Ajker Patrika

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত: মাহফুজ আলম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ২১: ৫১
আজ সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা ও মিথ্যা মামলা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। আজ রোববার (৪ মে) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে ‘সাহসী নতুন বাংলাদেশ: গণমাধ্যমের স্বাধীনতার রোডম্যাপ সংস্কার’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

যৌথভাবে সেমিনারটির আয়োজন করে ইউনেসকো ঢাকা অফিস, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুইডেন দূতাবাস।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ ও এএফপির ঢাকা অফিসের ব্যুরো চিফ শেখ সাবিহা আলম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গণমাধ্যম সংস্কারের প্রধান কামাল আহমেদ।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠী ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে এসব মামলা করছে ইঙ্গিত দিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আউটরেজটা (ক্ষোভ) আছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে, আমরা পুরো বাংলাদেশের পলিটিক্যাল সিস্টেম ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছি। যার বিরুদ্ধে সঠিক অভিযোগ আছে, সেই অভিযোগে মামলা হয়নি। হয়েছে হত্যা মামলা। এটা নিয়ে আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি।’

মিথ্যা মামলা বন্ধ করতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়—সবকিছু একটি জায়গায় আনার চেষ্টা করছে সরকার। এ ছাড়া মামলা হওয়ার পর এসব মামলার লিগ্যাল প্রসেসিং নিয়েও কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এসব মিথ্যা মামলায় কাউকে যেন গ্রেপ্তার না করা হয়, কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে বলে জানান এই উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা জানান, মামলা যে কেউ করতে পারে। সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সরকার অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করছে কি না, সেখানে কোনো সীমাবদ্ধতা আছে কি না—সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারেন।

মামলা-বাণিজ্য বাংলাদেশের পুরোনো সংস্কৃতি, সব রাজনৈতিক দলকে এর থেকে সরে আসার আহ্বান জানান মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘অজানা লোকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। গায়েবি মামলা হয়ে ধরপাকড় চলতে থাকবে। কেবল সাংবাদিক নয়, আমি-আপনি এর শিকার হতে পারি। আমরা এর বিরুদ্ধে।’

সরকার লিখতে বাধা দিচ্ছে না, জানিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষ সবকিছু লিখতে পারছে। সরকার কাউকে লিখতে বাধা দিচ্ছে না। নেত্র নিউজে সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের মেয়ে তাঁর বাবাকে নির্দোষ দাবি করেন। সত্য হচ্ছে, আসাদুজ্জামান চারজন মানুষ হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত। ২০১৩ বা ২০১৪ সালে উনার গাড়িতে যারা হামলা করেছে, ওইখানে পাঁচজন লোককে গুম ও খুন করেছে। কিন্তু নেত্র নিউজে তাঁর মেয়ের লেখা ছাপাতে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।’

সংবাদমাধ্যমের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা আছে বলে জানান মাহফুজ। তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন তুলতে হবে। কিন্তু এটার ম্যাট্রিক্স কী, এটা কীভাবে কাজ করবে। জবাবদিহি করাটাই কি মুখ্য? নাকি আসলে আরও ১০টা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এটা ভাবা দরকার। আমাদের সরকার প্রশ্ন নিতে রাজি আছে।’

এ সময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের গণমাধ্যমগুলোর কার্যকলাপ নিয়ে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ দরকার বলে মনে করেন উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। তাঁর মতে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমেরও জবাবদিহির প্রয়োজন রয়েছে। সরকার সাংবাদিকদের জন্য করা সুরক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ করছে।

গণমাধ্যম সংস্কারের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ‘সংস্কার কমিশন থেকে সংবাদমাধ্যমকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরের যে প্রস্তাব, তা অবাস্তব বলে মনে করেন অনেকে। যেসব গণমাধ্যম কোম্পানির হিসাব রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির দপ্তর থেকে পাওয়া গেছে, তার আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় দেড় ডজনের বেশি সংবাদমাধ্যম লাভজনক। তাই আমার মনে করি, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’

দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ‘এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ আখ্যায়িত করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চা, মুক্ত অধিকার ধ্বংস করে কর্তৃত্ববাদের বিকাশের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। অথচ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার নিয়ে কেউ কথা বলে না।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোতে এখন কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। বাস্তবে কোথাও চর্চার পরিবর্তন হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে তারা যে সিস্টেম ডেভেলপ করেছে, যে মেথড ডেভেলপ করেছে, যে ইনস্ট্রুমেন্ট ডেভেলপ করেছে, যেগুলো করায়ত্ত করেছে, সেগুলো তাদের হাতে বহাল আছে।

এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি নারী সংস্কার কমিশনের প্রতি সমালোচনা ও নারীর প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের নিন্দা জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত