জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা বিস্তারিতভাবে বলার আগে সেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী সময়টিতে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে যে আলোচনাগুলো হচ্ছিল, তার একটি অবয়ব তুলে আনা দরকার।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম লেখক সম্প্রদায়ই প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সে সময় বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম নেতা এবং শিক্ষিত ছাত্রসমাজের বড় অংশও উর্দুর প্রতি সহনশীল ছিল। এর কারণ হলো, জাতীয় ভাষা নিয়ে হিন্দি ও উর্দু বিতর্ক। হিন্দু সম্প্রদায় হিন্দিকে আর মুসলিম সম্প্রদায় উর্দুকে জাতীয় ভাষা করবেন বলে বিতর্ক করছিলেন।
ভাষা প্রসঙ্গে আলোচনা করার সময় এ পটভূমিটি মনে রাখা দরকার। একাদিক্রমে কয়েক মাস বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে লেখালেখি হলে তা শিক্ষিত ও ছাত্রসমাজকে প্রভাবিত করে। উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে সরকারি চাকরিতে যে বাঙালিরা পিছিয়ে পড়বে, সেটা প্রকাশ পেতে থাকে। বাঙালির মনে পড়ে যায়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে বাংলার সরকারি চাকরিতে ছিল হিন্দু-আধিপত্য। তার ঐতিহাসিক কারণও আমরা আগেই বর্ণনা করেছি। দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গেই হিন্দু-প্রাধান্য খর্ব হয় হিন্দুদের অধিকাংশ নবগঠিত ভারতে চলে যাওয়ার পর। সে সময় ইংরেজির আধিপত্যও কমে যায়। সেই শূন্যস্থান কে পূরণ করেছিল? বাঙালি?
একেবারেই না। সে সময় চাকরির ক্ষেত্রে উর্দুভাষী তথা পশ্চিম পাকিস্তানিদের আধিপত্য দেখা যায়। লেখক সমাজ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, বাংলা ভাষার সপক্ষে তুলে ধরেছেন তাঁদের মতামত, কিন্তু রাষ্ট্রভাষা হবে কোন ভাষা, তা নিয়ে একক কোনো মত দাঁড়ায়নি। ভাষা আন্দোলনের আগে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা যায়নি।
আবদুল হকের অনুসরণে ভাষা-প্রশ্নে সে সময় সরকারিভাবে এবং সাধারণ ভাবনায় যে ছয়টি অভিমত প্রচলিত ছিল, তার সঙ্গে এবার আমরা পরিচিত হব।
উর্দু ভাষার পক্ষে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং আন্তপ্রাদেশিক যোগাযোগের ভাষা হবে একমাত্র উর্দু। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং পাকিস্তান সরকারের নীতিই ছিল তা। সেই সঙ্গে বলা হয়েছিল, পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা বাংলা হবে কি না, তা ঠিক করবেন এই প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
বাংলার মানুষ এই নীতি মেনে নেয়নি। ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এই নীতির বিরোধিতা করেই।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত বাংলা—এ মতবাদটি তখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে দৈনিক আজাদে প্রকাশিত ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ নামের প্রবন্ধে এ দাবি করা হয়েছিল। দু-একজনের বেশি লেখকও এ রকম চরম দাবি করেননি। কিন্তু উর্দুর প্রতি বাঙালির মোহ ভাঙতে এ মতবাদের একটি গুরুত্ব ছিল।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আরেকটি মত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত বাংলা, উর্দু, ইংরেজি ও আরবি। পূর্ব বাংলার শিক্ষার বাহন হওয়া উচিত বাংলা।
এ দাবিটি খুব বাস্তবসম্মত ছিল না। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে একই সঙ্গে উর্দুর দাবিও দুর্বল হয়। তাই এই মতেরও তাৎপর্য রয়েছে।
১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা বিস্তারিতভাবে বলার আগে সেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী সময়টিতে রাষ্ট্রভাষা নিয়ে যে আলোচনাগুলো হচ্ছিল, তার একটি অবয়ব তুলে আনা দরকার।
উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম লেখক সম্প্রদায়ই প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সে সময় বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম নেতা এবং শিক্ষিত ছাত্রসমাজের বড় অংশও উর্দুর প্রতি সহনশীল ছিল। এর কারণ হলো, জাতীয় ভাষা নিয়ে হিন্দি ও উর্দু বিতর্ক। হিন্দু সম্প্রদায় হিন্দিকে আর মুসলিম সম্প্রদায় উর্দুকে জাতীয় ভাষা করবেন বলে বিতর্ক করছিলেন।
ভাষা প্রসঙ্গে আলোচনা করার সময় এ পটভূমিটি মনে রাখা দরকার। একাদিক্রমে কয়েক মাস বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে লেখালেখি হলে তা শিক্ষিত ও ছাত্রসমাজকে প্রভাবিত করে। উর্দু রাষ্ট্রভাষা হলে সরকারি চাকরিতে যে বাঙালিরা পিছিয়ে পড়বে, সেটা প্রকাশ পেতে থাকে। বাঙালির মনে পড়ে যায়, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে বাংলার সরকারি চাকরিতে ছিল হিন্দু-আধিপত্য। তার ঐতিহাসিক কারণও আমরা আগেই বর্ণনা করেছি। দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গেই হিন্দু-প্রাধান্য খর্ব হয় হিন্দুদের অধিকাংশ নবগঠিত ভারতে চলে যাওয়ার পর। সে সময় ইংরেজির আধিপত্যও কমে যায়। সেই শূন্যস্থান কে পূরণ করেছিল? বাঙালি?
একেবারেই না। সে সময় চাকরির ক্ষেত্রে উর্দুভাষী তথা পশ্চিম পাকিস্তানিদের আধিপত্য দেখা যায়। লেখক সমাজ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, বাংলা ভাষার সপক্ষে তুলে ধরেছেন তাঁদের মতামত, কিন্তু রাষ্ট্রভাষা হবে কোন ভাষা, তা নিয়ে একক কোনো মত দাঁড়ায়নি। ভাষা আন্দোলনের আগে এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা যায়নি।
আবদুল হকের অনুসরণে ভাষা-প্রশ্নে সে সময় সরকারিভাবে এবং সাধারণ ভাবনায় যে ছয়টি অভিমত প্রচলিত ছিল, তার সঙ্গে এবার আমরা পরিচিত হব।
উর্দু ভাষার পক্ষে বলা হচ্ছিল, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা এবং আন্তপ্রাদেশিক যোগাযোগের ভাষা হবে একমাত্র উর্দু। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং পাকিস্তান সরকারের নীতিই ছিল তা। সেই সঙ্গে বলা হয়েছিল, পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা বাংলা হবে কি না, তা ঠিক করবেন এই প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা।
বাংলার মানুষ এই নীতি মেনে নেয়নি। ভাষা আন্দোলন গড়ে উঠেছিল এই নীতির বিরোধিতা করেই।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত বাংলা—এ মতবাদটি তখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে দৈনিক আজাদে প্রকাশিত ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ নামের প্রবন্ধে এ দাবি করা হয়েছিল। দু-একজনের বেশি লেখকও এ রকম চরম দাবি করেননি। কিন্তু উর্দুর প্রতি বাঙালির মোহ ভাঙতে এ মতবাদের একটি গুরুত্ব ছিল।
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আরেকটি মত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত বাংলা, উর্দু, ইংরেজি ও আরবি। পূর্ব বাংলার শিক্ষার বাহন হওয়া উচিত বাংলা।
এ দাবিটি খুব বাস্তবসম্মত ছিল না। তাতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে একই সঙ্গে উর্দুর দাবিও দুর্বল হয়। তাই এই মতেরও তাৎপর্য রয়েছে।
এবারের মার্চ মাসটাকে কীভাবে দেখা হবে? কে কীভাবে দেখবে? উন্মাতাল এই শহরের ফুঁসে ওঠা দেখে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন ৩ মার্চের ইত্তেফাকের শিরোনাম করেছিলেন ‘বিক্ষুব্ধ নগরীর ভয়াল গর্জন’।
২ ঘণ্টা আগেএবার সিডনির বইমেলায়ও মানুষের সমাগম কম হয়েছে। প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত মেলাটিতে ছিল সামান্যসংখ্যক মানুষ। পরদিন রোববার দীর্ঘকালের মেলাটি গতবারের মতো মানুষ টানতে পারেনি। আমি যখন মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছাই, তখন যা দেখেছি তাতে এটা বলা চলে যে মানুষ আগের মতো আসেনি।
২ ঘণ্টা আগেকতভাবে যে লুটপাটের পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন চলছে, তার হিসাব কোনো জ্যোতিষী হিসাববিজ্ঞানে পারদর্শী ব্যক্তিও করতে পারবেন বলে মনে হয় না। ২৪ ফেব্রুয়ারি আজকের পত্রিকায় ‘২০০ বছরের মাঠ কেটে পুকুর, উজাড় গাছও’ শিরোনামের খবরটি পড়লে...
২ ঘণ্টা আগেড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বর্তমানে তিনি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণ এবং প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন...
১ দিন আগে