Ajker Patrika

গণটিকার শুরুতেই গণভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

গণটিকার প্রথম দিনে বরাদ্দ টিকা নিতে পেরেছেন যত মানুষ, ফিরে গেছেন তার চেয়ে কয়েক গুণ। টিকা প্রয়োগে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক কেন্দ্রেই তা দেখা যায়নি। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে ছিল টিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড়, লেগেছিল ভোগান্তি। এ ছাড়া পরিকল্পনায় ঘাটতি, টিকাদানে স্বজন-প্রীতি, প্রশাসনের তৎপরতার অভাব দেখা গেছে কেন্দ্রগুলোতে।

ঢাকার মিরপুর, মালিবাগ, বাড্ডা, রামপুরা, আজিমপুর, যাত্রাবাড়ী, লালবাগসহ বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এমনই চিত্র উঠে এসেছে। আগে টিকা পেতে, কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন নিয়ে মারামারি-হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেও লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুরে ৩ নম্বর ওয়ার্ড রাড্ডা এমসিএইচ-এফপি সেন্টারে প্রথম দিন তিনটি বুথে ৬০০ ব্যক্তিকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হলে কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার মানুষের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এদের অধিকাংশই চল্লিশোর্ধ্ব। টিকা কম হওয়ায় মাত্র দুই ঘণ্টায় তা ফুরিয়ে যায়। অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েও টিকা নিতে পারেননি। হতাশ হয়ে ফিরে যান হাজার হাজার মানুষ।

এ কেন্দ্রেই টিকা নিতে সকাল সাড়ে ৮টায় হাজির হন জাহান আরা বেগম (৪৫)। টিকা না পেয়ে ফেরত যেতে হয়েছে তাঁকে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘টিকা যদি না দিতেই পারে তাহলে কেন টিকা নিতে মাইকিং করা হলো। দুই ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা নিতে পারলাম না। অথচ আমার চেয়েও কম বয়সী অনেককে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন আগামীকাল (আজ) আবার আসতে বলেছে।’

আবার লাইনে না দাঁড়িয়েও টিকা নিতে পেরেছেন ইমরান হোসেন (২৮)। তিনি বলেন, এনআইডি দেখে টিকার কার্ড দিয়েছে। পঁচিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা এলেই টিকা দেওয়া হচ্ছে। 

এই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করা মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আসলে কিছুটা পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল। আগে তালিকা করার দরকার ছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে আজ যাদের ফেরত যেতে হয়েছে কাল তাদের আসতে বলা হয়েছে।’

তবে ভিন্ন চিত্রও আছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আজিমপুর পুরোনো কবরস্থানসংলগ্ন নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা নেওয়ার জন্য সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন সাধারণ মানুষ। এই কেন্দ্রে ৩০০ ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে ১৪ জন করে টিকার জন্য উপরে পাঠানো হয়। সকালে যাঁরা এসেছেন তাঁদের কাছ থেকে আইডি কার্ডের ফটোকপি ও মোবাইল নম্বর নিয়ে পরে সিরিয়াল অনুযায়ী টিকা দেওয়া হয়। অগ্রাধিকার পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্করা।

তবে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে দলীয় পরিচয়ে সিরিয়াল ভেঙে আগেভাগেই অনেকের টিকা নেওয়ার অভিযোগ করেন লাইনে দাঁড়ানো টিকাপ্রত্যাশীরা। অভিযোগের ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘সকাল সাতটা থেকে এখানে মানুষ লাইন ধরায় অনেকেই আগেই সিরিয়াল নিয়ে চলে গেছে, পরে হয়তো টিকা নিতে এসেছেন।’

এদিকে চট্টগ্রামের কিছু কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। কয়েকটি ওয়ার্ডে দলীয় পরিচয়ে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে টিকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফেনীর দাগনভূঞা বাতশিরি উচ্চবিদ্যালয় টিকাদান কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করা নিয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি হয়েছে। এতে বেশ কিছুক্ষণ টিকা দেওয়া বন্ধ ছিল।

উত্তরের জেলা রাজশাহীতেও বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। নগরীর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে কার আগে কে টিকা নেবেন, তা নিয়েই ঘটেছে বিশৃঙ্খলা। হয়েছে হাতাহাতি। হবিগঞ্জের বাহুবলে টিকাকেন্দ্রে মানুষের ভিড় সামাল দিতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন এবং ১ হাজার ৫৩টি পৌরসভার মোট প্রায় ১৪ হাজার কেন্দ্রে শুরু হয়েছে বিশেষ গণটিকার ক্যাম্পেইন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য আবু জামিল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিকল্পনার অভাবে আমাদের এই অবস্থা। স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে যদি বেশি পরিমাণে স্বেচ্ছাসেবক করা যেত তাহলে প্রক্রিয়াটি সহজ হতো। টিকা নেই, অথচ গণটিকার কথা বলা হয়েছে। সেখানে মানুষ তো যাবেই।’ তিনি বলেন, ‘যাদের দেওয়া হবে সেই তালিকা করার তাগিদ সব সময় দিয়ে এসেছি আমরা। তারা (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) যে পরিকল্পনা করেছে, সেগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করা না হলে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত