Ajker Patrika

লটারির মাধ্যমে ৫২৭ থানায় নতুন ওসি পদায়ন

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৫
লটারির মাধ্যমে ৫২৭ থানায় নতুন ওসি পদায়ন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে দেশের ৫২৭টি থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদায়ন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো লটারিভিত্তিক এই পদায়ন নির্বাচনকালীন দায়িত্ব নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বচ্ছ রাখতে নেওয়া উদ্যোগ। ৬ ডিসেম্বরের পর থেকে তাঁদের নতুন থানায় পদায়ন শুরু হবে।

লটারি আয়োজনের আগে বিভিন্ন ইউনিটপ্রধানদের কাছ থেকে বিএনপি ও ১/১১-এর সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ব্যাচগুলো থেকে সৎ, নিরপেক্ষ ও পেশাদার পুলিশ পরিদর্শকদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। এই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের পর লটারির মাধ্যমে নতুন ওসিদের প্রস্তাবিত তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পদায়ন করা নতুন ওসিদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ কর্মকর্তা অভ্যন্তরীণ রেঞ্জ ও ২০ শতাংশ বাইরের রেঞ্জ থেকে আনা হয়েছে। এভাবে কর্মকর্তা বাছাই করা হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, পুরো পদায়ন স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয়েছে, যাতে কোনো রকম বিতর্কের সৃষ্টি না হয়। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে ও নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের জন্য দক্ষদের নির্বাচন করা হয়েছে।

পদায়নের মধ্যে ঢাকা রেঞ্জে ১৩ জেলায় ৯৮ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১ জেলায় ১১১ থানার, খুলনা রেঞ্জে ১০ জেলায় ৬৪ থানার, ময়মনসিংহ রেঞ্জে চার জেলায় ৩৬ থানার, বরিশাল রেঞ্জে ছয় জেলায় ৪৬ থানার, সিলেট রেঞ্জে চার জেলায় ৩৯ থানার, রাজশাহী রেঞ্জে আট জেলায় ৭১ থানার ও রংপুর রেঞ্জে আট জেলায় ৬২ থানার ওসিকে পদায়ন করা হয়েছে।

এসব কর্মকর্তাকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে, যাতে তাঁরা পেন্ডিং কাজকর্ম শেষ করতে পারেন। এরপর নতুন থানায় তাঁদের যোগদান শুরু হবে।

১/১১ সরকারের নিয়োগ করা ব্যাচের কর্মকর্তারা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে

পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, লটারিভিত্তিক এই পদায়নে কিছু নির্দিষ্ট ব্যাচ তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩, ২০০৫, ২০০৭, ২০০৯ ও ২০১১ ব্যাচ। এই পাঁচ ব্যাচ থেকে সর্বাধিকসংখ্যক কর্মকর্তাকে থানার ওসি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ১/১১ সরকারের সময় নিয়োগপ্রাপ্ত দুই ব্যাচের কর্মকর্তারাও উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গুরুত্বপূর্ণ জেলা ও থানায় পদায়ন করা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের মতে, এসব ব্যাচের কর্মকর্তাদের কর্মক্ষমতা, মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞতা ও নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনে ‘বিশ্বস্ততার’ বিষয়টিও বিবেচনায় ছিল। তবে পদোন্নতি–বঞ্চনা ও ব্যাচভিত্তিক ভারসাম্য নিয়ে কিছু কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রশ্ন তুলছেন।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি (অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. আহসান হাবীব পলাশ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পদায়নের পুরো বিষয়টি সরকারের উচ্চমহল থেকে করা হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত ছিল না। আমরা কেবল পরিদর্শকদের তালিকা পাঠিয়েছি।’

মহানগরের সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট কমিশনার

লটারিতে নির্বাচিত ৫২৭ জন কর্মকর্তার তালিকায় ‘প্রস্তাবিত’ উল্লেখ থাকলেও মেট্রোপলিটন থানাগুলো লটারিপ্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ আটটি মহানগরে কোন থানায় কে ওসি হবেন—এ বিষয়ে এখনো সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনারদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অপেক্ষমাণ।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, দেশে মেট্রোপিলটন ও রেঞ্জ মিলিয়ে মোট থানার সংখ্যা ৬৩৯টি। এর মধ্যে জেলাপর্যায়ে ৫২৭টি ও মেট্রোপলিটন এলাকায় ১১০টি থানা রয়েছে। মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে লটারি নয়, সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা অভ্যন্তরীণভাবে ওসি পদায়নের দায়িত্ব পালন করবেন।

নতুন ওসির পদায়নের বিষয়ে পুলিশের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় লটারির মাধ্যমে পদায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা এই প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছি। তবে অযোগ্য বা বিতর্কিত কেউ পদায়ন পেলে তাঁকে পরিবর্তন করা হবে।’

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ