Ajker Patrika

খুনের পর আনোয়ারুলের হাড় ও মাংস বিচ্ছিন্ন, পরিকল্পনা দুই-তিন মাস আগে: ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ১৮: ০৬
খুনের পর আনোয়ারুলের হাড় ও মাংস বিচ্ছিন্ন, পরিকল্পনা দুই-তিন মাস আগে: ডিবি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার জন্য দু-তিন মাস আগেই পরিকল্পনা করা হয়। রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের বাসায় খুনের ছক কষা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশেই এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তাঁরা চেয়েছিল বাংলাদেশেই হত্যা করতে। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার কারণে তাঁরা বিদেশে খুনের পরিকল্পনা করে। ফলে তিনজন মিলে কলকাতার এমন একটি পরিবেশে বাসাভাড়া নেন, যেখানে পরিবার থাকবে। আর এমপি আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় কখন যাবেন, সেটা দেখে তাঁকে পরিকল্পনা মতো বাসায় নেবেন।  

হারুন বলেন, বাংলাদেশ থেকে তিনজন সেই বাসায় অবস্থান করেন। আর বাকি এ দেশেরই দুজনকে ভারত থেকে ঠিক করা হয়। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়। মরদেহের হাড় ও মাংস আলাদা করে ব্রিফকেসে করে গুম করার চেষ্টা করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তাঁরা আধা ঘণ্টার মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন করেন। হত্যার পর একজন এমপি আনোয়ারুলের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে চলে যান। আর লাশের হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর হাড়গুলো একটি ব্রিফকেসে করে বাইরে নিয়ে যান। তারপর মাংসগুলো আলাদা করে নিয়ে যান। এমনকি কেউ যেন সন্দেহ না করতে পারেন, তার জন্য মাংসের মধ্যে হলুদ লাগিয়ে নেন।

চিকিৎসার জন্য ১২ মে কলকাতায় গিয়েছিলেন আনোয়ারুল। চলতি মাসের শুরুর দিকে তিনি কলকাতায় গিয়ে নিখোঁজ হন। গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, আনার খুন হয়েছেন। তবে এখনো তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়নি।

কলকাতায় আনোয়ারুল যে বাড়িতে উঠেছিলেন, সেটির সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ ও ১৫ মে সেই বাড়ি থেকে দুই ব্যক্তি বড় বড় ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছেন।

গতকাল বিধাননগর পুলিশ জানায়, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা এলাকার একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে এমপি আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়। ওই বাড়ির মালিক রাজ্য শুল্ক বিভাগের কর্মচারী সঞ্জীব ঘোষ। তিনি মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামানের কাছ বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন। 

গতকাল সকালে বিধাননগর, ব্যারাকপুর পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্সের সদস্যরা বাড়িটিতে যান এবং সেখানে তল্লাশি চালান। তাঁরা সেখানে রক্তের দাগ পেলেও কোনো মরদেহ দেখতে পাননি।

মরদেহ উদ্ধার না হলেও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, কলকাতার নিউ টাউনের অভিজাত আবাসিক এলাকার সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। হত্যার পর মরদেহ টুকরা টুকরা করে অজ্ঞাতনামা স্থানে গুম করে ফেলেছে খুনিরা। 

এ ঘটনায় পুলিশ ঢাকার মোহাম্মদপুর ও সাভার থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা পাঁচ কোটি টাকার চুক্তিতে কলকাতায় ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেছেন। পুরো কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেন আমানউল্লাহ নামের একজন। তাঁকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

দুই দেশের পুলিশের সন্দেহ, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে সোনা কারবারের টাকা লেনদেন নিয়ে বিরোধ। ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীনের পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড হয়। খুন করার আগে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেশ থেকে ছয়জনের একটি কিলিং স্কোয়াড নিয়ে যান তিনি। পরে ব্যবসায়িক আলোচনা করতে ফ্ল্যাটে ডেকে এমপি আনোয়ারুলকে হত্যা করা হয়। টুকরা টুকরা করে কাটা হয় লাশ। এরপর উবার ভাড়া করে ট্রলিতে ভরে সেই লাশ গুম করেন কিলিং মিশনের সদস্যরা।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত