Ajker Patrika

চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যার প্রতিবেদন সংশোধন করল রয়টার্স

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৪৬
Thumbnail image
রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে বাদ দেওয়া সেই অংশ। ছবি: রয়টার্স

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে একদল দুষ্কৃতকারী। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেখানে এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সাইফুলকে সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে রয়টার্স তাদের প্রতিবেদন থেকে সেই অংশটি মুছে ফেলে এবং প্রতিবেদনের নিচের অংশে এ বিষয়টি উল্লেখ করে।

রয়টার্স প্রকাশিত সংবাদের চতুর্থ প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলী বলেছেন, আদালতের বাইরে (চট্টগ্রামে) বিক্ষোভের মধ্যে (চিন্ময়) দাসের পক্ষের একজন মুসলিম আইনজীবী নিহত হয়েছেন।’ এই প্যারাটি মুছে ফেলার বিষয়টি উল্লেখ করে রয়টার্স তাদের নোটে বলেছে, ‘এই প্রতিবেদনের চতুর্থ অনুচ্ছেদ (প্যারা) থেকে পুলিশ কর্মকর্তার সেই মন্তব্য মুছে ফেলা হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, নিহত আইনজীবী (চিন্ময়) দাসের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন।’

সংশোধিত প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, “পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে এক (হিন্দু) ধর্মীয় নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় অন্তত একজন নিহত হয়েছেন। এদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিন্দু (সাবেক) নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গত সোমবার ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে তাঁর সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

চট্টগ্রাম আদালতের বাইরে বিক্ষোভের সময় এক মুসলিম আইনজীবী নিহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। দেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বন্দর নগরীতে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।

গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে একটি বড় ধরনে জনসমাবেশে নেতৃত্ব দেন চিন্ময়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। সেই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের একটি আদালত তাঁর জামিন নাকচ করেন

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেছেন, ‘চিন্ময় দাসকে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় ২ হাজারের বেশি সমর্থক প্রিজন ভ্যানটি ঘিরে ধরে এবং প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আটকে রাখে। তিনি বলেন, ‘এ সময় তারা ব্যাপক তাণ্ডব চালায় এবং আমাদের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে আমাদের টিয়ার গ্যাস ছুড়তে হয়। কেউ গুরুতর আহত হয়নি, তবে আমাদের একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন।’

নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে, ভারত চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে একটি কড়া বিবৃতিতে বলেছে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা এবং যারা দেবতাদের অবমাননা করেছে, তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত প্রতিবেশী বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখলেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিক আক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।’

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যখন উল্লিখিত ঘটনাগুলোর অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি, তখন এক ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে—যিনি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে বৈধ দাবি উত্থাপন করেছেন—অভিযোগ আনার বিষয়টি দুঃখজনক।

ভারতের প্রতিক্রিয়ার জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘সরকার বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করে না এবং বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত