Ajker Patrika

ইতিহাসের প্রথম নারী ব্যবসায়ীর খোঁজে

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২২, ১২: ০১
ইতিহাসের প্রথম নারী ব্যবসায়ীর খোঁজে

করোনা-পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক বিশাল পরিবর্তন এসেছে ব্যবসার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে নারীদের বড় একটি অংশ ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ঠিক কবে থেকে নারীদের ব্যবসায় আগমন, ইতিহাসের প্রথম নারী ব্যবসায়ী কে—এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে সাংবাদিক ও লেখক সোফি হার্ডচের একটি লেখা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। সোফি এ নিয়ে পরিচালিত গবেষণার ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিহাসের প্রথম নারী ব্যবসায়ী ছিলেন ইরাকের উত্তরাঞ্চলের টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত আসুর শহরের এক নারী, যাঁর নাম ছিল আহাহা। সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব ১৮৭০। আহাহা নামের সেই নারী ব্যবসা করতে এসে তাঁর আপন ভাইয়ের কাছে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন।

আহাহা ইরাকের আসুর শহর থেকে তুরস্কের কানেশ শহরে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন। এই ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছিলেন আহাহাসহ আরও কয়েকজন। ব্যবসাটি ছিল কাপড় ও টিনের। তখন গাধার পিঠে চড়িয়ে মালামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হতো। তখন ছিল বিনিময় প্রথার যুগ। অর্থাৎ, মুদ্রার বদলে সে যুগে পণ্যের মূল্য হিসেবে অন্য একটি পণ্য বিনিময়ই ছিল দস্তুর। আহাহার ব্যবসাটি ছিল বেশ লাভজনক। কিন্তু আহাহাকে তাঁর প্রাপ্য লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাঁর আপন ভাই বুযাযু তাঁর এই ক্ষতিটি করেছিলেন।

অ্যাসেরীয় সভ্যতায় তখন কিউনিফর্ম পদ্ধতিতে লেখা হতো। কাদামাটির স্লেটে কাঠি দিয়ে আহাহা তাঁর সঙ্গে অবিচারের ঘটনাটি তাঁর আরেক ভাই আসুর মুতাপ্পিলের কাছে লিখে জানান। এ জন্য আহাহা তাঁর ভাই মুতাপ্পিলের কাছে সাহায্য চান।

চিঠিতে আহাহা লেখেন, ‘ব্যবসায় বিনিয়োগ করা রৌপ্য আমার শেষ সম্বল। এই রৌপ্য পাওয়া না গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব।’ এ বিষয়ে ভাই মুতাপ্পিলকে যথাযথ ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান তিনি।

কাদামাটির স্লেট সংবলিত চিঠিআহাহা আশা করেন চিঠির ফলে তিনি তাঁর প্রাপ্য লভ্যাংশ ফিরে পাবেন এবং পরে ব্যবসায়ীদের কাফেলা ফিরে এলে ভাই মুতাপ্পিল এর সমাধান দেবেন। আরেকটি কাদামাটির স্লেটে কাঠি দিয়ে লেখা চিঠিতে আহাহা লেখেন, ‘এখনই সময় আমার সাহায্যে এগিয়ে আসার। আমাকে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেওয়ার।’

২৩ হাজার কাদামাটির স্লেট সংবলিত চিঠির মধ্য থেকে আহাহার ঐতিহাসিক চিঠিটি পাওয়া যায়। এটি প্রমাণ করে আহাহা ছিলেন ইতিহাসের প্রথম নারী ব্যবসায়ী। গত কয়েক দশক ধরে তুরস্কের কানেশ শহরে ব্যবসায়ীদের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ খনন করতে করতে এসব কাদামাটির স্লেট সংবলিত চিঠি পাওয়া যায়।

চিঠিগুলোর মাধ্যমে জানা যায়, সে সময় আসুর শহরের যেসব ব্যবসায়ী স্থায়ীভাবে কানেশে বসবাস শুরু করেছিলেন, তাঁরা কানেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। সে সময়ের পরিবহনব্যবস্থায় আসুর থেকে কানেশের দূরত্ব ছিল ছয় সপ্তাহের। সে সময় নারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতেন। পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করতেন। ওই সময়েই মূলত ইতিহাসে প্রথম নারী ব্যবসায়ী, নারী ব্যাংকার, নারী বিনিয়োগকারীর আবির্ভাব ঘটে।

কানেশের সেই চিঠির স্তূপগুলো থেকে বিভিন্ন চুক্তি ও আদালতের রায় সম্পর্কেও জানা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০-১৮৫০ সময়ে অ্যাসেরীয় সভ্যতায় ব্যবসা ও নতুন নতুন আবিষ্কার বিস্তৃত হয় ও উন্নতি লাভ করে। অ্যাসেরীয়রা ব্যবসা বিনিয়োগের নতুন নতুন পথ উদ্ভাবন করে। সে সময় নারীদের অগ্রযাত্রার একটি চিত্রও চিঠিগুলোর মাধ্যমে ফুটে ওঠে, যেখানে নতুন আবিষ্কার, ব্যবসায় শুধুমাত্র পুরুষই নয়, নারীদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা রয়েছে।

বিভিন্ন নথি থেকে জানা যায়, এসব নারীর স্বামীরা যখন ব্যবসার কাজে বাড়ির বাইরে অবস্থান করতেন, তখন তাঁরা বাড়িতে বসেই ব্যবসার দেখাশোনা করতেন। এভাবে তাঁরা নিজেরা সম্পদশালী হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন।

ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের (সিএনআরএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক এবং ‘উইমেন অব আসুর অ্যান্ড কানেশ’ বইয়ের লেখক সিসিল মিশেল জানান, ৩০০টি চিঠি ও অন্যান্য নথি থেকে সেই সময়ের নারীদের জয়যাত্রা ও বর্ণিল সময় সম্পর্কে জানা যায়। এ ছাড়া সেখানে উঠে আসে নারীদের সংগ্রামের বিভিন্ন গল্প। চিঠিগুলো তেমন বড় ছিল না। এগুলো ছিল ছোট ছোট চিঠি, যা হাতের তালুতে রেখেই পড়া যাচ্ছিল। ক্ষুদ্র হলেও এই চিঠির লেখাগুলো থেকে সেই সময়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গল্প উঠে এসেছে। প্রথম নারী ব্যবসায়ীর গল্পটি পুরো অ্যাসেরীয় ব্যবসায়ী কমিউনিটির গল্পগুলোর সঙ্গে একসঙ্গেই ছিল। চিঠিতে উঠে আসে, অ্যাসেরীয়রা ব্যবসায় অনেক সফল ছিল। তাদের ব্যবসায়ী কাফেলা ৩০০ গাধা নিয়ে পার্বত্য পথে ছুটে চলত। গাধার পিঠে বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল ও বিলাসবহুল পণ্য বহন করা হতো। এ ছাড়া চিঠিও বহন করা হতো।

অ্যাসেরীয় ব্যবসায়ীরা যে পথ দিয়ে তাঁদের ব্যবসায়িক কাফেলা নিয়ে ছুটে বেড়াতেন, তা ছিল সব দিক থেকেই আন্তর্জাতিক। এই বাণিজ্যপথের কেন্দ্র ছিল এশিয়ার কেন্দ্রে। ধারণা করা হয় প্রাচীন সিল্করুটের অংশ ছিল এটি। আফগানিস্তান থেকে লাপিস-লাজুলি, পাকিস্তান থেকে কার্নেলিয়ান, ইরান পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এটি।

তুরস্কের কানেশ শহরনেদারল্যান্ডসের লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসেরীয় সভ্যতা বিষয়ক গবেষক জেরিট ডার্কসেন কাজ করছেন কানেশ চিঠি নিয়ে। তাঁর ভাষ্যমতে, বিদেশি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন টেক্সটাইল পণ্য দক্ষিণ ইরাকের ব্যাবিলোনিয়া থেকে আসুরে নিয়ে আসতেন। অ্যাসেরীয়দের কাছে সেগুলো বিক্রি করা হতো স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে।

অ্যাসেরীয় নারীরা কাপড়ের কেনাবেচা ঘরে বসেই পরিচালনা করতেন। তাঁরা নিজে উপার্জনের প্রতি অনেক আগ্রহী ছিলেন। বিদেশের বিভিন্ন নতুন ফ্যাশন-স্টাইল নিয়েও তাঁরা সচেতন ছিলেন। ব্যবসায়ী হিসেবে দক্ষ এসব নারীদের অনেকেই স্বামীর সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসা করতেন।

চিঠি থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বিবিসিতে প্রকাশিত লেখায় সোফি হার্ডচ জানান, সে সময় নারীরা তাদের স্বামী ও ভাইদের কোনো কথা বা উপদেশ দিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তাঁরা ছিলেন সাহসী ও দক্ষ। অন্য একটি চিঠিতে জানা যায়, এক নারী তাঁর ভাইকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘লোভী হয়ো না, আমাকে ধ্বংস করো না।’

পারিবারিক কাঠামোও ছিল অনেকটা উদার। সোফি জানাচ্ছেন, সে সময় আসুর ও কানেশে স্বামী-স্ত্রী যে কেউ চাইলে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারতেন। তবে একই সময়ে ব্যবিলিয়নার চিত্র ছিল ভিন্ন। সেখানে নারীদের ডিভোর্স দেওয়ার অধিকার ছিল না।

অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় তখনকার নারীদের ব্যক্তিগত জীবন বেশ উন্নত ছিল। সে সময় নারীরা বিয়ের সময় শর্ত জুড়ে দিতেন, পুরুষেরা দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না এবং ভ্রমণে গেলে স্ত্রীকে অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ইরাম-আসুরের মেয়ে সুহকানাকে বিয়ে করেছিলেন আসুর-মালেক। বিয়ের শর্ত ছিল—আসুর-মালিক যেখানেই যাবেন, তাঁকে তাঁর সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। একই সঙ্গে আসুর-মালেক কনেশের অন্য কোনো নারীকে বিয়ে করতে পারবে না।

কিন্তু সময় সব সময় এক রকম যায় না। আসুর-কানেশের ক্ষেত্রেও যায়নি। সময়ের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে আসুর-কানেশের ব্যবসায়িক প্রতিপত্তি কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। অন্য শহর তখন বাণিজ্য, সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের স্থান হিসেবে গড়ে ওঠে।

কিন্তু অ্যাসেরীয় সে সভ্যতায় নারীদের যে অবস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে, তা ইতিহাসে অনন্য স্থান দখল করেছে। আগুনে ধ্বংস হওয়া পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে হাজার বছর পর উদ্ধার হওয়া চিঠিগুলো তখনকার নারীদের অগ্রযাত্রার সাক্ষী দিচ্ছে। এই চিঠি থেকে উঠে আসা নারীদের গল্পগুলো কোনো রানির গল্প ছিল না। বরং এটি ছিল শ্রমজীবী নারীদের গল্প, যাঁরা নিজেদের পরিশ্রম দিয়ে নিজেদের নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

মেসোপটেমিয়ার শহরগুলোতেও নারীদের লেখা চিঠি পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো সংখ্যায় এত বেশি নয়। সেখানে তেমন তথ্যও পাওয়া যায়নি। কানেশই ব্যতিক্রম।

বিবিসি থেকে অনুবাদ: আমিনুল ইসলাম নাবিল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পোষা প্রাণী কি আমাদের শিক্ষক

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৪
কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। ছবি: পেক্সেলস
কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। ছবি: পেক্সেলস

অনেকে শখ করে বাড়িতে বিড়াল, কুকুর, পাখি, মাছ বা খরগোশ পোষেন। যদি আপনি শিখতে চান, তাহলে এই প্রাণীগুলোর সাধারণ দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারেন। কীভাবে শান্ত থাকতে হয়, কীভাবে ভালোবাসতে হয় এবং কীভাবে দিন উপভোগ করতে হয়—পোষা প্রাণীর দিকে গভীর মনোযোগ দিলে এগুলো শেখা যায়। কিন্তু আপনি কি শিখছেন?

সুস্থ শরীর ও মনের পাঠ

বাড়ির পোষা প্রাণীর কাছ থেকে শরীর ও মন সতেজ রাখা শেখাটা খুব সহজ। তাদের আচরণ দেখলেই বুঝবেন, শরীর ও মন ভালো রাখতে বিশেষ কিছু করার দরকার নেই। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকতা এবং প্রকৃতির নিয়ম অনুসরণ করা।

খেয়াল করবেন, আপনার বাড়ির পোষা প্রাণীটি দিনের বেলা ঝিমিয়ে নেয়। যাকে বলা হয় পাওয়ার ন্যাপ। এরপর তারা ছোটাছুটি করে বেড়ায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে। বিষয়টি আসলে পাওয়ার ন্যাপের শক্তি। ন্যাপ কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং সতর্কতা বৃদ্ধি করে—এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। শহরের রাস্তায় দেখে থাকবেন, অনেকে কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হন। যাঁরা পোষা কুকুরকে নিয়মিত বাইরে হাঁটতে নিয়ে যান, তাঁদের এটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। এই অভ্যাসের কারণে সকালে কিংবা বিকেলের দিকে কোনো এক বেলা হাঁটার স্বাস্থ্য উপকারিতা পেয়ে থাকেন। এই হাঁটা মানসিক চাপ কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ থেকে দূরে রাখে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং মানসিক চাপ কমানোর অন্যতম সেরা উপায়।

ধরুন, আপনার বাড়ির বিড়ালটি মাছ ভালোবাসে। আপনার মাছের প্রতি আকর্ষণ না থাকলেও বিড়ালের তৃপ্তি করে মাছ খাওয়ার দৃশ্য আপনাকে মাছ খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পারে। প্রাণীদের আরও একটি চমৎকার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তাদের নির্দিষ্ট রুটিন। এটিও শিক্ষণীয়। কিছু কিছু মানুষ জীবনকে একটা নির্দিষ্ট রুটিনের ভেতরে নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট করে। একটি ধারাবাহিক দৈনন্দিন রুটিন ঘুমের মান উন্নত করে। আপনার পোষ্য যেমন ঘুম থেকে উঠেই গা ঝাড়া দিয়ে সতেজ হয়, তেমনি নিয়মিত স্ট্রেচিং শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং শক্তি দেয়। পোষা প্রাণীরা সব সময় নিজেদের পরিষ্কার রাখে। এই পরিচ্ছন্নতা আত্মসম্মান বাড়াতে সহায়ক।

মানসিক শান্তি ও ইতিবাচকতার সূত্র

পোষা প্রাণীরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরাটা খুঁজে নেয়। ছবি: পেক্সেলস
পোষা প্রাণীরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরাটা খুঁজে নেয়। ছবি: পেক্সেলস

পোষা প্রাণীরা অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে না। তারা কেবল বর্তমানে বাঁচে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া মানসিক শান্তির পাঠগুলো হলো—

ক্ষমা করুন এবং ভুলে যান: আপনার পোষ্যটি হয়তো আপনার ওপর রেগে গেছে। কিন্তু সেই রাগ স্থায়ী নয়। তারা কোনো হিংসা পুষে রাখে না। রাগ ধরে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রাণীরা এ বিষয়টিই শেখায়।

ইতিবাচক থাকুন: পোষা প্রাণীরা নিজেদের যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরাটা খুঁজে নেয়। হতে পারে সেটা একফালি ঘাস বা একঝলক রোদ। তারা নেতিবাচক দিক নিয়ে পড়ে থাকে না। মানুষের ক্ষেত্রেও তাই। নেতিবাচকতা নিয়ে বেশি ভাবলে বিষণ্নতা বাড়ে।

বর্তমান মুহূর্তে বাঁচুন: তারা মাইন্ডফুলনেস বা সচেতন থাকা শিখেছে মানুষের চেয়ে আগে। তারা খেলুক, ঘুমাক—যা-ই করুক না কেন, তাতে পুরোপুরি মনোযোগ দেয়।

সম্পর্ক ও যোগাযোগের পাঠ

ভালোবাসা, আনুগত্য ও মনোযোগ—এগুলো একটি সুস্থ সম্পর্কের ভিত্তি। এসব আমরা প্রাণীদের কাছ থেকে খুব সহজে শিখতে পারি। বলার আগে শুনতে শিখুন। যখন আমাদের মাথায় নতুন ধারণা ঘুরতে থাকে, তখন আমরা প্রায়ই অন্যকে মাঝপথে থামিয়ে দিই। পোষ্যটি কিন্তু আপনার কথা শেষ করার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে। তাদের এই মনোযোগ দিয়ে শোনা ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। পোষা প্রাণীরা আপনার মনের ভাষা বুঝে শরীরের ভাষা পরখ করে। কিন্তু মানুষ শারীরিক ভাষা প্রায়ই উপেক্ষা করে। আপনার অঙ্গভঙ্গি বা চোখের ভাষা কী বলছে, সেদিকে খেয়াল রাখা ব্যক্তিগত সম্পর্ক উন্নত করে।

নিঃশর্ত ভালোবাসা দেওয়া প্রাণীরাই শেখায়। কুকুর কখনো খুব ঝানু খেলোয়াড় হওয়ার ভান করে না। সব সময় তারা আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কে ‘খেলোয়াড়ি মনোভাব’ ভুল মানুষকে আকর্ষণ করে। আমরা অনেক সময় খুব দ্রুত মানুষকে বিচার করে ফেলি। কিন্তু খেয়াল করবেন, আপনার বিড়ালটি আপনার পোশাক বা মেধা দেখে আপনার কোলে এসে বসবে না। প্রাণীরা ভদ্রতার ভাষা বোঝে, কোনো সামাজিক স্তর নয়। প্রাণীরা বন্ধুত্ব ও দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে ভালো ধারণা দেয়। যাদের বন্ধু বেশি, তারা অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে। পোষ্যরা আপনাকে সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব শেখায়।

জীবনের উদ্দেশ্য ও মূল্য

জীবনের আসল আনন্দ আসে উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া এবং ছোট ছোট জিনিসে খুশি হওয়ার মধ্য দিয়ে; শুধু পোষা প্রাণীরা নয়, আমাদের চারপাশের যেকোনো প্রাণীই আমাদের বিষয়টি শেখায়।

খেলা শুধু শিশু বা প্রাণীদের জন্য নয়; এটি বুদ্ধিমত্তা, সৃজনশীলতা ও সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন খেলার জন্য সময় বের করুন। একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য বাঁচুন। বিরক্ত হলে প্রাণীরা আক্রমণাত্মক বা উদ্বিগ্ন হতে পারে। মানুষেরও উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য না থাকলে মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। কাজ করার সহজাত তাড়না আমাদের সুস্থ রাখে। একটি পোষ্য মেঝেতে একটি টুকরা খাবার পেয়ে বা পুরোনো বল খুঁজে পেয়ে পুরো দিনের আনন্দে কাটিয়ে দিতে পারে। তাদের মতো আপনিও প্রিয় খাবার উপভোগ করা বা পছন্দের সিনেমা দেখার মতো ছোট ছোট আনন্দে বেঁচে থাকা শিখুন।

সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেডিটেশন শুরু করতে চাচ্ছেন, জেনে নিন টিপসগুলো

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
কাজে মনোযোগ ফেরাতে এবং আত্মিক সুখ পেতে মেডিটেশন খুব কার্যকরী অনুশীলন। ছবি: কোলাজ
কাজে মনোযোগ ফেরাতে এবং আত্মিক সুখ পেতে মেডিটেশন খুব কার্যকরী অনুশীলন। ছবি: কোলাজ

মেডিটেশন বা ধ্যান জীবন স্থিতিশীল করে। কাজে মনোযোগ ফেরাতে এবং আত্মিক সুখ পেতে মেডিটেশন খুব কার্যকরী অনুশীলন। কিন্তু অনেকে কিছুদিন মেডিটেশন করার পর ছেড়ে দেন। বলে বসেন, ‘কোথায়, কাজ হচ্ছে না তো!’ এমন হলে বুঝতে হবে, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। অথবা আপনি নিজেই বেশ চাপ নিয়ে নিচ্ছেন বলে অস্থিরতাও কাটছে না, মানসিক শান্তিও মিলছে না।

এভারগ্রিন ইয়োগার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক বাপ্পা শান্তনু বলেন, ‘মেডিটেশন করার জন্য সবার আগে মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে শিখতে হবে। যিনি এভাবে বসতে পারেন না, তিনি অতটা উপকার পাবেন না মেডিটেশন থেকে। এভাবে বসার পর নড়াচড়া একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। হাতের আঙুল ও পায়ের আঙুল নাড়ানো থেকেও বিরত থাকা চাই। এরপর শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ দিন। এককথায় শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরের পরিবর্তনগুলো অনুভব করুন। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে খুব ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এরপর ১ অনুপাত ২ হিসাবে শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হবে। অর্থাৎ যতটা সময় নিয়ে শ্বাস নেবেন, তার দ্বিগুণ সময় নিয়ে ছাড়তে হবে। কিন্তু প্রথম দিনেই এটা করতে যাওয়া ঠিক নয়। ধীরে ধীরে বুঝে ও অনুভব করে এগোতে হবে। এভাবে ৫ দিন সময় লাগিয়ে এ পর্যন্ত আসতে পারলে অনেকটাই ভালো বোধ হবে।’

নতুনেরা যেভাবে মেডিটেশন বা ধ্যান শুরু করতে পারেন

শুরুতে বেশি সময় নেবেন না

মেডিটেশন যাঁরা শুরু করেছেন, তাঁরা প্রথম দিনগুলোয় ৩০ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে নিজেকে ধ্যানে বাধ্য করবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ধ্যান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে করে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার পরিবর্তে কমে যেতে পারে। তাই প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়াতে পারেন। তাতেও মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যা হলে এক মিনিটের শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করা দিয়ে শুরু করুন। প্রতিদিন এভাবে চলতে দিন। এক সপ্তাহ পর এটাই নিয়মে আসবে। তখন মনোনিবেশ করা সহজ হবে।

মানসিকভাবে আরোগ্য় লাভের জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ২ মাস অন্তত ২০ মিনিট মেডিটেশনে নিমগ্ন হতে হবে। এভাবে মেডিটেশন করলে মস্তিষ্কের গঠনের পরিবর্তন হয়। যেটাকে আমরা নিউরোপ্লাস্টিসিটি বলি। মেডিটেশন বা ধ্যানের এটাই সহজ মাধ্যম, যা নিজে নিজেই অনুশীলন করা সম্ভব। বাপ্পা শান্তনু, সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রশিক্ষক, এভারগ্রিন ইয়োগা

তবে প্রথম কয়েকটি সেশনে মানসিক স্থিরতা আশা করা উচিত নয়। ধ্যান শুরু করার সময় বিভিন্নভাবে মনঃসংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে প্রতিবার যখন আপনি মনকে পুনরায় শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনে ফিরিয়ে আনবেন, আপনার মনোযোগের বৃত্তটি আরও শক্তিশালী হবে। এটাই অনুশীলন। অনুশীলনকারীদের মতে, মেডিটেশন বা ধ্যান মানে চিন্তামুক্ত থাকা নয়; বরং চিন্তাভাবনা থাকা সত্ত্বেও আপনার সচেতনতাকে নোঙর করতে পারার নামই মেডিটেশন বা ধ্যান।

ধরন বেছে নিন

সব ধরনের ধ্যান বা মেডিটেশন সবার জন্য উপযুক্ত না-ও হতে পারে। ইতিবাচক চিন্তা, ভিজুয়ালাইজেশন থেকে শুরু করে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ধ্যান রয়েছে। প্রতিটিই অনুশীলন করে দেখতে হবে, কোনটির সঙ্গে আপনার শরীরের সমন্বয় ঘটছে। কয়েকবার চেষ্টা করার পর যদি দেখা যায়, সেগুলোর কোনো একটির সঙ্গে আপনার বেশি সংযোগ তৈরি হচ্ছে, তাহলে সেটিই আপনার মেডিটেশনের সঠিক মাধ্যম।

সংগীত, সুগন্ধি, ফুল ইত্যাদি পাশে রেখে মেডিটেশনের পরিবেশ তৈরি করে নিন। প্রতীকী ছবিটি নেওয়া হয়েছে পেক্সেলস থেকে।
সংগীত, সুগন্ধি, ফুল ইত্যাদি পাশে রেখে মেডিটেশনের পরিবেশ তৈরি করে নিন। প্রতীকী ছবিটি নেওয়া হয়েছে পেক্সেলস থেকে।

পরিবেশ তৈরি

সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজ, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ, ঝরনার আওয়াজ ইত্যাদির বিভিন্ন ভিডিও বা সাউন্ডট্র্যাক পাওয়া যায় ইউটিউবে। সেগুলোর কোনো একটা ছেড়ে তারপর ধ্যান শুরু করলে কিছুটা সহজে মনোনিবেশ করতে পারবেন। এতে বাড়তি উদ্বেগ কমে আসবে এবং অনেকটাই আরামবোধ হবে।

শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ

খুব দ্রুত ধ্যানে নিমগ্ন হওয়ার জন্য গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়ার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে। চোখ বন্ধ করে চোয়াল শিথিল করুন। ধীরে ধীরে আপনার কাঁধ শিথিল করে নিন। তারপর নাক দিয়ে গভীরভাবে শ্বাস নিতে শুরু করুন। শ্বাস নেওয়ার সময় শরীর প্রসারিত হচ্ছে অনুভব করতে থাকুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন, যাতে শরীর তার কেন্দ্রে ফিরে আসে। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য এটি পুনরাবৃত্তি করুন।

সূক্ষ্ম বিষয়ে মনোযোগ দিন

মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হওয়া এড়াতে শ্বাসের অনুভূতি, হাতের তালুর ওজন ইত্যাদি শারীরিক সংবেদনগুলোয় মনোনিবেশ করুন। এগুলো আপনাকে বাইরের পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্যানে নিমগ্ন হতে সহায়তা করবে।

ধ্যানের নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করুন

ধ্যানের জন্য বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে ভালো। এতে অনুশীলন আরও বিশেষ হয়ে উঠবে। এ ছাড়া সে জায়গাটি চোখে পড়লে আপনার মস্তিষ্ক সংকেত দেবে, ধ্যান করার সময় হয়েছে। নিয়মিত ধ্যানের জন্য একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, আরামদায়ক জায়গা বেছে নিন। সেখানে যেন প্রাকৃতিক আলো, সবুজ ও আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা থাকে, সেদিকে নজর দিন। ধ্যান শুরু করার আগে এই পরিবেশ আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে তুলবে। এই জায়গা আপনার মস্তিষ্ককে বিভ্রান্তি কমানোর নির্দেশ দেবে। এখানে একটি ছোট ট্রেতে সুগন্ধি মোমবাতি, ধূপকাঠি, ফুল থাকতে পারে। সেগুলোর সৌন্দর্য ও গন্ধ মস্তিষ্ক শান্ত করতে সাহায্য করবে।

ধ্যান বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি আনে, শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। এক দিনে বা এক সপ্তাহে অর্থাৎ কম সময়ে এটি আয়ত্ত করতে যাবেন না। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে আয়ত্ত করুন এবং দীর্ঘ মেয়াদে সুস্থ থাকুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৫৫
আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

মেষ

আজ আপনার ভেতরের অ্যাড্রেনালিন ডাবল ডোজ নিয়ে নেমেছে। আজ এত দ্রুত কাজ করবেন যে সহকর্মীরা ভাববে আপনি কফি-মেশিনের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছেন। কিন্তু সাবধান! সব এনার্জি যেন বেলা ২টার পর শেষ না হয়ে যায়। কোনো মিটিংয়ে আপনার আইডিয়াটা ‘চিৎকার’ করে বলবেন না, সাধারণ স্বরে বলুন। আজকে সাতবার হাই তুলবেন।

বৃষ

আপনার আরামপ্রিয় মন আজ কাজের ডেস্ক থেকে সোজা সোফায় টানতে চাইবে। আজ খাবারের ব্যাপারে কোনো আপস করবেন না। দুপুরের খাবারের মেনু ঠিক করতে গিয়ে যে সময় নষ্ট করবেন, সেটা দিয়ে একটা ছোটখাটো উপন্যাস লেখা যেত। নিজের রূপচর্চা, শরীরের সেবাযত্ন আজ চরম পর্যায়ে নিয়ে যাবেন। স্ন্যাকস হাতে রাখুন, তবে ঘুমিয়ে পড়বেন না। ঘুম কাজের পরে!

মিথুন

আজ মস্তিষ্ক একটি হাইস্পিড ওয়াইফাই রাউটারের মতো কাজ করবে। একাই তিনজনের সঙ্গে চ্যাট করতে পারবেন, একটি ই-মেল ড্রাফট করতে পারবেন এবং একই সঙ্গে গানও গাইতে পারবেন। কিন্তু সতর্ক থাকুন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুল গ্রুপ চ্যাটে চলে যেতে পারে! জরুরি মেসেজ পাঠানোর আগে প্রাপকের নামটা তিনবার দেখে নিন। ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না।

কর্কট

আপনার হৃদয়ের নিরাপত্তা দরকার আজ। মনে হতে পারে ঘর ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কাঁথা মুড়ি দিয়ে থাকাই আজ আপনার কাছে জীবনের পরম সত্য, পরম প্রাপ্তি। ঘরের চার দেয়ালকে আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আশ্রয় মনে হবে। ফ্রিজের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস না ফেলে, নিজেই কিছু রান্না করুন। বাড়িতে আপনার প্রিয়জনের জন্য অপ্রত্যাশিত আরামের ব্যবস্থা করলে সুফল পাবেন।

সিংহ

আলো আকর্ষণকারী হিসেবে আজ আপনার খ্যাতি বাড়বে। আজ আপনি যেখানে যাবেন, সেখানেই আপনার প্রবেশে একটি অদৃশ্য স্পটলাইট জ্বলবে। অতিরিক্ত মনোযোগের জন্য হয়তো অফিসের বাথরুমের আয়নায় সেলফি তুলতে পারেন। আপনার উজ্জ্বলতা এমনিতেই যথেষ্ট। ইনডোরে সানগ্লাস পরা এড়িয়ে চলুন। আজ অযথা একটি দামি জিনিসের জন্য বাজেট নষ্ট হতে পারে, শুধু শুধু লোক দেখানোর জন্য টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না!

কন্যা

আজ আপনি জীবনের প্রতিটি সেকেন্ডের খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করবেন। ‘টু-ডু’ লিস্টের রং কী হওয়া উচিত, তা নিয়ে এক ঘণ্টা ব্যয় করবেন, যা আসলে আপনার ‘টু-ডু’ লিস্টে নেই। নিখুঁতভাবে থাকার চাপ আপনার কপালে ভাঁজ ফেলতে পারে। আজ একটি কাজ নিখুঁত না হলেও পৃথিবী থেমে যাবে না। প্লিজ, শ্বাস নিন। পানি পান করতে ভুলে যেতে পারেন। কারণ, আপনি পানির আণবিক গঠন নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।

তুলা

আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় সংগ্রাম আজ আবার শুরু হবে: সিদ্ধান্তহীনতা। দুপুরে কী খাবেন—ভাত না রুটি? আজ এটা আপনার কাছে জীবনের অর্থ খোঁজার মতোই কঠিন মনে হবে। ভারসাম্য খুঁজতে গিয়ে মাঝখানে আটকে যাবেন। লাঞ্চের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটা কয়েন টস করুন। আর ফল যা-ই হোক, চোখ বন্ধ করে মেনে নিন। সহকর্মীদের সঙ্গে আজ ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর মাঝের শব্দটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।

বৃশ্চিক

আপনার ডিটেকটিভ মোড আজ চালু থাকবে। জানতে পারবেন কে শেষ বিস্কুটটি খেয়েছে এবং তার পরিণাম কী হবে। গভীর এবং তীব্র মনোযোগ আজ সাফল্য এনে দেবে অথবা অপ্রয়োজনীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ফেলে দেবে। সবার দুর্বলতা খুঁজে না বের করে, নিজের কাজের ওপর ফোকাস করুন। অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণতার কারণে আজ ভালো সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।

ধনু

আপনার ভেতরে থাকা ভবঘুরে মন আজ বিদ্রোহ ঘোষণা করবে। অফিসে বসেও মনে মনে আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় অথবা সুন্দরবনের গহিনে ঘুরে বেড়াবেন। ছোটখাটো অ্যাডভেঞ্চার আজ আপনার দরকার। যদি বিদেশে যেতে মন চায়, তবে অন্তত ভিন্ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে বাথরুমে যান। এমন কিছু বলবেন না যা পরে প্রত্যাহার করতে হবে! সুতরাং কথাবার্তা ভেবেচিন্তে বলুন। ওভারস্মার্ট হতে যাবেন না।

মকর

কাজ, কাজ আর কাজ—এটাই আপনার জীবনের মন্ত্র। এমনকি একটি শামুককেও তার ধীরগতির জন্য সমালোচনা করতে পারেন। গ্রহরা বলছে, আপনি পাঁচ বছর আগেই বিরতি পাওয়ার যোগ্য হয়ে রয়েছেন। এবার থামুন। একটি ছোট বিরতি নিন। পৃথিবী আপনার অনুপস্থিতিতেও ঘুরতে থাকবে। আজ অতিরিক্ত টাকা সাশ্রয় করতে পেরে গর্বিত হবেন।

কুম্ভ

আপনার মাথা আজ ‘আউট অব দ্য বক্স’ থেকে অনেক দূরে, সম্ভবত অন্য গ্রহের চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত। এমন একটি চমৎকার আইডিয়া নিয়ে আসবেন, যার মধ্যে কবুতর এবং পুলি সিস্টেম জড়িত থাকতে পারে। আইডিয়াটি দুর্দান্ত, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি তা বুঝবে? একবার পরীক্ষা করে দেখুন। আজ এমন এক বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন, যার কথা ছয় মাস ধরে ভুলে গিয়েছিলেন।

মীন

আজ আপনার বেশির ভাগ সময় কাটবে দিবাস্বপ্নে। হয়তো ট্যাক্সের ফাইল করছেন, কিন্তু মন একই সঙ্গে একটি সিম্ফনি রচনা করছে। বাস্তব জগৎ আজ আপনার কাছে কিছুটা ধূসর লাগতে পারে। কল্পনার জগৎ থেকে একটু বের হয়ে আসুন। টাকা গুনতে গুনতে স্বপ্ন দেখা যায় না। আপনার সৃজনশীলতা আজ চূড়ায় থাকবে। একটি কবিতা লিখুন, কিন্তু অফিসে নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
চালতার আচার। ছবি: আফরোজা খানম মুক্তা
চালতার আচার। ছবি: আফরোজা খানম মুক্তা

বাজারে মিলছে চালতা। প্রতিদিনই ডালে কয়েক টুকরা চালতা দিচ্ছেন অনেকে। এবার বানিয়ে ফেলুন আচার। আপনাদের জন্য চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচারের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা

উপকরণ

চালতা চারটি, চিনি এক কাপ, শুকনা মরিচ টালা গুঁড়া এক টেবিল চামচ, পাঁচফোড়ন ২ টেবিল চামচ, বিট লবণ এক চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, পানি চার কাপ, হলুদ সামান্য।

প্রণালি

চালতার খোসা ফেলে টুকরা করে কেটে নিয়ে ধুয়ে ৭-৮ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার হাঁড়িতে পানি আর চালতা দিয়ে সেদ্ধ করুন। সেদ্ধ হলে চিনি, বিট লবণ, শুকনা মরিচের গুঁড়া, সামান্য হলুদ দিয়ে রান্না করুন। পরে চামচ দিয়ে থেঁতো করে নিন। ঝোল ঘন হয়ে এলে ঝাল মসলা দেখে নামিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা করে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করুন চালতার ঝাল-মিষ্টি রসাল আচার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত