Ajker Patrika

বন্যার ঝুঁকিতে সিলেটের চার জেলা, পানি বাড়ছে উত্তরে

  • সিলেটের চার জেলাতেই বন্যার আশঙ্কা করছে পাউবো।
  • সুরমা নদীর কানাইঘাটে পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপরে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। সিলেট বিভাগের চার জেলা, তিন পার্বত্য জেলা, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাটে পানি বাড়ছে। বন্যাপ্রবণ তিন নদীর (সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও মৌলভীবাজারের মনু নদ) পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের নিচু এলাকা বানের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সিলেট বিভাগের চার জেলার সব কটিতে বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

অতি ভারী বর্ষণের কারণে সিলেট, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিলেটে গতকাল রেকর্ড বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি আরও বেড়েছে। নগরের বেশির ভাগ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।

সুরমা নদীর পানি কানাইঘাটে ইতিমধ্যে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারার পানি অমলশীদে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার এবং মনু নদের পানি মৌলভীবাজারে বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

গতকাল রোববার পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বন্যা সতর্কতায় বলা হয়, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর মুহুরী ও ফেনী নদী, চট্টগ্রামের হালদা এবং নীলফামারী ও লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।

সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, সিলেট বিভাগের পাশাপাশি নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ছে। আগামী কয়েক দিনে দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি বাড়তে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে রেকর্ড ৪০৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর গতকাল সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৯ দশমিক ৮ মিলিমিটার। আরও দু-এক দিন বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আসামে ৪১৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সিলেটের নদ-নদীতে পানি বাড়বে। ইতিমধ্যে তিনটি নদীর তিন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে।

মৌলভীবাজারের জুড়ী, বড়লেখা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পানি বাড়লে সেগুলো ভেঙে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান জানান, গত ৩ দিনে ২০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বুলবুল আহমেদ বলেন, সব কটি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করেছি। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও শুকনা খাবার প্রস্তুত করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জে আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিপাকে পড়েছেন পশু বিক্রেতা ও চাষিরা। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার সময় গবাদিপশুর খাবার নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য গবাদিপশু ও শুকনা খড় উঁচু জায়গায় সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। গরু রাখার ঘর শুকনা রাখতে হবে। স্যাঁতসেঁতে যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় দুটি করে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন ও পর্যাপ্ত ওষুধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, বন্যায় চর্মরোগ ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এ জন্য আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ডায়রিয়া ও কলেরার ওষুধ রয়েছে।

হবিগঞ্জে ভারী বর্ষণজনিত জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছে উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দারা। শায়েস্তানগর, চৌধুরীবাজার, ঘাটিয়া ও ফায়ার সার্ভিস সড়কে হাঁটুপানি জমে গেছে। এসব এলাকায় স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক পাড়া-মহল্লার রাস্তাও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বন্যা পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে নেত্রকোনায় গতকাল উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। উপজেলা পরিষদের হলরুমে আয়োজিত এ প্রস্তুতি সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুয়েল সাংমাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরসংলগ্ন সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হাওড়া বাঁধ রক্ষায় কাজ করছি।’ স্থলবন্দর এলাকার মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, বন্দরের আশপাশে অনেক জায়গা তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত রপ্তানিতে প্রভাব না পড়লেও পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে আখাউড়া-আগরতলা সড়ক ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

দুদিনের বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি ঘাগড়া এলাকায় কয়েকটি স্থানে পাহাড় ধসের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সড়ক সচল রাখতে কাজ করছে সড়ক বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। তবে কোথাও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে পানিবন্দী মানুষের জন্য ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। উপজেলা সদরে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় বান্দরবানের লামার বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্র সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। লালমনিরহাটে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বেড়েছে। এতে নদীর উভয় তীরে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০২ এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার

গাজীপুরে একটি সংসদীয় আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে, ইসির খসড়া চূড়ান্ত

বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমছে, সবুজসংকেত যুক্তরাষ্ট্রের

গণপূর্তের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের ১ স্থপতি বরখাস্ত

স্বামীর মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও যাবজ্জীবন এড়াতে পারলেন না রসায়নের অধ্যাপক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত