Ajker Patrika

বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকুক বছরজুড়ে

আনিকা জীনাত, ঢাকা
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১৫
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থাকুক বছরজুড়ে

প্রথম যখন বইমেলা শুরু হয় তখন মাত্র ৩২টি বই দিয়ে মেলার সূচনা করেছিলেন বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্বদের অন্যতম চিত্তরঞ্জন সাহা। এখন মেলার পরিধি অনেক বেড়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবার সাড়ে সাত শর বেশি বইয়ের স্টল বসেছে।

তবে স্টল বেশি বলেই যে পাঠকসংখ্যা বেড়েছে, তা নয়। বই পড়ার সময়টা এখন কেড়ে নিচ্ছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউব।

 পাঠকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই অন্যকে বই কিনতে উৎসাহী করে। জাফর আহমেদ রাশেদ, সিইও, বাতিঘর

তাই বইমেলা যত দিন বই পড়ার তোড়জোড়ও তত দিন, এমনই দেখা যায়। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই অমর একুশে বইমেলা নিয়ে নানান খবর পাওয়া যায়। মোড়ক উন্মোচন, লেখকদের আড্ডাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসবে বইমেলার জৌলুশ বাড়ে। কিন্তু মেলা শেষে অনেক পাঠকই বই কেনার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কেন শুধু ভাষার মাসেই আমরা পড়ুয়া হতে পছন্দ করি? বছরের এই সময়ে যে বইগুলো কেনা হয়, সেগুলোর বাইরে কি আমরা পড়ি? এ সবের পেছনে ছাড়, অফার বা প্রচারণার একটা কারণ থাকতে পারে। ভাষার মাসে বাংলা বইয়ের প্রচারণা যত দেখা যায়, তা অন্যান্য মাসে চাপা পড়ে যায় পোশাক বা খাবারের বিজ্ঞাপনের নিচে।

তাও অনলাইনে বই কেনা যায় বলে রক্ষা। রকমারি, বই বাজার ও বইয়ের দুনিয়া থেকে বই কেনা যায় বছর জুড়ে। তবে পাঠকদের কাছে পৌঁছানোর দায় প্রকাশনা সংস্থারও বটে।

 ইচ্ছে আছে নিজেরাই প্রাথমিক স্কুলগুলোতে গিয়ে বইগুলোর ক্যাম্পেইন করব। রুম্মান তার্শফিক, প্রকাশক, পেন্ডুলাম 

পাঠক তৈরি করার জন্য কী করতে চান, সে পরিকল্পনার কথা জানালেন পেন্ডুলাম বুকসের প্রকাশক রুম্মান তার্শফিক। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় পড়ার অভ্যাস থাকলে সেটা বড় হওয়ার পরও থেকে যায়। তাই শিশুদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে শিশুদের ৫০০ বই বের করার চেষ্টা করছি। স্পন্সরশিপ নিয়ে বা নিজেরাই প্রাথমিক স্কুলগুলোতে গিয়ে বইগুলোর ক্যাম্পেইন করব।’ এ ছাড়া বইয়ের প্রচারণা চালাতে ইউটিউবে, ইনস্টাগ্রামের জন্য ভিডিও বানানো এবং বইয়ের রিভিউও পোস্ট করার কথাও জানালেন রুম্মান তার্শফিক।

 শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হলে আমাদের প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। ব্রত রায়, প্রকাশক, প্র প্রকাশন

বাতিঘরের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জাফর আহমেদ রাশেদের মতে, বিজ্ঞাপন দিয়ে খুব বেশি কাজ হয় না। বইয়ের প্রচারণা ছড়ায় মুখে মুখে। পাঠকের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়াই অন্যকে বই কিনতে উৎসাহী করে। খারাপ বইয়ের প্রচারণা চালিয়ে লাভ নেই। পাঠক যদি লেখকের লেখা পড়ে কিছু বুঝতে না পারেন বা জায়গায় জায়গায় বানান ভুল পান, পাঠকেরা আগ্রহী হবেন না বলে জানান জাফর আহমেদ রাশেদ। তিনি বলেন, ‘প্রচারণা চালাতে হবে ভালো বইয়ের। বাতিঘরের অনলাইন শাখায় প্রতিদিনই বই বিক্রি বাড়ছে। নিয়মিত প্রচারণার কারণেই এটা সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া, বাতিঘর চট্টগ্রাম শাখা ও বাতিঘর সিলেট, বাতিঘর ঢাকা, বাতিঘর প্রকাশনা সব পেইজ থেকেই প্রচারণা চালানো হয়। ফলে অর্ডারও বেশি পাওয়া যায়।’

 বই নিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষর্থীদের কাছে যেতে চাই।চৌধুরী ফাহাদ, প্রকাশক, চন্দ্রবিন্দু

চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের প্রকাশক চৌধুরী ফাহাদ বলেন, ‘পরিকল্পনা তো অনেক থাকে। সব কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। তবে বই নিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে চাই। এই প্রচলনটা আগে এক সময় ছিল। এটা ফিরিয়ে আনতে চাই। কিছু কিছু সিনিয়র লেখককে বই দিয়ে থাকি। তাঁরা নিজেরা কোন রিভিউ দিলে সেটাই পোস্ট করা হয়।’

 শিশুদের জন্য ১১ বছর ধরে বই লেখেন ব্রত রায়। তিনি বলেন, ‘শিশুদের মনোযোগ এখন নানা জায়গায় ঘুরপাক খায়। তারা এখন প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই তাদের কাছে পৌঁছাতে হলে আমাদেরও প্রযুক্তির সহায়তা নিতে হবে। বইয়ের ডিজিটালাইজেশন করা যেতে পারে। ছড়া পড়ার পাশাপাশি ভিডিওতে কার্টুন থাকতে পারে। এর পাশাপাশি অভিভাবকদেরও ভালো বইয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হবে। অনেক শিশু মেলার স্টলে এসে দ্বিধায় পড়ে যায়। কোন বই কিনবে, বুঝতে পারে না। তাই অভিভাবকেরাই যদি তাদের হাতে তাদের উপযোগী বই তুলে দেন, তবে তারাই নিজেদের পছন্দ তৈরি করে নিতে পারবে।’

পৃথিবীতে যত ভালো বই আছে, সব পড়া সম্ভব নয়। বেছে বেছে পড়তে হলেও অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই তালিকা ধরে ধরে বই পড়া ভালো। সব ভালো বই পড়ে শেষ করার জন্য এক মানবজীবন অনেক ছোট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত