সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত

বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ তিন দফা দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। এ সময় তাঁরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও কোনো পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নেননি। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) কর্মবিরতি চলাকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে শিক্ষক নেতারা তাঁদের লাগাতার কর্মসূচি আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ জানান, বৈঠকে তাঁদের তিন দফা দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তাই চলমান কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে যদি দ্রুত দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায় নিশ্চিত করা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

শিক্ষকদের প্রধান দাবিগুলো হলো—সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, চাকরির ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন, প্রধান শিক্ষকের শতভাগ পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ দ্রুত পদোন্নতি।

উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা ১৩তম গ্রেডে ও প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নিলেও শিক্ষকেরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামেন। তাঁদের দাবি, ১২তম গ্রেড নয়, শুরুর বেতন ১১তম গ্রেডেই নির্ধারণ করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষকদের পক্ষে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালি সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভান্ডারিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিকী রবিউল, কেরানীগঞ্জের আমিনবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহীনুর আক্তার, রাজধানীর বকশিবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শিরীন সুলতানা, নোয়াখালী সদরের কৃপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ, নারায়ণগঞ্জের লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাবেরা বেগম, কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিনুর আল-আমীন, ঢাকার লালবাগের নবাববাগিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ ইলিয়াছ হোসাইন, খুলনা সদরের টুটপাড়া বয়েজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মুনির হোসেন, সিলেটের হরিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আজিত পাল, যশোরের অভয়নগরের আড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তপন কুমার মণ্ডল ও বরিশাল সদরের মাকড়কাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হজিরুল ইসলাম জাফর।

দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব বিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক কর্মরত। সহকারী শিক্ষকেরা ২৬ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেন। এর আগে তাঁরা ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত প্রতিদিন ১ ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টা এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন।