Ajker Patrika

শিক্ষার্থী তাইমকে গুলি করে হত্যা: সাবেক এসআই সাজ্জাদের জামিন স্থগিত, আত্মসমর্পণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
হাসান ইমাম তাইমকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
হাসান ইমাম তাইমকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইমকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আসামি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক এসআই মো. সাজ্জাদ–উজ–জামান। তাঁকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই জামিন স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ আদেশ দেন।

যাত্রাবাড়ী থানার ওই মামলায় গত ২০ মে হাইকোর্ট থেকে জামিন পান সাজ্জাদ। পরে জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। সাধারণত দুপুরের পর চেম্বার আদালত বসলেও আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে বসে চেম্বার আদালত। আর শুধু সাজ্জাদ–উজ–জামানের বিষয়ে আদেশ দিয়েই নেমে যান বিচারপতি।

এ সময় চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় এই একটি মামলাই ছিল। আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।

এর আগে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এসআই সাজ্জাদ-উজ্জামানকে জামিন দিলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ব্যাপক সমালোচনা করেন। এমনকি তাঁরা আইন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়ে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেন।

এ বিষয়ে গত ১৯ আগস্ট এক ফেসবুক পোস্টে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারের করা একটি মামলায় হাইকোর্ট পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্যকে জামিন দিয়েছেন। এটি নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিক কারণেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তবে এই জামিনের সঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই। হাইকোর্ট দেশের উচ্চ আদালত। হাইকোর্ট বা উচ্চ আদালত আইন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারের অধীনে নয়। জামিন বা হাইকোর্টের অন্য কোনও সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাই আইন মন্ত্রণালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাইকোর্ট উচ্চ আদালত হলেও তাঁর সিদ্ধান্ত প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে উপরোক্ত জামিনাদেশের বিরুদ্ধে তাই আপিল করা হয়েছে। কালই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। জামিন বাতিল হলে পুলিশ উপরোক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করবে।’

রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে ইমাম হাসান তাইম। পুলিশের গুলিতে গত বছরের ২০ জুলাই ইমাম হাসান যাত্রাবাড়ীর কাজলা পদচারী–সেতুর কাছে নিহত হন। ইমাম হাসান নারায়ণগঞ্জের সরকারি আদমজী নগর এমডব্লিউ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

তাইমের বড় ভাই রবিউল আওয়াল ভূঁইয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, ২০ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। সেদিন ইমাম হাসান মাকে চা খাওয়ার কথা বলে বাইরে গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেয়। যাত্রাবাড়ীর কাজলা পদচারী–সেতুর পাশে ইমাম হাসানকে গুলি করা হয়। যাত্রাবাড়ী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক সাজ্জাদুজ্জামান প্রথম ইমাম হাসানের পায়ে গুলি করেন। পরে এডিসি শামিম আরেকজনের হাত থেকে অস্ত্র নিয়ে তার শরীরের নিচের দিকে গুলি করেন। তারপর ওসি তদন্ত জাকির হোসেন অনেকবার গুলি করেন।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে তখন যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও প্রলয়, ডিসি ইকবাল, এডিসি মাসুদুর রহমান মনির, এসি নাহিদ, এসি তানজিল, ওসি আবুল হাসান, ওসি অপারেশন ওয়াহিদুল হক মামুনসহ ১০–১৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

জবানবন্দিতে রবিউল আরও বলেন, ঘটনাস্থলে ইমাম হাসান আধা ঘণ্টা পড়ে ছিল। পরে পুলিশ ভ্যানে করে তাকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে নেওয়া হয়। সেখানে ভ্যান থেকে মাটিতে নামিয়ে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ সদস্য বুট জুতা দিয়ে মাড়িয়ে তার চেহারা বিকৃত করে ফেলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন এডিসি শামীম, এডিসি মাসুদুর রহমান মনির, এসি নাহিদ। পরে কেউ তাঁকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত