Ajker Patrika

হাসিনা-মোদি বৈঠক: শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়বে দুদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৪, ০৩: ১৪
হাসিনা-মোদি বৈঠক: শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়বে দুদেশ

শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে দুই দেশকে পথ দেখাতে একটি অভিন্ন রূপকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল শনিবার এক শীর্ষ বৈঠকে এ বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই নেতার মধ্যে একান্তে ও প্রতিনিধি পর্যায়ে দুই দফায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুই দেশের মধ্যে সাতটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়। নবায়ন করা হয় আরও তিনটি সমঝোতা স্মারক।

৭ সমঝোতা স্মারক, ৩টি নবায়ন 
দুই দেশের মধ্যে রেলসংযোগ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। আর বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্র অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দুই সরকার একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।

দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে ডিজিটাল পার্টনারশিপ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দুই দেশ সবুজ অংশীদারত্বের বিষয়ে।

এর বাইরে সমুদ্রবিজ্ঞানসহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ওশেনোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) ও ভারতের বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।

আর যৌথ ক্ষুদ্র উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভারতের জাতীয় মহাকাশ প্রচার ও অনুমোদন কেন্দ্র ও ভারতের মহাকাশ বিভাগ একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।

কৌশলগত ও পরিচালনগত সামরিক শিক্ষায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের মিরপুরস্থ ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ ও ভারতের ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন একটি সমঝোতা স্মারক সই করে।

এ ছাড়া মৎস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য ও ওষুধের ক্ষেত্রে তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল রাতে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, বৈঠকে বাংলাদেশের রাজশাহী ও ভারতের কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন, ভারতের গেদে ও বাংলাদেশের দর্শনা (চুয়াডাঙ্গা) এবং ভারতের হলদিবাড়ি ও বাংলাদেশের চিলাহাটির (নীলফামারী) মধ্যে মালবাহী ট্রেন, চট্টগ্রাম ও কলকাতার মধ্যে বাস সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর বাইরে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ভারতের এনপিসিআই-এর (ন্যাশনাল পেমেন্টস করপোরেশন অব ইন্ডিয়া) মধ্যে সমন্বিত লেনদেন চালুর বিষয়ে একটি চুক্তি সই, ভারতীয় গ্রিড হয়ে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ, সিরাজগঞ্জে ভারতীয় অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো নির্মাণ ও বাংলাদেশ পুলিশের ৩৫০ কর্মকর্তাকে ভারতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলা হয় এতে।

এতে দুই দেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভাগাভাগির জন্য একটি কাঠামো চুক্তি সইয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারত রেলওয়ে ট্রানজিট সুবিধা দেবে। ভারত হয়ে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ আনা-নেওয়ার জন্য একটি আঞ্চলিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বাড়াতে সামরিক শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ খোঁজার ওপরও গুরুত্ব দেয় ভারত।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত সহজলভ্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশে নিত্যপণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। আর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহজ করতে সমন্বিত অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি সই ত্বরান্বিত করার ওপরও জোর দেওয়া হয়।

দুই প্রধানমন্ত্রী পরে হায়দরাবাদ ভবনেই অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের মধ্যকার আলোচনা ও সমঝোতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

ভারত বিশ্বস্ত বন্ধু: শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও নরেন্দ্র মোদি একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে দুই দেশকে পথ দেখাতে একটি রূপকল্প তৈরি ও বাস্তবায়নের বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ‘ডিজিটাল অংশীদারত্ব’ ও ‘সবুজ অংশীদারত্ব’ বিষয়ে দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতেও তাঁরা সম্মত হন।দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত ও দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, এমনটা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বিশ্বস্ত বন্ধু ও আঞ্চলিক অংশীদার। এই জুনেই তাঁর নিজের দ্বিতীয়বার নয়াদিল্লি সফর ‘অভূতপূর্ব।’ এতে দুই দেশের ঘনিষ্ঠভাবে একে অপরের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুই দেশেই নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুনভাবে পথ চলা শুরু হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করতে তাঁরা ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন।

হাসিনা ৯ জুন দিল্লিতে তৃতীয়বারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অভিন্ন ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির: মোদি
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, এমন দাবি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে একটি অভিন্ন ভবিষ্যৎ লক্ষ্য স্থির করেছেন। সবুজ অংশীদারত্ব, ডিজিটাল অংশীদারত্ব, সুনীল অর্থনীতি ও মহাকাশের মতো অনেক ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার ফলে উভয় দেশই উপকৃত হবে।

অভিন্ন নদী তিস্তার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয় খতিয়ে দেখতে ভারতের একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। তবে দুই দেশের মধ্যে বহমান তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগির জন্য এর আগে সম্মত হওয়া খসড়া চূড়ান্ত করার বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। আর ১৯৯৬ সালে সই হওয়া গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়নের কারিগরি দিক নিয়ে দুই দেশ আলোচনা শুরু করবে। এমনটাই জানালেন মোদি।

ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তিটির মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে শেষ হবে। মোদি জানান, চিকিৎসা করতে ভারতে যাওয়া বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করা হবে। আর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের সুবিধার জন্য রংপুরে একটি নতুন সহকারী হাইকমিশন খোলা হবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আলোচনায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন থেকে শুরু করে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দুই দিনের সফরে শুক্রবার বিকেলে নয়াদিল্লি পৌঁছান। গতকাল শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মোদি এ সংবর্ধনায় উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাত ৯টার দিকে ঢাকা ফিরেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং ও সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বিকেলে পানিতে ডুবে ৬ শিশুর মৃত্যু, পরিবারে শোকের ছায়া

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) ও রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় খেলা করার সময় পানিতে পড়ে ছয় শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়ন ও রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া ইউনিয়নে ঘটনা দুটি ঘটে। এতে ওইসব এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আজ বিকেলে অষ্টগ্রাম উপজেলার দেওঘর ইউনিয়নের পশ্চিম আলীনগর এলাকায় বাড়িসংলগ্ন বিলের পাশে খেলা করছিল মিশকাত (৫), মাহিন (৬) ও সাত্তার তানিল মিয়া (৫)। হঠাৎ সবার অজান্তে তিন শিশু বিলে পড়ে ডুবে যায়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বিল থেকে মিশকাত ও মাহিনকে উদ্ধার করা হয়। পরে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খবর পেয়ে অষ্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে অপর শিশু তানিলের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে মাহিনের চাচা মোবারক হোসেন বলেন, প্রতিদিনের মতো তিন শিশু খেলাধুলা করছিল। কিন্তু কখন যে বিলের পানিতে ডুবে গেল, কেউ বোঝেনি। পরে তাদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে পানিতে প্রথমে দুজন, পরে অন্যজনকে পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে দেওঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুঃখজনক খবর, একই বাড়ির তিনটা শিশুর মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

অপর দিকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে একই দিন বিকেলে উত্তর পারুয়া গ্রামের একটি পুকুরে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। তারা হলো সুমাইয়া আক্তার (৫), হাবীবা আক্তার (৬) ও জান্নাত আক্তার (৫)।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে খেলার ছলে তারা তিনজনই বাড়ির পাশে পুকুরে যায়। কিছুক্ষণ পর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে। পরে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় তাদের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে পারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান একতেহার হোসেন বলেন, ‘তিনটি নিষ্পাপ শিশুর এমন মৃত্যুর ঘটনা আমাদের সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অভিমুখী চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের পদযাত্রায় আবারও পুলিশের বাধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভুখা মিছিল বের করেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা। ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, বিশেষ নিয়োগব্যবস্থা, স্বতন্ত্র কোটা সংরক্ষণসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ শুক্রবার আবারও যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করেছেন চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজও তাঁদের পদযাত্রা শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে আজ বেলা ৩টার দিকে ‘চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদ’-এর ব্যানারে পদযাত্রা শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছালে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে তা আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।

এর আগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজু ভাস্কর্য থেকে যমুনা অভিমুখে থালাবাটি নিয়ে ভুখা মিছিল করেন প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েটরা। শাহবাগ থানার সামনে মিছিলটি পুলিশ আটকে দিলে সেখানেই বিক্ষোভ করেন তাঁরা। একপর্যায়ে সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

গত রোববার থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের ভাষ্য, শিক্ষিত, যোগ্য ও কর্মক্ষম যুব প্রতিবন্ধীরা দীর্ঘদিন ধরে কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। ২০১৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা। তবে এখনো কর্মসংস্থানে অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধী কোটা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধী গ্র্যাজুয়েট পরিষদের সদস্যসচিব আলিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার শাহবাগে অবস্থান করে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করা হয়। সেদিন পুলিশ আমাদের আটকে দেয়। এরপর সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের দাবি জানানো হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো সমাধান না পেয়ে আমরা বেশ কয়েকবার যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করি, কিন্তু পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রাখে।’

আলিফ হোসেন আরও বলেন, ‘আজও শাহবাগ থানার সামনে আমাদের পদযাত্রা আটকে দেওয়া হয় এবং বেশ কয়েকজনকে পুলিশ মারধরও করেছে।’

‎‎এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ করা নিষেধ। তাই চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীরা দাবিদাওয়া নিয়ে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা করায় তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে।

চাকরিপ্রত্যাশী প্রতিবন্ধীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. প্রতিবন্ধিতার ধরন অনুযায়ী বেকার, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নির্বাহী আদেশে বিশেষ নিয়োগ দিতে হবে।

‎‎ ২. প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ২ শতাংশ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৫ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

‎ ৩. দৃষ্টি বা শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নিজেদের পছন্দমতো শ্রুতিলেখক (বিকল্প সহকারী) মনোনয়নের স্বাধীনতা পাবেন—এমনভাবে নীতিমালা হালনাগাদ করতে হবে।

৪. সমাজসেবা অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট পদসংখ্যায় নিশ্চিত নিয়োগ দিতে হবে।

‎৫. প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করতে হবে। সাধারণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ হলে তা ৩৭ বছর করতে হবে।

‎‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণা স্থগিত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ২০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে জারি করা প্রজ্ঞাপন স্থগিত করেছে সরকার। ফলে আপাতত কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হচ্ছে না।

আজ শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিমান উড্ডয়ন কমিটির সভাপতি ও বিমানবন্দর পরিচালক এয়ার কমোডর মো. নুর-ই-আজম।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ঘোষণা করার প্রজ্ঞাপন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আগের মতোই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা চলবে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিমানবন্দরসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক কিছু প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না হওয়ায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে বলে আশা করা হচ্ছিল। বিশেষ করে, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারতের সঙ্গে সরাসরি আকাশপথে সংযোগের পরিকল্পনাও ছিল সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

বাসস, ঢাকা  
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ২৭
পশ্চিম তীরে ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে সম্প্রতি খসড়া আইন অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট।

তথাকথিত ‘ইসরায়েলি সার্বভৌমত্ব’ আরোপের নামে এই আইনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করছে যে, পূর্ব জেরুজালেমসহ দখল করা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কোনো অংশে ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেআইনি দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব, বিশেষ করে রেজল্যুশন ২৩৩৪-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) দেওয়া অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন বা পরামর্শমূলক মতামতকে স্বাগত জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ওই মতামতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে ইসরায়েলের বাধ্যবাধকতাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাধারণ জনগণকে, ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।

বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং ১৯৬৭ সালের আগের সীমানার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত