ফিচার ডেস্ক, ঢাকা
রাষ্ট্র মানে শুধু একটি ভূখণ্ড নয়; এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিচয় ও মানুষের সম্মিলিত স্বপ্ন। অথচ এই একুশ শতকে কিছু দেশ এমন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে ভূখণ্ডের অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ। রোমান সাম্রাজ্য থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা যুগোস্লাভিয়ার মতো যে দেশগুলো একদিন ছিল মানচিত্রে স্পষ্ট, আজ তারা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। অথচ এবার, গল্পটা শুধু রাজনীতি নয়, প্রকৃতিই নিচ্ছে একেকটি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পরীক্ষা। ভূরাজনীতির পালাবদলের চেনা গল্পের বাইরে আজ নতুন এক সংকট সামনে এসেছে—জলবায়ু পরিবর্তন।
এই প্রেক্ষাপটে, আজকের অনেক দেশ আগামী ৫০ বছরের মধ্যে টিকে না-ও থাকতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও লোউই ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অনেক নিচু উচ্চতার দেশ; বিশেষ করে ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলবর্তী রাষ্ট্রগুলোর জন্য অস্তিত্বগত হুমকি তৈরি করছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এখন প্লাবন, উপকূলীয় ভাঙন, সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বসবাসের উপযোগী জমি ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার মতো পরিবেশগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ ধরনের পরিবর্তন শুধু এসব দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও জীবিকাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং তাদের অনন্য সংস্কৃতি ও জাতীয় সার্বভৌমত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। আগামী ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এমন দেশের অনেকগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ আশঙ্কার মুখে রয়েছে। এই অবস্থা পুরো একটি জাতি বিলুপ্তির মতো চরম পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ফলে ভ্রমণপ্রেমীরা সুযোগ থাকলে জলবাযু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত দেশগুলো ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন।
ডুবে যাচ্ছে মালদ্বীপ
বিশ্বের অন্যতম সমতল দেশ মালদ্বীপ। সেখানে বেশির ভাগ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের সামান্য ওপরে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে মালদ্বীপ ধীরে ধীরে ভূমি হারাচ্ছে। সরকার এরই মধ্যে বিদেশে জমি কিনছে জনগণের জন্য বিকল্প আবাসন হিসেবে।
অস্তিত্বের লড়াইয়ে কিরিবাতি
নিচু প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত কিরিবাতির ৩৩টি দ্বীপ পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। অথচ সেটি বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর একটি। ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কিরিবাতি সরকার ফিজিতে ৬ হাজার একর জমি কিনেছে, যাতে সুনির্বাচিত ও মর্যাদাপূর্ণ জনসংস্থান সম্ভব হয়। এরই মধ্যে দেশটির কিছু দ্বীপ হারিয়ে গেছে, লবণাক্ততা ধ্বংস করছে সুপেয় জলের উৎস।
ধিকি ধিকি জ্বলছে টুভালু
জলবায়ুর দিক থেকে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি টুভালু। এর ভূমির গড় উচ্চতা দুই মিটারের কম। দেশটি সরু প্রবাল দ্বীপ দিয়ে গঠিত, যার গড় প্রস্থ মাত্র ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ফলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে। কৃষি, পানীয় জল ও খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশটির। লবণাক্ত পানি মাটির নিচের স্তরের পানিতে প্রবেশ করছে। সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে। প্রয়োজনীয় জলবায়ু উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে এই দেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ এক মিটার বাড়লেই ডুবে যেতে পারে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ
প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যভাগে, হাওয়াই ও অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। এর গড় উচ্চতা দুই মিটার। ১ হাজার ১৫৬টি দ্বীপ এবং ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। রাজধানী মাজুরো অ্যাটলের ৮০ শতাংশ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের এক মিটার বৃদ্ধিতে ডুবে যেতে পারে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সরকার কৃত্রিম দ্বীপ ও অবকাঠামো নির্মাণে মনোযোগী। গড় উচ্চতা প্রায় দুই মিটার হওয়ায় এই দ্বীপপুঞ্জ বন্যা ও উপকূল ক্ষয়ের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। মিঠাপানির উৎস, কৃষি ও অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে লবণাক্ত পানি। সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূমি উঁচু করা এবং কৃত্রিম দ্বীপ গঠনের মাধ্যমে তাদের মানুষদের রক্ষার চেষ্টা করছে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপদেশ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক।
জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনশিল্পের ঝুঁকিতে সেশেলস
ভারত মহাসাগরে পূর্ব আফ্রিকার উপকূল থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপ দেশ সেশেলস। এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বিলাসবহুল পর্যটন গন্তব্য। দেশটি বন্য প্রাণী, প্রবালপ্রাচীর, নীল জলরাশি ও সাদা বালুর সৈকতের জন্য বিখ্যাত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারালে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উঁচু দ্বীপ থাকলেও দেশটির উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিতে রয়েছে। দেশটির জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনশিল্প ঝুঁকিতে আছে। সরকার উপকূল রক্ষা প্রকল্পে কাজ করছে।
সেশেলস হচ্ছে বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর একটি, যারা ব্লু ইকোনমির ধারণাকে বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন পরিকল্পনা চালু হয়েছে সেখানে। সেশেলস কেবল একটি পর্যটন দ্বীপ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুন্দর অথচ শঙ্কিত পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি।
টিকে থাকার লড়াইয়ে ফিজি
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে, অস্ট্রেলিয়া ও হাওয়াইয়ের মাঝামাঝি দেশ ফিজি। প্রায় ৩৩০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটি। ফিজি বিশ্বের জনপ্রিয় দ্বীপ গন্তব্যগুলোর একটি। দেশটিতে উচ্চ জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাড়ছে। উপকূলীয় অনেক গ্রাম সমুদ্রে বিলীন হওয়ার পথে। কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে। লবণাক্ত পানি ঢুকে ধ্বংস করছে কৃষিজমি ও মিঠাপানির উৎস। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে কাজ করছে।
নিঃশব্দে বেঁচে আছে গিনি-বিসাউ
পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে এক ক্ষীণপ্রাণ রাষ্ট্র গিনি-বিসাউ। এর ৭০ শতাংশ মানুষ উপকূলে বসবাস করে। কৃষিনির্ভর দেশটি কাজুবাদাম, ধান ও মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে লবণাক্ততা ও কৃষি বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দরিদ্র ও খাদ্য-অনিরাপত্তা বাড়ছে। সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ার ফলে গ্রাম, কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। আবার শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘতর ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে জলবায়ু সংকট—এই দুইয়ের চাপে দেশটি যেন ভবিষ্যতের মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পথে।
প্রকৃতির রোষানলে ভানুয়াতু
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে, ফিজি ও নিউ ক্যালেডোনিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ভানুয়াতু। প্রকৃতির কোলে গড়া দ্বীপরাষ্ট্রটি নিজেই এখন প্রকৃতির রোষানলে। প্রায় প্রতিবছর সেখানে ভয়াবহ সাইক্লোন আঘাত হানে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে ভানুয়াতু। বারবার দুর্যোগের ফলে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুনরুদ্ধারে সময় ও অর্থের অভাব আছে ভানুয়াতুতে। অন্যদিকে পর্যটন খাত জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত। ভানুয়াতু প্রকৃতির স্বর্গভূমি হয়েও এক অনিবার্য বিপদের দিকে ছুটে চলেছে।
প্রস্তুত সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। মালয়েশিয়ার অংশ হয়ে ১৯৬৫ সালে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি। সিঙ্গাপুর তুলনামূলকভাবে উন্নত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বড় হুমকির মুখে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে। জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে থাকা একমাত্র উন্নত রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। তারা দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে বিজ্ঞান ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া যায়। বাঁধ, বন্যা প্রতিরোধ ব্যারিয়ার, আধুনিক শহর পরিকল্পনা—সবই এককথায় জানিয়ে দিচ্ছে ‘আমরা প্রস্তুত’।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম
রাষ্ট্র মানে শুধু একটি ভূখণ্ড নয়; এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি, পরিচয় ও মানুষের সম্মিলিত স্বপ্ন। অথচ এই একুশ শতকে কিছু দেশ এমন এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে, যেখানে ভূখণ্ডের অস্তিত্বই প্রশ্নবিদ্ধ। রোমান সাম্রাজ্য থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা যুগোস্লাভিয়ার মতো যে দেশগুলো একদিন ছিল মানচিত্রে স্পষ্ট, আজ তারা ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। অথচ এবার, গল্পটা শুধু রাজনীতি নয়, প্রকৃতিই নিচ্ছে একেকটি রাষ্ট্রের অস্তিত্বের পরীক্ষা। ভূরাজনীতির পালাবদলের চেনা গল্পের বাইরে আজ নতুন এক সংকট সামনে এসেছে—জলবায়ু পরিবর্তন।
এই প্রেক্ষাপটে, আজকের অনেক দেশ আগামী ৫০ বছরের মধ্যে টিকে না-ও থাকতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও লোউই ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অনেক নিচু উচ্চতার দেশ; বিশেষ করে ছোট দ্বীপরাষ্ট্র ও উপকূলবর্তী রাষ্ট্রগুলোর জন্য অস্তিত্বগত হুমকি তৈরি করছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এখন প্লাবন, উপকূলীয় ভাঙন, সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বসবাসের উপযোগী জমি ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার মতো পরিবেশগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এ ধরনের পরিবর্তন শুধু এসব দেশের জনগণের নিরাপত্তা ও জীবিকাকেই হুমকির মুখে ফেলছে না, বরং তাদের অনন্য সংস্কৃতি ও জাতীয় সার্বভৌমত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। আগামী ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এমন দেশের অনেকগুলো আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ আশঙ্কার মুখে রয়েছে। এই অবস্থা পুরো একটি জাতি বিলুপ্তির মতো চরম পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
ফলে ভ্রমণপ্রেমীরা সুযোগ থাকলে জলবাযু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত দেশগুলো ভ্রমণের তালিকায় রাখতে পারেন।
ডুবে যাচ্ছে মালদ্বীপ
বিশ্বের অন্যতম সমতল দেশ মালদ্বীপ। সেখানে বেশির ভাগ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের সামান্য ওপরে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে মালদ্বীপ ধীরে ধীরে ভূমি হারাচ্ছে। সরকার এরই মধ্যে বিদেশে জমি কিনছে জনগণের জন্য বিকল্প আবাসন হিসেবে।
অস্তিত্বের লড়াইয়ে কিরিবাতি
নিচু প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত কিরিবাতির ৩৩টি দ্বীপ পানির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। অথচ সেটি বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর একটি। ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে কিরিবাতি সরকার ফিজিতে ৬ হাজার একর জমি কিনেছে, যাতে সুনির্বাচিত ও মর্যাদাপূর্ণ জনসংস্থান সম্ভব হয়। এরই মধ্যে দেশটির কিছু দ্বীপ হারিয়ে গেছে, লবণাক্ততা ধ্বংস করছে সুপেয় জলের উৎস।
ধিকি ধিকি জ্বলছে টুভালু
জলবায়ুর দিক থেকে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি টুভালু। এর ভূমির গড় উচ্চতা দুই মিটারের কম। দেশটি সরু প্রবাল দ্বীপ দিয়ে গঠিত, যার গড় প্রস্থ মাত্র ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার। ফলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে। কৃষি, পানীয় জল ও খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দেশটির। লবণাক্ত পানি মাটির নিচের স্তরের পানিতে প্রবেশ করছে। সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে। প্রয়োজনীয় জলবায়ু উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে এই দেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ এক মিটার বাড়লেই ডুবে যেতে পারে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ
প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যভাগে, হাওয়াই ও অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। এর গড় উচ্চতা দুই মিটার। ১ হাজার ১৫৬টি দ্বীপ এবং ছোট ছোট দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ। রাজধানী মাজুরো অ্যাটলের ৮০ শতাংশ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠের এক মিটার বৃদ্ধিতে ডুবে যেতে পারে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের সরকার কৃত্রিম দ্বীপ ও অবকাঠামো নির্মাণে মনোযোগী। গড় উচ্চতা প্রায় দুই মিটার হওয়ায় এই দ্বীপপুঞ্জ বন্যা ও উপকূল ক্ষয়ের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। মিঠাপানির উৎস, কৃষি ও অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে লবণাক্ত পানি। সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, ভূমি উঁচু করা এবং কৃত্রিম দ্বীপ গঠনের মাধ্যমে তাদের মানুষদের রক্ষার চেষ্টা করছে। মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপদেশ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক।
জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনশিল্পের ঝুঁকিতে সেশেলস
ভারত মহাসাগরে পূর্ব আফ্রিকার উপকূল থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপ দেশ সেশেলস। এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বিলাসবহুল পর্যটন গন্তব্য। দেশটি বন্য প্রাণী, প্রবালপ্রাচীর, নীল জলরাশি ও সাদা বালুর সৈকতের জন্য বিখ্যাত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারালে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উঁচু দ্বীপ থাকলেও দেশটির উপকূলীয় অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকিতে রয়েছে। দেশটির জীববৈচিত্র্য ও পর্যটনশিল্প ঝুঁকিতে আছে। সরকার উপকূল রক্ষা প্রকল্পে কাজ করছে।
সেশেলস হচ্ছে বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর একটি, যারা ব্লু ইকোনমির ধারণাকে বাস্তবায়ন করছে। বিশ্বব্যাংক, ইউএনডিপি ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সহায়তায় দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন পরিকল্পনা চালু হয়েছে সেখানে। সেশেলস কেবল একটি পর্যটন দ্বীপ নয়, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুন্দর অথচ শঙ্কিত পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি।
টিকে থাকার লড়াইয়ে ফিজি
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে, অস্ট্রেলিয়া ও হাওয়াইয়ের মাঝামাঝি দেশ ফিজি। প্রায় ৩৩০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দেশটি। ফিজি বিশ্বের জনপ্রিয় দ্বীপ গন্তব্যগুলোর একটি। দেশটিতে উচ্চ জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব বাড়ছে। উপকূলীয় অনেক গ্রাম সমুদ্রে বিলীন হওয়ার পথে। কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি হচ্ছে। লবণাক্ত পানি ঢুকে ধ্বংস করছে কৃষিজমি ও মিঠাপানির উৎস। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে কাজ করছে।
নিঃশব্দে বেঁচে আছে গিনি-বিসাউ
পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে এক ক্ষীণপ্রাণ রাষ্ট্র গিনি-বিসাউ। এর ৭০ শতাংশ মানুষ উপকূলে বসবাস করে। কৃষিনির্ভর দেশটি কাজুবাদাম, ধান ও মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে লবণাক্ততা ও কৃষি বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দরিদ্র ও খাদ্য-অনিরাপত্তা বাড়ছে। সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ার ফলে গ্রাম, কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছে। আবার শুষ্ক মৌসুম দীর্ঘতর ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অন্যদিকে জলবায়ু সংকট—এই দুইয়ের চাপে দেশটি যেন ভবিষ্যতের মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার পথে।
প্রকৃতির রোষানলে ভানুয়াতু
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে, ফিজি ও নিউ ক্যালেডোনিয়ার মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ভানুয়াতু। প্রকৃতির কোলে গড়া দ্বীপরাষ্ট্রটি নিজেই এখন প্রকৃতির রোষানলে। প্রায় প্রতিবছর সেখানে ভয়াবহ সাইক্লোন আঘাত হানে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের বৃদ্ধিতে ক্ষতির মুখে ভানুয়াতু। বারবার দুর্যোগের ফলে তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। সরকার দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুনরুদ্ধারে সময় ও অর্থের অভাব আছে ভানুয়াতুতে। অন্যদিকে পর্যটন খাত জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত। ভানুয়াতু প্রকৃতির স্বর্গভূমি হয়েও এক অনিবার্য বিপদের দিকে ছুটে চলেছে।
প্রস্তুত সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। মালয়েশিয়ার অংশ হয়ে ১৯৬৫ সালে সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি। সিঙ্গাপুর তুলনামূলকভাবে উন্নত হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বড় হুমকির মুখে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে। জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকির মুখে থাকা একমাত্র উন্নত রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর। তারা দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে বিজ্ঞান ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া যায়। বাঁধ, বন্যা প্রতিরোধ ব্যারিয়ার, আধুনিক শহর পরিকল্পনা—সবই এককথায় জানিয়ে দিচ্ছে ‘আমরা প্রস্তুত’।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম
অনেকে কাঁকড়া খেতে ভালোবাসেন। তবে যাঁরা এই প্রথম বাজার থেকে কাঁকড়া কিনে এনেছেন রাঁধবেন বলে, তাঁদের জন্য কাঁকড়া ভুনার রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী ওমাম রায়হান।
১১ ঘণ্টা আগেশহরটির বয়স প্রায় ১১০ বছর। ‘ম্যাড ম্যাক্স বিয়ন্ড থান্ডারডোম’, ‘প্রিসিলা’, ‘ডেজার্ট কুইন’ ও ‘রেড প্ল্যানেট’ চলচ্চিত্র যাঁরা দেখেছেন, বিস্তারিত না জানলেও তাঁরা এই শহর এবং তার পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত। কারণ, এই চলচ্চিত্রগুলো শতবর্ষী শহরটিতেই চিত্রায়িত হয়েছিল।
১১ ঘণ্টা আগেপৃথিবীতে কেউই নিজেদের মিথ্যাবাদী ভাবতে চায় না। কিন্তু সত্যি বলতে, সবাইকে কখনো না কখনো মিথ্যা বলতে হয়। ছোট ছোট সাদা মিথ্যা থেকে শুরু করে অনিয়ন্ত্রিত মিথ্যা। এ ধরনের কথা বলার ধরন অনেক রকম। শিশুরাও বুঝে না বুঝে মিথ্যা বলে। তাই মিথ্যা বলা হয়তো একটি প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি।
১১ ঘণ্টা আগেআপনার সন্তান কি কথা শুনতে চায় না? অল্পতেই রেগে গিয়ে চিৎকার বা ভাঙচুর করে? এমনটা হলে, তার স্ক্রিন টাইম বা মোবাইল-টেলিভিশন দেখার সময় নিয়ে আপনাকে হয়তো নতুন করে ভাবতে হবে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল ‘সাইকোলজিক্যাল বুলেটিন’-এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
১১ ঘণ্টা আগে