Ajker Patrika

দেশজুড়ে ৬ মৃত্যু, সংঘর্ষ তবু থামেনি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ২৩: ৪২
Thumbnail image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের হামলার জের ধরে দেশজুড়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ত্রিমুখী এই সংঘর্ষে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে অন্তত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ এখনো থামেনি। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে, ঘটছে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা।

আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম থেকে আজকের পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় কোটা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে এক যুবককে। চট্টগ্রামে নিহত তিনজনই বুকের বাঁ পাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বেলা ৩টায় চট্টগ্রামের মুরাদপুরে জড়ো হন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর চড়াও হন। এ সময় দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা পিছু হটলে শিক্ষার্থীরা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে নেন।

এদিকে চট্টগ্রামের সংঘর্ষে প্রাথমিকভাবে আহত দুজনকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তাঁরা মারা যান। অপরজনকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

নিহতদের মধ্যে ফারুকের বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি ফার্নিচারের দোকানে চাকরি করতেন। আর ওয়াসিম আকরাম ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন বলেও নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী।
 
নিহত ফারুক পথচারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন। অপরজনের পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

গুলিবিদ্ধ জবি শিক্ষার্থীকে রিকশায় করে হাসপাতালে নেওয়া হয়রাজধানীতে ২ যুবকের মৃত্যু
রাজধানী ঢাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাতনামা এক যুবককে গুরুতর অবস্থায় পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। যুবকের মাথায় জখম ছিল। 

চিকিৎসকের বরাতে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি মর্গে রাখা হয়েছে। তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। 

অজ্ঞাতনামা ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী আকাশ জানান, ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে সিএনজি পাম্পের সামনে কয়েকজন ধরাধরি করে ওই যুবককে নিয়ে আসছিলেন। তখন একটি রিকশায় করে তাঁকে হাসপাতালে আনা হয়। 

এদিকে রাত ৮টার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সংঘর্ষের মাঝে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা এক অ্যাম্বুলেন্সচালক জানান, ধানমন্ডির সিটি কলেজের পাশে পপুলার হাসপাতালে পৌঁছালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে অজ্ঞাত ওই যুবককে মাথায় ব্যান্ডেজ অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। যুবকের আঘাতের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

রংপুরে নিহত আবু সাঈদের লাশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা।বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত
রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫) নিহত হয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁরা। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আবু সাঈদের লাশ নিয়ে বেরোবির দিকে যাত্রা করলে মাঝপথে তাঁদের থামিয়ে দেয় পুলিশ এবং লাশটি তাঁরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 

জানা গেছে, সংঘর্ষের আগে কোটা আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাধা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুহুর্মুহু রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরাও ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এ সময় ১০ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। 

পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল থেকে লাঠি, ছোরা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। একপর্যায়ে শহর থেকে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা যোগ দেন ছাত্রলীগের সঙ্গে। 

পলিটেকনিকের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের হামলায় এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। আমাদের ভাইয়ের রক্তের জবাব আমরা দেব।’ 

রমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। 

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৮টা) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এবং মহাখালীতে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত