Ajker Patrika

ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে এত আলোচিত কেন

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ৪৯
Thumbnail image
ডোনাল্ড লু। ছবি: সংগৃহীত

‍যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম আলোচিত মুখ ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চলে গেছেন এই কূটনীতিক।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, ডোনাল্ড লুর মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে এবং তিনি পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড লু যেন অনেকটা নীরবে-নিভৃতে তাঁর মেয়াদ শেষে দায়িত্ব পালন করে চলে গেছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, লু তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন এবং তাঁকে সরানো হয়নি।

ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল পরিচিত মুখ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে ও পরে ডোনাল্ড লু দুই দফায় বাংলাদেশ সফর করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘সরকার পতনের কারিগর’ হিসেবে পরিচিত এই মার্কিন কূটনীতিকের বাংলাদেশ সফরের পরপরই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তাঁর দেশের হয়ে দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক দায়িত্ব পালন করেন। লুকে নিয়ে জোরেশোরে আলোচনার শুরু পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনের সময়। ডোনাল্ড লু ২০২২ সালের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজীদকে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।

পরে সেই বিষয়টি একটি তারবার্তায় (সাইফার) আসাদ মজীদ ইসলামাবাদে ইমরান খানের সরকারকে অবহিত করেন। সেই তারবার্তার সূত্র ধরে ইমরান খান দাবি করেন, ২০২২ সালে তাঁর সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। এই বিষয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একটি মামলাও আছে। তবে, ইমরান খানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ পরে অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড লু।

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লু দুই দফায় সফর করেন বাংলাদেশে। তখনো তাঁর সফর ছিল বেশ আলোচনায়। নির্বাচনের আগে ওই সফরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেকটা একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার গঠিত হয়। তবে পরের বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার আর খুব বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে মনে করেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বিষয়টি অস্বীকার করে। কিন্তু ২০২৪ সালের মে মাসে ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফরকে ঘিরে দেশের প্রধান দুই দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাক্যবিনিময় হয়।

লুর সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘লু আসছে, তাই বিএনপি নেতারা আবার চাঙা হয়ে গেছে। আবার ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেছে।’ জবাবে পরদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশে আগমন নিয়ে আমরা কেউ ইন্টারেস্টেড নই। আমাদের ভরসা জনগণের ওপর।’

সে সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘ডোনাল্ড লুর আগমন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিএনপি। তবে এর সাথে ষড়যন্ত্রের গন্ধ আছে কি না সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।’ একই ইস্যুতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শগুলো মানেনি সরকার। এ কারণে এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি আড়ালে কোনো কিছু করে সেটি সরকারের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’

সে সময় লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বিবৃতিতে বলেছিল, ‘সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।’

ডোনাল্ড লুর সেই সফরের আগে, জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে বাংলাদেশে জাতীয় অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ২০২৩ সালে ২২ সেপ্টেম্বর। ওই নিষেধাজ্ঞা ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা হবেন, তাদের জন্য। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব-পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

নির্বাচনের আগের বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেছিলেন। তখন তাঁর সফরের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন। পরে তিনি শর্তহীন সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেন। নির্বচনের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে প্রতিক্রিয়া জানায়।

এর পর থেকে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করলেও সেটা আর খুব একটা ভালো হয়নি। পর্দার অন্তরালে ঘটনা যা-ই ঘটে থাক না কেন, লুর মে মাসের সফরের মাস তিনেক পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

এরপর ডোনাল্ড লু আবারও বাংলাদেশ সফরে আসেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডোনাল্ড লু আবারও বাংলাদেশ সফরে আসেন। তাঁর সেই সফরের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, ডোনাল্ড লু ঢাকায় মার্কিন সহায়তাকারী প্রতিনিধি হিসেবে গেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচনা ছিল, মার্কিন প্রভাবের কারণেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সরাসরি এ ধরনের অবস্থানকে অস্বীকার করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত