Ajker Patrika

বাংলাদেশে খেলাধুলার শক্তিকে সামাজিক ব্যবসায় ব্যবহারের সুযোগ আছে: ড. ইউনূস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ২৮
Thumbnail image

খেলাধুলা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনার শক্তিকে সামাজিক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সম্ভাবনাময় শক্তিকে কাজে লাগানো হয় না বলে আক্ষেপ করেছেন তিনি। 

ড. ইউনূস বলেছেন, ‘খেলাধুলার প্রচণ্ড রকম সামাজিক শক্তি রয়েছে, যেটা আমরা অবহেলা করি।...এই শক্তি আমরা বাণিজ্যর কাজে ব্যবহার করি, মুনাফার কাজে ব্যবহার করি, বিনোদনের কাজে ব্যবহার করি, কিন্তু সামাজিক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করি না।’ 

গতকাল শুক্রবার ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস।

খেলাধুলার সামাজিক শক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘খেলাধুলার প্রচণ্ড রকম সামাজিক শক্তি রয়েছে, যেটা আমরা অবহেলা করি। কথাটা উঠছে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে। ফুটবল বিশ্বকাপের সময় গ্রামে-গঞ্জে ও শহরে নানা দেশের পতাকা ওড়ে। আমার কাছে জিনিসটা মজা লাগে। গ্রামে যারা চেনে না–জানে না তারাও নানা দেশের পতাকাও ওড়ায়।’ 

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘শুধু তা-ই নয়, তাঁদের (বাংলাদেশি ফ্যানদের) একটা নিজস্ব ক্লাব রয়েছে, সেই ক্লাবের জন্য তাঁরা জান দিয়ে দিতে রাজি। নিজের দল জিতলে কেমন জয়জয়কার হয়ে যায়, আর হারলে কেমন কান্নার রোল পড়ে যায়! কেন হয় এমনটি? যেই লোক চেনে না জানে না, কোথায় আর্জেন্টিনা, কোথায় ব্রাজিল, কিন্তু তার জন্য জান-প্রাণ দিতে রাজি। ক্রীড়ার যে এই মস্ত বড় শক্তি, মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে। এই শক্তি আমরা বাণিজ্যের কাজে ব্যবহার করি, মুনাফার কাজে ব্যবহার করি, বিনোদনের কাজে ব্যবহার করি কিন্তু সামাজিক ব্যবসার কাজে ব্যবহার করি না।’

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীতখেলার এই শক্তিকে সামাজিক ব্যবসার কাজে ব্যবহারের জন্য অলিম্পিক কমিটির সঙ্গে পরামর্শ সভায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘সামাজিক কাজে এই শক্তিকে কাজে লাগানোর কথা যখন আমি বলা শুরু করলাম, তখন প্রথমে রিওতে অলিম্পিক কমিটি আমাকে ডাকল। আমি সেখানে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। অনেকে পছন্দ করল। তাঁরা চিন্তাই করে নাই যে ক্রীড়া দিয়ে একটি সামাজিক ব্যবসার সৃষ্টি হতে পারে। এরপর ফ্রান্স থেকে আমাকে আলাদা করে দাওয়াত করা হলো। ২০১৮ সালে সেখানে আমাকে প্রশ্ন করা হলো, অলিম্পিকে সামাজিক ব্যবসা করা সম্ভব কি না। আমি বললাম, অবশ্যই সম্ভব। তাঁরা খুবই কনভিনসড হলো।’ 

সেই পরামর্শেই এবারের প্যারিস অলিম্পিক সামাজিক ব্যবসার মডেলে হতে যাচ্ছে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘এরপর আমি, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ও প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো লুজানে অলিম্পিক কমিটির কাছে গেলাম। তাঁরা আমাকে ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকসের মাঠে নিয়ে গেল। সেখানে আমি সামাজিক ব্যবসার রূপরেখা দিলাম, আইওসি রাজি হলো। এখন ২০২৪ সাল এসে গেছে। এই অলিম্পিক সামাজিক ব্যবসার মডেলেই হবে। যখন অলিম্পিক শুরু হবে তখন আপনারা সবাই দেখতে পাবেন, সামাজিক ব্যবসার মডেলে অলিম্পিক কেমন।’ 

এদিকে সামাজিক ব্যবসার মডেলের জন্য মিলান উইন্টার অলিম্পিক ও দক্ষিণ কোরিয়ার পিয়ংচেং অলিম্পিক থেকেও ড. ইউনূসকে ডাকা হচ্ছে বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এই খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ। 

এবারের প্যারিস অলিম্পিকে সামাজিক ব্যবসার মডেলে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা হলো—ফ্রান্সের প্যারিস ও আশপাশের এলাকার তরুণ-তরুণীরা অলিম্পিকে চাকরির সম্পূর্ণ সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া যাঁরা কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না, এমন ১০ শতাংশ মানুষকে সুযোগ দেওয়া হবে। সামাজিক উদ্যোগের নীতিগুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার কৌশল তৈরি করা হবে। 

অন্য কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে—ফরাসি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজের অভিজ্ঞতা এবং প্রশিক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া নগর উন্নয়নে পরিকাঠামোর অস্থায়ী ব্যবহার, নির্মাণ সাইটের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান এবং পেশাগত একীকরণ, সবুজায়নকে গতিশীল করা, স্থানীয় কৃষির উন্নয়ন এবং সামাজিকভাবে খাবার পরিবেশনকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত