Ajker Patrika

সেই ছেলে এখন চলচ্চিত্র নির্মাতা

রিপন চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৭: ০৮
Thumbnail image

‘পানের দোকানদার যখন সিনেমা বানায়’ এমন একটি চলচ্চিত্র তৈরি হতেই পারে আব্দুল্লাহ আল রাহীর জীবন থেকে নেওয়া গল্প দিয়ে। বিষয়টি তো আর বানানো গল্প নয়!

রাহী ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখেছিলেন, পানদোকানি হবেন। একটা দোকানও ছিল তাঁর। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় স্বপ্ন। ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বই দেখে ইচ্ছা জাগে বিজ্ঞানী হওয়ার। কিছুদিন পর সে ইচ্ছাও চলে যায়। একসময় ভাবেন, ভবঘুরে হবেন। সে ইচ্ছাও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কিন্তু যখন চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন দেখলেন, আর পেছন ফিরে তাকাতে হলো না তাঁকে। চলচ্চিত্র তো বানালেনই, সঙ্গে পেলেন কান চলচ্চিত্র অ্যাওয়ার্ডসহ দেশি-বিদেশি অর্ধশতাধিক পুরস্কার।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রাহী। গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায়। গ্রাম থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া শেষ করে ভর্তি হন বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। রাহীর বড় ভাই আহসান হাবীব রাভী পড়তেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে একটি ক্যামেরা কেনেন তিনি। ২০১৪ সালে বড় ভাইকে ছোট একটি ভিডিও তৈরিতে সহায়তা করেন রাহী। মূলত সেখান থেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণে স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে। এরপর থেকে চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ শুরু করেন রাহী।

২০১৬ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাহী নির্মাণ করেন তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। ‘ইয়ুথ কনসাস’ নামের সেই চলচ্চিত্রে গ্রামের উঠতি বয়সের ছেলেদের মাদকের ভয়াল ফাঁদে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন এই তরুণ নির্মাতা। সিনেমাটি দেখে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি ডকুমেন্টারি নির্মাণের প্রস্তাব দেন রাহীকে। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে ২০১৭ সালে নির্মাণ করেন ডকুমেন্টারি ‘সূর্যোদয়ের সাক্ষী’।

এরপর দীর্ঘ দুই বছর কোনো সিনেমা নির্মাণ করেননি রাহী। সিনেমা নির্মাণের খুঁটিনাটি এবং সিনেমা নির্মাণ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা পেতে দুই বছরে প্রায় আড়াই হাজার সিনেমা ও পাঁচ শ বই পড়েন তিনি। এরপর এক রাতের স্বপ্নে দেখা গল্পের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে নির্মাণ করেন ‘দ্য মাদারল্যান্ড’ নামের একটি সিনেমা। ওই বছরই সিনেমাটি ভারতের হট্টমেলা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে।

পরের বছর কুড়িগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় নির্মাণ করেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘টেনর’। তাতে একটি ভাওয়াইয়া গান ব্যবহার করেন তিনি। এক ব্যক্তির ‘মাথা কাটা’ ভিসায় বিদেশ যাওয়া এবং বিদেশ থেকে সন্তানের জন্য ফুটবল নিয়ে আসার গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছিল চলচ্চিত্রটি। এর জন্য ২০২১ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ইয়াং ফিল্ম মেকার’ পুরস্কার পান আব্দুল্লাহ আল রাহী। ‘টেনর’ চলচ্চিত্রটি ১৪তম শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করে। এ ছাড়া সেটি ১৪টি দেশের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বিভিন্ন পুরস্কার পায়।

সম্প্রতি নাম ঠিক না হওয়া নতুন একটি চলচ্চিত্রের শুটিং শেষ করেছেন রাহী।

নির্মাতার ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। শিগগির এর সম্পাদনার কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তরুণ এই নির্মাতা।

চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে আব্দুল্লাহ আল রাহী বলেন, ‘ছোটবেলায় আমার পানের দোকানদার হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। বড় ভাইয়ের ক্যামেরার মাধ্যমেই চলচ্চিত্র নির্মাণে আমার হাতেখড়ি। আমি সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি, পরিবারও সাপোর্ট দিচ্ছে। ফিল্ম নিয়ে এমন কিছু করতে চাই, যেন এতেই আমার ভাত-কাপড় জোটে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত