এম আর রহমান
১৯৪২ সালে নাৎসি প্রচারণার পাল্টা জবাব দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আন্তর্জাতিক রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচার মাধ্যমটি। সেই ভয়েস অব আমেরিকা এখন বন্ধ হওয়ার পথে! গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অব আমেরিকার ১ হাজার ৩০০-এর বেশি সাংবাদিক ও কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যা সম্প্রচার মাধ্যমটির কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া ভিওএ-এর মূল সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি এবং রেডিও ফ্রি এশিয়ার মতো অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের তহবিলও বাতিল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০টি ভাষায় সংবাদ ও তথ্য সম্প্রচার করেছে, যা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাত। এই সংবাদমাধ্যমটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান প্রচার করার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের জন্যও পরিচিত ছিল।
১ হাজার ৩০০-এর বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়ে মূলত পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে ভিওএকে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্রামোভিৎজের কথায় সেই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি গভীরভাবে দুঃখিত যে ৮৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ভয়েস অব আমেরিকাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটির জন্য দূরদর্শী সংস্কার প্রয়োজন ছিল এবং আমরা সেই পথে কিছুটা এগিয়েছিলাম। কিন্তু আজকের এই সিদ্ধান্ত ভয়েস অব আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করবে। আজকের বিশ্বে এই দায়িত্ব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যখন ইরান, চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিপক্ষরা যুক্তরাষ্ট্রকে হেয় করার জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।’
আব্রামোভিৎজ আরও বলেছেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকা বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে প্রচার করে, আমেরিকার কাহিনি তুলে ধরে এবং বিশেষ করে যারা স্বৈরাচারের শাসনে বাস করে, তাদের জন্য নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করে। এই সংস্থা কোনোভাবে টিকে গেলেও, আজ প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ভয়েস অব আমেরিকার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে একটি নিরাপদ ও মুক্ত বিশ্ব গঠনের প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে।’
এর আগে ২০২১ সালে বন্ধ হয় ভয়েস অব আমেরিকার জনপ্রিয় বাংলা রেডিও। দীর্ঘ ৬৩ বছর ধরে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় সম্প্রচার হওয়া এই সার্ভিসটি ওই বছরের ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে রেডিও খুব একটা জনপ্রিয় নয়। শ্রোতা কমার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও অর্থায়ন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলা রেডিও সার্ভিস।
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করেপারেশন বা বিবিসিও ২০২২ সালে তাদের বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেয়, যা বাঙালি শ্রোতাদের জন্য ছিল বড় একটি ধাক্কা। বিবিসি বাংলা বিভাগের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধেরও মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক সংকট ও বাজেট কাটছাঁট। জানা যায়, ব্রিটেনের সরকার ২০২২ সালে বিবিসির লাইসেন্স ফি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে যায়। এই সংকট মোকাবিলায় বিবিসি তাদের বিভিন্ন ভাষার রেডিও সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। শুধু বাংলা নয়, বিবিসি আরবি, চীনা, ফারসি ও হিন্দি ভাষার রেডিও সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়।
ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা মোটামুটি অনুমান করা যায়। বিশ্বজুড়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে ভয়েস অব আমেরিকা বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দেশগুলোতে নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারের জন্য পরিচিত ছিল। চীন, রাশিয়া, ইরান, কিউবা ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, সেখানে ভিওএ ছিল নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস। ভিওএ যদি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই দেশগুলোর সাধারণ জনগণ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদ পাওয়া থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হবে। সরকার ও কর্তৃত্ববাদী শক্তির নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলোর দাপট ও একচ্ছত্র আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে। নিরপেক্ষ ও বিকল্প কণ্ঠস্বর আরও বেশি দমন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ কমে যাবে
গণমাধ্যম শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি একটি কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো তাদের গণমাধ্যমকে ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, যা বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করে। তেমনি ভয়েস অব আমেরিকা শুধু একটি সংবাদমাধ্যম নয়; এটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা কূটনৈতিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভিওএ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এটি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মুক্ত মতপ্রকাশের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। ভিওএর কার্যক্রম কমে গেলে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব হ্রাস পেতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো (যেমন চীন ও রাশিয়া) তাদের নিজস্ব সংবাদমাধ্যম দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করতে পারে। চীনের সিজিটিএন (চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক) এবং রাশিয়ার আরটি (রাশিয়া টুডে) ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদের বৈচিত্র্য কমে যাবে
ভয়েস অব আমেরিকা প্রায় ৫০টি ভাষায় সংবাদ পরিবেশন করে আসছিল, যা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছে দিত। এটি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব সংবাদ জগতে তথ্যের বৈচিত্র্য কমে যাবে। স্থানীয় মিডিয়াগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, যা অনেক সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংযোগ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলে ভয়েস অব আমেরিকার গুরুত্ব অনেক বেশি।
ভুয়া সংবাদ এবং প্রোপাগান্ডার ঝুঁকি বাড়বে
ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত মিডিয়া থেকে মানুষ আরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্বাধীন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করবে। তবে এটি ভুয়া সংবাদ এবং প্রোপাগান্ডার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশ্বে ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের সমস্যা আগেও ছিল, কিন্তু নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা কমে গেলে এই সমস্যাটি আরও তীব্র হতে পারে।
রেডিও সংবাদমাধ্যমের জনপ্রিয়তা আরও কমবে
ভয়েস অব আমেরিকা ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেডিওভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এটি বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেডিও-শ্রোতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি বন্ধ হলে রেডিওতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্প্রচার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। বিশেষত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ এখনো সব জায়গায় সহজলভ্য নয়।
ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম বন্ধ হওয়া বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এটি শুধু একটি মিডিয়ার সংকট নয়, বরং বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রবাহের ভারসাম্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম সব সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। ডিজিটাল যুগে এই সংকট হয়তো নতুন কিছু সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ব গণমাধ্যম কীভাবে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টি কতটা বজায় রাখতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
১৯৪২ সালে নাৎসি প্রচারণার পাল্টা জবাব দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি আন্তর্জাতিক রেডিও এবং টেলিভিশন সম্প্রচার মাধ্যমটি। সেই ভয়েস অব আমেরিকা এখন বন্ধ হওয়ার পথে! গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভয়েস অব আমেরিকার ১ হাজার ৩০০-এর বেশি সাংবাদিক ও কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, যা সম্প্রচার মাধ্যমটির কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া ভিওএ-এর মূল সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি এবং রেডিও ফ্রি এশিয়ার মতো অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের তহবিলও বাতিল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভয়েস অব আমেরিকা (ভিওএ) বিশ্বব্যাপী অন্যতম প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০টি ভাষায় সংবাদ ও তথ্য সম্প্রচার করেছে, যা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাত। এই সংবাদমাধ্যমটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান প্রচার করার পাশাপাশি নিরপেক্ষ ও স্বাধীন সংবাদ পরিবেশনের জন্যও পরিচিত ছিল।
১ হাজার ৩০০-এর বেশি কর্মীকে ছুটিতে পাঠিয়ে মূলত পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে ভিওএকে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্রামোভিৎজের কথায় সেই বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি গভীরভাবে দুঃখিত যে ৮৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ভয়েস অব আমেরিকাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটির জন্য দূরদর্শী সংস্কার প্রয়োজন ছিল এবং আমরা সেই পথে কিছুটা এগিয়েছিলাম। কিন্তু আজকের এই সিদ্ধান্ত ভয়েস অব আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করবে। আজকের বিশ্বে এই দায়িত্ব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যখন ইরান, চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিপক্ষরা যুক্তরাষ্ট্রকে হেয় করার জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।’
আব্রামোভিৎজ আরও বলেছেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকা বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে প্রচার করে, আমেরিকার কাহিনি তুলে ধরে এবং বিশেষ করে যারা স্বৈরাচারের শাসনে বাস করে, তাদের জন্য নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ ও তথ্য সরবরাহ করে। এই সংস্থা কোনোভাবে টিকে গেলেও, আজ প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো ভয়েস অব আমেরিকার ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে একটি নিরাপদ ও মুক্ত বিশ্ব গঠনের প্রচেষ্টা ব্যাহত হবে।’
এর আগে ২০২১ সালে বন্ধ হয় ভয়েস অব আমেরিকার জনপ্রিয় বাংলা রেডিও। দীর্ঘ ৬৩ বছর ধরে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় সম্প্রচার হওয়া এই সার্ভিসটি ওই বছরের ১৭ জুলাই থেকে বন্ধ হয়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, বর্তমান প্রজন্মের কাছে রেডিও খুব একটা জনপ্রিয় নয়। শ্রোতা কমার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন ও অর্থায়ন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলা রেডিও সার্ভিস।
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করেপারেশন বা বিবিসিও ২০২২ সালে তাদের বাংলা বিভাগ বন্ধ করে দেয়, যা বাঙালি শ্রোতাদের জন্য ছিল বড় একটি ধাক্কা। বিবিসি বাংলা বিভাগের সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধেরও মূল কারণ ছিল অর্থনৈতিক সংকট ও বাজেট কাটছাঁট। জানা যায়, ব্রিটেনের সরকার ২০২২ সালে বিবিসির লাইসেন্স ফি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক সংকট বেড়ে যায়। এই সংকট মোকাবিলায় বিবিসি তাদের বিভিন্ন ভাষার রেডিও সম্প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। শুধু বাংলা নয়, বিবিসি আরবি, চীনা, ফারসি ও হিন্দি ভাষার রেডিও সম্প্রচারও বন্ধ করে দেয়।
ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কী কী প্রভাব পড়তে পারে তা মোটামুটি অনুমান করা যায়। বিশ্বজুড়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে ভয়েস অব আমেরিকা বিশেষ করে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার দেশগুলোতে নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারের জন্য পরিচিত ছিল। চীন, রাশিয়া, ইরান, কিউবা ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত, সেখানে ভিওএ ছিল নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস। ভিওএ যদি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই দেশগুলোর সাধারণ জনগণ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদ পাওয়া থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হবে। সরকার ও কর্তৃত্ববাদী শক্তির নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলোর দাপট ও একচ্ছত্র আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে। নিরপেক্ষ ও বিকল্প কণ্ঠস্বর আরও বেশি দমন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ কমে যাবে
গণমাধ্যম শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়; এটি একটি কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো তাদের গণমাধ্যমকে ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, যা বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করে। তেমনি ভয়েস অব আমেরিকা শুধু একটি সংবাদমাধ্যম নয়; এটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ বা কূটনৈতিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভিওএ আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এটি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মুক্ত মতপ্রকাশের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছে। ভিওএর কার্যক্রম কমে গেলে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রভাব হ্রাস পেতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো (যেমন চীন ও রাশিয়া) তাদের নিজস্ব সংবাদমাধ্যম দিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার করতে পারে। চীনের সিজিটিএন (চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক) এবং রাশিয়ার আরটি (রাশিয়া টুডে) ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদের বৈচিত্র্য কমে যাবে
ভয়েস অব আমেরিকা প্রায় ৫০টি ভাষায় সংবাদ পরিবেশন করে আসছিল, যা বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছে দিত। এটি বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব সংবাদ জগতে তথ্যের বৈচিত্র্য কমে যাবে। স্থানীয় মিডিয়াগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে, যা অনেক সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংযোগ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মতো অঞ্চলে ভয়েস অব আমেরিকার গুরুত্ব অনেক বেশি।
ভুয়া সংবাদ এবং প্রোপাগান্ডার ঝুঁকি বাড়বে
ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধ হলে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত মিডিয়া থেকে মানুষ আরও বেশি সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্বাধীন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করবে। তবে এটি ভুয়া সংবাদ এবং প্রোপাগান্ডার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশ্বে ভুয়া সংবাদ ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের সমস্যা আগেও ছিল, কিন্তু নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা কমে গেলে এই সমস্যাটি আরও তীব্র হতে পারে।
রেডিও সংবাদমাধ্যমের জনপ্রিয়তা আরও কমবে
ভয়েস অব আমেরিকা ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ রেডিওভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এটি বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেডিও-শ্রোতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি বন্ধ হলে রেডিওতে আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্প্রচার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। বিশেষত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের গ্রামীণ অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ এখনো সব জায়গায় সহজলভ্য নয়।
ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম বন্ধ হওয়া বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এটি শুধু একটি মিডিয়ার সংকট নয়, বরং বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রবাহের ভারসাম্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম সব সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। ডিজিটাল যুগে এই সংকট হয়তো নতুন কিছু সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। এখন দেখার বিষয়, বিশ্ব গণমাধ্যম কীভাবে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টি কতটা বজায় রাখতে পারে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাত ও সংকট যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন শান্তি প্রতিষ্ঠার আশায় জাতিসংঘের দিকে তাকিয়ে থাকে বিশ্ব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, জাতিসংঘ কি সত্যিই কার্যকরভাবে সংকট সমাধান করতে পারে, নাকি এটি শুধুই একটি প্রতীকী সংস্থা, যা আলোচনার বাইরে তেমন কিছু করতে পারে না?
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ফুটবলে দীর্ঘদিন ধরে এক অপূর্ণতা ছিল—আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিচিত কোনো ফুটবলারের অভাব। সেই শূন্যতা এবার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চলেছেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে খেলা এই মিডফিল্ডার যখন বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠে নামবেন, তখন শুধু একটি খেলাই হবে না, হবে নতুন এক স্বপ্নের ..
৪ ঘণ্টা আগেকৃষিকে ঘিরেই নেদারল্যান্ডসের যত কাজকারবার। কৃষি গবেষণা, কৃষি প্রযুক্তির বিকাশ থেকে শুরু করে কৃষি কর্মকাণ্ড ও কৃষি-বাণিজ্যের এক সূতিকাগার নেদারল্যান্ডস। কাজের সূত্রে বেশ কয়েকবার নেদারল্যান্ডস যাওয়ার সুযোগ হয়েছে আমার।
১ দিন আগে-গল্পটা এমন—লেনিনকে ঈশ্বরের মুখোমুখি করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য, তিনি স্বর্গে যাবেন না নরকে যাবেন, তা নির্ধারণ করা। ঈশ্বরের দূত খুব জোর গলায় বলছিলেন, লেনিন একজন পাপী। তাঁর মতে, লেনিন সারা জীবন ঈশ্বরের বদনাম করেছেন।
১ দিন আগে