Ajker Patrika

কোন কোন বৈশিষ্ট্যে ‘কুল’ হয় মানুষ, গবেষণা যা বলছে

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

হট মানে গরম আর কুল মানে ঠান্ডা—আমরা এমনটাই জানি। বর্তমানে ‘কুল’ (Cool) শব্দটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়—বিশেষ করে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু যে কুল মানে আমরা ঠান্ডা জানি, এই ‘কুল’ ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের মানুষকে বোঝাতে শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

কিন্তু একজন মানুষ আসলে কিসে ‘কুল’ হয়? মানে একজন মানুষের চরিত্রে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে তাঁকে ‘কুল’ বলা যায়? শুধু জনপ্রিয় বা ট্রেন্ডি হলেই কি সে ‘কুল’? নাকি এর পেছনে আরও কোনো কারণ রয়েছে?

সম্প্রতি আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের বিখ্যাত সাময়িকী ‘জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি’তে এ বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে। ‘কুল’ হওয়ার জন্য একজন মানুষের মধ্যে কী ধরনের বৈশিষ্ট্য বা মূল্যবোধ থাকা দরকার, তা-ই তুলে ধরা হয়েছে এই গবেষণায়।

গবেষকেরা ১২টি দেশের প্রায় ৬ হাজার মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তাঁদের পরিচিত এমন একজন মানুষের কথা ভাবতে, যিনি ‘কুল’, ‘আন-কুল’ (কুল নন), ‘ভালো’ অথবা ‘ভালো নন’। এরপর তাঁদের সেই ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধ বর্ণনা করতে বলা হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকেরা দেখেছেন, ‘কুলনেস’ সাধারণ ভালো লাগা বা নৈতিকতার চেয়ে কীভাবে আলাদা। ১২টি দেশের মধ্যে ছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জার্মানি, ভারত থেকে চীন, নাইজেরিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে আমরা যেসব মানুষকে ‘কুল’ বলি বা যাঁদের মধ্যে ‘কুলনেস’ রয়েছে, তাঁদের সবার মধ্যে ছয়টি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়। এগুলো হলো—

১. বহির্মুখী (Extroverted)—কুল মানুষেরা সাধারণত সামাজিক এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন।

২. সুখপ্রিয় (Hedonistic)—তাঁরা নিজের জীবন উপভোগ করতে চান এবং সব সময় আনন্দ খুঁজে বেড়ান।

৩. দুঃসাহসী (Adventurous)—তাঁরা ঝুঁকি নিতে ও নতুন কিছু চেষ্টা করতে দ্বিধা করেন না।

৪. মুক্তমনা (Open)—কুল মানুষেরা কৌতূহলী এবং নতুন অভিজ্ঞতা নিতে আগ্রহী।

৫. প্রভাবশালী (Powerful)—কুল মানুষদের মধ্যে একধরনের প্রভাব বা আকর্ষণ থাকে, যা সহজেই অন্য মানুষকে প্রভাবিত করে।

৬. স্বতন্ত্র (Autonomous)—কুল মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র, তাঁরা নিজের মতো করে চলেন এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেই নেন।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন বা দক্ষিণ আফ্রিকা— সব দেশেই ‘কুল’ মানুষের ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ‘কুল’ আর ‘ভালো’ মানুষ কিন্তু এক জিনিস নয়! গবেষণায় দেখা গেছে, ‘কুল’ হওয়া মানেই ‘ভালো’ মানুষ হওয়া নয়। দয়ালু, শান্ত, নিরাপদ বোধ হয় ও কর্তব্যপরায়ণ এমন মানুষকে ‘কুল’ হওয়ার চেয়ে ‘ভালো’ বলা হয়েছে। একজন ‘কুল’ মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন—বহির্মুখিতা ও সুখপ্রিয়তা সব সময় ভালো নাও হতে পারে।

গবেষণার আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো, সংস্কৃতিতে অনেক ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও ‘কুলনেস’ ব্যাপারটা প্রায় সব দেশেই একই রকম। যেমন, দক্ষিণ আফ্রিকায় মানুষও ‘কুল’ ব্যক্তিদের বহির্মুখী, সুখপ্রিয়, প্রভাবশালী, দুঃসাহসী, মুক্তমনা ও স্বতন্ত্র হিসেবেই দেখে, ঠিক ইউরোপ বা এশিয়ার মতো। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘কুলনেস’ ও ‘ভালো’-এর মধ্যে পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট। সেখানে সুখপ্রিয়, প্রভাবশালী, দুঃসাহসী ও স্বতন্ত্র হওয়াকেই ‘ভালো’ মানুষ হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

অন্যদিকে নাইজেরিয়া ছিল একমাত্র দেশ, যেখানে ‘কুল’ ও ‘আন-কুল’ উভয় ধরনের মানুষকেই স্বতন্ত্র হিসেবে দেখা হয়েছে। অর্থাৎ, সেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ‘কুল’ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়নি। এটি সম্ভবত সেই দেশের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন, যেখানে সম্প্রদায়, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মিলিত পরিচয়ের ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। যেখানকার সংস্কৃতিতে ঐতিহ্য ও পদক্রম গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে নিজের মতো চলাকে হয়তো ‘কুল’ মনে করা হয় না। তবে গবেষকেরা এই ভিন্নতার পেছনে জরিপের পদ্ধতিগত কিছু কারণও থাকতে পারে বলে অনুমান করেছেন। নাইজেরিয়ায় ‘কুলনেস’ ও ‘ভালো’ মানুষ হওয়ার মধ্যে পার্থক্য অন্যান্য দেশের মতো স্পষ্ট ছিল না, অর্থাৎ সেখানে ‘কুলনেস’-কে ‘ভালো’ মানুষের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়েছে।

১২টি দেশের সংস্কৃতিতে ‘কুলনেস’-এর অর্থ প্রায় একই হওয়ার মানে হলো, ‘কুলনেস’ হয়তো একটি সাধারণ সামাজিক বৈশিষ্ট্য। এই ব্যক্তিরা প্রায়শই প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন ধারণা নিয়ে আসেন—তা ফ্যাশনেই হোক, শিল্পে, রাজনীতিতে বা প্রযুক্তিতে। তাঁরা অন্যদের অনুপ্রাণিত করেন এবং আধুনিক, আকাঙ্ক্ষিত বা প্রগতিশীল ধারণাকে আকার দিতে সাহায্য করেন।

এই অর্থে ‘কুলনেস’ একধরনের সাংস্কৃতিক মর্যাদার প্রতীক হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি শুধু বাহ্যিক স্টাইল নয়। এটি বোঝায় যে আপনি সময়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন এবং অন্যদের আপনার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। তবে ‘কুলনেস’ মানে বিখ্যাত বা ধনী হওয়া নয়। এটি আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আপনি কি কৌতূহলী? সাহসী? নিজের প্রতি সৎ? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি যেখান থেকেই আসুন না কেন, কেউ না কেউ আপনাকে ‘কুল’ ভাবে!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত