Ajker Patrika

ঘুরে আসুন ইউটিউব ভিলেজ

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৬: ৪৪
ঘুরে আসুন ইউটিউব ভিলেজ

অবাক হওয়ার মতো বিষয় বটে। একটি গ্রামের নাম বদলে গেল ইউটিউবের জন্য। তার নামটাই হয়ে গেল ইউটিউব ভিলেজ! সেটা আবার আমাদের দেশেই, কুষ্টিয়ায়। ইউটিউব ভিলেজে এলে তাজ্জব বানিয়ে দেয়। জায়গাটা ঘুরে আসতে পারেন যেকোনো ছুটির দিন। 

ইউটিউব ভিলেজ দেখতে যেতে হবে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। এখানেও বিস্মিত হয়ে যাবেন। গ্রামটির আসল নাম শিমুলিয়া হলেও ২০১৬ সালের পর এরই নাম হয়ে গেছে ইউটিউব ভিলেজ। ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে এই গ্রামের সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামের সৌন্দর্যবর্ধন এবং বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ইউটিউব পার্ক। এই পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে বাঁশ-কাঠ আর খড়ের অবকাঠামো এবং ছায়া-সুনিবিড় পরিবেশ ভ্রমণপ্রিয় মানুষের মন ভুলিয়ে দেবে। 

২০১৬ সালের দিকে এই গ্রামের লিটন আলী এবং দেলোয়ার হোসেন নামের স্থানীয় দুই যুবক শখের বশে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। স্থানীয়ভাবে ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার রান্না করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে খাওয়াতে থাকেন তাঁরা। রান্না থেকে খাওয়ানো পর্যন্ত সময় ভিডিও ধারণ করে ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতে শুরু করেন তাঁরা। এই কাজে এলাকাবাসীর ব্যাপক উৎসাহ এবং ইউটিউবে দর্শকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি নিয়মিতভাবে এই কাজ শুরু করেন।

লিটন আলী পেশায় একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। আর দেলোয়ার হোসেন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক।

ছবি: লেখকধীরে ধীরে লিটন ও দেলোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলের দর্শক এবং আয়—দুটোই বাড়তে থাকে। এরই মাঝে বিদেশেও জনপ্রিয় হয় সেটি। সেই ভিডিওগুলো চোখে পড়ে বেস্ট এভার ফুড রিভিউ শো চ্যানেলের সানি সাইডের। তিনি এই কর্মকাণ্ড দেখার জন্য ২০১৮ সালের শেষের দিকে ছুটে আসেন এই গ্রামে। সানি যেদিন আসেন, সেদিন চার হাজার মানুষকে রান্না করে খাওয়ানো হয়। এই দৃশ্য দেখার পর সানি সাইড এই গ্রামকে ইউটিউব ভিলেজ নামে আখ্যায়িত করেন। 

এখন গ্রামটিতে বেড়াতে আসেন দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থী। আর এসব দর্শনার্থীর বিনোদনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এই গ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে ইউটিউব পার্ক। পার্ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও খরচ করা হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেলের আয় থেকে। কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম। বাস অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে যেতে হবে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের খোকসা বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার ভেতরেই এই গ্রামের অবস্থান। ইউটিউব পার্কের ভেতরে ঢোকার জন্য ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে রঙিন মাছের ফোয়ারা।

পার্কের উন্নয়নকাজ চলমান থাকলেও পার্কে ঢোকার পথে চোখে পড়ে বাঁশ, খড়, বাতা দিয়ে তৈরি গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহন গরুর গাড়ি, রিকশা এবং লেকের মাঝে তৈরি ভাসমান ঘর। এ ছাড়া নারকেল আকৃতির ঘর, ভালোবাসার প্রতীক হৃদয় আকৃতির বসার জায়গা, বাঁশ ও খড় দিয়ে ব্যাঙের দৃষ্টিনন্দন ছাতা, ছোট ব্রিজ, পুকুরের মাঝে গোলঘরসহ শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড দর্শনার্থীদের সময়কে রাঙিয়ে তুলবে। লেকের ওপর নির্মিত কাঠের কারুকাজ করা ছোট্ট সেতু যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি সেতু পার হয়ে বন্য পরিবেশের আদলে তৈরি কৃত্রিম ঝরনা আগতদের শরীর, মন—দুটোই ভিজিয়ে দেবে।  

ছবি: লেখকবর্তমানে ইউটিউব চ্যানেলসহ পার্কের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন দেলোয়ার হোসেন। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, প্রথমত কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া শুরু করলেও এখন সবকিছুই গুছিয়ে করা হয়। রান্নার কাজ দেখতে অনেক দূর থেকে লোকজন আসত। তখন এখানে কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল না। দর্শনার্থীরা এখানে এসে বিরক্ত হতো। তাই দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য এখানে পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এতে একদিকে যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি দর্শনার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থাও। ভবিষ্যতে এখানে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করে এলাকাবাসীকে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলেও জানান দেলোয়ার হোসেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য
বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে বাস অথবা ট্রেনযোগে কুষ্টিয়ায় আসতে হবে। কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়, কেন্দ্রীয় বাস ডিপো অথবা শহরতলির মোল্লাতেঘরিয়া থেকে বাসে অথবা সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে খোকসা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত বাসভাড়া ৪০ টাকা। আর সিএনজিতে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। খোকসা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা বা ভ্যানযোগে যেতে হবে শিমুলিয়ার ইউটিউব পার্কে। এখানে জনপ্রতি ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। খোকসা বা ইউটিউব ভিলেজে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার মধ্যে ফিরতে হবে কুষ্টিয়া শহরে। কুষ্টিয়া শহরে চাহিদামতো হোটেল ও রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত