Ajker Patrika

দেশের ১ লাখ ৭২ হাজার কিশোর তামাকে আসক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২১, ১২: ৫৯
দেশের ১ লাখ ৭২ হাজার কিশোর তামাকে আসক্ত

প্রতিনিয়ত তামাকে আসক্ত হয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণেরা। টোব্যাকো অ্যাটলাসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক লাখ ৭২ হাজারের বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অল্প বয়সে তামাক পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যানসার, হৃদ্‌রোগ, অকাল বার্ধক্য, মানসিক অস্থিতিশীলতাসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হয় তামাকের কারণে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিন গুণ বেশি এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে তা ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক ও নিকোটিন কেবল একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরও অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে। 
আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক যুব দিবস। দিবসটি উপলক্ষে তরুণ ও যুবসমাজকে তামাকমুক্ত রাখতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান-প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)। সংস্থাটি বলছে, ‘তরুণেরাই উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর। তামাকাসক্ত তরুণসমাজ এই স্বপ্ন পূরণে অবদান রাখতে পারবে না বরং রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনই পারে তরুণদের তামাকের ছোবল থেকে সুরক্ষা দিতে।’

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, ‘একটি সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে তামাক একটি বড় বাধা। তরুণসমাজকে তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে আরও শক্তিশালী এবং যুগোপযোগী করতে হবে।’ 
২০১৮ সালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে থাকা সিগারেটের দোকান নিয়ে একটি গবেষণা করে প্রজ্ঞা। ওই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের স্কুলের আশপাশের ৯০ শতাংশ দোকানে সিগারেটসহ বিভিন্ন তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা হয়।

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি, ক্যানসার রিসার্চ ইউকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের যৌথ এক গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। এর বাইরে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতায় ক্ষতি হয় বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

তামাকের ভয়াবহতা হ্রাসে সরকার ২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে গৃহীত আন্তর্জাতিক চুক্তি এফসিটিসিতে (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু নানা ঘাটতি ও অস্পষ্টতার কারণে আইনটি ততটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই ২০১৩ সালের মে মাসে আইনটি সংশোধিত আকারে পাস হয়। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ পাস হয় সংশোধিত আইনের আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০১৫।

সংশোধিত আইন ২০১৩ ও বিধিমালা ২০১৫-তে নারী-শিশুসহ সব অধূমপায়ীকে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার থেকে রক্ষায় কঠোর বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি তামাকের ব্যবহার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত