বাবা দিবস
ডা. অদিতি সরকার
‘বাবা’ শব্দটি শুনলেই মনে পড়ে যায় একজন ছায়ার মতো মানুষের কথা। যিনি সারা জীবন পরিবারকে আগলে রাখেন নিঃশব্দে, কখনো ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলেন না, আবার স্নেহের চাদরও খোলাখুলিভাবে মেলে ধরেন না। তবু তিনি থাকেন—প্রতিটি দায়িত্বে, প্রতিটি শূন্যতায়, প্রতিটি অনিশ্চয়তায়। এমনকি কখনো কখনো তাঁর অনুপস্থিতিটুকু দিয়েই বোঝা যায়, তিনি কতটা গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন প্রতিটি মুহূর্তে।
‘বাবা’ শব্দটি আজকের সমাজে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? শুধু একজন উপার্জনকারী, নাকি একজন অনুপস্থিত মানসিক সঙ্গী? অথবা একজন নির্মাতা, যাঁকে সময়ের দাবিতে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিতে হয়েছে?
বাবা দিবস এসেছে আবার। আজ হয়তো সন্তানেরা সামাজিক মাধ্যমে বাবাকে নিয়ে ছবি দেবে, স্মৃতিচারণা করবে। কেউ আবার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে বা বাজারে ঘুরতে বের হবে। তবে এই দিবসের গভীরে ঢুকে দেখা দরকার— ‘বাবা’ শব্দটি আজকের সমাজে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? শুধু একজন উপার্জনকারী, নাকি একজন অনুপস্থিত মানসিক সঙ্গী? অথবা একজন নির্মাতা, যাঁকে সময়ের দাবিতে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিতে হয়েছে?
বর্তমান সময়ে বাবা হওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল। আগে বাবারা ছিলেন সংসারের বাইরের অবলম্বন, ঘরের দরজায় তাঁর আগমনে যেমন একটা গাম্ভীর্য ভেসে আসত, তেমনই একটা আশ্বাসও। অথচ এখনকার বাবারা চাপে আছেন—নানা রকমের। জীবনের প্রত্যাশা বেড়েছে, চাকরি আর টিকে থাকার লড়াই কঠিনতর হয়েছে, পরিবারে তাঁর ভূমিকা আরও বেশি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এখন বাবাকে শুধু উপার্জন করলেই হবে না, সন্তানদের সময় দিতে হবে, মানসিকভাবে পাশে থাকতে হবে, সব সিদ্ধান্তে যুক্ত হতে হবে এবং নিজের আবেগের দিকগুলোও প্রকাশ করতে হবে। এমনই একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে, যেখানে বাবারা যেন একধরনের দ্বৈত সংগ্রামে আটকে পড়েছেন।
অনেক বাবাই এই সংগ্রামে নিঃশব্দে হেরে যান, অথচ কেউ টেরও পান না। কেউ হয়তো প্রতিদিন সকালে ডেকে তোলেন সন্তানকে, স্কুলবাসের জন্য তাড়াহুড়ো করেন, অফিসে যাওয়ার পথে শিশুর জলখাবার হাতে তুলে দেন। কিন্তু দিনের শেষে যখন তিনি বাড়ি ফেরেন, তখন হয়তো পরিবারের আর কারও তার প্রয়োজন পড়ে না। সন্তান তখন হয়তো মোবাইল স্ক্রিনে মুখ গুঁজে, স্ত্রী হয়তো ব্যস্ত নিজের অভিমান আর দায়ভার নিয়ে, আর বাবা তখন একা নিজের ক্লান্তি নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে থাকেন। তিনি কথা বলেন না, অভিযোগ করেন না, শুধু নিজের ভেতরের ক্লান্তিটুকু গোপন রাখেন। অনেক বাবা আছেন, যাঁরা সন্তানদের সব প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে নিজের প্রয়োজনকে প্রায় ত্যাগ করেছেন। তাঁরা ভালো জামা পরেন না, ভালো খাওয়া হয় না, এমনকি নিজের পুরোনো মোবাইল ফোনটা বদলাতেও দ্বিধায় থাকেন। কারণ, তাঁদের দৃষ্টিতে সন্তানই প্রথম। অথচ এই সন্তানদের বড় হয়ে যখন বাবা থেকে দূরে সরে যেতে দেখা যায়, তখন বুঝি—এই ভালোবাসার দায়বদ্ধতা একমুখীই থেকে গেল।
আধুনিক জীবনে বাবা-সন্তানের সম্পর্ক অনেকাংশেই দূরত্বে গড়া। প্রযুক্তির প্রসার, জীবনের ব্যস্ততা, সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন—সব মিলিয়ে সম্পর্কগুলো কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। সন্তানেরা জানেও না বাবার ইচ্ছেগুলো কেমন ছিল, তিনি ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন, কোথায় গিয়ে থেমে গেছে তাঁর স্বপ্ন। সেই জায়গাটা থেকে এক অস্পষ্ট দূরত্ব তৈরি হয়, যা সময়ের সঙ্গে আরও গভীর হয়।
এখনকার প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন, আত্মবিশ্বাসী এবং অধিকারবোধে প্রবল। তারা চায় সমানাধিকার, চায় ভালোবাসার স্বীকৃতি, চায় মানসিক সহচর। কিন্তু বাবা নামক চরিত্রটির প্রতি তাদের উপলব্ধি অনেক সময় একপক্ষীয় হয়ে যায়। তারা ভাবে, বাবা মানেই একজন—যিনি সবকিছু করে দেবেন, সব প্রশ্নের জবাব দেবেন, সব দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু বাবার নিজের কোনো মানসিক চাহিদা নেই, কোনো দুর্বলতা নেই, কোনো ক্লান্তি নেই। এই একপক্ষীয় ধারণা থেকেই তৈরি হয় অবহেলা, দূরত্ব এবং সম্পর্কের ভেতরে একধরনের নিঃশব্দ শূন্যতা।
বাবারা কাঁদেন না—এই সামাজিক ধারণা আমাদের কানে কানে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। অথচ বাবারাও কাঁদেন, ভেতরে-ভেতরে গুমরে ওঠেন, সন্তান কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেই তাঁদের চোখ ভিজে যায়। অনেক সময় তাঁরা রাত জেগে বসে থাকেন সন্তানের পরীক্ষার ফলের জন্য। অথচ কখনো বলেন না—তাঁরও ভয় লাগছে। তিনি সন্তানকে হারানোর ভয় পান, তাঁর নিজের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা হয়, তিনি ব্যর্থতা নিয়ে ভীত হন। কিন্তু এই সব কথা তাঁরা প্রকাশ করেন না। কারণ, ‘বাবা’ শব্দটার সঙ্গে এই দুর্বলতাগুলো মানানসই নয়—এমন একটা সামাজিক ছাঁচ তৈরি করে ফেলা হয়েছে।
আজ যখন বাবা দিবস পালিত হচ্ছে, তখন আমরা শুধু ফুল, কার্ড বা পোস্ট দিয়ে নয়—একটু গভীরভাবে ভাবি। বাবা কী চান? তিনি আসলে কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেন? হয়তো তিনি কোনো দিন বলেননি, ‘তোমাকে ভালোবাসি’। কিন্তু রাতে দরজা বন্ধ করে দেখেছেন তোমার চাদর গায়ে আছে কি না। হয়তো তিনি জানিয়ে দেননি, কিন্তু তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মেটাতে নিজের প্রিয় বই বিক্রি করে দিয়েছেন। বাবারা এভাবেই ভালোবাসেন— অপ্রকাশিত, নিঃশব্দে।
আমাদের সমাজে একজন বাবাকে অনেক সময় পুরো পরিবারের ‘সার্ভার’ হিসেবে দেখা হয়। তিনি যেন অটোমেটিক কিছু, যিনি প্রতিদিন অর্থ জোগাবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন, পরিবারকে পরিচালনা করবেন। কিন্তু তিনি নিজে কোথায়? তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য, আবেগ, চাওয়া—এসব কি আমরা বিবেচনায় নিই? বর্তমান সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য যতটুকু আলোচনায় এসেছে, তাতে মায়েদের জন্য সহানুভূতি তৈরি হলেও বাবাদের জন্য সমাজ এখনো নিষ্ঠুরভাবে নীরব। ‘তুমি তো পুরুষ মানুষ’, ‘তুমি তো বাবা, তুমি কাঁদছ কেন’—এই কথাগুলো বাবাদের এক অদৃশ্য অন্ধকারে ঠেলে দেয়। একাকিত্ব, মানসিক অবসাদ, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত বাবাদের মধ্যে বেড়েছে। অথচ আমরা এসব নিয়ে খুব কম ভাবি।
বাবা দিবসে শুধু একটা কার্ড নয়, বরং তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করুন। জানতে চান, তিনি কেমন আছেন, তাঁর স্বপ্নগুলো কোথায়, তিনি গান শোনেন বা বই পড়েন কি না, রাত জেগে তিনি কী ভাবেন? বাবাদের কথা বলার সুযোগ দিন, তাঁদের জন্যও হৃদয়ের দরজা খুলুন।
একটা পরিবারে শুধু মা নয়, বাবাও ভালোবাসা, যত্ন ও মানসিক আশ্রয়ের অধিকার রাখেন। সন্তানের যেমন বাবার কাছে ভালোবাসা প্রত্যাশা থাকে, তেমনি বাবারও সন্তানের কাঁধে মাথা রাখার ইচ্ছা থাকতে পারে। আমাদের উচিত সেই আশ্রয়টি তাঁকে দেওয়া, সময় থাকা অবস্থায়—কারণ, বাবারা থাকেন না চিরকাল। আজ বাবাকে জড়িয়ে ধরা, তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো, তাঁর কথা শোনা কিংবা শুধু ‘তুমি আমার জীবনের ভিত্তি’ বলে দেওয়াও হতে পারে এই দিবসটির সেরা উদ্যাপন।
আমাদের সমাজে এখন সময় এসেছে বাবাদের নতুন আলোয় দেখার। শুধু উপার্জনকারী বা কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নয়, বরং একজন সংবেদনশীল, জটিল, আবেগপ্রবণ মানুষ হিসেবেও তাদের ভাবা দরকার। বাবাদের হাসি শুধু দায়িত্বে ভারমুক্ত হওয়ার নয়, বরং ভালোবাসা ও যোগাযোগে নিজের অস্তিত্ব টের পাওয়ার।
বাবা দিবসে আসুন শুধু একটা কার্ড নয়, বরং একটা দীর্ঘ আলাপ করি। জানতে চাই, তিনি কেমন আছেন, তাঁর স্বপ্নগুলো কোথায়, তিনি গান শোনেন, বই পড়েন কি না, রাত জেগে তিনি কী ভাবেন? আসুন, বাবাদের কথা বলার সুযোগ দিই, তাঁদের জন্যও হৃদয়ের দরজা খুলি। তাহলে হয়তো আমাদের সম্পর্কগুলো আরও মানবিক, আরও গভীর, আরও সত্য হয়ে উঠবে। বাবার চেহারায় তখন শুধু ক্লান্তি নয়, ফুটে উঠবে সন্তুষ্টি—এই প্রজন্ম তাঁকে অনুভব করেছে, শুধু স্মরণ করেনি।
‘বাবা’ শব্দটি শুনলেই মনে পড়ে যায় একজন ছায়ার মতো মানুষের কথা। যিনি সারা জীবন পরিবারকে আগলে রাখেন নিঃশব্দে, কখনো ভালোবাসার কথা মুখ ফুটে বলেন না, আবার স্নেহের চাদরও খোলাখুলিভাবে মেলে ধরেন না। তবু তিনি থাকেন—প্রতিটি দায়িত্বে, প্রতিটি শূন্যতায়, প্রতিটি অনিশ্চয়তায়। এমনকি কখনো কখনো তাঁর অনুপস্থিতিটুকু দিয়েই বোঝা যায়, তিনি কতটা গভীরভাবে জড়িয়ে ছিলেন প্রতিটি মুহূর্তে।
‘বাবা’ শব্দটি আজকের সমাজে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? শুধু একজন উপার্জনকারী, নাকি একজন অনুপস্থিত মানসিক সঙ্গী? অথবা একজন নির্মাতা, যাঁকে সময়ের দাবিতে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিতে হয়েছে?
বাবা দিবস এসেছে আবার। আজ হয়তো সন্তানেরা সামাজিক মাধ্যমে বাবাকে নিয়ে ছবি দেবে, স্মৃতিচারণা করবে। কেউ আবার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে বা বাজারে ঘুরতে বের হবে। তবে এই দিবসের গভীরে ঢুকে দেখা দরকার— ‘বাবা’ শব্দটি আজকের সমাজে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? শুধু একজন উপার্জনকারী, নাকি একজন অনুপস্থিত মানসিক সঙ্গী? অথবা একজন নির্মাতা, যাঁকে সময়ের দাবিতে নিজের অস্তিত্বকে বিসর্জন দিতে হয়েছে?
বর্তমান সময়ে বাবা হওয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি জটিল। আগে বাবারা ছিলেন সংসারের বাইরের অবলম্বন, ঘরের দরজায় তাঁর আগমনে যেমন একটা গাম্ভীর্য ভেসে আসত, তেমনই একটা আশ্বাসও। অথচ এখনকার বাবারা চাপে আছেন—নানা রকমের। জীবনের প্রত্যাশা বেড়েছে, চাকরি আর টিকে থাকার লড়াই কঠিনতর হয়েছে, পরিবারে তাঁর ভূমিকা আরও বেশি ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এখন বাবাকে শুধু উপার্জন করলেই হবে না, সন্তানদের সময় দিতে হবে, মানসিকভাবে পাশে থাকতে হবে, সব সিদ্ধান্তে যুক্ত হতে হবে এবং নিজের আবেগের দিকগুলোও প্রকাশ করতে হবে। এমনই একটা কাঠামো তৈরি হয়েছে, যেখানে বাবারা যেন একধরনের দ্বৈত সংগ্রামে আটকে পড়েছেন।
অনেক বাবাই এই সংগ্রামে নিঃশব্দে হেরে যান, অথচ কেউ টেরও পান না। কেউ হয়তো প্রতিদিন সকালে ডেকে তোলেন সন্তানকে, স্কুলবাসের জন্য তাড়াহুড়ো করেন, অফিসে যাওয়ার পথে শিশুর জলখাবার হাতে তুলে দেন। কিন্তু দিনের শেষে যখন তিনি বাড়ি ফেরেন, তখন হয়তো পরিবারের আর কারও তার প্রয়োজন পড়ে না। সন্তান তখন হয়তো মোবাইল স্ক্রিনে মুখ গুঁজে, স্ত্রী হয়তো ব্যস্ত নিজের অভিমান আর দায়ভার নিয়ে, আর বাবা তখন একা নিজের ক্লান্তি নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসে থাকেন। তিনি কথা বলেন না, অভিযোগ করেন না, শুধু নিজের ভেতরের ক্লান্তিটুকু গোপন রাখেন। অনেক বাবা আছেন, যাঁরা সন্তানদের সব প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে নিজের প্রয়োজনকে প্রায় ত্যাগ করেছেন। তাঁরা ভালো জামা পরেন না, ভালো খাওয়া হয় না, এমনকি নিজের পুরোনো মোবাইল ফোনটা বদলাতেও দ্বিধায় থাকেন। কারণ, তাঁদের দৃষ্টিতে সন্তানই প্রথম। অথচ এই সন্তানদের বড় হয়ে যখন বাবা থেকে দূরে সরে যেতে দেখা যায়, তখন বুঝি—এই ভালোবাসার দায়বদ্ধতা একমুখীই থেকে গেল।
আধুনিক জীবনে বাবা-সন্তানের সম্পর্ক অনেকাংশেই দূরত্বে গড়া। প্রযুক্তির প্রসার, জীবনের ব্যস্ততা, সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন—সব মিলিয়ে সম্পর্কগুলো কেমন যেন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। সন্তানেরা জানেও না বাবার ইচ্ছেগুলো কেমন ছিল, তিনি ছোটবেলায় কী হতে চেয়েছিলেন, কোথায় গিয়ে থেমে গেছে তাঁর স্বপ্ন। সেই জায়গাটা থেকে এক অস্পষ্ট দূরত্ব তৈরি হয়, যা সময়ের সঙ্গে আরও গভীর হয়।
এখনকার প্রজন্ম অনেক বেশি সচেতন, আত্মবিশ্বাসী এবং অধিকারবোধে প্রবল। তারা চায় সমানাধিকার, চায় ভালোবাসার স্বীকৃতি, চায় মানসিক সহচর। কিন্তু বাবা নামক চরিত্রটির প্রতি তাদের উপলব্ধি অনেক সময় একপক্ষীয় হয়ে যায়। তারা ভাবে, বাবা মানেই একজন—যিনি সবকিছু করে দেবেন, সব প্রশ্নের জবাব দেবেন, সব দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু বাবার নিজের কোনো মানসিক চাহিদা নেই, কোনো দুর্বলতা নেই, কোনো ক্লান্তি নেই। এই একপক্ষীয় ধারণা থেকেই তৈরি হয় অবহেলা, দূরত্ব এবং সম্পর্কের ভেতরে একধরনের নিঃশব্দ শূন্যতা।
বাবারা কাঁদেন না—এই সামাজিক ধারণা আমাদের কানে কানে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। অথচ বাবারাও কাঁদেন, ভেতরে-ভেতরে গুমরে ওঠেন, সন্তান কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেই তাঁদের চোখ ভিজে যায়। অনেক সময় তাঁরা রাত জেগে বসে থাকেন সন্তানের পরীক্ষার ফলের জন্য। অথচ কখনো বলেন না—তাঁরও ভয় লাগছে। তিনি সন্তানকে হারানোর ভয় পান, তাঁর নিজের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা হয়, তিনি ব্যর্থতা নিয়ে ভীত হন। কিন্তু এই সব কথা তাঁরা প্রকাশ করেন না। কারণ, ‘বাবা’ শব্দটার সঙ্গে এই দুর্বলতাগুলো মানানসই নয়—এমন একটা সামাজিক ছাঁচ তৈরি করে ফেলা হয়েছে।
আজ যখন বাবা দিবস পালিত হচ্ছে, তখন আমরা শুধু ফুল, কার্ড বা পোস্ট দিয়ে নয়—একটু গভীরভাবে ভাবি। বাবা কী চান? তিনি আসলে কীভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করেন? হয়তো তিনি কোনো দিন বলেননি, ‘তোমাকে ভালোবাসি’। কিন্তু রাতে দরজা বন্ধ করে দেখেছেন তোমার চাদর গায়ে আছে কি না। হয়তো তিনি জানিয়ে দেননি, কিন্তু তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি মেটাতে নিজের প্রিয় বই বিক্রি করে দিয়েছেন। বাবারা এভাবেই ভালোবাসেন— অপ্রকাশিত, নিঃশব্দে।
আমাদের সমাজে একজন বাবাকে অনেক সময় পুরো পরিবারের ‘সার্ভার’ হিসেবে দেখা হয়। তিনি যেন অটোমেটিক কিছু, যিনি প্রতিদিন অর্থ জোগাবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন, পরিবারকে পরিচালনা করবেন। কিন্তু তিনি নিজে কোথায়? তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য, আবেগ, চাওয়া—এসব কি আমরা বিবেচনায় নিই? বর্তমান সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য যতটুকু আলোচনায় এসেছে, তাতে মায়েদের জন্য সহানুভূতি তৈরি হলেও বাবাদের জন্য সমাজ এখনো নিষ্ঠুরভাবে নীরব। ‘তুমি তো পুরুষ মানুষ’, ‘তুমি তো বাবা, তুমি কাঁদছ কেন’—এই কথাগুলো বাবাদের এক অদৃশ্য অন্ধকারে ঠেলে দেয়। একাকিত্ব, মানসিক অবসাদ, এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত বাবাদের মধ্যে বেড়েছে। অথচ আমরা এসব নিয়ে খুব কম ভাবি।
বাবা দিবসে শুধু একটা কার্ড নয়, বরং তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করুন। জানতে চান, তিনি কেমন আছেন, তাঁর স্বপ্নগুলো কোথায়, তিনি গান শোনেন বা বই পড়েন কি না, রাত জেগে তিনি কী ভাবেন? বাবাদের কথা বলার সুযোগ দিন, তাঁদের জন্যও হৃদয়ের দরজা খুলুন।
একটা পরিবারে শুধু মা নয়, বাবাও ভালোবাসা, যত্ন ও মানসিক আশ্রয়ের অধিকার রাখেন। সন্তানের যেমন বাবার কাছে ভালোবাসা প্রত্যাশা থাকে, তেমনি বাবারও সন্তানের কাঁধে মাথা রাখার ইচ্ছা থাকতে পারে। আমাদের উচিত সেই আশ্রয়টি তাঁকে দেওয়া, সময় থাকা অবস্থায়—কারণ, বাবারা থাকেন না চিরকাল। আজ বাবাকে জড়িয়ে ধরা, তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো, তাঁর কথা শোনা কিংবা শুধু ‘তুমি আমার জীবনের ভিত্তি’ বলে দেওয়াও হতে পারে এই দিবসটির সেরা উদ্যাপন।
আমাদের সমাজে এখন সময় এসেছে বাবাদের নতুন আলোয় দেখার। শুধু উপার্জনকারী বা কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নয়, বরং একজন সংবেদনশীল, জটিল, আবেগপ্রবণ মানুষ হিসেবেও তাদের ভাবা দরকার। বাবাদের হাসি শুধু দায়িত্বে ভারমুক্ত হওয়ার নয়, বরং ভালোবাসা ও যোগাযোগে নিজের অস্তিত্ব টের পাওয়ার।
বাবা দিবসে আসুন শুধু একটা কার্ড নয়, বরং একটা দীর্ঘ আলাপ করি। জানতে চাই, তিনি কেমন আছেন, তাঁর স্বপ্নগুলো কোথায়, তিনি গান শোনেন, বই পড়েন কি না, রাত জেগে তিনি কী ভাবেন? আসুন, বাবাদের কথা বলার সুযোগ দিই, তাঁদের জন্যও হৃদয়ের দরজা খুলি। তাহলে হয়তো আমাদের সম্পর্কগুলো আরও মানবিক, আরও গভীর, আরও সত্য হয়ে উঠবে। বাবার চেহারায় তখন শুধু ক্লান্তি নয়, ফুটে উঠবে সন্তুষ্টি—এই প্রজন্ম তাঁকে অনুভব করেছে, শুধু স্মরণ করেনি।
বিশ্বজুড়ে ঘুম নিয়ে সংকট তৈরি হচ্ছে। কোটি কোটি মানুষ দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের ঘাটতিতে ভুগছে, যার পেছনে রয়েছে মানসিক চাপ, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম এবং অনিয়মিত রুটিন। তবে আশার কথা হলো, কিছু দেশ এখন ঘুমের গুরুত্ব উপলব্ধি করছে।
৬ ঘণ্টা আগেপ্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য দারুণ সুযোগ এনেছে মধ্য আমেরিকার দেশ কোস্টারিকা। ‘ডিজিটাল নমেড ভিসা’র আওতায় আপনি দেশটিতে এক বছর বসবাস এবং অনলাইনে কাজ করার বৈধ সুযোগ পাবেন। ভিসাটির আবেদন মূল্য মাত্র ১০০ মার্কিন ডলার বা ১২ হাজার ১০০ টাকা (প্রায়)।
১১ ঘণ্টা আগেতীব্র গরমে নাজেহাল হয়ে কাঁচির ঘ্যাচাং শব্দে পিঠ অব্দি নেমে যাওয়া ঢেউখেলানো চুল কেটে ছোট করে নিলেন। এবার কাঁধ অব্দি চুল নিয়ে তো মহা বিপদ। ছেড়ে রাখলে বাতাসে উড়ে এলোমেলো হয়, আবার বেঁধে রাখলেও যেন কেমন দেখায়। এ কথা সত্য, এমন চুল গুছিয়ে রাখার মতো সুস্থ রাখাও একটু জটিল।
১৫ ঘণ্টা আগেপ্রথমে চুলায় দুধ ফুটিয়ে নিন। এরপর আঁচ বন্ধ করে ১ মিনিট পর এক কাপের ৩ ভাগের ১ ভাগ পানিতে ভিনিগার গুলে তা একটু একটু করে দিয়ে ছানা কেটে নিন। এবার একটি পরিষ্কার কাপড়ে ছানা তুলে পানি ছেঁকে নিন। ছানা ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে চিপে চিপে জল নিংড়ে নিতে হবে।
১৭ ঘণ্টা আগে