Ajker Patrika

কোটা নিয়ে নিবন্ধ শেষ করতে পারলেন না, ‘মাথার মাঝে বিস্ফোরণ’ হলো জাফর ইকবালের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৪, ১৫: ৫১
Thumbnail image

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে গত রোববার (১৪ জুলাই) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নামেন। একই অভিযোগে বিক্ষোভে উত্তাল হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে সমবেত হন। ঠিক ওই সময়ই কোটা নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখতে শুরু করেছিলেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল

ওই নিবন্ধের একটি অংশ আজ মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল অংশটিতে লেখা, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয়, আর কোনো দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই “রাজাকার”। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন, সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’ 

তাঁর লেখা পুরো নিবন্ধটি ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানারের সূত্রে আজকের পত্রিকা’র হাতে এসেছে। 

কোটা নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে জাফর ইকবালের লেখা নিবন্ধ। ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যেআজকের পত্রিকার পাঠকদের উদ্দেশে নিবন্ধটি তুলে ধরা হলো—
‘কোটা’ শিরোনামের নিবন্ধটিতে তিনি লেখেন, পত্রিকা খুললেই সরকারি চাকরির কোটা নিয়ে আন্দোলনের খবর চোখে পড়ে। প্রথম দিকে আন্দোলনে শুধু ছেলেরা ছিল, আস্তে আস্তে দেখছি মেয়েরাও যোগ দিচ্ছে। এরপর তিনি আরও অনেক কিছু লিখেছেন। কিন্তু তার ওপরে হলুদ রঙের একটি নোট সেঁটে দিয়ে লিখেছেন, ‘আমি এই লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলাম। শেষ করার আগেই জানতে পারলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটাবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত করেছে। এই লেখাটি শেষ করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। তবে...’

নোটটির নিচের অংশ থেকে আবার পড়া যাচ্ছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, আমার ব্যক্তিগতভাবে আর কিছু চাইবার নেই। স্বাধীন একটা দেশ চেয়েছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছিলাম, দুটোই পেয়ে গেছি। এখন যদি আরও কিছু পাই, সেটা হবে বোনাস! (তবে অস্বীকার করব না, বেনজীর–আবেদ আলীদের সামলে সুমলে রাখলে একটু আনন্দ পেতাম।) 

আমরা সবাই জানি একটা দেশে যদি সবাই সমান সুযোগ-সুবিধা পায় আর সবার যদি সমান অধিকার থাকে, তাহলে কোটার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি না থাকে তাহলে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোটা রাখা একটা মানবিক ব্যাপার। অবশ্য ‘মানবিক ব্যাপার’ কথাটা একটু বইয়ের ভাষা। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, কয়জনের আর অন্যদের মানবিক ব্যাপার নিয়ে মাথাব্যথা আছে? যদি কোটার ব্যাপারটা সহজভাবে দেখি তাহলে বলা যায়, দুই রকমের কোটা আছে। একটা ভালো, আরেকটা খারাপ।

প্রথমে খারাপটার কথা বলি, তার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার কোটা, যেটাকে পোষ্য কোটা বলে। আমি খুঁটিনাটি জানি না, সম্ভবত পোষ্য কোটা শুধু শিক্ষকদের জন্য না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্যও খোলা। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষকদের সন্তান ছাড়া আর কোনো সন্তান সেই সুযোগ ব্যবহার করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। এই পোষ্য কোটা নিয়ে কখনো উচ্চবাচ্য হতে শুনিনি। যদিও পোষ্য কোটার ছাত্র-ছাত্রীরা পাস করার পর আবার তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বানাবার একটি নতুন চাপ শুরু হয়—নিজের চোখে দেখা!
 
কোটা নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে জাফর ইকবালের লেখা নিবন্ধ। ছবি: রিউমর স্ক্যানারের সৌজন্যেআর ভালো কোটার উদাহরণ হচ্ছে...

এরপর তাঁর লেখা আর এগোয়নি। এরপর তিনি লেখেন, (লেখাটি শেষ না করে নিচের অংশটুকু লিখছি) 

ঘুমানোর আগে খবরটি দেখে আমার মাথার মাঝে একটা বিস্ফোরণ হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার হিসেবে দাবি করছে। খবরটি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হয় না—এটা কি সত্যিই সম্ভব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বা ছাত্রী সত্যিই কি নিজেকে রাজাকার দাবি করতে পারে? শুধুমাত্র একটা সরকারি চাকরির জন্য? কোন দেশের সরকার, বাংলাদেশ না পাকিস্তান? এই ছাত্র-ছাত্রীরা কি জানে চাকরি অনেক দূরের ব্যাপার, তাদের যে এই দেশের মাটিতেই থাকার অধিকার নেই?

এরপরই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল নিবন্ধের শেষ অংশটুকু লেখেন। যেখানে তিনি লেখেন, তিনি আর কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান না। নিবন্ধের শেষ অংশটুকু ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা শুরু হয়। সরকারদলীয় ব্যক্তিদের মধ্যে নিবন্ধের অংশটুকু নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছেন বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট অপু উকিল, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে। 

সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই নিবন্ধের অংশটুকু শেয়ার করে চলমান কোটা আন্দোলনে তাঁর অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করেছেন। নিলয় আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, ‘বাহ! এই হলেন আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী।’ বিনীতা হীনা নামে একজন লিখেছেন, ‘এই কি সেই “আমার বন্ধু রাশেদ” এর লেখক জাফর ইকবাল? লেখক হিসেবে তিনি আমার খুব প্রিয় ছিলেন, আজকে থেকে আর কোনো দিন আমি তাঁর একটা বই ছুঁয়েও দেখব না!’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত