Ajker Patrika

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের পুনর্বাসনে হচ্ছে অধ্যাদেশ

  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরকে অধ্যাদেশের আওতায় আনা হবে।
  • জুলাই থেকে মাসিক ভাতা বিতরণ শুরু।
  • পরিবর্তন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা।
  • আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ ভোটার ও যোগাযোগ বিবেচনায়।
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ১৬: ১০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধা প্রদান এবং আহত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে অধ্যাদেশ হচ্ছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরকে এই আইনের আওতায় আনা হবে। এই অধিদপ্তরের মাধ্যমেই শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সুবিধা, আহত ব্যক্তিদের জন্য সঞ্চয়পত্র ক্রয় ও মাসে মাসে ভাতা দেওয়া, তাঁদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে সরকারি চাকরিতে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় কিছু বলা হয়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি নীতিমালার খসড়া করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই খসড়া অনুমোদন না দিয়ে আইনি কাঠামোর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানে হতাহত ব্যক্তিদের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে তড়িঘড়ি করে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ছাত্র-জনতার কল্যাণ ও পুনর্বাসন’ অধ্যাদেশের খসড়া করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটিতে গতকাল রোববার খসড়াটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য শিগগিরই এটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হবে।

অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ, নিহতদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন এবং গণ-অভ্যুত্থানের আদর্শকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করা হবে। যদিও গত ১২ এপ্রিল এই অধিদপ্তর গঠন করেছে সরকার।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের পাশাপাশি আহতদেরও ধরনভেদে কীভাবে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আহতদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টিও এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া এবং মাসে মাসে ভাতা দেওয়ার বিষয়গুলোও অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল নীতিমালার মাধ্যমেই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, অভ্যুত্থানে হতাহতদের সুযোগ-সুবিধা যাতে বন্ধ করতে না পারে, সে জন্য এসব বিষয়কে আইনি কাঠামোতে আনতে নতুন অধ্যাদেশ করার সিদ্ধান্ত হয়।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাদেশের খসড়ায় কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাদেশে তাঁদের পুনর্বাসনের কথা বলা আছে। কীভাবে তা করা হবে, সরকার সে বিষয়ে আলাদা গাইডলাইন জারি করতে পারে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজেই তাঁদের পুনর্বাসন করা যাবে। তবে এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানে প্রত্যেক শহীদের পরিবারকে ৩০ লাখ এবং চার শ্রেণির আহতদের ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া হচ্ছে। সঞ্চয়পত্র কিনে দেওয়া শেষ হলে আগামী জুলাই থেকে তাঁদের মাসিক ভাতা দেওয়া শুরু হবে।

গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হলে ওই পরিবারকে এবং অতিগুরুতর আহত ব্যক্তিদের মাসে অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। এর বাইরে শহীদ পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাসহায়তা এবং আহত ব্যক্তিদের সারাজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসা ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী কর্মসংস্থান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অভ্যুত্থানে হতাহতদের যত ধরনের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়গুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে নতুন অধ্যাদেশ করা হচ্ছে।

বদলে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা

মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বদলাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এই সংজ্ঞা বদলে গেলে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামও বাদ পড়তে পারে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে যাঁরা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি, তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগী হিসেবে রাখা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আগামীকাল মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধার বর্তমান সংজ্ঞায় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি এমন আট ধরনের ব্যক্তি ও পেশাজীবীর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া আছে। নতুন সংজ্ঞায় যাঁরা বিদেশে থেকে যুদ্ধের জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী-দূত; মুজিবনগর সরকারে সম্পৃক্ত এমএনএ এবং যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতর কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সব খেলোয়াড়কে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে রাখা হয়েছে।

খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা থেকেও শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’

ভোটার, যোগাযোগ সুবিধা দেখে সীমানা পুনর্নির্ধারণ

জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণে আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। আগামীকালের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ অনুমোদনের জন্য তোলার কথা রয়েছে।

খসড়া অনুযায়ী, জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যা, ভৌগোলিক ও জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং যোগাযোগ সুবিধা দেখে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। তবে ইউনিয়ন এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ওয়ার্ডকে কোনোভাবেই ভাগ করা হবে না।

২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন শতাধিক নির্বাচনী এলাকার সীমানায় পরিবর্তন আনে। এরপর কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে। কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২৫টি আসনে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী হাবিবুল আউয়ালের কমিশন ১২টি আসনের সীমানায় সামান্য পরিবর্তন আনে। তার আগে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালে ৩৩টি নির্বাচনী এলাকার সীমানায় পরিবর্তন করা হয়।

কৃষিপণ্য হচ্ছে তুলা

তুলার উৎপাদন বাড়াতে দেশে উৎপাদিত তুলাকে কৃষিপণ্যের স্বীকৃতি দিচ্ছে সরকার। মঙ্গলবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দেশে উৎপাদিত আঁশ তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করবে কৃষি মন্ত্রণালয়।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ২০৫০ সালের মধ্যে দেশে ২ লাখ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এতে দেশের চাহিদার ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদন সম্ভব হবে। এ জন্য সরকার খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত না করে চরাঞ্চল, বরেন্দ্র এলাকা, পার্বত্য এলাকা ও দেশের বিভিন্ন এলাকার ফলবাগানকে তুলা চাষের আওতায় আনতে চায়।

তুলা চাষের আওতা বাড়াতে গেলে চাষিদের সুবিধা দিতে হবে। এ জন্যই তুলাকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। তুলাকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করা হলে তুলা উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিতে পারবে সরকার। এর আগে ২০১৬ সালের ৬ মার্চ পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

মঙ্গলবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে বাংলাদেশ এনার্জি পোর্ট লিমিটেড নামক কোম্পানি গঠনের বিষয়ে গঠিত কমিটিসহ কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব বাতিলের বিষয়টি ওঠার কথা রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্নসম্পদ অধ্যাদেশ, বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং জাতীয় যুব উন্নয়ন নীতিমালা, জাতীয় জীন ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার খসড়াও অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আগামী নির্বাচনকে ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় করে রাখতে হবে: ইউএনওদের প্রধান উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৪১
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচন প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী আগামী নির্বাচনকে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এই নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের মাধ্যমে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা থেকে আজ বুধবার সারা দেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন দেশের সব জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের নতুন করে একটি সুযোগ দিয়েছে। অন্য জেনারেশন এই সুযোগ পাবে না। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারব। আর যদি না পারি, তাহলে জাতি মুখ থুবড়ে পড়বে। এর আগেও আমরা নির্বাচন দেখেছি। বিগত আমলে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, যেকোনো সুস্থ মানুষ বলবে—এটা নির্বাচন নয়, প্রতারণা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অন্যান্য দায়িত্বের মতো নয়; বরং একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব। আমরা যদি ভালোভাবে এই দায়িত্ব পালন করতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচনের দিনটি জনগণের জন্যও ঐতিহাসিক হবে।’

ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সরকার তার দায়িত্বটি সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হবে।’

আগামী সংসদ নির্বাচন ও গণভোট দুটিই জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘নির্বাচন আগামী পাঁচ বছরের জন্য আর গণভোট শত বছরের জন্য। এর মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশটাকে স্থায়ীভাবে পাল্টে দিতে পারি। যে নতুন বাংলাদেশ আমরা তৈরি করতে চাই, তার ভিতটা এর মাধ্যমে গড়তে পারি।’

এ সময় সদ্য যোগদান করা ইউএনওদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের প্রধান দায়িত্ব হলো একটি শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর নির্বাচন আয়োজন করা।’

প্রধান উপদেষ্টা ইউএনওদের নিজ নিজ এলাকার সব পোলিং স্টেশন পরিদর্শনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, এলাকাবাসী ও সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।

গণভোট বিষয়ে ভোটারদের সচেতন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ভোটারদের বোঝাতে হবে, আপনারা মন ঠিক করে আসুন—“হ্যাঁ”-তে দেবেন নাকি “না”-তে ভোট দেবেন। মন ঠিক করে আসুন।’

কর্মকর্তাদের ধাত্রীর সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ধাত্রী ভালো হলে জন্ম নেওয়া শিশুও ভালো হয়।

তিনি কর্মকর্তাদের যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সৃজনশীল হওয়ার পাশাপাশি অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নারীরা যেন ঠিকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।

শিগগির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে উল্লেখ করে ড. ইউনূস ইউএনওদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত কখন, কীভাবে, কোন কাজটি করবেন—তার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি এখন থেকেই নিন।’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও জনপ্রশাসন সচিব মো. এহছানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের ৪টি আসন বহাল, ফিরল না গাজীপুর ৬

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাগেরহাটের ৪টি আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল খারিজ করে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিতে এ আদেশ দেন।

এর ফলে বহাল থাকল বাগেরহাটের চারটি আসন। বাদ পড়েছে গাজীপুর-৬ আসনটিও।

এর আগে বাগেরহাটের আসন একটি কমিয়ে তিনটি করা এবং গাজীপুরে একটি বাড়ানো-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন।

হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ড. হাফিজুর রহমান ও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মো. সালাহ উদ্দিন সরকার আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করেন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ড. হাফিজুর রহমানের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবনে সিইসি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৪
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন সিইসি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে পৌঁছেছেন।

বঙ্গভবনের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির বৈঠকের শিডিউল রাখা আছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনের সার্বিক প্রস্তুতি ও তফসিল ঘোষণা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনা করতে বঙ্গভবনে গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সিইসি দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছান।

এর আগে ১০টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বঙ্গভবনের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ (অবসরপ্রাপ্ত), তাহমিদা বেগম, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ এবং ইসি সচিব আখতার আহমেদ।

উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। তফসিল-সংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ইতিমধ্যে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারকে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশের ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বুনন শিল্প’ অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইউনেসকোর স্বীকৃতি

বাসস, ঢাকা  
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক
টাঙ্গাইল শাড়িতে অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। ছবি: ফেসবুক

টাঙ্গাইলের শাড়ি বুনন শিল্পকে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো। গতকাল মঙ্গলবার ভারতের নয়াদিল্লিতে ইউনেসকো কনভেনশনের চলমান ২০তম আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এই কনভেনশনের আওতায় এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ একক নিবন্ধন। সভায় প্রথমবারের মতো সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত চার বছরে এটি দ্বিতীয় নিবন্ধন।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং ইউনেসকো সাধারণ পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অসামান্য গৌরবের বিষয়। দীর্ঘ দুই শতকের বেশি সময় ধরে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের অনবদ্য শিল্পকর্মের বৈশ্বিক স্বীকৃতি এটি।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি বাংলাদেশের সকল নারীর নিত্য পরিধেয়, যা এই শাড়ি বুনন শিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’

এই অর্জনকে বাংলাদেশের সকল তাঁতি ও নারীদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম. তালহা।

বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সামগ্রিক সুরক্ষায় এই স্বীকৃতি নতুন মাত্রা যোগ করবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তালহা বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেসকোর স্বীকৃতি অর্জনের মতো বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে।

নথি প্রস্তুত করার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কনভেনশন সংক্রান্ত অভিজ্ঞ জনবল তৈরি করার মাধ্যমে আরও অনেক ঐতিহ্যের ইউনেসকো-স্বীকৃতি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

এর আগে, গত ৭ ডিসেম্বর আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের চলমান ২০তম সভা উদ্বোধন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শংকর। অনুষ্ঠানে ইউনেসকোর নবনিযুক্ত মহাপরিচালক খালেদ এল. এনানি উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ২

আজকের রাশিফল: অতিরিক্ত রাগ লজ্জায় ফেলবে, ঘরে শান্তি চাইলে রান্না নিয়ে চুপ থাকুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত