Ajker Patrika

কোন দেশের মানুষ বেশি খায়? তালিকা প্রকাশ করেছে এফএও

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ভোগ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।
গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ভোগ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

বিশ্বের ১৭২টি দেশে খাদ্য গ্রহণের মাত্রা অনুসরণ করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। এটি একটি বিশেষ ভোগ সূচক। এই সূচক অনুযায়ী নির্দিষ্ট হয়েছে বিশ্বে বেশি খাদ্য গ্রহণকারী দেশ কোনটি। অর্থাৎ কোন দেশের মানুষ বেশি খাচ্ছে বা খাবার পাচ্ছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তালিকার শীর্ষে রয়েছে বেশির ভাগ উন্নত দেশ। আর উন্নয়নশীল দেশগুলো রয়েছে নিচের দিকে। গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের ভোগ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোয় এই মাত্রা বেশি। ভোগের হারে তারতম্য থাকলেও বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে আরও বেশি সুষমভাবে বণ্টন করা হচ্ছে।

খাদ্যাভ্যাসের নেপথ্যে কারণ

খাদ্য গ্রহণের ভিন্নতার পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমে আছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সেই জাতির পুষ্টির মাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ব্যাপক নগরায়ণ, বিশেষত নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে। খাদ্যে উচ্চ ক্যালরি, চর্বি ও লবণের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাজা ফল ও সবজি খাওয়ার প্রবণতা কমেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যায়াম ও সাধারণ শারীরিক কার্যকলাপ কমে যাওয়ার ঘটনা, যা পুষ্টিগত পরিবর্তনগুলোকে আরও বাড়িয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে পরিবেশগত প্রভাব।

তালিকার শীর্ষে রয়েছে বেশির ভাগ উন্নত দেশ। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: পেক্সেলস
তালিকার শীর্ষে রয়েছে বেশির ভাগ উন্নত দেশ। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: পেক্সেলস

পরিবেশগত ও ভৌগোলিক কারণগুলো অনেক দেশের খাদ্যাভ্যাসকে প্রভাবিত করে। যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছু দ্বীপরাষ্ট্র প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানির ওপর ক্রমবর্ধমানভাবে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।

এসব তথ্য তো জানলেন। কিন্তু কোন ১৫টি জাতি বিশ্বজুড়ে বেশি খাবার খায়, তা জানেন? আর সেই দেশগুলোর মানুষ তাদের খাদ্যতালিকায় কোন ধরনের খাবার রাখে, তা-ও কি জানেন? জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানাচ্ছে, খাদ্যসামগ্রী থেকে পাওয়া মাথাপিছু গড় ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের পরিমাণ জাতীয় তথ্য থেকে পাওয়া যেতে পারে। তবে জাতীয় তথ্য থেকে পাওয়া এই গড় বাস্তবতাকে নির্দেশ না-ও করতে পারে। কারণ, খাদ্যের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অসমতা বা বৈষম্য বড় প্রভাব ফেলে।

সর্বোচ্চ খাদ্য গ্রহণকারী ১৫টি দেশের তালিকা

প্রথম পাঁচ

এফএও সূচকের তথ্য অনুসারে মাথাপিছু গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের ভিত্তিতে বিশ্বের ১৫টি খাদ্য গ্রহণকারী দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকার প্রথম পাঁচটি দেশ হলো—

অস্ট্রিয়া, মাথাপিছু গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৮০০ কিলোক্যালরি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মাথাপিছু গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ ৩ হাজার ৭৫০ কিলোক্যালরি।

গ্রিস, মাথাপিছু দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭১০ কিলোক্যালরি।

বেলজিয়াম, মাথাপিছু দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৯০ কিলোক্যালরি।

লুক্সেমবার্গ, মাথাপিছু দৈনিক গড় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৮০ কিলোক্যালরি।

ষষ্ঠ থেকে দশম অবস্থানের দেশগুলো

২০০৬ সাল থেকে সর্বোচ্চ খাদ্য গ্রহণের হার বজায় রেখেছে অস্ট্রিয়া। প্রতীকী ছবিটি পেক্সেলস থেকে নেওয়া।
২০০৬ সাল থেকে সর্বোচ্চ খাদ্য গ্রহণের হার বজায় রেখেছে অস্ট্রিয়া। প্রতীকী ছবিটি পেক্সেলস থেকে নেওয়া।

পিৎজার জন্য বিখ্যাত দেশ ইতালি আছে ষষ্ঠ স্থানে। এখানকার মাথাপিছু দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৫০ কিলোক্যালরি। আকারে ছোট হলেও মাল্টার মানুষের ক্ষুধা প্রচণ্ড! তাই দেশটি আছে তালিকার সপ্তম অবস্থানে। মাল্টার দৈনিক মাথাপিছু গড় ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬০০ কিলোক্যালরি। তালিকায় অষ্টম অবস্থানে থাকা দেশটির নাম আয়ারল্যান্ড। আইরিশ স্ট্যু ও সোডা ব্রেডের জন্য পরিচিত এই দেশের মাথাপিছু গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৯০ কিলোক্যালরি। পর্তোর বিখ্যাত ফ্রান্সেসিনা ও ক্ল্যাসিক প্যাস্টেল দে নাটার মতো খাবার পর্তুগালকে নবম স্থানে নিয়ে এসেছে। তাদের দৈনিক মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৮০ কিলোক্যালরি। এরপরই আছে জার্মানি। জার্মান খাবারে ক্যালরির মাত্রা বেশ ভালো। তাদের মাথাপিছু গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৪০ কিলোক্যালরি।

তালিকায় থাকা শেষ পাঁচ দেশ

তালিকায় থাকা ১১তম দেশটি কানাডা। দেশটির মাথাপিছু দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৩০ কিলোক্যালরি। কক অ ভিন, পেঁয়াজের স্যুপ এবং ক্র্যাপসের মতো ক্ল্যাসিক ফরাসি খাবারের কারণে ফ্রান্সের মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৫৩০ কিলোক্যালরি গ্রহণ করে। আর সেখান থেকেই দেশটির অবস্থান ১২তম। ১৩তম অবস্থানে আছে ইসরায়েল। ব্রেডেড শাল্লাহ রুটি ও গেফিল্টে ফিশের মতো খাবারের দেশটির গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৫৩০ কিলোক্যালরি। এরপরই আছে তুরস্ক। বিখ্যাত কাবাব ও জিবে জল আনা বাকলাভার জন্য পরিচিত তুরস্কে মাথাপিছু দৈনিক ৩ হাজার ৫০০ কিলোক্যালরি গ্রহণ করা হয়। তালিকায় সর্বশেষ দেশের নাম রোমানিয়া। ঐতিহ্যবাহী সারমালে ও বালমোসের মতো খাবারের দেশ রোমানিয়া এই তালিকার ১৫তম স্থানে আছে। দেশটির গড় দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৯০ কিলোক্যালরি।

বৈষম্য ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বিশ্বের শীর্ষ ভোক্তারা দরিদ্র দেশগুলোর থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। যেমন ইরিত্রিয়া ও বুরুন্ডির মতো দেশে মাথাপিছু গড় দৈনিক খাদ্য গ্রহণ অস্ট্রিয়ার অর্ধেকের কম। এমনকি দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনৈতিক বৈষম্য সম্পদের বণ্টনে তারতম্য তৈরি করে। ওশেনিয়া ও ইউরোপে ৫০ বছর ধরে খাদ্য সরবরাহ প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলে তার ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখা গেছে। আফ্রিকা ও এশিয়াতে বৃদ্ধি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সাংস্কৃতিক পার্থক্য, বিশ্বাস, পছন্দের খাবার ও খাদ্য সহজলভ্যতার মতো অন্যান্য কারণও খাদ্যাভ্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এখনো বিশ্বের অনেক দেশ দীর্ঘস্থায়ী খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ও শিশুদের অপুষ্টির মতো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের বণ্টন ও পুষ্টির মান উন্নয়নে এখনো অনেক কাজ বাকি।

সূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, এফএও

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘জুলাই যোদ্ধাদের’ দাবি মেনে সনদের অঙ্গীকারনামায় জরুরি সংশোধন আনল কমিশন

অঙ্গীকারনামায় সংশোধনীর পরও বিক্ষোভ, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ রণক্ষেত্র

দুই দাবিতে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে অবস্থান ‘জুলাই যোদ্ধাদের’

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতারা

জুলাই জাতীয় সনদের ৫ নম্বর দফা সংশোধনের যে প্রস্তাব দিলেন সালাহউদ্দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত