Ajker Patrika

বেড়িবাঁধ ভাঙনে আতঙ্ক

  • ঢেউয়ের আঘাতে লন্ডভন্ড চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট।
  • সুন্দরবনের দুবলারচর এলাকা থেকে দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার।
  • বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল শুরু।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্বাভাবিক জোয়ারে বিধ্বস্ত নোয়াখালীর হাতিয়ার একটি বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
অস্বাভাবিক জোয়ারে বিধ্বস্ত নোয়াখালীর হাতিয়ার একটি বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে ওই সব অঞ্চলের ঘেরের মাছ ও রাস্তাঘাট। নিম্নচাপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া। উপজেলার বেশ কিছু বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া সুন্দরবনের অভ্যন্তরে করমজল, সুপতি, ভোলা, কটকা, দুবলা এলাকায় পাঁচটি মিঠাপানির পুকুরে লোনাপানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ঢেউয়ের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটটি।

এদিকে বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন নৌরুটে যান চলাচল শুরু হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে বন্ধ থাকা টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটেও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞাও তুলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মিঠাপানির পুকুরে লোনাপানি

নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। করমজল, সুপতি, ভোলা, কটকা, দুবলা এলাকায় পাঁচটি মিঠাপানির পুকুরে লোনাপানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর ফলে ওই এলাকার বন্য প্রাণীদের মিঠাপানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া দুবলার চর এলাকা থেকে দুটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছেন বনরক্ষীরা।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় “শক্তি”র ফলে এবার আমাদের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে পাঁচটি পুকুর লোনাপানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর ফলে বন্য প্রাণীদের পানি খাওয়ায় সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এ ছাড়া পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া অবস্থায় আমরা একটি হরিণশাবক উদ্ধার করেছি। দুবলার চর এলাকা থেকে দুটি মৃত হরিণ উদ্ধার করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে বলেশ্বর ও ভোলা নদীর পানিতে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের মূল বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী-বগী ভারাণী খালের পাশের রিং বাঁধের দুটি স্থানের ১০০ ফুট ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্লাবিত হয়েছে লোকালয়।

আতঙ্কে ২০ হাজার পরিবার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙে না গেলেও কয়েকটি এলাকায় এক-তৃতীয়াংশ বাঁধ ভেঙে গেছে, যেকোনো মুহূর্তে স্বাভাবিক জোয়ারেও ভেঙে যেতে পারে বাকি অংশ। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙা অংশটুকু মেরামত না করলে ক্ষতির মুখে পড়বে বেড়িবাঁধের ভেতরে বসবাস করা প্রায় ২০ হাজার পরিবার।

চরঈশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফিরোজা বেগম বলেন, ‘বেড়ির বাইরে জোয়ারে বসতঘর ভেঙে নিয়ে যায়। আমাদের এখন দেখার কেউ নাই। সহযোগিতা করার কেউ নাই। কীভাবে ঘর-দুয়ার মেরামত করব, কার কাছে যাব, আমাদের পাশে কেউ নাই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, হাতিয়ায় জোয়ারে কয়েকটি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চরঈশ্বরে নলচিরা সুখচর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে তালিকাভুক্তির কাজ চলছে।

জলে গেল ২০০ কোটির প্রকল্প

ত্বরিতগতিতে নির্মাণকাজ শেষে গত ২৪ মার্চ উদ্বোধন করা হয় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপবাসীর কাঙ্ক্ষিত বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটটি। কিন্তু উদ্বোধনের দুই মাসের মাথায় নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাটটি। সেই সঙ্গে ইট-সুরকি উঠে গিয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেড়িবাঁধ থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত নবনির্মিত ৮০০ মিটার সড়ক।

দুই মাস আগে উদ্বোধন হওয়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটটি প্রবল ঢেউয়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গতকাল তোলা। 	ছবি: আজকের পত্রিকা
দুই মাস আগে উদ্বোধন হওয়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া-গুপ্তছড়া ফেরিঘাটটি প্রবল ঢেউয়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গতকাল তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাঁশবাড়িয়ার বাসিন্দা সোলেমান হোসেন বলেন, সরকারের আগ্রহের কারণে ত্বরিতগতিতে কাজ করে ফেরি সার্ভিসটি চালু করা হয়। কিন্তু তড়িঘড়ি করার কারণে কাজের মান যাচাই-বাছাই সঠিকভাবে করা হয়নি। যার ফলে বর্ষা শুরুতে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ফেরিঘাট।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ফেরি চালু হলেও এখনো চলমান রয়েছে সড়কের নির্মাণকাজ। কাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া জলোচ্ছ্বাসের কারণে ফেরিঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফেরিঘাট ও ঘাটসংলগ্ন সড়কের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ শেষে তাদের কর্মরত প্রকৌশলীরা একটি তালিকা প্রণয়ন করবেন। সেই অনুযায়ী মেরামতকাজ করা হবে।

বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল শুরু

বৈরী আবহাওয়া কেটে যাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে কক্সবাজার-মহেশখালী রুটে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। একই সময়ে মহেশখালীর গোরকঘাটা-চৌফলদণ্ডী রুটেও নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। পাঁচ দিন ধরে বন্ধ থাকা টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন রুটেও নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতিতে জানানো হয়েছে, সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে কক্সবাজারসহ চার সমুদ্রবন্দরের সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এ দিন সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টিপাত হয়নি।

[প্রতিবেদনে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

সৌদি আরবে পুরুষের ‘অবাধ্য’ হলে নারীর যে পরিণতি হয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত