Ajker Patrika

যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে

সাদিকুর রহমান, ঢাকা
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৩, ১৬: ০২
যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে

আগের রাতের বৃষ্টি হাঁড়কাপানো শীত নামিয়েছিল কাঠমান্ডুতে; কিন্তু সকালটা বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল। ৭টার দিকে ঘুম ভাঙার পর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখি, দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। মিষ্টি রোদ পোহাতে সড়কের পাশে বসে পড়েছেন কেউ কেউ। এমন সকালে আমার আলসেমি করলে চলবে না। পুস্কার কারকি হোটেলের সামনে আসবে ৯টায়। তার গাড়িতেই ঘুরে দেখব সম্ভুনাথ, কাঠমান্ডু দরবার আর পশুপতিনাথ মন্দির।

হোটেল থেকে বাইরে বের হয়ে খরচ কম হবে এমন খাবারের দোকান খুঁজতে শুরু করি। এ শহরে খাবারের দাম অনেক বেশি। শুধু চা-রুটি খেলেও গুনতে হবে দেড় শ থেকে দুই শ রুপি। ঢাকায় যে দুধ-চায়ের দাম ১০ টাকা, তা এখানে দোকানভেদে ৪০ থেকে ৬০ রুপি। ডাল-ভাতও সাড়ে তিন শ রুপির নিচে মেলে না।

এক হোটেলে নেপালি থালি অর্ডার করে আশপাশে হাঁটতে শুরু করি। মানুষের ব্যস্ততা এখানে ঢাকার বাসিন্দাদের মতোই। তারের জঞ্জালও একই রকম। তবে শীতল আবহাওয়ার কারণে মানুষের মন-মেজাজ বেশ নরম। এই যেমন মোবাইল ফোনে পুস্কারের কলটা এল ঠিক ৯টায়। নির্ধারিত সময়েই হোটেলের সামনে হাজির। তাকে বসিয়ে রেখে দ্রুত খাবার খেয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। সড়কের আশপাশে ছোট ছোট ঘরবাড়ি রেখে গাড়ি চলতে শুরু করল সম্ভুনাথ মন্দিরের উদ্দেশে।

সম্ভুনাথ মন্দির একটা পাহাড়ের ওপর। দুই পাশ থেকে চূড়ায় ওঠা যায়। এক পাশে সমতল থেকে চূড়া পর্যন্ত পুরোটাই সিঁড়ি। আরেক পাশে পাহাড়ের গা কেটে বানানো সড়ক অনেকটা ওপর পর্যন্ত চলে গেছে। পুস্কার আমাকে সে পথেই নিয়ে চলল।

কাঠমান্ডু শহর আর সম্ভুনাথ নিয়ে রয়েছে চমৎকার পৌরাণিক উপাখ্যান। পুরাণ অনুযায়ী, ধ্যানের দেবতা মঞ্জুশ্রী একবার একটা হ্রদের পাশে গিয়ে ভাবলেন, এখানকার জল সরানো গেলে জনবসতি গড়ে উঠতে পারে। তাই তিনি একটি নালা কেটে হ্রদের সব জল সরানোর ব্যবস্থা করলেন। পরে হ্রদের মাঝে ফুটে থাকা এক পদ্মফুলকে বানালেন পাহাড়। সেটি ঘিরে আশপাশে গড়ে উঠল জনবসতি, যা এখনকার কাঠমান্ডু শহর। আর সেই পাহাড় হলো বাসিন্দাদের পূজা করার জায়গা।

সম্ভুনাথ মন্দির স্থানীয়দের কাছে ‘মাংকি টেম্পল’ নামেও পরিচিত। পুরাণ অনুযায়ী, ধ্যানের দেবতা মঞ্জুশ্রী একবার লম্বা চুল রাখলেন। সেই চুলে বাসা বাঁধে উকুন। পরে সেই উকুন রূপান্তরিত হয় বানরে। ফলে সম্ভুনাথের বানরগুলোকে স্থানীয়রা পবিত্র বানর মনে করেন।

কাঠমান্ডু বাজার এলাকায় আছে নান্দনিক সব স্থাপত্যপাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পথে রয়েছে বুদ্ধের একটি মূর্তি। সামনে রাখা বাক্সে কয়েন ছুড়ছিলেন অনেকে। তাঁদের বিশ্বাস, কয়েনটি বাক্সে পড়লে তা ভাগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে। আমিও কয়েকটি কয়েন ছুড়লাম। কাজ হলো না। নিজের জীবনটাই যেখানে লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীন, সেখানে কয়েন কীভাবে লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে পড়বে! যাহোক, সিঁড়ি মাড়িয়ে এবার উঠলাম পাহাড়ের চূড়ায়, মূল মন্দিরে। কাঠমান্ডুর এটি সবচেয়ে উঁচু জায়গা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, দেবতা এখান থেকে পুরো শহরের বাসিন্দাদের ওপর তাঁর আশীর্বাদ ছড়িয়ে দেন।

পুস্কারের গাড়িতে করে এবার যাই কাঠমান্ডু দরবার স্কয়ারে। ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন এখন আর নেই। পুরোনো নকশা ঠিক রেখে দরবার সেজেছে নতুন ইট আর রঙে। বারো থেকে আঠারো শতক ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠে দরবার স্কয়ার। বিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত নেপালের রাজার বাসগৃহ ছিল এখানে। নেপালের নানা উৎসবের প্রাণকেন্দ্র এই দরবার স্কয়ার। ইন্দ্রযাত্রা, দাশাইন গাইযাত্রার মতো উৎসবে এখানে নামে মানুষের ঢল। ইন্দ্রযাত্রা উপলক্ষে দরবার স্কয়ারে হয় কুমারীপূজা। পর্যটকেরা এটি দেখতে ভিড় করেন। বিশেষ উপলক্ষ ছাড়াও প্রতিদিন দরবারে মানুষের আনাগোনা থাকেই। বন্ধুদের আড্ডা, পরিবার নিয়ে অবসর কাটানো, টুকটাক কেনাকাটা বা পূজার ছলেও স্থানীয়রা আসেন এখানে। জালালি কবুতর এখানকার অন্যতম আকর্ষণের বিষয়।

কিছুটা বৃষ্টির আভাস দিয়ে আবার রোদ উঠে গেছে কাঠমান্ডু শহরে। বিকেলে অফিসফেরত লোকজন ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। তা দেখতে দেখতে আমি যাচ্ছি পশুপতিনাথ মন্দিরে, দরবার স্কয়ার থেকে মিনিট দশেকের দূরত্বে। মন্দিরের প্রবেশপথের দুই পাশে পূজার নানা উপকরণের দোকান। বাগমতী নদীর তীরের এ মন্দির ইউনেসকোর বিশ্বঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় ১৯৭৯ সালে। ২৪৬ হেক্টর জমির ওপর এটি নির্মিত এবং এতে ছোট ছোট মন্দিরের সংখ্যা ৫১৮। বর্তমানে শুকিয়ে যাওয়া বাগমতী নদীর পাশে পশুপতিনাথের মূর্তি ঘিরে মূল মন্দির গড়ে উঠেছে।

এই মন্দির নিয়েও রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। একবার শিব ও পার্বতী বাগমতী নদীর তীরে ভ্রমণ করছিলেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে শিব ও পার্বতী হরিণের বেশে ঘুরতে শুরু করেন। সেই থেকে এখানে শিবকে পশুদের অধিকর্তা বা পশুপতিনাথ হিসেবে পূজা করা হচ্ছে।

মন্দিরটিতে বেশি দর্শনার্থী আসেন ভারত থেকে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কাছেই এটি। তাই নেপালে এসে হোটেলে যাওয়ার পথে অথবা ভ্রমণের শেষ দিন বিমানবন্দরে ফেরার সময় স্থানটি ঘুরে দেখা যায়।

কাঠমান্ডুতে কোনো গাড়ি সারা দিনের চুক্তিতে নিলে খরচ হবে আড়াই থেকে তিন হাজার রুপি। সে ক্ষেত্রে পূর্বপরিচিত হওয়ায় পুস্কার কিছুটা ছাড় দিয়ে নিয়েছে ২ হাজার রুপিতে। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে হোটেলে ফিরলাম ব্যাগ গোছাতে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কূটনৈতিক পাসপোর্টকে রাতারাতি অর্ডিনারি বানিয়ে দেওয়া পরিচালক বরখাস্ত

এবার সরানো হলো জ্বালানি উপদেষ্টার পিএসকে

৩৫ বছর ভারতে, স্বামী–সন্তান রেখে দেশে ফেরার নোটিশ পেলেন পাকিস্তানি সারদা

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ঈদ শুভেচ্ছা কার্টুনে কুকুরের ছবি: প্রথম আলো সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত