Ajker Patrika

রাজধানীর জন্য ৪০০ বাসের প্রকল্প: আটকে আছে ইলেকট্রিক বাস প্রকল্প অনুমোদন

  • ব্যবসায়িক মডেল, ব্যয়ের দিকগুলো এখনো পর্যালোচনা চলছে।
  • সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক ধীরগতি দায়ী: বিশেষজ্ঞ
  • সফলতার জন্য বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করার তাগিদ
  • বায়ুদূষণ ও যানজট নিরসনে সহায়ক হবে বলে প্রত্যাশা
তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বায়ুদূষণ ও যানজট কমাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস নামানোর একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠিয়েছিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে। মহাসড়ক বিভাগ প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে গত মে মাসে। তবে গত আট মাসেও প্রস্তাবটি নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ব্যবসায়িক মডেল ও ব্যয়ের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তিগত কিছু বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়াতেই এর অনুমোদন থমকে আছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট ‘বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার (বিসিএপি) ফেজ ওয়ান’-এর অংশ হিসেবে ইলেকট্রিক বাস চালুর প্রকল্পটির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প ব্যয়ের ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ২ হাজার ১৩৫ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকারের ব্যয় ৩৬৫ কোটি। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে ২০৩০ সালের ৩০ জুন। ঢাকা শহরের যানজট কমানো, কার্বন নিঃসরণ তথা দূষণ হ্রাস, গণপরিবহনের মান উন্নয়ন ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ডিটিসিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায়। রাজধানীর জন্য উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহনব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে এই প্রকল্পটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পরিবহন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০০ ইলেকট্রিক বাস চলার কথা। অপারেটর নিয়োগের মাধ্যমে বাস পরিচালনা করবে সরকার। তিনটি চার্জিং ডিপো নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি বিআরটিএ ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টারসহ কয়েকটি অবকাঠামো করবে।

প্রকল্প প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ইলেকট্রিক বাসগুলোর পরিচালনার খরচ কে দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সরকার এতে ভর্তুকি দেবে কি না, তা চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের নীতিগত ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারও এর সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

প্রকল্পটির অনুমোদন বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের ব্যবসায়িক মডেল, খরচ সাশ্রয় হবে কি না—এসব বিষয় পর্যালোচনা চলছে। এতগুলো বাসের অবস্থান নির্ধারণও একটি বড় বিষয়। তাই দু-তিনটি আলাদা স্থানের সম্ভাবনা বিবেচনা করা হচ্ছে। আবার যেসব জায়গায় বাস থাকবে, সেখানে চার্জিং স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

বিশেষ সহকারী বলেন, তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে তাঁদের আমলে এটা অনুমোদন হবে কি না, তা বলতে পারছেন না।

প্রকল্পটির বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত দিন ধরে এ ধরনের প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়া সরকারের দীর্ঘমেয়াদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সমন্বয়হীনতারই প্রতিফলন। তবে পরিবহন খাতে বড় প্রকল্প নিতে হলে শুধু আধুনিক বাস আনা যথেষ্ট নয়—অপারেশনাল মডেল, রুট র‍েশনালাইজেশন, জমি বরাদ্দসহ সার্বিক অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা—সবকিছু নিয়ে সমান্তরালভাবে কাজ করতে হয়। আমাদের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এতটা ধীর এবং জটিল যে, বাস্তবসম্মত পরিকল্পনাগুলোও বছরের পর বছর ধরে স্থবির হয়ে থাকে।’

এর আগে দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়াধীন রাজধানীর বাস রুট র‍েশনালাইজেশন চালুর মাধ্যমে পরিবহনে শৃঙ্খলা আনায় অন্তর্বর্তী সরকার তেমন সফল হতে পারেনি। রাস্তা থেকে পরিকল্পনামতো বেশি পুরোনো গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পরিবহনমালিকেরা।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হকও ভবিষ্যতের চিন্তা থেকে ইলেকট্রিক গণপরিবহনে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে ডিজেল সহজলভ্য না-ও থাকতে পারে—তাই এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। কিন্তু শুধু ইলেকট্রিক বাস আনা যথেষ্ট নয়। এর আগে চার্জিং স্টেশন, সার্ভিস সেন্টার এবং পরিচালনার কাঠামো ঠিক করতে হবে। পরিচালনায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অংশীদার করা উচিত হবে। অপেশাদার সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর পুরো দায়িত্ব দিলে সেবার মান ঠিক থাকবে না। বেসরকারি খাতকে যুক্ত করলে এই উদ্যোগ স্থায়ীভাবে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক উদ্বোধন বৃহস্পতিবার, তোলা যাবে ২ লাখ টাকা

তালাকের ১ মাসের মাথায় ফের বিয়ে করলেন ত্বহা-সাবিকুন

হঠাৎ বিদেশে শাহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে সিডিএফ নিয়োগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পাকিস্তান

খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন ৩ বাহিনীর প্রধানেরা

তালাকের পরে ফের বিয়ে নিয়ে সমালোচনা, যে ব্যাখ্যা দিলেন সাবিকুন নাহার

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ