ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মুহাম্মদ শামসুদ্দিন

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন পরিপক্ব ও পরিণত জাতিরাষ্ট্র। ১৬৪৮ সালের পিস অব ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির আলোকে ওয়েস্টফেলিয়া তত্ত্ব অনুযায়ী, রাজনৈতিক মডেল বিবেচনায় মূলত দুটি নীতির ওপরে ভিত্তি করে জাতিরাষ্ট্র পরিচালিত হয়। প্রথমটি হলো রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের (state sovereignty) নীতি, যা রাষ্ট্রের নিজ ভূখণ্ডকে বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। দ্বিতীয়টি হলো জাতীয় সার্বভৌমত্বের (national sovereignty) নীতি, যা কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। আদর্শিক ও নৈতিকতার দিক থেকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব নীতির মূল ভিত্তি জনগণের শাসন, যে ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা ও সার্বিক কল্যাণের প্রতিফলন ঘটে।
জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান প্রেক্ষাপটগুলো কী এবং আমাদের জন্য জরুরি বিবেচ্য বিষয়গুলো কী হতে পারে। সময়ের গুরুত্ব বিবেচনায় এই আলোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক বলেই আমি মনে করি।
জাতীয় নিরাপত্তার সহজ সংজ্ঞা হলো জাতি ও রাষ্ট্রের সব ধরনের স্বাধীনতা, ভূখণ্ড ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব, জাতির নিজস্ব ইচ্ছা ও মূল্যবোধ রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে মূলত ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা; রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা; জাতির স্বাধীন ইচ্ছা ও মূল্যবোধের নিরাপত্তা; অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা; অর্থনৈতিক নিরাপত্তা; কূটনৈতিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা; সংস্কৃতি, পরিবেশ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ নিরাপত্তা সন্নিহিত।
ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কূটনৈতিক স্বাধীনতাসহ অন্য সব নিরাপত্তা অনেকাংশই জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে। তবে অন্য সব জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো রক্ষার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ওপর বর্তায়। প্রতিটি একে অপরের পরিপূরক এবং একটার সঙ্গে অন্যটি সংশ্লিষ্ট।
একটি জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শাসন ব্যবস্থায় নিজ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা ও সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে সম্ভব। অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের পদলেহন, তাদের কাছ থেকে জাতির স্বার্থবিরোধী অনাকাঙ্ক্ষিত সমর্থন প্রত্যাশা বা তাদের স্বার্থ রক্ষায় নীতিনির্ধারণ জাতীয় সার্বভৌমত্বকে শুধু বিকিয়ে দেয় না, জাতির সার্বিক নিরাপত্তাকেও দুর্বল করে। শেখ হাসিনার সরকারের বিগত ১৫ বছরের সময়কালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও আন্তঃদেশীয় রেলওয়ে লাইন স্থাপন চুক্তি; আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত সরকারের স্বার্থ রক্ষায় দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের অনেক দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীর কোনো রকম সুপারিশ এসব ক্ষেত্রে তারা গ্রহণ করেনি। সব ক্ষেত্রেই তারা দেশের জনগণের ইচ্ছার বা স্বার্থের কথা না ভেবে নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত সরকারের সমর্থনকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল—বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) কর্তৃক ২০০৯ সালের ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনার ভারত সরকারের সামরিক সমর্থন চাওয়া। ‘ইন্ডিয়াস নিয়ার ইন্ট: অ্যা নিউ হিস্টোরি’ শিরোনামে ভারতীয় নিবন্ধকার অভিনাষ পলিওয়াল দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার অনুরোধে তাঁকে রক্ষার জন্য ২৬ ফেব্রয়ারি ৫/৬টি আইএল ৭৬ ও এএন ৩২ বিমান এবং প্রায় ১০০০ ছত্রিসেনা পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় বিমানঘাঁটি কালিয়াকিণ্ডে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ ব্যাোলিয়নের মেজর কামালদীপ সিং সান্ধুকে উদৃত্ত করে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন। এই দাবি সত্য হলে এর স্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায়—দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যত বড় হুমকিই হোক, নিজের স্বার্থ রক্ষায় ‘প্রভু রাষ্ট্রের’ সামরিক বাহিনীকে নিজ দেশে ডেকে আনা।
তা ছাড়া ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গেয়ে তার ‘প্রভুরাষ্ট্রে’ আশ্রয় নেওয়া অথবা তাঁর জীবন হুমকির সম্মুখীন হলে ‘সম্ভাব্য প্রভুরাষ্ট্রের’ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ এই দেশের রাষ্ট্র ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে। তা ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোটের অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটিয়ে বা সম্পৃক্ততাকে মূল্যায়ন না করে জাতীয় সার্বভৌমত্বতের ধারণাকে অবদমিত করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নীতির প্রশ্নে প্রথমেই আসে ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষা। বিষয়টি জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ হলেও অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর বিষয় হলেও এর সঙ্গে কূটনীতি, অর্থনীতি, যোগাযোগ, জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইত্যাদি সরাসরি সম্পৃক্ত। তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার অন্যান্য উপাদানের নিরাপত্তা যেমন—অর্থনৈতিক; তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ; পরিবেশ, পানিসম্পদ ইত্যাদির নিরাপত্তা জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত জগদ্বিখ্যাত বই ‘দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস’-এ অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ সেই ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, শুধু সম্পদ অর্জন করলেই হবে না, যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখব যে, খুব পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত—১৯৯৬ সালের ২০ মে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ঘটিয়ে সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টি ও খলনায়কদের পুনর্বাসন; ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে অত্যন্ত মেধাবী ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা; বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সত্যি ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ও প্রতিবাদী অফিসারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত, শেখ তাপস হত্যাচেষ্টার নামে অনেক অফিসারকে বরখাস্ত ও জেল জরিমানা এবং পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনীকে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা এবং পেশাদারিত্ব ধ্বংসের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টি-পারসনাল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা যুদ্ধ কৌশলের সুসংহত কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। অথচ ভারত, পাকিস্তানসহ অত্র অঞ্চলের কোনো দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারতপ্রীতির কারণে এই সরকার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল প্রশিক্ষণের ছোটখাটো বিষয়াদিতেও হস্তক্ষেপ করেছে। উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের গবেষণাসংক্রান্ত লেখা, অতিথি বা বিশেষজ্ঞ বক্তা নির্বাচন ইত্যাদির ব্যপারে গোয়েন্দা নজরদারি/নিয়ন্ত্রণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেশাগত বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আজকে কতটুকু সুসংহত কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। সকল স্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির মহামারি ও সরকারি ছত্রছায়ায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ব্যাপকতায় দেশ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংক-ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, মেগা প্রজেক্টের নামে দেশের স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো ভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। যেকোনো সময় বহিঃনিরাপত্তাকে প্রভাবিত করার মতো সম্ভাবনা নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি হিসেবে চলমানই ছিল। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অসংগঠিত অবস্থা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা; পতিত সরকারের মরণকামড়ের প্রচেষ্টায় তাদের প্রভু রাষ্ট্রের উসকানিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো রকম সময় না দিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থির করে রাখা; আনসার আন্দোলন, অন্যান্য ধর্মাম্বলীর ওপর আক্রমণের প্রহসন, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন ও ভাঙচুরের প্রচেষ্টা, পার্বত্য জেলাগুলোতে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে উসকানির মাধ্যমে চরম অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা ইত্যাদির মতো একসঙ্গে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কখনো হয়নি। দুই মাসের জন্য সেনাবাহিনীর অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার নাজুকতা ও গুরত্বকেই প্রমাণ করে।
পানিসম্পদের নিরাপত্তা ইস্যুটি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, আমরা আগেও তা অনেকবার প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এবার ভারত কোনো রকম পূর্বাভাস না দিয়ে তাদের বাঁধ খুলে আমাদের পূর্বাঞ্চলকে ডুবিয়ে শত মানুষের জীবন নিয়ে এবং লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করে খুব ভালোভাবে পানিসম্পদ নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে জ্বালানি নিরাপত্তার চলমান সংকট, খাদ্য নিরাপত্তার মূল্যস্ফীতির সংকট ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বর্তমানে এতটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচিত না হলেও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর দুরভিসন্ধি থাকলে বা সরকারের অবহেলা হলে যেকোনো সময় সেগুলোও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
উপরোল্লিখিত আলোচনায় চিত্রিত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে:
১। জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটি (NCSA)কে সক্রিয় করা। এই কমিটির অস্তিত্ব থাকলেও আমরা খুব কমই এই কমিটির কোনো অর্থবহ কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছি।
২। নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির নির্দেশনায় প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ও চ্যালঞ্জগুলো চিহ্নিত করে জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা। পৃথিবীর অনেক দেশে জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা (national security policy) প্রণীত হয় ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নিয়মিত পর্যালোচনা করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা, অর্থনৈতিক নীতিমালা, পররাষ্ট্রসংক্রান্ত নীতিমালাসহ অন্য সব বিষয়ে নীতিমালা প্রণীত ও পর্যালোচনা করা হয়।
৩। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলো (elements of national power) হলো: সামরিক, আধা সামরিক ও অন্যান্য বাহিনী, অর্থনীতি, কূটনীতি, মানবসম্পদ, জ্বালানিসম্পদ, পানিসম্পদ, সর্বোপরি জাতীয় ইচ্ছাশক্তি (national will)। এই শক্তিগুলো জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার লক্ষ্যসমূহ (policy objectives) অর্জনে সর্বদা সক্রিয় রাখতে এবং তাদের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীসমূহ ও মন্ত্রণালায়গুলোর মধ্যে নিয়মিত সমন্বয়ের প্রতি গুরত্ব আরোপ করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, কখনো কখনো কোনো কোনো রাস্তা ও ব্রিজের মত স্থাপনা নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও জাতীয় প্রতিরক্ষা তথা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের প্রজেক্ট গ্রহণের আগে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি বা উপকমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করার দাবি রাখে।
৪। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। এজন্য পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীসমূহ পুরোপুরি সুসংহত ও পুনর্গঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্বশস্ত্র বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখা। এর ব্যতিক্রম হলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং তার সুযোগে প্রতিবিপ্লব হয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
৫। জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য স্বশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও আধুনিকায়ন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে; তবে সবার আগে স্বশস্ত্র বাহিনীসহ সব আধা সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ও এদের সব সদস্যের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি ও রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।
পরিশেষে আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে পারলে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন ও সত্যিকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ অন্য সবনিরাপত্তা সহজেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিতাড়িত করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে এবং ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে, এতে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যেযেকোনো দেশই বাংলাদেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতে অনেকবার ভাববে। তা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহস ও ইচ্ছাশক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো আছেই।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
(নিবন্ধে প্রকাশিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ লেখকের নিজস্ব।)

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন পরিপক্ব ও পরিণত জাতিরাষ্ট্র। ১৬৪৮ সালের পিস অব ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির আলোকে ওয়েস্টফেলিয়া তত্ত্ব অনুযায়ী, রাজনৈতিক মডেল বিবেচনায় মূলত দুটি নীতির ওপরে ভিত্তি করে জাতিরাষ্ট্র পরিচালিত হয়। প্রথমটি হলো রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের (state sovereignty) নীতি, যা রাষ্ট্রের নিজ ভূখণ্ডকে বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। দ্বিতীয়টি হলো জাতীয় সার্বভৌমত্বের (national sovereignty) নীতি, যা কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। আদর্শিক ও নৈতিকতার দিক থেকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব নীতির মূল ভিত্তি জনগণের শাসন, যে ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা ও সার্বিক কল্যাণের প্রতিফলন ঘটে।
জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান প্রেক্ষাপটগুলো কী এবং আমাদের জন্য জরুরি বিবেচ্য বিষয়গুলো কী হতে পারে। সময়ের গুরুত্ব বিবেচনায় এই আলোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক বলেই আমি মনে করি।
জাতীয় নিরাপত্তার সহজ সংজ্ঞা হলো জাতি ও রাষ্ট্রের সব ধরনের স্বাধীনতা, ভূখণ্ড ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব, জাতির নিজস্ব ইচ্ছা ও মূল্যবোধ রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে মূলত ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা; রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা; জাতির স্বাধীন ইচ্ছা ও মূল্যবোধের নিরাপত্তা; অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা; অর্থনৈতিক নিরাপত্তা; কূটনৈতিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা; সংস্কৃতি, পরিবেশ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ নিরাপত্তা সন্নিহিত।
ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কূটনৈতিক স্বাধীনতাসহ অন্য সব নিরাপত্তা অনেকাংশই জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে। তবে অন্য সব জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো রক্ষার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ওপর বর্তায়। প্রতিটি একে অপরের পরিপূরক এবং একটার সঙ্গে অন্যটি সংশ্লিষ্ট।
একটি জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শাসন ব্যবস্থায় নিজ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা ও সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে সম্ভব। অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের পদলেহন, তাদের কাছ থেকে জাতির স্বার্থবিরোধী অনাকাঙ্ক্ষিত সমর্থন প্রত্যাশা বা তাদের স্বার্থ রক্ষায় নীতিনির্ধারণ জাতীয় সার্বভৌমত্বকে শুধু বিকিয়ে দেয় না, জাতির সার্বিক নিরাপত্তাকেও দুর্বল করে। শেখ হাসিনার সরকারের বিগত ১৫ বছরের সময়কালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও আন্তঃদেশীয় রেলওয়ে লাইন স্থাপন চুক্তি; আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত সরকারের স্বার্থ রক্ষায় দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের অনেক দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীর কোনো রকম সুপারিশ এসব ক্ষেত্রে তারা গ্রহণ করেনি। সব ক্ষেত্রেই তারা দেশের জনগণের ইচ্ছার বা স্বার্থের কথা না ভেবে নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত সরকারের সমর্থনকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল—বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) কর্তৃক ২০০৯ সালের ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনার ভারত সরকারের সামরিক সমর্থন চাওয়া। ‘ইন্ডিয়াস নিয়ার ইন্ট: অ্যা নিউ হিস্টোরি’ শিরোনামে ভারতীয় নিবন্ধকার অভিনাষ পলিওয়াল দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার অনুরোধে তাঁকে রক্ষার জন্য ২৬ ফেব্রয়ারি ৫/৬টি আইএল ৭৬ ও এএন ৩২ বিমান এবং প্রায় ১০০০ ছত্রিসেনা পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় বিমানঘাঁটি কালিয়াকিণ্ডে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ ব্যাোলিয়নের মেজর কামালদীপ সিং সান্ধুকে উদৃত্ত করে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন। এই দাবি সত্য হলে এর স্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায়—দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যত বড় হুমকিই হোক, নিজের স্বার্থ রক্ষায় ‘প্রভু রাষ্ট্রের’ সামরিক বাহিনীকে নিজ দেশে ডেকে আনা।
তা ছাড়া ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গেয়ে তার ‘প্রভুরাষ্ট্রে’ আশ্রয় নেওয়া অথবা তাঁর জীবন হুমকির সম্মুখীন হলে ‘সম্ভাব্য প্রভুরাষ্ট্রের’ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ এই দেশের রাষ্ট্র ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে। তা ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোটের অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটিয়ে বা সম্পৃক্ততাকে মূল্যায়ন না করে জাতীয় সার্বভৌমত্বতের ধারণাকে অবদমিত করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নীতির প্রশ্নে প্রথমেই আসে ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষা। বিষয়টি জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ হলেও অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর বিষয় হলেও এর সঙ্গে কূটনীতি, অর্থনীতি, যোগাযোগ, জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইত্যাদি সরাসরি সম্পৃক্ত। তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার অন্যান্য উপাদানের নিরাপত্তা যেমন—অর্থনৈতিক; তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ; পরিবেশ, পানিসম্পদ ইত্যাদির নিরাপত্তা জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত জগদ্বিখ্যাত বই ‘দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস’-এ অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ সেই ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, শুধু সম্পদ অর্জন করলেই হবে না, যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখব যে, খুব পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত—১৯৯৬ সালের ২০ মে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ঘটিয়ে সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টি ও খলনায়কদের পুনর্বাসন; ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে অত্যন্ত মেধাবী ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা; বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সত্যি ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ও প্রতিবাদী অফিসারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত, শেখ তাপস হত্যাচেষ্টার নামে অনেক অফিসারকে বরখাস্ত ও জেল জরিমানা এবং পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনীকে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা এবং পেশাদারিত্ব ধ্বংসের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টি-পারসনাল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা যুদ্ধ কৌশলের সুসংহত কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। অথচ ভারত, পাকিস্তানসহ অত্র অঞ্চলের কোনো দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারতপ্রীতির কারণে এই সরকার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল প্রশিক্ষণের ছোটখাটো বিষয়াদিতেও হস্তক্ষেপ করেছে। উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের গবেষণাসংক্রান্ত লেখা, অতিথি বা বিশেষজ্ঞ বক্তা নির্বাচন ইত্যাদির ব্যপারে গোয়েন্দা নজরদারি/নিয়ন্ত্রণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেশাগত বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আজকে কতটুকু সুসংহত কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। সকল স্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির মহামারি ও সরকারি ছত্রছায়ায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ব্যাপকতায় দেশ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংক-ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, মেগা প্রজেক্টের নামে দেশের স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো ভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। যেকোনো সময় বহিঃনিরাপত্তাকে প্রভাবিত করার মতো সম্ভাবনা নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি হিসেবে চলমানই ছিল। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অসংগঠিত অবস্থা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা; পতিত সরকারের মরণকামড়ের প্রচেষ্টায় তাদের প্রভু রাষ্ট্রের উসকানিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো রকম সময় না দিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থির করে রাখা; আনসার আন্দোলন, অন্যান্য ধর্মাম্বলীর ওপর আক্রমণের প্রহসন, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন ও ভাঙচুরের প্রচেষ্টা, পার্বত্য জেলাগুলোতে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে উসকানির মাধ্যমে চরম অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা ইত্যাদির মতো একসঙ্গে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কখনো হয়নি। দুই মাসের জন্য সেনাবাহিনীর অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার নাজুকতা ও গুরত্বকেই প্রমাণ করে।
পানিসম্পদের নিরাপত্তা ইস্যুটি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, আমরা আগেও তা অনেকবার প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এবার ভারত কোনো রকম পূর্বাভাস না দিয়ে তাদের বাঁধ খুলে আমাদের পূর্বাঞ্চলকে ডুবিয়ে শত মানুষের জীবন নিয়ে এবং লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করে খুব ভালোভাবে পানিসম্পদ নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে জ্বালানি নিরাপত্তার চলমান সংকট, খাদ্য নিরাপত্তার মূল্যস্ফীতির সংকট ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বর্তমানে এতটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচিত না হলেও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর দুরভিসন্ধি থাকলে বা সরকারের অবহেলা হলে যেকোনো সময় সেগুলোও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
উপরোল্লিখিত আলোচনায় চিত্রিত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে:
১। জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটি (NCSA)কে সক্রিয় করা। এই কমিটির অস্তিত্ব থাকলেও আমরা খুব কমই এই কমিটির কোনো অর্থবহ কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছি।
২। নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির নির্দেশনায় প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ও চ্যালঞ্জগুলো চিহ্নিত করে জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা। পৃথিবীর অনেক দেশে জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা (national security policy) প্রণীত হয় ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নিয়মিত পর্যালোচনা করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা, অর্থনৈতিক নীতিমালা, পররাষ্ট্রসংক্রান্ত নীতিমালাসহ অন্য সব বিষয়ে নীতিমালা প্রণীত ও পর্যালোচনা করা হয়।
৩। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলো (elements of national power) হলো: সামরিক, আধা সামরিক ও অন্যান্য বাহিনী, অর্থনীতি, কূটনীতি, মানবসম্পদ, জ্বালানিসম্পদ, পানিসম্পদ, সর্বোপরি জাতীয় ইচ্ছাশক্তি (national will)। এই শক্তিগুলো জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার লক্ষ্যসমূহ (policy objectives) অর্জনে সর্বদা সক্রিয় রাখতে এবং তাদের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীসমূহ ও মন্ত্রণালায়গুলোর মধ্যে নিয়মিত সমন্বয়ের প্রতি গুরত্ব আরোপ করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, কখনো কখনো কোনো কোনো রাস্তা ও ব্রিজের মত স্থাপনা নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও জাতীয় প্রতিরক্ষা তথা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের প্রজেক্ট গ্রহণের আগে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি বা উপকমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করার দাবি রাখে।
৪। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। এজন্য পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীসমূহ পুরোপুরি সুসংহত ও পুনর্গঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্বশস্ত্র বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখা। এর ব্যতিক্রম হলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং তার সুযোগে প্রতিবিপ্লব হয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
৫। জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য স্বশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও আধুনিকায়ন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে; তবে সবার আগে স্বশস্ত্র বাহিনীসহ সব আধা সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ও এদের সব সদস্যের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি ও রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।
পরিশেষে আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে পারলে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন ও সত্যিকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ অন্য সবনিরাপত্তা সহজেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিতাড়িত করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে এবং ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে, এতে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যেযেকোনো দেশই বাংলাদেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতে অনেকবার ভাববে। তা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহস ও ইচ্ছাশক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো আছেই।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
(নিবন্ধে প্রকাশিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ লেখকের নিজস্ব।)
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মুহাম্মদ শামসুদ্দিন

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন পরিপক্ব ও পরিণত জাতিরাষ্ট্র। ১৬৪৮ সালের পিস অব ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির আলোকে ওয়েস্টফেলিয়া তত্ত্ব অনুযায়ী, রাজনৈতিক মডেল বিবেচনায় মূলত দুটি নীতির ওপরে ভিত্তি করে জাতিরাষ্ট্র পরিচালিত হয়। প্রথমটি হলো রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের (state sovereignty) নীতি, যা রাষ্ট্রের নিজ ভূখণ্ডকে বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। দ্বিতীয়টি হলো জাতীয় সার্বভৌমত্বের (national sovereignty) নীতি, যা কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। আদর্শিক ও নৈতিকতার দিক থেকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব নীতির মূল ভিত্তি জনগণের শাসন, যে ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা ও সার্বিক কল্যাণের প্রতিফলন ঘটে।
জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান প্রেক্ষাপটগুলো কী এবং আমাদের জন্য জরুরি বিবেচ্য বিষয়গুলো কী হতে পারে। সময়ের গুরুত্ব বিবেচনায় এই আলোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক বলেই আমি মনে করি।
জাতীয় নিরাপত্তার সহজ সংজ্ঞা হলো জাতি ও রাষ্ট্রের সব ধরনের স্বাধীনতা, ভূখণ্ড ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব, জাতির নিজস্ব ইচ্ছা ও মূল্যবোধ রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে মূলত ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা; রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা; জাতির স্বাধীন ইচ্ছা ও মূল্যবোধের নিরাপত্তা; অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা; অর্থনৈতিক নিরাপত্তা; কূটনৈতিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা; সংস্কৃতি, পরিবেশ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ নিরাপত্তা সন্নিহিত।
ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কূটনৈতিক স্বাধীনতাসহ অন্য সব নিরাপত্তা অনেকাংশই জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে। তবে অন্য সব জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো রক্ষার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ওপর বর্তায়। প্রতিটি একে অপরের পরিপূরক এবং একটার সঙ্গে অন্যটি সংশ্লিষ্ট।
একটি জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শাসন ব্যবস্থায় নিজ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা ও সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে সম্ভব। অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের পদলেহন, তাদের কাছ থেকে জাতির স্বার্থবিরোধী অনাকাঙ্ক্ষিত সমর্থন প্রত্যাশা বা তাদের স্বার্থ রক্ষায় নীতিনির্ধারণ জাতীয় সার্বভৌমত্বকে শুধু বিকিয়ে দেয় না, জাতির সার্বিক নিরাপত্তাকেও দুর্বল করে। শেখ হাসিনার সরকারের বিগত ১৫ বছরের সময়কালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও আন্তঃদেশীয় রেলওয়ে লাইন স্থাপন চুক্তি; আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত সরকারের স্বার্থ রক্ষায় দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের অনেক দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীর কোনো রকম সুপারিশ এসব ক্ষেত্রে তারা গ্রহণ করেনি। সব ক্ষেত্রেই তারা দেশের জনগণের ইচ্ছার বা স্বার্থের কথা না ভেবে নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত সরকারের সমর্থনকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল—বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) কর্তৃক ২০০৯ সালের ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনার ভারত সরকারের সামরিক সমর্থন চাওয়া। ‘ইন্ডিয়াস নিয়ার ইন্ট: অ্যা নিউ হিস্টোরি’ শিরোনামে ভারতীয় নিবন্ধকার অভিনাষ পলিওয়াল দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার অনুরোধে তাঁকে রক্ষার জন্য ২৬ ফেব্রয়ারি ৫/৬টি আইএল ৭৬ ও এএন ৩২ বিমান এবং প্রায় ১০০০ ছত্রিসেনা পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় বিমানঘাঁটি কালিয়াকিণ্ডে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ ব্যাোলিয়নের মেজর কামালদীপ সিং সান্ধুকে উদৃত্ত করে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন। এই দাবি সত্য হলে এর স্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায়—দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যত বড় হুমকিই হোক, নিজের স্বার্থ রক্ষায় ‘প্রভু রাষ্ট্রের’ সামরিক বাহিনীকে নিজ দেশে ডেকে আনা।
তা ছাড়া ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গেয়ে তার ‘প্রভুরাষ্ট্রে’ আশ্রয় নেওয়া অথবা তাঁর জীবন হুমকির সম্মুখীন হলে ‘সম্ভাব্য প্রভুরাষ্ট্রের’ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ এই দেশের রাষ্ট্র ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে। তা ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোটের অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটিয়ে বা সম্পৃক্ততাকে মূল্যায়ন না করে জাতীয় সার্বভৌমত্বতের ধারণাকে অবদমিত করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নীতির প্রশ্নে প্রথমেই আসে ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষা। বিষয়টি জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ হলেও অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর বিষয় হলেও এর সঙ্গে কূটনীতি, অর্থনীতি, যোগাযোগ, জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইত্যাদি সরাসরি সম্পৃক্ত। তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার অন্যান্য উপাদানের নিরাপত্তা যেমন—অর্থনৈতিক; তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ; পরিবেশ, পানিসম্পদ ইত্যাদির নিরাপত্তা জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত জগদ্বিখ্যাত বই ‘দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস’-এ অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ সেই ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, শুধু সম্পদ অর্জন করলেই হবে না, যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখব যে, খুব পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত—১৯৯৬ সালের ২০ মে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ঘটিয়ে সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টি ও খলনায়কদের পুনর্বাসন; ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে অত্যন্ত মেধাবী ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা; বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সত্যি ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ও প্রতিবাদী অফিসারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত, শেখ তাপস হত্যাচেষ্টার নামে অনেক অফিসারকে বরখাস্ত ও জেল জরিমানা এবং পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনীকে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা এবং পেশাদারিত্ব ধ্বংসের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টি-পারসনাল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা যুদ্ধ কৌশলের সুসংহত কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। অথচ ভারত, পাকিস্তানসহ অত্র অঞ্চলের কোনো দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারতপ্রীতির কারণে এই সরকার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল প্রশিক্ষণের ছোটখাটো বিষয়াদিতেও হস্তক্ষেপ করেছে। উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের গবেষণাসংক্রান্ত লেখা, অতিথি বা বিশেষজ্ঞ বক্তা নির্বাচন ইত্যাদির ব্যপারে গোয়েন্দা নজরদারি/নিয়ন্ত্রণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেশাগত বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আজকে কতটুকু সুসংহত কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। সকল স্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির মহামারি ও সরকারি ছত্রছায়ায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ব্যাপকতায় দেশ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংক-ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, মেগা প্রজেক্টের নামে দেশের স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো ভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। যেকোনো সময় বহিঃনিরাপত্তাকে প্রভাবিত করার মতো সম্ভাবনা নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি হিসেবে চলমানই ছিল। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অসংগঠিত অবস্থা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা; পতিত সরকারের মরণকামড়ের প্রচেষ্টায় তাদের প্রভু রাষ্ট্রের উসকানিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো রকম সময় না দিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থির করে রাখা; আনসার আন্দোলন, অন্যান্য ধর্মাম্বলীর ওপর আক্রমণের প্রহসন, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন ও ভাঙচুরের প্রচেষ্টা, পার্বত্য জেলাগুলোতে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে উসকানির মাধ্যমে চরম অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা ইত্যাদির মতো একসঙ্গে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কখনো হয়নি। দুই মাসের জন্য সেনাবাহিনীর অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার নাজুকতা ও গুরত্বকেই প্রমাণ করে।
পানিসম্পদের নিরাপত্তা ইস্যুটি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, আমরা আগেও তা অনেকবার প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এবার ভারত কোনো রকম পূর্বাভাস না দিয়ে তাদের বাঁধ খুলে আমাদের পূর্বাঞ্চলকে ডুবিয়ে শত মানুষের জীবন নিয়ে এবং লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করে খুব ভালোভাবে পানিসম্পদ নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে জ্বালানি নিরাপত্তার চলমান সংকট, খাদ্য নিরাপত্তার মূল্যস্ফীতির সংকট ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বর্তমানে এতটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচিত না হলেও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর দুরভিসন্ধি থাকলে বা সরকারের অবহেলা হলে যেকোনো সময় সেগুলোও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
উপরোল্লিখিত আলোচনায় চিত্রিত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে:
১। জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটি (NCSA)কে সক্রিয় করা। এই কমিটির অস্তিত্ব থাকলেও আমরা খুব কমই এই কমিটির কোনো অর্থবহ কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছি।
২। নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির নির্দেশনায় প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ও চ্যালঞ্জগুলো চিহ্নিত করে জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা। পৃথিবীর অনেক দেশে জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা (national security policy) প্রণীত হয় ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নিয়মিত পর্যালোচনা করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা, অর্থনৈতিক নীতিমালা, পররাষ্ট্রসংক্রান্ত নীতিমালাসহ অন্য সব বিষয়ে নীতিমালা প্রণীত ও পর্যালোচনা করা হয়।
৩। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলো (elements of national power) হলো: সামরিক, আধা সামরিক ও অন্যান্য বাহিনী, অর্থনীতি, কূটনীতি, মানবসম্পদ, জ্বালানিসম্পদ, পানিসম্পদ, সর্বোপরি জাতীয় ইচ্ছাশক্তি (national will)। এই শক্তিগুলো জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার লক্ষ্যসমূহ (policy objectives) অর্জনে সর্বদা সক্রিয় রাখতে এবং তাদের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীসমূহ ও মন্ত্রণালায়গুলোর মধ্যে নিয়মিত সমন্বয়ের প্রতি গুরত্ব আরোপ করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, কখনো কখনো কোনো কোনো রাস্তা ও ব্রিজের মত স্থাপনা নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও জাতীয় প্রতিরক্ষা তথা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের প্রজেক্ট গ্রহণের আগে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি বা উপকমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করার দাবি রাখে।
৪। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। এজন্য পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীসমূহ পুরোপুরি সুসংহত ও পুনর্গঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্বশস্ত্র বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখা। এর ব্যতিক্রম হলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং তার সুযোগে প্রতিবিপ্লব হয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
৫। জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য স্বশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও আধুনিকায়ন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে; তবে সবার আগে স্বশস্ত্র বাহিনীসহ সব আধা সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ও এদের সব সদস্যের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি ও রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।
পরিশেষে আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে পারলে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন ও সত্যিকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ অন্য সবনিরাপত্তা সহজেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিতাড়িত করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে এবং ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে, এতে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যেযেকোনো দেশই বাংলাদেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতে অনেকবার ভাববে। তা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহস ও ইচ্ছাশক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো আছেই।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
(নিবন্ধে প্রকাশিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ লেখকের নিজস্ব।)

স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন পরিপক্ব ও পরিণত জাতিরাষ্ট্র। ১৬৪৮ সালের পিস অব ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তির আলোকে ওয়েস্টফেলিয়া তত্ত্ব অনুযায়ী, রাজনৈতিক মডেল বিবেচনায় মূলত দুটি নীতির ওপরে ভিত্তি করে জাতিরাষ্ট্র পরিচালিত হয়। প্রথমটি হলো রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের (state sovereignty) নীতি, যা রাষ্ট্রের নিজ ভূখণ্ডকে বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। দ্বিতীয়টি হলো জাতীয় সার্বভৌমত্বের (national sovereignty) নীতি, যা কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে পরিচালনার অধিকার দেয়। আদর্শিক ও নৈতিকতার দিক থেকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব নীতির মূল ভিত্তি জনগণের শাসন, যে ব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা ও সার্বিক কল্যাণের প্রতিফলন ঘটে।
জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বোঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান প্রেক্ষাপটগুলো কী এবং আমাদের জন্য জরুরি বিবেচ্য বিষয়গুলো কী হতে পারে। সময়ের গুরুত্ব বিবেচনায় এই আলোচনা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক বলেই আমি মনে করি।
জাতীয় নিরাপত্তার সহজ সংজ্ঞা হলো জাতি ও রাষ্ট্রের সব ধরনের স্বাধীনতা, ভূখণ্ড ও রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব, জাতির নিজস্ব ইচ্ছা ও মূল্যবোধ রক্ষাসহ সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা। জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে মূলত ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা; রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা; জাতির স্বাধীন ইচ্ছা ও মূল্যবোধের নিরাপত্তা; অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা; অর্থনৈতিক নিরাপত্তা; কূটনৈতিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা; সংস্কৃতি, পরিবেশ, জ্বালানি ও পানিসম্পদ নিরাপত্তা সন্নিহিত।
ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক স্বাধীনতার নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, কূটনৈতিক স্বাধীনতাসহ অন্য সব নিরাপত্তা অনেকাংশই জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করে। তবে অন্য সব জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো রক্ষার প্রত্যক্ষ দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার ওপর বর্তায়। প্রতিটি একে অপরের পরিপূরক এবং একটার সঙ্গে অন্যটি সংশ্লিষ্ট।
একটি জাতিরাষ্ট্রের জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো শাসন ব্যবস্থায় নিজ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষা ও সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে সম্ভব। অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের পদলেহন, তাদের কাছ থেকে জাতির স্বার্থবিরোধী অনাকাঙ্ক্ষিত সমর্থন প্রত্যাশা বা তাদের স্বার্থ রক্ষায় নীতিনির্ধারণ জাতীয় সার্বভৌমত্বকে শুধু বিকিয়ে দেয় না, জাতির সার্বিক নিরাপত্তাকেও দুর্বল করে। শেখ হাসিনার সরকারের বিগত ১৫ বছরের সময়কালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও আন্তঃদেশীয় রেলওয়ে লাইন স্থাপন চুক্তি; আদানি গ্রুপের সঙ্গে অসম বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি ইত্যাদির মাধ্যমে ভারত সরকারের স্বার্থ রক্ষায় দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়েছেন। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের অনেক দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীর কোনো রকম সুপারিশ এসব ক্ষেত্রে তারা গ্রহণ করেনি। সব ক্ষেত্রেই তারা দেশের জনগণের ইচ্ছার বা স্বার্থের কথা না ভেবে নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত সরকারের সমর্থনকেই গুরুত্ব দিয়েছে।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল—বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) কর্তৃক ২০০৯ সালের ২৫-২৭ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় শেখ হাসিনার ভারত সরকারের সামরিক সমর্থন চাওয়া। ‘ইন্ডিয়াস নিয়ার ইন্ট: অ্যা নিউ হিস্টোরি’ শিরোনামে ভারতীয় নিবন্ধকার অভিনাষ পলিওয়াল দাবি করেছেন, শেখ হাসিনার অনুরোধে তাঁকে রক্ষার জন্য ২৬ ফেব্রয়ারি ৫/৬টি আইএল ৭৬ ও এএন ৩২ বিমান এবং প্রায় ১০০০ ছত্রিসেনা পশ্চিমবঙ্গের ভারতীয় বিমানঘাঁটি কালিয়াকিণ্ডে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। ভারতীয় প্যারাশুট রেজিমেন্টের ৬ ব্যাোলিয়নের মেজর কামালদীপ সিং সান্ধুকে উদৃত্ত করে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন। এই দাবি সত্য হলে এর স্পষ্ট অর্থ দাঁড়ায়—দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য যত বড় হুমকিই হোক, নিজের স্বার্থ রক্ষায় ‘প্রভু রাষ্ট্রের’ সামরিক বাহিনীকে নিজ দেশে ডেকে আনা।
তা ছাড়া ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পালিয়ে গেয়ে তার ‘প্রভুরাষ্ট্রে’ আশ্রয় নেওয়া অথবা তাঁর জীবন হুমকির সম্মুখীন হলে ‘সম্ভাব্য প্রভুরাষ্ট্রের’ বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ এই দেশের রাষ্ট্র ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে। তা ছাড়া শেখ হাসিনার সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার তথা ভোটের অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না ঘটিয়ে বা সম্পৃক্ততাকে মূল্যায়ন না করে জাতীয় সার্বভৌমত্বতের ধারণাকে অবদমিত করেছেন।
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নীতির প্রশ্নে প্রথমেই আসে ভূখণ্ডের সীমানার নিরাপত্তা রক্ষা। বিষয়টি জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ হলেও অর্থাৎ সশস্ত্র বাহিনীর বিষয় হলেও এর সঙ্গে কূটনীতি, অর্থনীতি, যোগাযোগ, জ্বালানি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ইত্যাদি সরাসরি সম্পৃক্ত। তেমনি জাতীয় নিরাপত্তার অন্যান্য উপাদানের নিরাপত্তা যেমন—অর্থনৈতিক; তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ; পরিবেশ, পানিসম্পদ ইত্যাদির নিরাপত্তা জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত। ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত জগদ্বিখ্যাত বই ‘দ্য ওয়েলথ অব ন্যাশনস’-এ অর্থনীতির জনক অ্যাডাম স্মিথ সেই ধারণা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, শুধু সম্পদ অর্জন করলেই হবে না, যথাযথ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
পেছনের দিকে তাকালে আমরা দেখব যে, খুব পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত—১৯৯৬ সালের ২০ মে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা ঘটিয়ে সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টি ও খলনায়কদের পুনর্বাসন; ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে অত্যন্ত মেধাবী ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা; বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সত্যি ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ও প্রতিবাদী অফিসারদের চাকরি থেকে বরখাস্ত, শেখ তাপস হত্যাচেষ্টার নামে অনেক অফিসারকে বরখাস্ত ও জেল জরিমানা এবং পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনীকে দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা এবং পেশাদারিত্ব ধ্বংসের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আশঙ্কাজনকভাবে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টি-পারসনাল মাইন নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আওয়ামী লীগ সরকার সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা যুদ্ধ কৌশলের সুসংহত কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। অথচ ভারত, পাকিস্তানসহ অত্র অঞ্চলের কোনো দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এমনকি ভারতপ্রীতির কারণে এই সরকার সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ কৌশল প্রশিক্ষণের ছোটখাটো বিষয়াদিতেও হস্তক্ষেপ করেছে। উচ্চতর প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোতে প্রশিক্ষণার্থীদের গবেষণাসংক্রান্ত লেখা, অতিথি বা বিশেষজ্ঞ বক্তা নির্বাচন ইত্যাদির ব্যপারে গোয়েন্দা নজরদারি/নিয়ন্ত্রণ প্রতিরক্ষা বাহিনীর পেশাগত বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জাতীয় নিরাপত্তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আজকে কতটুকু সুসংহত কারোরই অজানা থাকার কথা নয়। সকল স্তরে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির মহামারি ও সরকারি ছত্রছায়ায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির ব্যাপকতায় দেশ দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংক-ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার, মেগা প্রজেক্টের নামে দেশের স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে চরম ঝুঁকির মধ্যে নিপতিত করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো ভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। যেকোনো সময় বহিঃনিরাপত্তাকে প্রভাবিত করার মতো সম্ভাবনা নিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি হিসেবে চলমানই ছিল। এর মধ্যে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অসংগঠিত অবস্থা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা; পতিত সরকারের মরণকামড়ের প্রচেষ্টায় তাদের প্রভু রাষ্ট্রের উসকানিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো রকম সময় না দিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে অস্থির করে রাখা; আনসার আন্দোলন, অন্যান্য ধর্মাম্বলীর ওপর আক্রমণের প্রহসন, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পে শ্রমিক আন্দোলন ও ভাঙচুরের প্রচেষ্টা, পার্বত্য জেলাগুলোতে উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে উসকানির মাধ্যমে চরম অস্থিরতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা ইত্যাদির মতো একসঙ্গে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আর কখনো হয়নি। দুই মাসের জন্য সেনাবাহিনীর অফিসারদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার নাজুকতা ও গুরত্বকেই প্রমাণ করে।
পানিসম্পদের নিরাপত্তা ইস্যুটি যে কত ভয়াবহ হতে পারে, আমরা আগেও তা অনেকবার প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু এবার ভারত কোনো রকম পূর্বাভাস না দিয়ে তাদের বাঁধ খুলে আমাদের পূর্বাঞ্চলকে ডুবিয়ে শত মানুষের জীবন নিয়ে এবং লাখ লাখ মানুষকে নিঃস্ব করে খুব ভালোভাবে পানিসম্পদ নিরাপত্তার গুরুত্বের কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে জ্বালানি নিরাপত্তার চলমান সংকট, খাদ্য নিরাপত্তার মূল্যস্ফীতির সংকট ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বর্তমানে এতটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচিত না হলেও সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর দুরভিসন্ধি থাকলে বা সরকারের অবহেলা হলে যেকোনো সময় সেগুলোও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
উপরোল্লিখিত আলোচনায় চিত্রিত বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে:
১। জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটি (NCSA)কে সক্রিয় করা। এই কমিটির অস্তিত্ব থাকলেও আমরা খুব কমই এই কমিটির কোনো অর্থবহ কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছি।
২। নিরাপত্তাবিষয়ক জাতীয় কমিটির নির্দেশনায় প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি ও চ্যালঞ্জগুলো চিহ্নিত করে জাতীয় নিরাপত্তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা। পৃথিবীর অনেক দেশে জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালা (national security policy) প্রণীত হয় ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নিয়মিত পর্যালোচনা করা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার আলোকে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালা, অর্থনৈতিক নীতিমালা, পররাষ্ট্রসংক্রান্ত নীতিমালাসহ অন্য সব বিষয়ে নীতিমালা প্রণীত ও পর্যালোচনা করা হয়।
৩। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার শক্তিগুলো (elements of national power) হলো: সামরিক, আধা সামরিক ও অন্যান্য বাহিনী, অর্থনীতি, কূটনীতি, মানবসম্পদ, জ্বালানিসম্পদ, পানিসম্পদ, সর্বোপরি জাতীয় ইচ্ছাশক্তি (national will)। এই শক্তিগুলো জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার লক্ষ্যসমূহ (policy objectives) অর্জনে সর্বদা সক্রিয় রাখতে এবং তাদের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীসমূহ ও মন্ত্রণালায়গুলোর মধ্যে নিয়মিত সমন্বয়ের প্রতি গুরত্ব আরোপ করতে হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, কখনো কখনো কোনো কোনো রাস্তা ও ব্রিজের মত স্থাপনা নির্মাণ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও জাতীয় প্রতিরক্ষা তথা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করতে পারে। তাই এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের প্রজেক্ট গ্রহণের আগে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটি বা উপকমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করার দাবি রাখে।
৪। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। এজন্য পুলিশ বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীসমূহ পুরোপুরি সুসংহত ও পুনর্গঠিত না হওয়া পর্যন্ত স্বশস্ত্র বাহিনীকে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রাখা। এর ব্যতিক্রম হলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি হঠাৎ করেই সৃষ্টি হতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে এবং তার সুযোগে প্রতিবিপ্লব হয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
৫। জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য স্বশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা ও আধুনিকায়ন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে; তবে সবার আগে স্বশস্ত্র বাহিনীসহ সব আধা সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ও এদের সব সদস্যের পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি ও রাজনীতিমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।
পরিশেষে আমি মনে করি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করাসহ জাতীয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে পারলে এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন ও সত্যিকার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাসহ অন্য সবনিরাপত্তা সহজেই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিতাড়িত করে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে এবং ফেনী-নোয়াখালী অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ও দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যে সাহস, ইচ্ছাশক্তি ও দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে, এতে আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি যেযেকোনো দেশই বাংলাদেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতে অনেকবার ভাববে। তা ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহস ও ইচ্ছাশক্তির প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো আছেই।
লেখক: সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক
(নিবন্ধে প্রকাশিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্লেষণ লেখকের নিজস্ব।)

ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
১ দিন আগে
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
১ দিন আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহ হয়নি।
১ দিন আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
২ দিন আগে
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ—এ চারটি বামপন্থী দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

আপনারা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিলেন? আপনাদের মূল আপত্তিগুলো কী ছিল?
আমাদের প্রথম আপত্তি ছিল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত সংযুক্ত না করা। যেসব বিষয়ে সবাই মিলে একমত হয়েছি বা মোটামুটি একমত হয়েছি, সেসব যুক্ত করা ছাড়া আমরা স্বাক্ষর করব না। যেহেতু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল, সেটা স্বাক্ষর করলে তো মেনে নেওয়া হতো। সেটা জাতীয় সংসদে হলে অন্য কথা ছিল বা কোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সেটা হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সেটা মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন সে রকম কোনো ফোরাম না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যে আসার জন্য একটা চেষ্টা, একটা উদ্যোগ।
জুলাই সনদ তৈরি করার সময় এর পটভূমি ধরে আমরা ইতিহাসকে সঠিকভাবে লেখার জন্য বারবার ইনপুট দিয়েছি। আমাদের দলসহ অন্য দলের নেতারা সেটা বলেছেন। কিন্তু সনদে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকে পুরোপুরি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ছোট ছোট অনেক ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টা কীভাবে এল, সেটা তো থাকা দরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তো থাকতে হবে। যদিও বিশাল আকারে ইতিহাস লেখার জায়গা এটা না। শেষে আসবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা। এর মধ্যে মাঝখানের ঘটনাগুলো শুধু উল্লেখ করলেই চলত। সেটা তো করা হয়নি। যাঁরা খসড়াটি করেছেন, তাঁদের আমি অবশ্যই অযোগ্য বলব না। একেকজনের কথায় একেকটা বিষয় ঢুকে গেছে। কারও সঙ্গে তাঁরা বিতর্ক করেননি। ফলে আমাদের বক্তব্যগুলোকে বেমালুম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মনে করেছেন, আমাদের বক্তব্য বাদ দিলে বুঝি কোনো সমস্যা হবে না। আবার কোনো কোনো দল যা-ই বলেছে, সেটাই তাঁরা রেখেছেন; যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বক্তব্য একপেশে হয়েছে।
আবার অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের কথা হলো, এই সনদ পরিপূর্ণ হলে সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো লিপিবদ্ধ থাকত। কিন্তু সেসব রাখা হয়নি। সনদের ভেতরে আবার তাঁরা লিখেছেন—যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়া কাজ করতে পারবে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, তারাও তো কাজ করবে। তারা প্রয়োজনবোধে একমত না হলে সংসদ ত্যাগ করবে। নতুবা সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের কাছে মতামত তুলে ধরবে। এসব তো ম্যান্ডেট পাওয়া না-পাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।
এটা তো বিএনপির ভাষা। বিএনপি মনে করে, তারা ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী সংসদে যাবে। সেটা ভালো কথা। কিন্তু আমরা ম্যান্ডেট পাব কি পাব না সেটা ভিন্ন কথা। আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি চুপ না থাকার জন্য। আমরা যেমনভাবে সংসদের ভেতরে কথা বলব, তেমনি সংসদের বাইরেও কথা বলব। আমরা আবার রাজপথে আন্দোলনও করব। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কয়েকটি বামপন্থী দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি।
তবে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, যেসব বিষয়ে আমরা সহমত জ্ঞাপন করেছি (সেটার রেকর্ড আছে) সেটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই যে সাংবিধানিক প্রশ্ন, আইনের প্রশ্নসহ সংস্কার নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে তারা একটা ঐতিহাসিক দলিল তৈরি করতে পেরেছে। এই দলিল থেকে বোঝা যাবে, কোন দলের কী দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমরা বলেছি, গায়ের জোরে সংবিধান বাতিল করার দাবি—এটা অসাংবিধানিক অপরাধ। আমরা মনে করি, সংবিধান বাতিল করার দাবি তোলা যাবে এবং নতুন সংবিধান করার দাবিও তোলা যাবে—সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হবে না। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যদি বাতিল করতে চায়, সেটা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। তারা ৭ (ক) ধারার বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। এটা নিয়ে আমরা আপত্তি করেছি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষে আমরা পিআর পদ্ধতির পক্ষে, কিন্তু দুই বাসদ ও সিপিবি উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে না।
তবে আমরা যে কয়েকটি বাম দল এসব বিষয়ে একমত হয়েছি, আমরা আগামী দিনে সংসদের ভেতরে ও বাইরে এসব নিয়ে সংগ্রাম এবং রাজনৈতিকভাবে জনমত গঠনের কাজ করব। সেটা আমরা অঙ্গীকার করেছি।
এরপর আপনারা একটা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এটা দেওয়ার কারণ কী?
আমরা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম না, সেটা নিয়ে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটা আমাদের দুজন প্রতিনিধি হাতে হাতে ঐকমত্য কমিশনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর ঐকমত্য কমিশনের বক্তব্য কী?
তারা বলেছে, আপনারা অনেক কষ্ট করে, সময় নিয়ে বক্তব্য বা নোট দিয়েছেন, আপনারা এটার অংশীদার হন। আমরা বলেছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে কেন আমরা আত্মসমর্পণ করব মৌলিক, দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে? বিএনপি যেমন প্রত্যাশা করছে, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। তারাসহ তাদের মিত্ররা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাবে। তারা যেসব নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলোতে তারা পক্ষে নিতে পারে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার আগেই আমাদের মেনে নিতে হবে, সংবিধান বাতিলের ১৪ ধারা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ না, নারী ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দরকার নেই, সংবিধানের ১৫০ (২) ধারা মতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ না থাকা—এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে তো আমরা সনদে স্বাক্ষর করে দাসখত দিতে পারি না। এই ফাঁদেও পা দিতে পারি না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এসব বিষয় যদি সংশোধন না করা হয়, তাহলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি না।
এনসিপি সনদের বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্ন নিয়ে স্বাক্ষর করেনি। এটাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
তাদের তো সনদ নিয়ে কোনো দাবি নেই। তারা সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের তো সনদের খসড়া নিয়েই আপত্তি। কিন্তু তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা শুধু বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিতর্ক তুলে স্বাক্ষর করেনি।
আপনি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছিলেন। সে সময়ে তিন জোটের রূপরেখাকে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন কোনো দলই গুরুত্ব দেয়নি। এখন আপনি জুলাই সনদ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখাকে নির্দিষ্ট করে সংবিধানের সঙ্গে আপগ্রেড করা হয়নি। সে সময় যে তিনটি জোট এই রূপরেখাতে স্বাক্ষর করেছিল, তারা কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার অনেক কিছুই মানেনি। তারা সেখানকার রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। তা ছাড়া, এটার কোনো আইনি রূপও দেওয়া হয়নি। কথা ছিল তারা পরস্পরের প্রতি কোনো বৈরী আচরণ করবে না। সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। পরস্পর পরস্পরকে ধ্বংস করার জন্য এক দল অন্য দলের প্রতি বিরূপ আচরণ করেছে। এগুলোকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আচরণ বা সাংবিধানিক আইন মেনে চলা বলা যায় না।
কিন্তু এবারের জুলাই সনদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এর ধারা ও উপধারা ধরে বিতর্ক করে কে পক্ষে আছে আর কে বিপক্ষে আছে, তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সে কারণে বলতে চাই, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখার সঙ্গে এবারের জুলাই সনদটা অনেক অগ্রসর দলিল বলতে হবে। কোনো দল যদি এর কোনো বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে পালন করতে না চায়, তাহলে সব রাজনৈতিক দল তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। জুলাই সনদ একেবারেই সুনির্দিষ্ট। কিন্তু নব্বইয়ের রূপরেখা এভাবে সুনির্দিষ্ট ছিল না। আবার সেই রূপরেখার মধ্যে কোনো গভীরতা ছিল না। তারপরেও যে কিছু হয়নি, সেটা বলা যাবে না। কারণ, নব্বইয়ের পরে সব দল কিন্তু সংসদীয় সরকার পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পরেও নানা অঘটন ঘটেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে?
এখন দ্রুত দরকার একটা সংসদ নির্বাচন করা। যে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এখন কোনো জবাবদিহি করা যাচ্ছে না। আমরা যেভাবে গত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পেরেছি, এখন কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তা করতে পারছি না। এখন কোনো বিষয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করলে তারা বলে, কোনো কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার পুলিশও একই কথা বলছে।
রাজনৈতিক দলগুলো দেশটাকে ভাগাভাগি করার মতো করে কথা বলছে। এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, আবার সবাই মিলে ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এখানে এখন একটা আজব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা এ সরকার দিতে পারছে না। এ জন্য নির্বাচন করা দরকার। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারপরও নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তখন আমরা একটা রাজনৈতিক ব্যাকরণের মধ্যে প্রবেশ করতে পারব।
নির্বাচিত সরকার ভালো কাজ করলে পক্ষে থাকব আর মন্দ কাজ করলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। আগে থেকে বলা সম্ভব নয়, যারা দায়িত্বে থাকবে তারা কতটুকু পারছে বা পারছে না। তারা যদি জনগণের পক্ষে না থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আগাম নির্বাচন দাবি করব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
আপনারা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিলেন? আপনাদের মূল আপত্তিগুলো কী ছিল?
আমাদের প্রথম আপত্তি ছিল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত সংযুক্ত না করা। যেসব বিষয়ে সবাই মিলে একমত হয়েছি বা মোটামুটি একমত হয়েছি, সেসব যুক্ত করা ছাড়া আমরা স্বাক্ষর করব না। যেহেতু ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ কিছু বিষয়ে আপত্তি ছিল, সেটা স্বাক্ষর করলে তো মেনে নেওয়া হতো। সেটা জাতীয় সংসদে হলে অন্য কথা ছিল বা কোনো রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সেটা হতে পারে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সেটা মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন সে রকম কোনো ফোরাম না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে ঐকমত্যে আসার জন্য একটা চেষ্টা, একটা উদ্যোগ।
জুলাই সনদ তৈরি করার সময় এর পটভূমি ধরে আমরা ইতিহাসকে সঠিকভাবে লেখার জন্য বারবার ইনপুট দিয়েছি। আমাদের দলসহ অন্য দলের নেতারা সেটা বলেছেন। কিন্তু সনদে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানকে পুরোপুরি গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ছোট ছোট অনেক ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টা কীভাবে এল, সেটা তো থাকা দরকার এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তো থাকতে হবে। যদিও বিশাল আকারে ইতিহাস লেখার জায়গা এটা না। শেষে আসবে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনা। এর মধ্যে মাঝখানের ঘটনাগুলো শুধু উল্লেখ করলেই চলত। সেটা তো করা হয়নি। যাঁরা খসড়াটি করেছেন, তাঁদের আমি অবশ্যই অযোগ্য বলব না। একেকজনের কথায় একেকটা বিষয় ঢুকে গেছে। কারও সঙ্গে তাঁরা বিতর্ক করেননি। ফলে আমাদের বক্তব্যগুলোকে বেমালুম বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা মনে করেছেন, আমাদের বক্তব্য বাদ দিলে বুঝি কোনো সমস্যা হবে না। আবার কোনো কোনো দল যা-ই বলেছে, সেটাই তাঁরা রেখেছেন; যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বক্তব্য একপেশে হয়েছে।
আবার অঙ্গীকারনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই সনদ বাস্তবায়নের জন্য পরিপূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের কথা হলো, এই সনদ পরিপূর্ণ হলে সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো লিপিবদ্ধ থাকত। কিন্তু সেসব রাখা হয়নি। সনদের ভেতরে আবার তাঁরা লিখেছেন—যে দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ছাড়া কাজ করতে পারবে। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না, তারাও তো কাজ করবে। তারা প্রয়োজনবোধে একমত না হলে সংসদ ত্যাগ করবে। নতুবা সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণের কাছে মতামত তুলে ধরবে। এসব তো ম্যান্ডেট পাওয়া না-পাওয়ার ওপর নির্ভর করে না।
এটা তো বিএনপির ভাষা। বিএনপি মনে করে, তারা ম্যান্ডেট নিয়ে আগামী সংসদে যাবে। সেটা ভালো কথা। কিন্তু আমরা ম্যান্ডেট পাব কি পাব না সেটা ভিন্ন কথা। আমরা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছি চুপ না থাকার জন্য। আমরা যেমনভাবে সংসদের ভেতরে কথা বলব, তেমনি সংসদের বাইরেও কথা বলব। আমরা আবার রাজপথে আন্দোলনও করব। সবকিছু মিলিয়ে আমরা কয়েকটি বামপন্থী দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করিনি।
তবে আমরা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছি, যেসব বিষয়ে আমরা সহমত জ্ঞাপন করেছি (সেটার রেকর্ড আছে) সেটা খুব ভালো কাজ হয়েছে। আমরা ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই যে সাংবিধানিক প্রশ্ন, আইনের প্রশ্নসহ সংস্কার নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে তারা একটা ঐতিহাসিক দলিল তৈরি করতে পেরেছে। এই দলিল থেকে বোঝা যাবে, কোন দলের কী দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু আমরা বলেছি, গায়ের জোরে সংবিধান বাতিল করার দাবি—এটা অসাংবিধানিক অপরাধ। আমরা মনে করি, সংবিধান বাতিল করার দাবি তোলা যাবে এবং নতুন সংবিধান করার দাবিও তোলা যাবে—সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হবে না। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে যদি বাতিল করতে চায়, সেটা অবশ্যই রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। তারা ৭ (ক) ধারার বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। এটা নিয়ে আমরা আপত্তি করেছি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে উচ্চকক্ষে আমরা পিআর পদ্ধতির পক্ষে, কিন্তু দুই বাসদ ও সিপিবি উচ্চকক্ষে পিআরের পক্ষে না।
তবে আমরা যে কয়েকটি বাম দল এসব বিষয়ে একমত হয়েছি, আমরা আগামী দিনে সংসদের ভেতরে ও বাইরে এসব নিয়ে সংগ্রাম এবং রাজনৈতিকভাবে জনমত গঠনের কাজ করব। সেটা আমরা অঙ্গীকার করেছি।
এরপর আপনারা একটা স্মারকলিপি দিয়েছেন। এটা দেওয়ার কারণ কী?
আমরা কেন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলাম না, সেটা নিয়ে আমরা একটা সংবাদ সম্মেলন করেছি। সেই সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যটা আমাদের দুজন প্রতিনিধি হাতে হাতে ঐকমত্য কমিশনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর ঐকমত্য কমিশনের বক্তব্য কী?
তারা বলেছে, আপনারা অনেক কষ্ট করে, সময় নিয়ে বক্তব্য বা নোট দিয়েছেন, আপনারা এটার অংশীদার হন। আমরা বলেছি, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে কেন আমরা আত্মসমর্পণ করব মৌলিক, দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নে? বিএনপি যেমন প্রত্যাশা করছে, তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। তারাসহ তাদের মিত্ররা দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পাবে। তারা যেসব নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলোতে তারা পক্ষে নিতে পারে। কিন্তু সংসদে যাওয়ার আগেই আমাদের মেনে নিতে হবে, সংবিধান বাতিলের ১৪ ধারা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ না, নারী ১০০ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দরকার নেই, সংবিধানের ১৫০ (২) ধারা মতে শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ না থাকা—এ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে তো আমরা সনদে স্বাক্ষর করে দাসখত দিতে পারি না। এই ফাঁদেও পা দিতে পারি না। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এসব বিষয় যদি সংশোধন না করা হয়, তাহলে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে পারি না।
এনসিপি সনদের বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্ন নিয়ে স্বাক্ষর করেনি। এটাকে আপনারা কীভাবে দেখেন?
তাদের তো সনদ নিয়ে কোনো দাবি নেই। তারা সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের তো সনদের খসড়া নিয়েই আপত্তি। কিন্তু তাদের কোনো আপত্তি নেই। তারা শুধু বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিতর্ক তুলে স্বাক্ষর করেনি।
আপনি নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ছিলেন। সে সময়ে তিন জোটের রূপরেখাকে পরবর্তীকালে ক্ষমতাসীন কোনো দলই গুরুত্ব দেয়নি। এখন আপনি জুলাই সনদ নিয়ে কতটা আশাবাদী?
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখাকে নির্দিষ্ট করে সংবিধানের সঙ্গে আপগ্রেড করা হয়নি। সে সময় যে তিনটি জোট এই রূপরেখাতে স্বাক্ষর করেছিল, তারা কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার অনেক কিছুই মানেনি। তারা সেখানকার রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। তা ছাড়া, এটার কোনো আইনি রূপও দেওয়া হয়নি। কথা ছিল তারা পরস্পরের প্রতি কোনো বৈরী আচরণ করবে না। সেই রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পালন করেনি। পরস্পর পরস্পরকে ধ্বংস করার জন্য এক দল অন্য দলের প্রতি বিরূপ আচরণ করেছে। এগুলোকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক আচরণ বা সাংবিধানিক আইন মেনে চলা বলা যায় না।
কিন্তু এবারের জুলাই সনদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এর ধারা ও উপধারা ধরে বিতর্ক করে কে পক্ষে আছে আর কে বিপক্ষে আছে, তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। সে কারণে বলতে চাই, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের তিন জোটের রূপরেখার সঙ্গে এবারের জুলাই সনদটা অনেক অগ্রসর দলিল বলতে হবে। কোনো দল যদি এর কোনো বক্তব্য সুনির্দিষ্টভাবে পালন করতে না চায়, তাহলে সব রাজনৈতিক দল তার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাবে। জুলাই সনদ একেবারেই সুনির্দিষ্ট। কিন্তু নব্বইয়ের রূপরেখা এভাবে সুনির্দিষ্ট ছিল না। আবার সেই রূপরেখার মধ্যে কোনো গভীরতা ছিল না। তারপরেও যে কিছু হয়নি, সেটা বলা যাবে না। কারণ, নব্বইয়ের পরে সব দল কিন্তু সংসদীয় সরকার পদ্ধতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। যদিও পরবর্তী সময়ে সেই সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠার পরেও নানা অঘটন ঘটেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে?
এখন দ্রুত দরকার একটা সংসদ নির্বাচন করা। যে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এখন কোনো জবাবদিহি করা যাচ্ছে না। আমরা যেভাবে গত স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পেরেছি, এখন কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তা করতে পারছি না। এখন কোনো বিষয়ে সরকারের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করলে তারা বলে, কোনো কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। আবার পুলিশও একই কথা বলছে।
রাজনৈতিক দলগুলো দেশটাকে ভাগাভাগি করার মতো করে কথা বলছে। এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, আবার সবাই মিলে ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। এখানে এখন একটা আজব পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার নিশ্চয়তা এ সরকার দিতে পারছে না। এ জন্য নির্বাচন করা দরকার। যদিও সুষ্ঠু নির্বাচন করা নিয়ে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারপরও নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তখন আমরা একটা রাজনৈতিক ব্যাকরণের মধ্যে প্রবেশ করতে পারব।
নির্বাচিত সরকার ভালো কাজ করলে পক্ষে থাকব আর মন্দ কাজ করলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করব। আগে থেকে বলা সম্ভব নয়, যারা দায়িত্বে থাকবে তারা কতটুকু পারছে বা পারছে না। তারা যদি জনগণের পক্ষে না থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আগাম নির্বাচন দাবি করব।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।

জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বুঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
১ দিন আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহ হয়নি।
১ দিন আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
২ দিন আগেমৃত্যুঞ্জয় রায়

কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত। আহা, কী পরিষ্কার সেই খালের জল, কোথাও একটা শুকনো পাতা পড়ে নেই জলের ওপর। খালের পাড়ে স্বর্ণচাঁপা, বকুল, কাঠবাদাম, চালতা, ছাতিম গাছগুলোর ছত্রবৎ পত্রাচ্ছাদন, গোড়া বাঁধানো নারকেলগাছের সারি। খালের জলে সাঁতরে বেড়াচ্ছে, লাফ দিচ্ছে মাছেরা। মাঝে মাঝে পাড়ে রয়েছে জলের ওপর বাড়ানো জেটির মতো রেলিংঘেরা পাকা চাতাল, যার ওপর দাঁড়িয়ে জলের কাছে যাওয়া যায়, খালের জলে বড়শি ফেলে মাছ ধরা যায়। ওপরে হেমন্তের ঝকঝকে নীল আকাশ, রোদের ঝিলিক। খালের পশ্চিম পাড়ে একটি অভিজাত এলাকার মনোরম ভবন। দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন ঢাকা শহর নয়—নেদারল্যান্ডসের কোনো এক জায়গা।
নেদারল্যান্ডসের গিথুর্ন গ্রামের ছবি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা হয়তো জানেন, সেই গ্রামে গাড়ি চালানোর মতো কোনো রাস্তা নেই, আছে গ্রামজুড়ে চলাচলের জন্য চমৎকার খাল আর হাঁটার পথ। একটা গ্রামে কোনো গাড়ির রাস্তা নেই, খাল ও খালের ওপর আছে ১৭০টির বেশি সেতু। বৈদ্যুতিক নৌকায় করে সেই গ্রামের অধিবাসীরা এখান থেকে সেখানে যায়। আহা, গাড়ি ও জ্বালানির দূষণমুক্ত কী শান্ত মনোরম সে গ্রাম! খালের পাড় বাঁধানো, দুই পাড়ে থাকা অনুচ্চ ঘরবাড়ি, আঙিনার কোথাও কোনো খোলা মাটি নেই, পুরোটাই সবুজ কার্পেটের মতো ঘাসে ঢাকা, মাঝে মাঝে ফুলগাছের ঝোপ। যেন সে এক স্বপ্নের জায়গা, পৃথিবীর বুকেই স্বর্গের শোভা। ঢাকার এ জায়গাটি দেখেও সেই গিথুর্ন গ্রামের ছবিটা চোখে ভাসছিল। ধন্যবাদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে—নিকুঞ্জ খালের এমন সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য।
আহা রে, ঢাকা শহরের সব খাল যদি এরূপ সুন্দর হতো! এ কথা ভাবতেই মনের মধ্যে ভেসে উঠল এর বিপরীত দৃশ্য। খাল দখল করতে করতে সেগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও হয়ে পড়েছে ময়লার ভাগাড়, কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ে ভরা মশককুলের অভয়ারণ্য। বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নির্গমনের নিকাশনালার মতো ব্যবহৃত হচ্ছে কোনো কোনো খাল। পচা দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর সেই পরিবেশেই কেটে যাচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীর দিনকাল। খালগুলো যেভাবে মরতে বসেছে, তাতে আগামী ১০ বছরও লাগবে না ঢাকা শহর খালশূন্য হতে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরে খালের সংখ্যা ৪৭টি। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী ৫৬টি। ড্যাপেও খালের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৪৩টি।
ধরা হয়, অতীতে ঢাকা শহরে ৪৭টি খাল সচল ছিল। শহরের চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেসব খাল। নৌকা ও নৌযান চলত সেসব খালে। পণ্য পরিবহন ও লোক চলাচলে সে সময় খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। একসময় শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত একটি খাল ছিল—পরীবাগ খাল। ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে তার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সেই খাল আর এখন নেই। এভাবে ধোলাই খাল, রায়েরবাজার, গোপীবাগ, নারিন্দা, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি ইত্যাদি খালগুলোরও এখন আর অস্তিত্ব নেই। ধানমন্ডি লেকটাই একসময় ছিল খাল, হাতিরঝিলের খালে পিলখানা থেকে হাতির পালকে নিয়ে যাওয়া হতো গোসল করাতে। মোগল শাসকেরা ঢাকা শহরে বহুসংখ্যক খাল থাকায় ঢাকাকে রাজধানী করার চিন্তা করেছিল, খালগুলো তাদের চলাচল ও প্রতিরক্ষার জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শহরের জলাবদ্ধতা দূর ও পানি নিষ্কাশনের জন্যও ছিল সেগুলো সহায়ক। সেসব এখন ইতিহাস। এখন এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়।
ঢাকা শহরের সব খাল উদ্ধার করা প্রথম কাজ। উদ্ধারের পর সেসব খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে বা হাঁটার পথ তৈরি ও বাহারি গাছপালা লাগিয়ে সুশোভন করা দ্বিতীয় কাজ। তৃতীয় কাজ হলো খালগুলোতে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাটারি, বিদ্যুৎ ও হস্তচালিত নৌযান চালনার উদ্যোগ নেওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কোনো নৌযান সেসব খালে চলাচলের অনুমতি না দেওয়া হবে খালের জলজ জীবগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং দূষণ কমানোর গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ওয়াকওয়ে যেন শুধু ওয়াক তথা হাঁটার জন্যই ব্যবহৃত হয়, সে রাস্তায় যেন কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল না চলে। সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো খাল এবং তার চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে উত্তম ব্যবস্থাপনার চর্চা অব্যাহত রাখা। খাল ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে সেখানকার সব অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণই এসব ব্যবস্থাপনাকে সুচারুরূপে বাস্তবায়নের মূল সূত্র, এর সঙ্গে থাকবে সঠিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা, উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনার প্রচারণা। এ কাজে দরকার রাষ্ট্রীয় বা সরকারের সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ, রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণের অংশগ্রহণ। অনেক তরুণ এখন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে এরূপ কাজে অংশ নিতে আগ্রহী। তাদের উৎসাহিত করে নিরাপদভাবে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করবেন জবাবদিহির মধ্যে, স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিলেমিশে। শোভাবর্ধনের চারাগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে সিটি করপোরেশনগুলোকেই। তবে এককভাবে শুধু দুই সিটি করপোরেশনের ওপর সম্পূর্ণ বিষয়টি চাপিয়ে দিলে হবে না। খালগুলোর দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী, নিশ্চিত যে তাঁরা কেউই সেসব খালের দখল স্বেচ্ছায় ছাড়বেন না। দখলমুক্ত করার জন্য জোর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা ও আইন প্রয়োগ করা দরকার।
প্রকৃতিতে প্রবহমান নদী আর খালগুলো হলো আমাদের দেহের শিরা-উপশিরার মতো। একটি ভূখণ্ডের জীবনরেখা বলা হয় এসব জলস্রোতকে। প্রবহমান এসব জলাশয় যেমন জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মাটিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও সহায়ক। ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও খালগুলোকে সচল করা দরকার। বর্তমানে ঢাকা শহরে ২৬টি খালের অস্তিত্ব চোখে দেখা গেলেও বাকি ২১টি খাল নেই। কোথায় কোথায় সেসব খাল ছিল, তা নিশ্চয় অতীতের মানচিত্রগুলোতে পাওয়া যাবে। সেগুলো আদৌ উদ্ধার বা দখলমুক্ত করা যাবে, তা দুরাশা। উদ্ধার করা গেলে সেগুলো খনন করে সচল ও শোভাময় করা উচিত। জার্মানির বার্লিন শহরে খালে করে ক্যানালক্রুজ করার সময় খালপাড়ের দুই পাশের বিভিন্ন স্থাপনা ও নাগরিক সৌন্দর্য, সেতু, রেস্তোরাঁ দেখতে দেখতে অভিভূত হতাম। ভাবতাম, জলের দেশ, নদীর দেশ, খালের দেশ বাংলাদেশ; অথচ সে দেশের শহরগুলোর খালে কেন এ রকম নৌ-পর্যটন করা যাবে না?
খালপাড় ভেঙে যাতে কোনো নগরবাসীর এক ফুট জমিও নষ্ট না হয়, সে জন্য ভেনিস, কোপেনহেগেন, প্যারিস ইত্যাদি শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও নদীর দুই পাড় যেভাবে পাকা করে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে, সেভাবে আমাদের প্রবহমান খালগুলোর পাড়ও বেঁধে দেওয়া যায়। নগরীর খালগুলো নিয়ে একটি চমৎকার পরিকল্পনার সুযোগ রয়েছে ড্যাপ বাস্তবায়নের কারণে। চলাচল, পরিবহন, জলাবদ্ধতা নিরসন, দূষণ হ্রাস, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটন, সৌন্দর্যবর্ধন, স্থানীয় মানুষের আয়বর্ধন, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা ও জরিপকাজ নিশ্চয় সহায়ক হবে। সবার মনে রাখা উচিত, প্রাকৃতিক প্রবাহকে রুদ্ধ করার অধিকার কারও নেই, তার ফল কখনো ভালো হয় না। এ নিয়ে কোনো খণ্ডিত পরিকল্পনা নয়, নিতে হবে সমন্বিত সামগ্রিক পরিকল্পনা। তাহলে আমরাও দেখতে পাব একটি মনোরম মহানগর, সুশোভিত খালসমৃদ্ধ একটি সুশোভন পরিবেশ। কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে নিকুঞ্জ খালটি যদি এত সুন্দর করা যায়, সুন্দর রাখা যায়, তাহলে অন্যগুলো কেন এরূপ সুন্দর হবে না?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আরও খবর পড়ুন:

কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত। আহা, কী পরিষ্কার সেই খালের জল, কোথাও একটা শুকনো পাতা পড়ে নেই জলের ওপর। খালের পাড়ে স্বর্ণচাঁপা, বকুল, কাঠবাদাম, চালতা, ছাতিম গাছগুলোর ছত্রবৎ পত্রাচ্ছাদন, গোড়া বাঁধানো নারকেলগাছের সারি। খালের জলে সাঁতরে বেড়াচ্ছে, লাফ দিচ্ছে মাছেরা। মাঝে মাঝে পাড়ে রয়েছে জলের ওপর বাড়ানো জেটির মতো রেলিংঘেরা পাকা চাতাল, যার ওপর দাঁড়িয়ে জলের কাছে যাওয়া যায়, খালের জলে বড়শি ফেলে মাছ ধরা যায়। ওপরে হেমন্তের ঝকঝকে নীল আকাশ, রোদের ঝিলিক। খালের পশ্চিম পাড়ে একটি অভিজাত এলাকার মনোরম ভবন। দেখে মনে হচ্ছে, এ যেন ঢাকা শহর নয়—নেদারল্যান্ডসের কোনো এক জায়গা।
নেদারল্যান্ডসের গিথুর্ন গ্রামের ছবি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা হয়তো জানেন, সেই গ্রামে গাড়ি চালানোর মতো কোনো রাস্তা নেই, আছে গ্রামজুড়ে চলাচলের জন্য চমৎকার খাল আর হাঁটার পথ। একটা গ্রামে কোনো গাড়ির রাস্তা নেই, খাল ও খালের ওপর আছে ১৭০টির বেশি সেতু। বৈদ্যুতিক নৌকায় করে সেই গ্রামের অধিবাসীরা এখান থেকে সেখানে যায়। আহা, গাড়ি ও জ্বালানির দূষণমুক্ত কী শান্ত মনোরম সে গ্রাম! খালের পাড় বাঁধানো, দুই পাড়ে থাকা অনুচ্চ ঘরবাড়ি, আঙিনার কোথাও কোনো খোলা মাটি নেই, পুরোটাই সবুজ কার্পেটের মতো ঘাসে ঢাকা, মাঝে মাঝে ফুলগাছের ঝোপ। যেন সে এক স্বপ্নের জায়গা, পৃথিবীর বুকেই স্বর্গের শোভা। ঢাকার এ জায়গাটি দেখেও সেই গিথুর্ন গ্রামের ছবিটা চোখে ভাসছিল। ধন্যবাদ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে—নিকুঞ্জ খালের এমন সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য।
আহা রে, ঢাকা শহরের সব খাল যদি এরূপ সুন্দর হতো! এ কথা ভাবতেই মনের মধ্যে ভেসে উঠল এর বিপরীত দৃশ্য। খাল দখল করতে করতে সেগুলো সংকুচিত হয়ে পড়েছে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও হয়ে পড়েছে ময়লার ভাগাড়, কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ে ভরা মশককুলের অভয়ারণ্য। বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য নির্গমনের নিকাশনালার মতো ব্যবহৃত হচ্ছে কোনো কোনো খাল। পচা দুর্গন্ধযুক্ত অস্বাস্থ্যকর সেই পরিবেশেই কেটে যাচ্ছে পথচারী ও এলাকাবাসীর দিনকাল। খালগুলো যেভাবে মরতে বসেছে, তাতে আগামী ১০ বছরও লাগবে না ঢাকা শহর খালশূন্য হতে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরে খালের সংখ্যা ৪৭টি। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা সেন্টারের গবেষণা অনুযায়ী ৫৬টি। ড্যাপেও খালের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৪৩টি।
ধরা হয়, অতীতে ঢাকা শহরে ৪৭টি খাল সচল ছিল। শহরের চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেসব খাল। নৌকা ও নৌযান চলত সেসব খালে। পণ্য পরিবহন ও লোক চলাচলে সে সময় খালগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। একসময় শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত একটি খাল ছিল—পরীবাগ খাল। ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে তার অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সেই খাল আর এখন নেই। এভাবে ধোলাই খাল, রায়েরবাজার, গোপীবাগ, নারিন্দা, সেগুনবাগিচা, কাঁঠালবাগান, ধানমন্ডি ইত্যাদি খালগুলোরও এখন আর অস্তিত্ব নেই। ধানমন্ডি লেকটাই একসময় ছিল খাল, হাতিরঝিলের খালে পিলখানা থেকে হাতির পালকে নিয়ে যাওয়া হতো গোসল করাতে। মোগল শাসকেরা ঢাকা শহরে বহুসংখ্যক খাল থাকায় ঢাকাকে রাজধানী করার চিন্তা করেছিল, খালগুলো তাদের চলাচল ও প্রতিরক্ষার জন্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শহরের জলাবদ্ধতা দূর ও পানি নিষ্কাশনের জন্যও ছিল সেগুলো সহায়ক। সেসব এখন ইতিহাস। এখন এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরের অনেক এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়।
ঢাকা শহরের সব খাল উদ্ধার করা প্রথম কাজ। উদ্ধারের পর সেসব খালের দুই পাড়ে ওয়াকওয়ে বা হাঁটার পথ তৈরি ও বাহারি গাছপালা লাগিয়ে সুশোভন করা দ্বিতীয় কাজ। তৃতীয় কাজ হলো খালগুলোতে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাটারি, বিদ্যুৎ ও হস্তচালিত নৌযান চালনার উদ্যোগ নেওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক কোনো নৌযান সেসব খালে চলাচলের অনুমতি না দেওয়া হবে খালের জলজ জীবগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং দূষণ কমানোর গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ওয়াকওয়ে যেন শুধু ওয়াক তথা হাঁটার জন্যই ব্যবহৃত হয়, সে রাস্তায় যেন কোনো গাড়ি বা মোটরসাইকেল না চলে। সবশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো খাল এবং তার চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে উত্তম ব্যবস্থাপনার চর্চা অব্যাহত রাখা। খাল ব্যবহারকারী থেকে শুরু করে সেখানকার সব অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণই এসব ব্যবস্থাপনাকে সুচারুরূপে বাস্তবায়নের মূল সূত্র, এর সঙ্গে থাকবে সঠিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনা, উদ্বুদ্ধকরণ ও সচেতনার প্রচারণা। এ কাজে দরকার রাষ্ট্রীয় বা সরকারের সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্ত, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ, রাজনৈতিক ঐকমত্য এবং জনগণের অংশগ্রহণ। অনেক তরুণ এখন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে এরূপ কাজে অংশ নিতে আগ্রহী। তাদের উৎসাহিত করে নিরাপদভাবে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মালি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করবেন জবাবদিহির মধ্যে, স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিলেমিশে। শোভাবর্ধনের চারাগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে সিটি করপোরেশনগুলোকেই। তবে এককভাবে শুধু দুই সিটি করপোরেশনের ওপর সম্পূর্ণ বিষয়টি চাপিয়ে দিলে হবে না। খালগুলোর দখলদারেরা অনেক শক্তিশালী, নিশ্চিত যে তাঁরা কেউই সেসব খালের দখল স্বেচ্ছায় ছাড়বেন না। দখলমুক্ত করার জন্য জোর প্রশাসনিক প্রচেষ্টা ও আইন প্রয়োগ করা দরকার।
প্রকৃতিতে প্রবহমান নদী আর খালগুলো হলো আমাদের দেহের শিরা-উপশিরার মতো। একটি ভূখণ্ডের জীবনরেখা বলা হয় এসব জলস্রোতকে। প্রবহমান এসব জলাশয় যেমন জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মাটিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্যও সহায়ক। ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেও খালগুলোকে সচল করা দরকার। বর্তমানে ঢাকা শহরে ২৬টি খালের অস্তিত্ব চোখে দেখা গেলেও বাকি ২১টি খাল নেই। কোথায় কোথায় সেসব খাল ছিল, তা নিশ্চয় অতীতের মানচিত্রগুলোতে পাওয়া যাবে। সেগুলো আদৌ উদ্ধার বা দখলমুক্ত করা যাবে, তা দুরাশা। উদ্ধার করা গেলে সেগুলো খনন করে সচল ও শোভাময় করা উচিত। জার্মানির বার্লিন শহরে খালে করে ক্যানালক্রুজ করার সময় খালপাড়ের দুই পাশের বিভিন্ন স্থাপনা ও নাগরিক সৌন্দর্য, সেতু, রেস্তোরাঁ দেখতে দেখতে অভিভূত হতাম। ভাবতাম, জলের দেশ, নদীর দেশ, খালের দেশ বাংলাদেশ; অথচ সে দেশের শহরগুলোর খালে কেন এ রকম নৌ-পর্যটন করা যাবে না?
খালপাড় ভেঙে যাতে কোনো নগরবাসীর এক ফুট জমিও নষ্ট না হয়, সে জন্য ভেনিস, কোপেনহেগেন, প্যারিস ইত্যাদি শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ও নদীর দুই পাড় যেভাবে পাকা করে বাঁধাই করে রাখা হয়েছে, সেভাবে আমাদের প্রবহমান খালগুলোর পাড়ও বেঁধে দেওয়া যায়। নগরীর খালগুলো নিয়ে একটি চমৎকার পরিকল্পনার সুযোগ রয়েছে ড্যাপ বাস্তবায়নের কারণে। চলাচল, পরিবহন, জলাবদ্ধতা নিরসন, দূষণ হ্রাস, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পর্যটন, সৌন্দর্যবর্ধন, স্থানীয় মানুষের আয়বর্ধন, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা ও জরিপকাজ নিশ্চয় সহায়ক হবে। সবার মনে রাখা উচিত, প্রাকৃতিক প্রবাহকে রুদ্ধ করার অধিকার কারও নেই, তার ফল কখনো ভালো হয় না। এ নিয়ে কোনো খণ্ডিত পরিকল্পনা নয়, নিতে হবে সমন্বিত সামগ্রিক পরিকল্পনা। তাহলে আমরাও দেখতে পাব একটি মনোরম মহানগর, সুশোভিত খালসমৃদ্ধ একটি সুশোভন পরিবেশ। কুড়িল বিশ্বরোডের কাছে নিকুঞ্জ খালটি যদি এত সুন্দর করা যায়, সুন্দর রাখা যায়, তাহলে অন্যগুলো কেন এরূপ সুন্দর হবে না?
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
আরও খবর পড়ুন:

জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বুঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
১ দিন আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহ হয়নি।
১ দিন আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহ হয়নি।
বহু প্রচার করার পরও কোথাও কোথাও অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে না। অনেকে ভুলে যাচ্ছেন, কেন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের বিয়ের পিঁড়িতে না বসানোই মঙ্গল।
বাল্যবিবাহের শিকার অল্প বয়সী মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে না। এতে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, পুষ্টিহীনতা এবং প্রসবজনিত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কম বয়সে সন্তানের মা হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তারা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ে। সমাজের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ নষ্ট হয়। আত্মনির্ভরশীল হতে না পারার কারণে সংসারে নানা ধরনের সংকটে তাদের পড়তে হয়। শিক্ষাবঞ্চিত ও অল্প বয়সে সংসার শুরু করা মেয়েরা সাধারণত আর্থিকভাবে নির্ভরশীল থাকে। এতে পরিবারে দারিদ্র্য দূর হয় না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা চলতে থাকে।
এতে যে নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটাও বিবেচনায় আনা দরকার। বাল্যবিবাহের কারণে একটি মেয়ে নিজস্ব মতামত-সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং স্বাধীন জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সামাজিকভাবে সে হেয় হতে থাকে। সংসারে তার মতামতের কোনো মূল্য থাকে না। পুরুষশাসিত সমাজে এমনিতেই মেয়েরা থাকে কোণঠাসা হয়ে, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েটি সে ক্ষেত্রে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। এ যেন তার ব্যাপারে সামাজিক নিপীড়নের জন্য একটি মুক্ত জায়গা হয়ে দেখা দেয়।
একজন মানুষ যেন মুক্ত, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সমাজে অর্থনৈতিক অবদান রাখার মতো করে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারে, সেসব দিক বিবেচনা করা না হলে সংকটে পড়ে রাষ্ট্র।
পিরোজপুরের নেছারাবাদের ঘটনাটি আশার আলো জাগায়। যদিও ইউএনও বিয়ের অনুষ্ঠানে বাধা দেননি, তবু তিনি সেখানে অংশ না নিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ চলে যাওয়ায় বিয়েটা হয়নি বলে একটি ভালো কাজ হয়েছে। যখন সমাজের একটি বড় অংশ অল্প বয়সে বিবাহ ও মাতৃত্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। ফলে জাতির অগ্রগতিতেও বাধা সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক যে মেয়েটি অভিভাবকদের কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছিল, এখন হয়তোবা সে তা থেকে মুক্ত হবে। অভিভাবকেরাও সচেতন হয়ে এই শিশুকে শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারেন। তাতে একটি সমৃদ্ধ ও সমানাধিকারের সমাজ গঠিত হওয়ার পথে তাঁরা অবদান রাখতে পারেন।
আরও খবর পড়ুন:

পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহ হয়নি।
বহু প্রচার করার পরও কোথাও কোথাও অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে পরিবারের পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, কোথাও কোথাও তৈরি হচ্ছে না। অনেকে ভুলে যাচ্ছেন, কেন অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের বিয়ের পিঁড়িতে না বসানোই মঙ্গল।
বাল্যবিবাহের শিকার অল্প বয়সী মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে না। এতে মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, পুষ্টিহীনতা এবং প্রসবজনিত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কম বয়সে সন্তানের মা হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তারা শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে পড়ে। সমাজের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ নষ্ট হয়। আত্মনির্ভরশীল হতে না পারার কারণে সংসারে নানা ধরনের সংকটে তাদের পড়তে হয়। শিক্ষাবঞ্চিত ও অল্প বয়সে সংসার শুরু করা মেয়েরা সাধারণত আর্থিকভাবে নির্ভরশীল থাকে। এতে পরিবারে দারিদ্র্য দূর হয় না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা চলতে থাকে।
এতে যে নারীর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেটাও বিবেচনায় আনা দরকার। বাল্যবিবাহের কারণে একটি মেয়ে নিজস্ব মতামত-সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং স্বাধীন জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। সামাজিকভাবে সে হেয় হতে থাকে। সংসারে তার মতামতের কোনো মূল্য থাকে না। পুরুষশাসিত সমাজে এমনিতেই মেয়েরা থাকে কোণঠাসা হয়ে, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েটি সে ক্ষেত্রে আরও ভঙ্গুর অবস্থায় থাকে। এ যেন তার ব্যাপারে সামাজিক নিপীড়নের জন্য একটি মুক্ত জায়গা হয়ে দেখা দেয়।
একজন মানুষ যেন মুক্ত, স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সমাজে অর্থনৈতিক অবদান রাখার মতো করে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারে, সেসব দিক বিবেচনা করা না হলে সংকটে পড়ে রাষ্ট্র।
পিরোজপুরের নেছারাবাদের ঘটনাটি আশার আলো জাগায়। যদিও ইউএনও বিয়ের অনুষ্ঠানে বাধা দেননি, তবু তিনি সেখানে অংশ না নিয়ে প্রতিবাদস্বরূপ চলে যাওয়ায় বিয়েটা হয়নি বলে একটি ভালো কাজ হয়েছে। যখন সমাজের একটি বড় অংশ অল্প বয়সে বিবাহ ও মাতৃত্বে জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে না। ফলে জাতির অগ্রগতিতেও বাধা সৃষ্টি হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক যে মেয়েটি অভিভাবকদের কারণে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছিল, এখন হয়তোবা সে তা থেকে মুক্ত হবে। অভিভাবকেরাও সচেতন হয়ে এই শিশুকে শারীরিক, মানসিক, শিক্ষাগত ও সামাজিক সুরক্ষা দিতে পারেন। তাতে একটি সমৃদ্ধ ও সমানাধিকারের সমাজ গঠিত হওয়ার পথে তাঁরা অবদান রাখতে পারেন।
আরও খবর পড়ুন:

জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বুঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
১ দিন আগে
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
১ দিন আগে
মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার...
২ দিন আগেসম্পাদকীয়

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

মিরপুরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগার পর যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল, সে কথা সবাই এখন জানেন। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা জানেন এটা তাঁদের পরিবারের জন্য কত বড় ক্ষতি। নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে কি না, তাদের জীবনে স্থিতি ফিরিয়ে আনতে কী করা দরকার—তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভাববেন। এ রকম একটা অবস্থায় দুর্ঘটনা-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খুব কম মানুষই মাথা ঘামায়। দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়টিতে স্থানীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি যে মোটেও অনুকূল থাকে না, সেটা বোঝা দরকার।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেদক শিয়ালবাড়ীর ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক গুদামে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেছেন, এতগুলো দিন পার হওয়ার পরও বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এখনো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। রাসায়নিকের ড্রাম থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া মানুষকে অসুস্থ করে দিচ্ছে। অসুস্থদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা রয়েছেন ঝুঁকির মধ্যে। প্রায়ই দেখা যায়, একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর দু-এক দিন সংবাদপত্রে রিপোর্ট হয়, তারপর একসময় সেটা ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু যে মানুষেরা ভুক্তভোগী, তাদের প্রতিটি দিনই যে কাটছে ভয়ংকর রাসায়নিকের সঙ্গে লড়াই করে, সে খবর কয়জন রাখে?
চিকিৎসকেরা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের কয়েক দিন পরও বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার ঘনত্ব বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে তা কমে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যের অবশিষ্টাংশ ভুক্তভোগীর শরীরে ঢোকে। ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। এই কারণে ভবিষ্যতেও তা বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।
বিষাক্ত কণিকা বা গ্যাস মানবদেহে ঢোকে শ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের মাধ্যমে এবং খাদ্যের মাধ্যমে। এই গ্যাস অ্যাজমা, কাশি, গলাজ্বলা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। চোখ আর ত্বকও তাতে আক্রান্ত হতে পারে। তৈরি হতে পারে মাথাব্যথা, বমি ও ক্লান্তির মতো ঘটনা। ভারী ধাতু দীর্ঘ মেয়াদে স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল করে দেয়। তাতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
শিয়ালবাড়ীর দুর্ঘটনাস্থলের অন্তত এক হাজার গজ পর্যন্ত এলাকায় বাতাসে এখনো পোড়া জিনিস ও গ্যাসের মতো কটু গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তাতে মনে হয়, এই এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখনো রয়েছে সংকটের মুখে।
আমরা সবাই জানি, স্বাস্থ্য আমাদের মৌলিক অধিকারের একটি। কিন্তু দেশের মানুষ এ কথাও জানে, সেই মৌলিক অধিকার সব সময় সমুন্নত রাখা হয় না। রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কীভাবে তার মোকাবিলা করতে হবে, তার পূর্বপ্রস্তুতি কয়টি গুদামে আছে? এসব জায়গায় কি নিয়মিত ইন্সপেকশন হয়? শুধু গুদাম কেন, কারখানাগুলোয় কি সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে? শ্রমিকেরা কি নিরাপদে তাঁদের কাজ করে যেতে পারেন?
এসব দুর্ঘটনায় মূলত সমাজের নিচুতলার মানুষেরা বিপদে পড়েন। তাঁদের পাশে যদি দাঁড়ানো না হয়, তাহলে বুঝতে হবে, শিল্প-ব্যবস্থাপনায় যে ঘাটতি আছে, তা নিরসনের কোনো চিন্তা কারও নেই।

জাতিরাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা পৃথিবীর যেকোনো রাষ্ট্রের মতোই সবোর্চ্চ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার বর্তমান পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক। এখানে অত্যন্ত সংক্ষেপে বুঝার চেষ্টা করব যে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় নিরাপত্তার উপাদানগুলো কী, বাংলাদেশে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ডা. মুশতাক হোসেন এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। পেশাজীবনে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন।
১ দিন আগে
কুড়িল বিশ্বরোডের ফুটওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে একটি খালের চমৎকার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। ঢাকার বুকে এত সুন্দর একটা খাল! ধনুকের মতো বাঁক খেয়ে চলে গেছে দূরে, দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা। রাস্তা আর খালের পানির মাঝে সবুজ ঢাল সিঙ্গাপুর ডেইজির শায়িত লতায় আচ্ছাদিত।
১ দিন আগে
পিরোজপুরের নেছারাবাদে যে ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য ইউএনও সাহেব ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সেখানে একটি বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলেন তিনি সপরিবারে। কিন্তু যখন জানতে পারলেন, বিয়ের কনে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তখন তিনি না খেয়েই ফিরে আসেন। এবং তিনি ফিরে আসায় কাজিও বিয়ে পড়াননি। ফলে এই বাল্যবিবাহ হয়নি।
১ দিন আগে