Ajker Patrika

নারী ফুটবল টুর্নামেন্টে হামলায় জড়িতদের শাস্তি দাবি তিন মানবাধিকার সংগঠনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

জয়পুরহাটে নারী ফুটবল দলের খেলা আয়োজনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তিন মানবাধিকার সংগঠন। এই ঘটনায় জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। একই সঙ্গে কিশোরীদের খেলাধুলার জন্য সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আজ বুধবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ব্লাস্ট পৃথক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানতে পারলাম যে, গত মঙ্গলবার তিলকপুর স্টেশনের সামনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজন জড়ো হয়ে নারীদের খেলাধুলার বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান করে এবং পরে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের মেয়েরা আজ যখন খেলাধুলায় এগিয়ে এসেছে, দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করছে এমনকি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বিজয়ের শিরোপা অর্জন করে দেশের সুনাম বয়ে আনছে, সেই সময় স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে নারীদের খেলাধুলার ওপর এই ধরনের নারীবিদ্বেষী মৌলবাদী আক্রমণ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।

এদিকে নারীদের খেলাধুলা ও বিনোদনের অধিকারকে বাধা দেওয়ার প্রচেষ্টায় গভীর উদ্বেগ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)।

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এমজেএফ জানায়, নারীদের ম্যাচকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা জয়পুরহাটেই প্রথম নয়। এর আগে, দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায়ও একটি বন্ধুত্বপূর্ণ নারী ফুটবল ম্যাচ স্থগিত করাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয় এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়। এই দুঃখজনক ঘটনায় নারী ও কন্যাশিশুদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আবারও প্রকাশ পেল।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন মনে করে, নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য ক্ষমতায়নের পথে খেলাধুলা একটি শক্তিশালী উপায়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তির জন্য সহায়ক। জয়পুরহাট ও দিনাজপুরে নারীদের ফুটবল ম্যাচের বিরুদ্ধে আপত্তি এবং এর ফলে ঘটে যাওয়া সহিংসতা প্রমাণ করে, নারীদের স্বাধীনতা ও সুযোগ রোধে প্রথাগত পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব এখনো বিদ্যমান। যে দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, সেখানে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়।

মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) বিবৃতিতে বলা হয়, নারীদের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এ ধরনের অরাজকতা বাস্তবিক অর্থেই ন্যক্কারজনক এবং এ ধরনের ঘটনা সংবিধানের ১৯ (সুযোগের সমতা), ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ (ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) অনুচ্ছেদসমূহের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে এটি দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডও) সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

এ ঘটনার সুষ্ঠু, দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্তসহ দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ বিচার এবং ভুক্তভোগী নারী খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবাসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জনমত গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

আমরা স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই, যেন খেলাধুলায় নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয় এবং সহিংসতা উসকে দেওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমরা, নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা নারীর অধিকারকে ক্ষুণ্ন করতে চায় এমন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ান।

এমজেএফ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সংগত সমাজের পক্ষে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে, যেখানে নারী ও কন্যাশিশুরা বৈষম্য বা সহিংসতার ভয় ছাড়া খেলাধুলাসহ সকল ক্ষেত্রে সমান ও স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত