট, তাদের স্বপ্ন।
দীর্ঘদিন ধরে জনগণকে কেবল দল ও নেতারা শুধু ভোটদাতা হিসেবে ভেবে এসেছেন। যদিও গণতন্ত্র কেবল ভোটের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি অংশগ্রহণ প্রক্রিয়াও, যেখানে জনগণ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে সরকারের কাজের জবাবদিহি করবে। তবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন অনেকটাই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় ব্যাপক ঘাটতির কারণে। তা ছাড়া, আন্তদলীয় কোন্দল এবং বিরোধীমতকে অনেক সময় দমন করার রীতিও বহুল প্রচলিত। এই বিষয়গুলোর ফলে জনগণ রাজনীতিতে অনেকাংশে আস্থা হারাচ্ছে। ফলে রাজনীতি আর জনগণের থাকছে না, হয়ে উঠছে বিশেষ গোষ্ঠীর সম্পত্তি।
আজকের রাজনীতি জনগণের জীবনের সঙ্গে কতটা সম্পর্কিত—এই প্রশ্নটি জরুরি। কেননা, রাজনীতির প্রতিটি সিদ্ধান্তই দেশের অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতা ও জনগণের অংশগ্রহণের অভাব—উভয়কেই প্রতিফলিত করছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনগণ নিজস্ব মতামত দিচ্ছে, কিন্তু সেই আওয়াজ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে কতটা প্রতিফলিত হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। যখন রাজনীতি জনগণকেন্দ্রিক হয়, তখন স্থানীয় অভিজ্ঞতা ও চাহিদা নীতি প্রণয়নে প্রতিফলিত হওয়ার কথা। কিন্তু উল্টো ঘটনা ঘটে, নীতি তৈরি হয় অনেকাংশে প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ অনুযায়ী।
রাজনীতির এই সংকটে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও তরুণেরা রাজনীতিতে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পায় না। স্থানীয় পর্যায় থেকে রাজনীতির মূলধারার আলোচনায় তারা একপ্রকার অনুপস্থিতই থেকে যায়।
তবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছে। তবে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে, বাস্তবিক অর্থে তেমন মৌলিক পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়নি। জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিছু রদবদল হয়েছে মাত্র।
তবু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো রাজনীতিতে আস্থা রাখে, বিশ্বাস করে পরিবর্তনের সম্ভাবনায়। প্রত্যাশা থাকে এমন রাজনীতির; যেখানে উন্নয়ন মানে কেবল অবকাঠামোগত সংস্কার নয়, বরং কৃষকের ন্যায্যমূল্য ও শ্রমিকের মজুরি থেকে শুরু করে যুবকের কর্মসংস্থান, প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবায় সংস্কার, পরিবহনে শৃঙ্খলা, নদী দখল বন্ধ, বাকস্বাধীনতা, নারীর নিরাপত্তা ও ন্যায্য অংশগ্রহণ এবং রাষ্ট্রের সর্বস্তরে আইনের সুশাসন নিশ্চিত হবে।
এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে পরিত্রাণ চায় জনগণ। গ্রামগঞ্জ-শহরে সর্বত্র মানুষ এখন চায় শান্তির সুবাতাস। ভোটাররা এখন আগের চেয়ে যথেষ্ট সচেতন; তারা জানে একজন সৎ ও দক্ষ জনপ্রতিনিধি পুরো এলাকার চেহারা বদলে দিতে পারেন।
এখন প্রয়োজন এমন রাজনীতি, যেখানে উন্নয়ন হবে অংশগ্রহণমূলক, সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের মাঠঘাট থেকে, আর বাস্তবায়ন করবেন জনপ্রতিনিধি। রাজনীতি হতে হবে এমন এক চুক্তি, যেখানে ভোটের বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি নয়, বরং বিশ্বাসের বন্ধনে সেই সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটি উপলব্ধি করতে হবে। তাদের নীতি-পরিকল্পনায় পরিবর্তনটা ধারণ করতে হবে। বুঝতে হবে যেনতেনভাবে একটা নির্বাচনই শেষ কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
রাজনীতির সৌন্দর্য তখনই ফুটে ওঠে, যখন সেটি জনগণের জীবনের সঙ্গে মিশে যায়। তাই প্রয়োজন এমন নেতৃত্ব, যা জনগণকে কেবল ভোটার নয়, বরং পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে দেখবে। বহুমাত্রিক রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ধারণ করতে না পারলে জনগণ যে স্বপ্ন দেখছে, তা ফিকে হয়ে যাবে। তাই রাজনীতি হোক জনগণের হাতে, জনগণের স্বার্থে এবং জনগণের জন্য।
লেখক: এমফিল গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের।
০৩ নভেম্বর ২০২৪
মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায় হলো অদৃশ্য বার্ধক্যের যাত্রা। কিন্তু সবাই বার্ধক্যের জীবনে সমান মর্যাদা পায় না। সমাজের প্রান্তিক এক শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যখন তাঁরা শেষ বয়সে পৌঁছান, তখন তাঁরা এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে যায়। যৌবনে যাঁদের দেহই ছিল আয়ের একমাত্র মূলধন, বার্ধক্যে এসে সেই দেহই যেন হয়ে...
১ মিনিট আগে
আজকের পত্রিকায় রাজশাহীর আলুচাষিদের লোকসান নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক কেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে মজুত রাখা পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি ১৫-১৮ টাকা। এতে এক কেজিতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
১ দিন আগে
ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ যে সংকটের ভেতর পড়েছিল, এই একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে এসে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো সংকটের ভেতর পড়েছে। ইউরোপে সে সময় ধর্মের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। তারা আস্থা রাখতে শুরু করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

আজকের পত্রিকায় রাজশাহীর আলুচাষিদের লোকসান নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক কেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে মজুত রাখা পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি ১৫-১৮ টাকা। এতে এক কেজিতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
কৃষককে নিয়ে কোনো সরকারই যে ভাবে না, সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা থেকেও বোঝা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নানা সেক্টরের সংস্কার নিয়ে কমিশন গঠন করলেও বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ক্ষেত্র কৃষি নিয়ে কোনো কমিশন করেনি। এ থেকে বোঝা যায়, এ সরকারও অতীতের সরকারের মতো কৃষকবান্ধব নয়।
আমাদের স্মরণে থাকার কথা, বিগত সরকারের সময় আলুর দাম উঠেছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। এ বছর সেই আলুর দাম মাত্র ২০ টাকা। এ দামের কারণে সাধারণ ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকলেও কৃষকেরা যে তাঁদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না, সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতে যখন আলুর দাম বেশি ছিল, সে সময় কি কৃষকেরা বেশি টাকা পেয়েছেন? ব্যাপারটি সে রকম নয়। কারণ, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট আলুর মৌসুমের সময় কম টাকায় আলু কিনে হিমাগারে রেখে দেয়। আলুর যখন মৌসুম শেষ হয় এবং যখন কৃষকের ঘরে আলু থাকে না, তখন সেই সিন্ডিকেটের লোকেরা আলু বেশি দামে বাজারে ছেড়ে দেয়। যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আলু ফলান, সেই কৃষকের কাছে আলু থাকে না। অমৌসুমে নিজের উৎপাদিত আলু তাঁরাও বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন। এটা শুধু আলুর ক্ষেত্রে নয়, বেশির ভাগ শস্যের ক্ষেত্রে কথাটি সত্য।
কৃষকেরা এমন এক শ্রেণি যে তাঁদের নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হওয়ার কোনো সংগঠন নেই। যে সংগঠনের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের কাছে তাঁদের নানা সমস্যা-সংকট এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবি তুলতে পারেন। ফলে জীবনের প্রায় ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারেন না।
কৃষক যখন পণ্য উৎপাদন করেন তখন সঙ্গে সঙ্গেই পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন দুটি কারণে। একটি হলো উৎপাদিত অনেক দ্রব্য পচনশীল হওয়া, অন্যটি উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকের ব্যয় মেটানো এবং ঋণ শোধ করা। কৃষকের অনেক পণ্য, বিশেষ করে উৎপাদিত সবজি সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু পণ্য সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে কৃষক পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উৎপাদনের সময় বাজারে জোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চাহিদার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে সঠিক দাম পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো নীতিমালা এখনো করা হয়নি। এটা করা গেলে কৃষকের শস্য উৎপাদন ও বিক্রি করা একটা নিয়মের মধ্যে আসত। কৃষক তখনই সঠিক দাম পাবেন, যখন সরকার তাঁদের দিকে নজর দেবে। আমরা চাই, সরকার কৃষকের প্রতি নজর দিক।

আজকের পত্রিকায় রাজশাহীর আলুচাষিদের লোকসান নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক কেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে মজুত রাখা পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি ১৫-১৮ টাকা। এতে এক কেজিতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
কৃষককে নিয়ে কোনো সরকারই যে ভাবে না, সেটা অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা থেকেও বোঝা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার নানা সেক্টরের সংস্কার নিয়ে কমিশন গঠন করলেও বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ক্ষেত্র কৃষি নিয়ে কোনো কমিশন করেনি। এ থেকে বোঝা যায়, এ সরকারও অতীতের সরকারের মতো কৃষকবান্ধব নয়।
আমাদের স্মরণে থাকার কথা, বিগত সরকারের সময় আলুর দাম উঠেছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি। এ বছর সেই আলুর দাম মাত্র ২০ টাকা। এ দামের কারণে সাধারণ ক্রেতারা স্বস্তিতে থাকলেও কৃষকেরা যে তাঁদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না, সেটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। বিপরীতে যখন আলুর দাম বেশি ছিল, সে সময় কি কৃষকেরা বেশি টাকা পেয়েছেন? ব্যাপারটি সে রকম নয়। কারণ, ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট আলুর মৌসুমের সময় কম টাকায় আলু কিনে হিমাগারে রেখে দেয়। আলুর যখন মৌসুম শেষ হয় এবং যখন কৃষকের ঘরে আলু থাকে না, তখন সেই সিন্ডিকেটের লোকেরা আলু বেশি দামে বাজারে ছেড়ে দেয়। যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আলু ফলান, সেই কৃষকের কাছে আলু থাকে না। অমৌসুমে নিজের উৎপাদিত আলু তাঁরাও বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন। এটা শুধু আলুর ক্ষেত্রে নয়, বেশির ভাগ শস্যের ক্ষেত্রে কথাটি সত্য।
কৃষকেরা এমন এক শ্রেণি যে তাঁদের নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হওয়ার কোনো সংগঠন নেই। যে সংগঠনের মাধ্যমে তাঁরা সরকারের কাছে তাঁদের নানা সমস্যা-সংকট এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবি তুলতে পারেন। ফলে জীবনের প্রায় ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারেন না।
কৃষক যখন পণ্য উৎপাদন করেন তখন সঙ্গে সঙ্গেই পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন দুটি কারণে। একটি হলো উৎপাদিত অনেক দ্রব্য পচনশীল হওয়া, অন্যটি উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকের ব্যয় মেটানো এবং ঋণ শোধ করা। কৃষকের অনেক পণ্য, বিশেষ করে উৎপাদিত সবজি সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু পণ্য সংরক্ষণ করতে না পারার কারণে কৃষক পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রেও কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উৎপাদনের সময় বাজারে জোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং চাহিদার পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে সঠিক দাম পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কোনো নীতিমালা এখনো করা হয়নি। এটা করা গেলে কৃষকের শস্য উৎপাদন ও বিক্রি করা একটা নিয়মের মধ্যে আসত। কৃষক তখনই সঠিক দাম পাবেন, যখন সরকার তাঁদের দিকে নজর দেবে। আমরা চাই, সরকার কৃষকের প্রতি নজর দিক।

জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের।
০৩ নভেম্বর ২০২৪
মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায় হলো অদৃশ্য বার্ধক্যের যাত্রা। কিন্তু সবাই বার্ধক্যের জীবনে সমান মর্যাদা পায় না। সমাজের প্রান্তিক এক শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যখন তাঁরা শেষ বয়সে পৌঁছান, তখন তাঁরা এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে যায়। যৌবনে যাঁদের দেহই ছিল আয়ের একমাত্র মূলধন, বার্ধক্যে এসে সেই দেহই যেন হয়ে...
১ মিনিট আগে
১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জনগণই ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন নেতারা কথা বলতেন জনগণের ভাষায় এবং তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতেন রাজনীতিতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সামরিক শাসন...
৪ মিনিট আগে
ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ যে সংকটের ভেতর পড়েছিল, এই একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে এসে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো সংকটের ভেতর পড়েছে। ইউরোপে সে সময় ধর্মের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। তারা আস্থা রাখতে শুরু করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর।
১ দিন আগেবিধান রিবেরু

ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ যে সংকটের ভেতর পড়েছিল, এই একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে এসে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো সংকটের ভেতর পড়েছে। ইউরোপে সে সময় ধর্মের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। তারা আস্থা রাখতে শুরু করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর। প্রথাগত খ্রিষ্টধর্ম ও ধর্মীয় নীতিবোধের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছিল ব্যক্তিক নীতিনৈতিকতা ও যুক্তিবাদের ওপর। মনে রাখা দরকার, সে সময় ইউরোপে শিল্পকলকারখানার উন্নয়ন ঘটছে, মানুষ আধুনিক ধ্যানধারণা চর্চার দিকে ঝুঁকছে। তো যে ধর্মচর্চা ও বিশ্বাসের ভেতর মানুষ বহু বছর ধরে ছিল, সেটি যখন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকে, তখন সমাজের নানা স্তরে পরিবর্তন ও সংকট দেখা দেয়।
তৎকালে সামাজিক ও পারিবারিক স্তরে নতুন যুগের প্রারম্ভ দেখে জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিক নিৎসে বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটেছে’, অর্থাৎ মানুষ আর ঈশ্বরে বিশ্বাস করছে না। ঈশ্বরের জায়গায় এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ধরনের বিশ্বাস জন্মের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নিৎসে আশ্রয় নেন শূন্যবাদ বা নিহিলিজমের। নিৎসের আগের চিন্তকেরা এই শূন্যবাদ নিয়ে অনেকভাবে ভেবেছেন, সেই চার্বাক থেকে শুরু করে কিয়েরকেগার্দ পর্যন্ত। নিৎসের পরেও মানুষ শূন্যবাদ নিয়ে ভেবেছে। তবে তাদের ভাবনার চেয়ে নিৎসের ভাবনা স্বতন্ত্র। ধারণা হিসেবে ‘নিহিলিজম’ শব্দটি প্রথম আবির্ভূত হয় রাশিয়ায়, ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। সেখানেও ধর্ম, রাজতন্ত্র ও পুরোনো নিয়মকে অস্বীকার করে বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ ও সমাজ সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নিহিলিজম বলতে সাধারণত বোঝায়, যেখানে জীবনের আসলে কোনো মানে নেই, শেষ পর্যন্ত মানুষ মৃত্যুর কাছে সমর্পিত, কাজেই মাঝে এত ঝামেলা ও ঝক্কি আসলে অর্থহীন। নিহিলিজমের এই চর্চিত রূপের ভেতর নিৎসে যুগপৎভাবে বিপদ ও সম্ভাবনা দেখলেন। বিপদের কারণ হলো—এই শূন্যবাদের কারণে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, হতোদ্যম দশায় নিক্ষিপ্ত হতে পারে। কিন্তু সম্ভাবনার জায়গাটি হলো—মানবসমাজে যেহেতু কোনো কিছুই শূন্য থাকে না, নতুন কিছু এসে সেই জায়গা দখল করে, তাই পুরোনো বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা নষ্ট হলেও, তার স্থলে নতুন মূল্যবোধ আসে, শূন্যস্থান পূরণের বাস্তবতা তৈরি হয়।
নিৎসে লক্ষ করলেন, শুধু অস্তিত্বের ক্ষেত্রেই মানুষ নিহিলিস্ট বা শূন্যবাদী নয়। তারা নৈতিক, রাজনৈতিক, নিষ্ক্রিয়তা ও সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও শূন্যবাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, নিৎসের এই শূন্যবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে জড়িত? ইউরোপে যখন মানুষ ধর্ম ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের দিকে হাঁটছিল, তার দেড় শ বছর পর আমরা এখন হাঁটছি তার বিপরীতে। গত কয়েক বছরের চিত্র সেটাই বলে। আমরা দেখেছি বিগত বছরগুলোতে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শে দফায় দফায় পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় পাল্টানো হয়েছে। আমরা দেখেছি কেমন করে দরিদ্র থেকে ধনী সবার জন্য ধর্মশিক্ষা নিশ্চিত করতে ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসা খোলা হয়েছে। আমরা দেখেছি, রাস্তাঘাটে মেয়েরা ইসলামি রীতি মেনে পোশাক পরে না বলে কত হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলের নামের শেষে ধর্মের নাম আছে বলে, একটি জনগোষ্ঠী কেমন করে তাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা দেখেছি এ দেশে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের চর্চাকারীদের ‘ধর্মের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে কীভাবে কতল করা হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত তাদের হত্যাযোগ্য করে তোলা হচ্ছে! আমরা দেখেছি, কোনো রকম যুক্তির তোয়াক্কা না করে মানুষকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করা হয়েছে ও হচ্ছে। আমরা দেখেছি ধর্মের দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন কীভাবে শিল্প-সংস্কৃতির নানা অঙ্গনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, শিল্পীদের অপদস্থ ও দেশছাড়া করা হয়েছে। আমরা দেখেছি অসাম্প্রদায়িক ফকির লালন শাহের ভাস্কর্য কীভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই তালিকা করুণভাবে আরও দীর্ঘ। আর এ থেকেই প্রমাণিত হয়, আমরা ইউরোপের সেই সময়ের উল্টোযাত্রায় আছি। উল্টো পথের পথিক হলেও নিৎসের দুই ধরনের শূন্যবাদ কিন্তু বেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে আমাদের সমাজে। একদল প্যাসিভ নিহিলিস্ট, তারা পুরোনো যা ছিল তার জন্য আফসোস করছে। নিৎসের আমলে সেই আফসোস ছিল ধর্মীয় ও পুরোনো সামাজিক মূল্যবোধের জন্য। কিন্তু আমাদের এই সময়ে আফসোসটাও আর একরৈখিক নেই। এখানে নানাবিধ ধারা প্রবহমান। একদল মানুষ আফসোস করছে, বাংলাদেশে যে অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানচেতনার চর্চা ছিল, সেটি ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। আরেক ধারাকে দেখা যায়, পুরোনো শাসন আমলই ভালো ছিল, এটা বলে আফসোস করতে। কিন্তু একজন আশাবাদী মানুষ আসলে আফসোস করে না। তারা সব সংকটকেই সম্ভাবনার দিকে ধাবিত করে। নিৎসেও তা-ই, পক্ষ নেন অ্যাক্টিভ নিহিলিজমের। তিনি বলেন, এই সক্রিয় সত্তারা ধ্বংসস্তূপ থেকেই নতুন কিছু নির্মাণ করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে, যা গেছে তা আর ফেরানো যাবে না। তাই নতুন গতিপথ তৈরি করাই একমাত্র কর্তব্য, হাহুতাশ করার পরিবর্তে। বাংলাদেশে এই সক্রিয় শূন্যবাদীদের ভেতরেও অনেক ধারা দেখা যায়।
একদল মনে করে, অসাম্প্রদায়িক, যুক্তিবাদী, জ্ঞানভিত্তিক ও শিল্প-সংস্কৃতিনির্ভর যে বাংলাদেশ ছিল, সেটির পরিবর্তে এখন একটি ধর্মীয় অনুশাসন কায়েমের মাধ্যমে দেশের সবকিছু পরিচালিত হবে। তারা ঊনবিংশ শতকের ইউরোপের ঠিক উল্টো পথের যাত্রী। তারা এই কাজটি বেশ সক্রিয়ভাবেই করছে এবং তারাই এখন বাংলাদেশের প্রভাবশালী ধারা। বিদ্যায়তন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম—সর্বত্রই এই সক্রিয় শূন্যবাদীদের সক্রিয়তা লক্ষ করার মতো। আরেক দল সক্রিয় শূন্যবাদী রয়েছে, যারা এদের মতো অতটা শক্তিশালী নয়, বরং কিছুটা বিভ্রান্তই বলা যায়। এরা হলো সমাজের বামপন্থী মুক্তমনা। তারা মনে করে রাষ্ট্রকাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হয়েছে, এবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন এবং সে জন্য সমাজে সুকুমারবৃত্তি বৃদ্ধি করা, যুক্তিবাদী মানুষ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সক্রিয় শূন্যবাদীদের এই ধারাটি বড্ড দুর্বল। তাদের লক্ষ্যও স্থির নেই। লক্ষ্য বলতে বোঝাচ্ছি, আগামী পঞ্চাশ বছর পর বাংলাদেশে তারা কোন ধরনের সমাজ দেখতে চায় এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, কীভাবে নিতে হবে, শুরুটা করতে হবে কোথা থেকে, সেসব সম্পর্কে তাদের ধারণা খুব একটা স্পষ্ট নয়। অন্তত তাদের কাজ দেখে তা-ই মনে হয়। তারা প্রচলিত চিন্তাভাবনা নিয়ে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশে সক্রিয় থাকতে চাইছে এবং তারা সক্রিয় শূন্যবাদীদের অন্য ধারা, যারা ইউরোপের উল্টো যাত্রার সারথী, তাদের সঙ্গেও পরিকল্পনায় পেরে উঠছে না।
এই না পারার ফলে, বাংলাদেশের মানুষ ফুটন্ত তেলের কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে এসে খইভাজা হচ্ছে। সৌদি আরবের মতো দেশ যখন শিল্প-সংস্কৃতিকে জোরালোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, নারী স্বাধীনতার সীমা ক্রমেই বাড়াচ্ছে, সেখানে আমাদের সেই শক্তি সক্রিয় শূন্যবাদীরা বলছে, নারীরা যেহেতু ঘরে বাচ্চাকাচ্চা লালনপালন করে, ঘরের কাজ সামলায়, তাই তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ প্রকারান্তরে বলা হচ্ছে, বাইরের কাজ কমিয়ে নারীরা যেন ঘরের কাজে বেশি মনোযোগ দেয়। বিংশ শতকে নারীমুক্তির জন্য কাজ করে বেগম রোকেয়া সমাজকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, আজ যেন তার উল্টোগমন দেখছি আমরা।
সমাজের প্রগতি নির্ভর করে সমাজের অভিমুখের ওপর। অর্থাৎ মানুষ নতুন নতুন ভাবাদর্শের দিকে ধাবিত হয়, ভাবাদর্শকে ছুড়ে ফেলে শূন্য ভাবাদর্শের দিকে যাত্রা করে। যদিও সেটা আরেকটা ভাবাদর্শ, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় পোস্ট ইডিওলিজ। সময় যত প্রবাহিত হয়, সময়ের প্রয়োজনে মানুষের সামনে নতুন ভাব ও আদর্শ আসে, মানুষ সেটা গ্রহণ করে। সময় উপযোগী হলে ভাবাদর্শ অনেক দিন টিকে যায়, মন্দ হলে হারিয়ে যায়, তখন নতুন কিছুর সন্ধান শুরু হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা বিপরীত অভিযাত্রা প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে যারা সামনের দিকে ধাবিত করতে পারত, সেই উদার গণতান্ত্রিক বামপন্থা, তারা সক্রিয় শূন্যবাদী বটে, কিন্তু দক্ষতার দিক থেকে তারা শূন্যের কাছাকাছি। তারা ষাট ও সত্তর দশকের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও শিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে যে জাতীয় চেতনা ছিল, সেটির জন্য নিষ্ক্রিয় শূন্যবাদীও বটে।
কোনো এলাকার বায়ু যখন উত্তপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায়, ওই জায়গা পূরণের জন্য চারদিক থেকে ঠান্ডা ভারী বাতাসের লড়াই শুরু হয়। নতুন ঠান্ডা বাতাসও গরম ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এ রকম চক্র চলতে চলতে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। ব্যাপক ওলটপালটের পর পরিবেশ শান্ত হয়। আমরা এখন ঘূর্ণিঝড় শুরুর প্রাক্কালে আছি।

ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ যে সংকটের ভেতর পড়েছিল, এই একবিংশ শতকের প্রথম ভাগে এসে বাংলাদেশ ঠিক তার উল্টো সংকটের ভেতর পড়েছে। ইউরোপে সে সময় ধর্মের ওপর থেকে মানুষের বিশ্বাস উঠে যাচ্ছিল। তারা আস্থা রাখতে শুরু করেছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বিজ্ঞানমনস্কতার ওপর। প্রথাগত খ্রিষ্টধর্ম ও ধর্মীয় নীতিবোধের চেয়ে মানুষ অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছিল ব্যক্তিক নীতিনৈতিকতা ও যুক্তিবাদের ওপর। মনে রাখা দরকার, সে সময় ইউরোপে শিল্পকলকারখানার উন্নয়ন ঘটছে, মানুষ আধুনিক ধ্যানধারণা চর্চার দিকে ঝুঁকছে। তো যে ধর্মচর্চা ও বিশ্বাসের ভেতর মানুষ বহু বছর ধরে ছিল, সেটি যখন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকে, তখন সমাজের নানা স্তরে পরিবর্তন ও সংকট দেখা দেয়।
তৎকালে সামাজিক ও পারিবারিক স্তরে নতুন যুগের প্রারম্ভ দেখে জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিক নিৎসে বলেছিলেন, ‘ঈশ্বরের মৃত্যু ঘটেছে’, অর্থাৎ মানুষ আর ঈশ্বরে বিশ্বাস করছে না। ঈশ্বরের জায়গায় এক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নতুন ধরনের বিশ্বাস জন্মের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে নিৎসে আশ্রয় নেন শূন্যবাদ বা নিহিলিজমের। নিৎসের আগের চিন্তকেরা এই শূন্যবাদ নিয়ে অনেকভাবে ভেবেছেন, সেই চার্বাক থেকে শুরু করে কিয়েরকেগার্দ পর্যন্ত। নিৎসের পরেও মানুষ শূন্যবাদ নিয়ে ভেবেছে। তবে তাদের ভাবনার চেয়ে নিৎসের ভাবনা স্বতন্ত্র। ধারণা হিসেবে ‘নিহিলিজম’ শব্দটি প্রথম আবির্ভূত হয় রাশিয়ায়, ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। সেখানেও ধর্ম, রাজতন্ত্র ও পুরোনো নিয়মকে অস্বীকার করে বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ ও সমাজ সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নিহিলিজম বলতে সাধারণত বোঝায়, যেখানে জীবনের আসলে কোনো মানে নেই, শেষ পর্যন্ত মানুষ মৃত্যুর কাছে সমর্পিত, কাজেই মাঝে এত ঝামেলা ও ঝক্কি আসলে অর্থহীন। নিহিলিজমের এই চর্চিত রূপের ভেতর নিৎসে যুগপৎভাবে বিপদ ও সম্ভাবনা দেখলেন। বিপদের কারণ হলো—এই শূন্যবাদের কারণে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, হতোদ্যম দশায় নিক্ষিপ্ত হতে পারে। কিন্তু সম্ভাবনার জায়গাটি হলো—মানবসমাজে যেহেতু কোনো কিছুই শূন্য থাকে না, নতুন কিছু এসে সেই জায়গা দখল করে, তাই পুরোনো বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা নষ্ট হলেও, তার স্থলে নতুন মূল্যবোধ আসে, শূন্যস্থান পূরণের বাস্তবতা তৈরি হয়।
নিৎসে লক্ষ করলেন, শুধু অস্তিত্বের ক্ষেত্রেই মানুষ নিহিলিস্ট বা শূন্যবাদী নয়। তারা নৈতিক, রাজনৈতিক, নিষ্ক্রিয়তা ও সক্রিয়তার ক্ষেত্রেও শূন্যবাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এখন প্রশ্ন হলো, নিৎসের এই শূন্যবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে জড়িত? ইউরোপে যখন মানুষ ধর্ম ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের দিকে হাঁটছিল, তার দেড় শ বছর পর আমরা এখন হাঁটছি তার বিপরীতে। গত কয়েক বছরের চিত্র সেটাই বলে। আমরা দেখেছি বিগত বছরগুলোতে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শে দফায় দফায় পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় পাল্টানো হয়েছে। আমরা দেখেছি কেমন করে দরিদ্র থেকে ধনী সবার জন্য ধর্মশিক্ষা নিশ্চিত করতে ইংরেজি মাধ্যমের মাদ্রাসা খোলা হয়েছে। আমরা দেখেছি, রাস্তাঘাটে মেয়েরা ইসলামি রীতি মেনে পোশাক পরে না বলে কত হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। আমরা দেখেছি রাজনৈতিক দলের নামের শেষে ধর্মের নাম আছে বলে, একটি জনগোষ্ঠী কেমন করে তাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা দেখেছি এ দেশে বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের চর্চাকারীদের ‘ধর্মের শত্রু’ আখ্যা দিয়ে কীভাবে কতল করা হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত তাদের হত্যাযোগ্য করে তোলা হচ্ছে! আমরা দেখেছি, কোনো রকম যুক্তির তোয়াক্কা না করে মানুষকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করা হয়েছে ও হচ্ছে। আমরা দেখেছি ধর্মের দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন কীভাবে শিল্প-সংস্কৃতির নানা অঙ্গনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, শিল্পীদের অপদস্থ ও দেশছাড়া করা হয়েছে। আমরা দেখেছি অসাম্প্রদায়িক ফকির লালন শাহের ভাস্কর্য কীভাবে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই তালিকা করুণভাবে আরও দীর্ঘ। আর এ থেকেই প্রমাণিত হয়, আমরা ইউরোপের সেই সময়ের উল্টোযাত্রায় আছি। উল্টো পথের পথিক হলেও নিৎসের দুই ধরনের শূন্যবাদ কিন্তু বেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে আমাদের সমাজে। একদল প্যাসিভ নিহিলিস্ট, তারা পুরোনো যা ছিল তার জন্য আফসোস করছে। নিৎসের আমলে সেই আফসোস ছিল ধর্মীয় ও পুরোনো সামাজিক মূল্যবোধের জন্য। কিন্তু আমাদের এই সময়ে আফসোসটাও আর একরৈখিক নেই। এখানে নানাবিধ ধারা প্রবহমান। একদল মানুষ আফসোস করছে, বাংলাদেশে যে অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানচেতনার চর্চা ছিল, সেটি ধীরে ধীরে ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। আরেক ধারাকে দেখা যায়, পুরোনো শাসন আমলই ভালো ছিল, এটা বলে আফসোস করতে। কিন্তু একজন আশাবাদী মানুষ আসলে আফসোস করে না। তারা সব সংকটকেই সম্ভাবনার দিকে ধাবিত করে। নিৎসেও তা-ই, পক্ষ নেন অ্যাক্টিভ নিহিলিজমের। তিনি বলেন, এই সক্রিয় সত্তারা ধ্বংসস্তূপ থেকেই নতুন কিছু নির্মাণ করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করে, যা গেছে তা আর ফেরানো যাবে না। তাই নতুন গতিপথ তৈরি করাই একমাত্র কর্তব্য, হাহুতাশ করার পরিবর্তে। বাংলাদেশে এই সক্রিয় শূন্যবাদীদের ভেতরেও অনেক ধারা দেখা যায়।
একদল মনে করে, অসাম্প্রদায়িক, যুক্তিবাদী, জ্ঞানভিত্তিক ও শিল্প-সংস্কৃতিনির্ভর যে বাংলাদেশ ছিল, সেটির পরিবর্তে এখন একটি ধর্মীয় অনুশাসন কায়েমের মাধ্যমে দেশের সবকিছু পরিচালিত হবে। তারা ঊনবিংশ শতকের ইউরোপের ঠিক উল্টো পথের যাত্রী। তারা এই কাজটি বেশ সক্রিয়ভাবেই করছে এবং তারাই এখন বাংলাদেশের প্রভাবশালী ধারা। বিদ্যায়তন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম—সর্বত্রই এই সক্রিয় শূন্যবাদীদের সক্রিয়তা লক্ষ করার মতো। আরেক দল সক্রিয় শূন্যবাদী রয়েছে, যারা এদের মতো অতটা শক্তিশালী নয়, বরং কিছুটা বিভ্রান্তই বলা যায়। এরা হলো সমাজের বামপন্থী মুক্তমনা। তারা মনে করে রাষ্ট্রকাঠামো থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হয়েছে, এবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন এবং সে জন্য সমাজে সুকুমারবৃত্তি বৃদ্ধি করা, যুক্তিবাদী মানুষ তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সক্রিয় শূন্যবাদীদের এই ধারাটি বড্ড দুর্বল। তাদের লক্ষ্যও স্থির নেই। লক্ষ্য বলতে বোঝাচ্ছি, আগামী পঞ্চাশ বছর পর বাংলাদেশে তারা কোন ধরনের সমাজ দেখতে চায় এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, কীভাবে নিতে হবে, শুরুটা করতে হবে কোথা থেকে, সেসব সম্পর্কে তাদের ধারণা খুব একটা স্পষ্ট নয়। অন্তত তাদের কাজ দেখে তা-ই মনে হয়। তারা প্রচলিত চিন্তাভাবনা নিয়ে বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশে সক্রিয় থাকতে চাইছে এবং তারা সক্রিয় শূন্যবাদীদের অন্য ধারা, যারা ইউরোপের উল্টো যাত্রার সারথী, তাদের সঙ্গেও পরিকল্পনায় পেরে উঠছে না।
এই না পারার ফলে, বাংলাদেশের মানুষ ফুটন্ত তেলের কড়াই থেকে জ্বলন্ত উনুনে এসে খইভাজা হচ্ছে। সৌদি আরবের মতো দেশ যখন শিল্প-সংস্কৃতিকে জোরালোভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, নারী স্বাধীনতার সীমা ক্রমেই বাড়াচ্ছে, সেখানে আমাদের সেই শক্তি সক্রিয় শূন্যবাদীরা বলছে, নারীরা যেহেতু ঘরে বাচ্চাকাচ্চা লালনপালন করে, ঘরের কাজ সামলায়, তাই তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হবে। অর্থাৎ প্রকারান্তরে বলা হচ্ছে, বাইরের কাজ কমিয়ে নারীরা যেন ঘরের কাজে বেশি মনোযোগ দেয়। বিংশ শতকে নারীমুক্তির জন্য কাজ করে বেগম রোকেয়া সমাজকে যেভাবে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, আজ যেন তার উল্টোগমন দেখছি আমরা।
সমাজের প্রগতি নির্ভর করে সমাজের অভিমুখের ওপর। অর্থাৎ মানুষ নতুন নতুন ভাবাদর্শের দিকে ধাবিত হয়, ভাবাদর্শকে ছুড়ে ফেলে শূন্য ভাবাদর্শের দিকে যাত্রা করে। যদিও সেটা আরেকটা ভাবাদর্শ, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় পোস্ট ইডিওলিজ। সময় যত প্রবাহিত হয়, সময়ের প্রয়োজনে মানুষের সামনে নতুন ভাব ও আদর্শ আসে, মানুষ সেটা গ্রহণ করে। সময় উপযোগী হলে ভাবাদর্শ অনেক দিন টিকে যায়, মন্দ হলে হারিয়ে যায়, তখন নতুন কিছুর সন্ধান শুরু হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা বিপরীত অভিযাত্রা প্রত্যক্ষ করছি। বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে যারা সামনের দিকে ধাবিত করতে পারত, সেই উদার গণতান্ত্রিক বামপন্থা, তারা সক্রিয় শূন্যবাদী বটে, কিন্তু দক্ষতার দিক থেকে তারা শূন্যের কাছাকাছি। তারা ষাট ও সত্তর দশকের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও শিল্প-সংস্কৃতির মধ্যে যে জাতীয় চেতনা ছিল, সেটির জন্য নিষ্ক্রিয় শূন্যবাদীও বটে।
কোনো এলাকার বায়ু যখন উত্তপ্ত হয়ে ওপরে উঠে যায়, ওই জায়গা পূরণের জন্য চারদিক থেকে ঠান্ডা ভারী বাতাসের লড়াই শুরু হয়। নতুন ঠান্ডা বাতাসও গরম ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এ রকম চক্র চলতে চলতে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। ব্যাপক ওলটপালটের পর পরিবেশ শান্ত হয়। আমরা এখন ঘূর্ণিঝড় শুরুর প্রাক্কালে আছি।

জুলাই বিপ্লবের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলো হলো—কোটা সংস্কার, বৈষম্য দূর, স্বৈরাচারের পতন, সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ইত্যাদি। স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে, কোটা সংস্কারও ঘটেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে ১৫ শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে। দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি এবং অঙ্গহানি ঘটেছে অনেকের।
০৩ নভেম্বর ২০২৪
মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায় হলো অদৃশ্য বার্ধক্যের যাত্রা। কিন্তু সবাই বার্ধক্যের জীবনে সমান মর্যাদা পায় না। সমাজের প্রান্তিক এক শ্রেণি হলো যৌনকর্মীরা। যখন তাঁরা শেষ বয়সে পৌঁছান, তখন তাঁরা এক অনিশ্চিত জীবনের মধ্যে পড়ে যায়। যৌবনে যাঁদের দেহই ছিল আয়ের একমাত্র মূলধন, বার্ধক্যে এসে সেই দেহই যেন হয়ে...
১ মিনিট আগে
১৯৪৭-এর দেশভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ—এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জনগণই ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন নেতারা কথা বলতেন জনগণের ভাষায় এবং তাঁদের দুঃখ, ক্ষোভ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে রূপ দিতেন রাজনীতিতে। কিন্তু স্বাধীনতার পরপরই অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে সামরিক শাসন...
৪ মিনিট আগে
আজকের পত্রিকায় রাজশাহীর আলুচাষিদের লোকসান নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক কেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে মজুত রাখা পর্যন্ত কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি ১৫-১৮ টাকা। এতে এক কেজিতেই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।
১ দিন আগে